আস্তিক ভাই, কটা প্রশ্নের জবাব দেবেন প্লিজ?

বিশ্বনাথ মুরমু


Nov. 25, 2024 | | views :896 | like:0 | share: 0 | comments :0

আস্তিক হলেন সেই মানুষ, যিনি ঈশ্বরে বিশ্বাসী। শুধু ঈশ্বর নয়, তিনি যাবতীয় দেব-দেবী, অপদেব, অপদেবীতেও বিশ্বাসী। তিনি বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বরের ইচ্ছা ব্যতীত বা দেব-দেবীর আশীর্বাদ অথবা অভিশাপ ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না, ঝরে না, মানুষের জগতের ভালো বা মন্দও হয় না, কোনও কিছুই ঘটে না। জাগতিক যাবতীয় ঘটনাবলী, তাঁর বা তাঁদের ইচ্ছেতেই ঘটছে। সৃষ্টি, স্হিতি, প্রলয় ঈশ্বরের নিত্য লীলা ইত্যাদি। তেমনই ছোটখাটো অন্য অনেক ঘটনাবলীও ঈশ্বরের ইচ্ছা অথবা তার ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র অবতার যথা, শিব, ব্রহ্মা, নারায়ণ, বিষ্ণু, সরস্বতী, লক্ষী, কালী, রাম, হরি, গরাম ঠাকুর, মারাংবুরু আদিদের ইচ্ছা ব্যতীত সাধিত হয় না। অর্থাৎ তিনি বা তাঁরা আছেন বলেই সব কিছু হচ্ছে।


নাস্তিক হলেন সেই মানুষ, যিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। কোন দেব-দেবী, অপদেব, অপদেবীতে তিনি বিশ্বাস করেন না। তিনি বিশ্বাস করেন যে প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে বা বিজ্ঞানের নিয়মে যা ঘটা উচিত, সেইভাবেই যা কিছু জাগতিক ঘটনা ঘটে, ঘটে চলেছে। কোনও ঐশ্বরিক পূর্ব পরিকল্পনা বলে কিছু হয় না, হতে পারে না। ঠিক একইভাবে এটাও বিশ্বাস করে না যে ঈশ্বরের কোনও ক্ষুদ্র কনা বা অবতার বলে কিছু হয়, যাকে দেব দেবী বলে বিশ্বাস করতে হবে এবং তার পূজার্চনা বা জপতপ করলে কোনও অভিলাষ পূর্ণ হবে।


এই বারে, খুবই বিনীতভাবে এই প্রশ্নগুলি পেশ করছি। আর আশা করছি যে সৎসাহসের সঙ্গে আন্তরিকভাবেই কোনও আস্তিকবাদী ভাই এর যথাযথ উত্তরগুলি দেবেন।


- আমি যে নাস্তিক হব অর্থাৎ ঈশ্বরে বিশ্বাস করব না, এটা তাঁরই ইচ্ছা নয় কি? (যদি থাকেন)। কেন না, তাঁর বা তাঁদের ইচ্ছা ব্যতীত কোনও কিছুই তো হওয়ার নয়।

- জাগতিক কোনও ঘটনাকেই ঈশ্বরের ইচ্ছা বা কীর্তিকলাপ বলে মনে করব না, মেনে নেব না, এও নিশ্চয় তাঁরই পূর্বনির্দেশ? (যদি থাকেন)।

- আপনি আস্তিক মানুষ হয়ে তাঁর মাহাত্ম্য প্রচার করবেন, দেব দেবীর মাহাত্ম্য প্রচার করবেন, তেমনই আমি নাস্তিক হয়ে তাঁর অস্তিত্বকে, মাহাত্ম্যকে অস্বীকার করবো, এও তাঁর অসীম করুণা নয় কি? (যদি থাকেন)।

- আমাকে ব্যাখ্যা দিন, আপনার ঈশ্বর আমার মনে তাঁর নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কেই এই অবিশ্বাস জাগিয়েছেন কেন?

- জাগতিক ঘটনাবলীর জন্য নিতান্ত যে প্রকৃতিই দায়ী এটাই বা আমার মনে আনলেন কেন?


যুক্তিবাদী ব্যক্তি, দল অথবা মঞ্চ বলে যা গড়ে উঠেছে, আপনি বিশ্বাস করতে বাধ্য যে, এর জন্যও আপনার ওই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই দায়ী (যদি থাকেন)। কিন্তু কেন?

- মানুষকে ঈশ্বরের নামে বোকা বানাবেন এটা যদি তাঁরই ইচ্ছা হয়, তাহলে তার প্রতিবাদ করাও তাঁরই ইচ্ছা, কি বলেন? ঈশ্বর কেন এমন ইচ্ছা করলেন?


মোরবি সেতু মৃত্যুকান্ডের (বলা উচিত হত্যাকান্ড) সেতু রক্ষণাবেক্ষনের কর্তারা বলেছেন যে ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে কেন তদন্তকারী দল তাঁদেরকেই দায়ী করেছে? আপনি স্বীকার করতে বাধ্য যে মোরবি দুর্ঘটনার অপরাধীদের কারাবাস নিশ্চিত, তাহলে এও নিশ্চয় তাঁরই ইচ্ছা!

