১) ঈশ্বরকে কে বানালেন?
যদি বলেন তিনি স্বয়ম্ভু, সেই একই যুক্তিতে আমরা প্রকৃতিকে স্বয়ম্ভূ বলতে পারি।
২) যদি ঈশ্বরের তৈরী করার আগে কোনো স্থান না থেকে থাকে, তিনি আমাদের তৈরী করলেন কোন স্থানে বসে? সময়ও তো তিনিই তৈরী করেছেন, তাহলে কোন সময়ে তিনি আমাদের তৈরী করলেন?
৩) বিভিন্ন ধর্মমতে তিনি বিভিন্নরকম ভাবে বর্ণিত, কোনটা মেনে নেবো এবং কেন? পৃথিবীতে কিন্তু কমবেশি ৭২০০ ধর্ম আছে।
৪) আমাদের দেশ প্রায় ২০০ বছর ইংরেজদের অধীনে থাকতে বাধ্য হলো, অনেক খুন ও লুঠ হলো, জালিওনাওয়াবাগ হত্যাকাণ্ড হলো। কেন? তিনি তো আরও আগেই স্বাধীনতা এনে দিতে পারতেন।
৫) ঠাকুর, অবতারেরা ভারতে জন্মান আর পয়গম্বর এরা আরবভূমিতে কেন?
৬) ডায়ালিসিস, কেমো থেরাপি বিষয়ে ধর্মগ্রন্থে লেখা নেই কেন?
৭) বিবর্তন সম্পর্কে ধর্ম কি বলে?
৮) জুনকো ফুরুতা, নির্ভয়া ঘটনা তিনি আটকালেন না কেন? এখানেও কি "তিনি যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন" থিওরি?
৯) একজন হিন্দু যদি বেশ কিছু বছর পর অন্য ধর্ম মতে দীক্ষিত হন তাহলে চিত্রগুপ্তর হিসাব কি থেমে যাবে নাকি হিসাব ট্রান্সফার এর ব্যবস্থা আছে?
১০) বি.এস.এফ এর হাতে বিপদতারিনী তাগা পরালে কি আর বর্ডারে কোনো দাঙ্গা হবে না?
বিষয় - প্রতিবন্ধী
লি খে ছে ন – দি বা ক র ম ন্ড ল
ছোট থেকেই শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশু দেখলে খুব কষ্ট অনুভব করি। একটা সময় অন্যসব লোকের মত আমিও বিশ্বাস করতাম যে এগুলো সব ভগবানের দান। ধর্মগুরু, কীর্তনিয়া, এবং ইমামদের বক্তব্য থেকে যেটা বুঝেছিলাম যে, “মানুষকে শারীরিক প্রতিবন্ধী/বিকলাঙ্গ করে ঈশ্বর বা আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠান।”
এর পিছনে রয়েছে মূলত চারটি কারণ যথা-
(১) ভয়ংকর রকম পাপাচার বা আল্লাহর চরম অবাধ্যতার কারণে গজব (২) কর্মফল অর্থাৎ নিজস্ব কিছু পাপের জন্য ভগবান প্রদত্ত ফলাফল এবং (৩) পূর্বজন্মের পাপের শাস্তি। (৪) মানুষের অভিশাপ।
দুঃখের বিষয় আজও এই ধরনের বক্তব্য সচরাচর মানুষের মুখে শুনতে পাওয়া যায়, আজই আমি হসপিটালে থাকাকালীন এক মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকে লক্ষ্য করে কিছু মানুষের এই ধরনের বক্তব্য শুনে মর্মাহত হয়েছি। যদিও বড় হওয়ার সাথে সাথে যতটুকু বুঝেছিলাম পড়াশোনা করে এবং আজ গুগল থেকে সাহায্য নিয়ে যেটুকু জানতে পেরেছি; মানুষ বিকলাঙ্গ হওয়ার পিছনে যে কারণ গুলি রয়েছে যথা
১) যদি কোন মহিলা ডায়বেটিস আক্রান্ত থাকেন তবে তার গর্ভের বাচ্চা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে জন্মাবার সম্ভাবনা খুবেই বেশি।
(২) স্বামী বা স্ত্রী কেউ যদি এই যৌনরোগের ভাইরাস এবং ব্যকটেরিয়া বহন করে তবে ইনফেকশন হয়ে গর্ভধারিণী মায়ের বাচ্চার বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে।
(৪) কোন মহিলা যদি গর্ভাবস্থায় তামাক জাতীয় দ্রব্য যারা সেবন করেন তবে বাচ্চার শারীরিক ডিফেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আমেরিকার ১৫.৩ ভাগ মহিলা ধুমপান করেন যেখানে পুরুষরা করেন ২০.৫ ভাগ (২০১৩ সালের রিপোর্ট)। দেখা যায়, আমেরিকায় প্রতি ৩০ টি শিশুর একটি কোন না কোন শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্মাচ্ছে। এর আর একটি অন্যতম কারণ, অ্যালকোহল। এখন গর্ভাবস্থায় যদি কোন মা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় লিমিটের বাইরে সেবন করে তবে তার প্রসবকৃত শিশুটা মুখের বিকৃতি তথা চেহারার বিকৃতি, কম ওজনের ছোট বাচ্চা প্রসব, আচারণগত সমস্যা বা মানসিক সমস্যা, এমনকি সময়ের পূর্বেই তথা ৩৮ সপ্তাহের আগেই বাচ্চা প্রসব হতে পারে। যার কারণে স্থায়ীভাবে নানান শারীরিক জটিলতা নিয়ে জন্মাতে পারে।
(৫) অনেক গোত্রের মেডিসিন আছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় সেবন করলে বাচ্চা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেমন, লিথিয়াম বা ইসোট্রিটিনিয়ন গ্রুপের ঔষধ। এগুলো সমসাময়িক কালের একটা বড় কারণ।
(৬) কোন গর্ভবর্তী মহিলা যদি গর্ভাবস্থায় বেনজোডায়াজেপাইন (Benzodiazepine) গোত্রের অসুধ সেবন করে। অর্থাৎ সোজা বাংলায় আমার যেটা বুঝি "ঘুমের" ঔষধ সেবন করে তবে তার বাচ্চার জন্মের পর শাসকষ্ট বা হাপানী হতে রোগ নিয়েই জন্মাতে পারে। হার্টের সমস্যা নিয়ে জন্মাতে পারে। দূর্বল মাংসপেশী নিয়ে জন্মাতে পারে।
(৭) Norethisterone (নরইথিস্টেরন) হরমোনটি মহিলাদের মাসিক রজঃবৃত্তির চক্রের সাথে উঠানাম করে। এই হরমোন জাতীয় ঔষধটি নারীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় ইররেগুলার বা পেইনফুল মেনস্ট্রল নিয়ন্ত্রণের জন্য। গর্ভবতী সময়ে এই ঔষধের সেবনে বাচ্চা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মাবার সম্ভাবনা থাকে।
(৮) আমরা জানি, গর্ভাবস্থায় যদি ভিটামিনের ঘাটতি থাকে তবে বাচ্চা নানান শারীরিক জটিলতা নিয়ে জন্মাতে পারে। বিশেষ