আসলে আস্তিকেরা ইচ্ছে করেই মনগড়া এক ঈশ্বরের অস্তিত্বের কথা প্রচার এজন্যই করেন যে স্বল্পশ্রমে লেহ্যপেয় সহযোগে কেমন আয়েশী জিন্দেগি যাপন করা যায়।


আস্তিক ভাই, মানতেই হবে আপনার অথবা আপনাদের এলেম আছে বটে। শস্য উৎপাদন বা শিল্পদ্রব্য উৎপাদনে বা দেশের যে কোনও উৎপাদনে গতর না খাটিয়েও দিব্যি পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে করে খাবার সুন্দর সহজ পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন। ধন্য আপনি, ধন্য আপনারা।


রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপরতলা থেকে নীচতলা পর্যন্ত এমনভাবে বজ্রআঁটুনি দিয়ে রেখেছেন যে বড় বড় নেতা/অভিনেতা, মন্ত্রী, আমলা, শিল্পপতি থেকে কৃষক শ্রমিক সব আপনাদের মুষ্টিতে। সত্যিই, ঈশ্বরের অথবা দেবদেবীদের কৃপা ছাড়া এটা সম্ভব হত না (আপনার মতে আমার মতে নয়)।


সাধারন মানুষ যাতে প্রশ্ন না করে, প্রশ্ন করলেও যাতে এমন উত্তর পায় যা আপনাদের উদ্দেশ্যকেই পূর্ন করবে, তাই আপনারা ধর্মের নামে (তথাকথিত) ভালো ভালো অজস্র কেতাব রচনা করেছেন, আখড়া বানিয়েছেন, আশ্রম খুলেছেন, আশ্রমের শাখা-প্রশাখা খুলেছেন।


আমি বা আমরা বিনা প্রশ্নে কোনওকিছু মানতে রাজি নই। কে, কী, কেন, কেমন করে, কবে, কোথায় ইত্যাদি প্রশ্ন করার অধিকার মানুষের জন্মগত। আপনারা গোড়াতেই তাকে উপড়ে ফেলতে বদ্ধপরিকর, যুক্তি দেন ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’। আপনারা তাই চান না যে মানুষ শিক্ষিত হোক। এই বিষয়ে আপনাদের ব্যাপক গবেষণায়, গবেষণালব্ধ ফল প্রয়োগে সত্যিই অবাক মানতে হয়। আপনারা দেখেছেন, মানুষ স্বচ্ছল হলে, স্বাবলম্বী হলে তারা শিক্ষালাভের চেষ্টা করে। তাই আপনারা আপনাদের আবিষ্কৃত ‘অন্নচিন্তা চমৎকারা’ ফর্মুলা প্রয়োগ করেন। ডাইনে আনতে বাঁয়ে কুলোয় না, মানুষ আর কোনওদিকে চোখ মেলে তাকাবার সুযোগই পায় না। আপনাদের বাবার আখড়া, মায়ের আখড়ার মাধ্যমে মগজ ধোলাই করে মানুষকে এটা বোঝাতে সক্ষম হন যে, তাদের নিজেদের পূর্বজন্মের অথবা পূর্ববর্তী প্রজন্মের পাপের ফলেই তারা গরীব এবং অশিক্ষিত। তাদেরকে এটা বোঝাতেও সক্ষম হন যে তারা একমাত্র ভগবৎ স্মরণেই মুক্তিলাভ করতে পারে।

সাধারন মানুষের যুক্তিবোধের প্রশ্নের উত্তরে, আপনারা সবই তাঁর বা তাঁদের ইচ্ছা বলে চালিয়ে দেন। কেউ বেশি প্রশ্ন করলে, কোনও কিছু মেনে নিতে না চাইলে, আপনারা সংযম না রেখে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন এবং অকথা কু’কথা বলেন, অভিশাপ দিয়ে দেন।

- এ সবই কি তাঁর বা তাঁদের ইচ্ছা বলেই চালিয়ে দিতে চান?

তাঁর বা তাঁদের ইচ্ছে ব্যতীত যখন কিছু হওয়ার নয়, তখন আমি যে মাধ্যমিকে ফেল করব এও নিশ্চয় তাঁর বা তাঁদেরই ইচ্ছে! তাহলে, সেই কারণে আমার বাবা আমাকে বকবেন বা চাবকাবেন কেন? এটা কি তাঁর বা তাঁদের স্ববিরোধিতা হয়ে যাচ্ছে না? এ’তো জোড়াতালি দেওয়া যুক্তি। ঠিক যেন গাছেরও খাব আবার তলারও কুড়োব। বাহ্ আস্তিক ভাই, ধন্য আপনাদের যুক্তি।

সেরকম কোনও কিছু থাকলে, তাঁর বা তাঁদের ইচ্ছেতেই তো কোনও বিরুদ্ধবাদীদের থাকবার কথাই নয়। ফলে, কোনও সন্দেহ, কোনও প্রশ্ন ওঠবার কথাই ওঠে না। অথচ প্রশ্ন উঠেছে, উঠছে। তারপরেও কি আপনারা গোঁ ধরেই থাকবেন? তাছাড়া আপনাদের আর উপায়ই বা কি আছে? আপনাদের তাসের ঘর ভেঙে যাক, এটাতো আর চাইতে পারেন না! তাই, যেভাবেই হোক, একে রুখতে হবেই। হ্যাঁ মানছি, আপনাদের বনিয়াদ খুব শক্ত ভিতের উপরই দাঁড় করিয়েছেন। তবে, এটাও জেনে রাখুন, আজ হোক কি কাল হোক, দু’বছর কি দশবছর কি দু’শ বছর পর আপনাদের ভিত আমরা যুক্তিবাদীরা ভাঙবই ভাঙব। জেনে রাখুন, মানুষ জাগছে, জাগবেই আজ কি কাল।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929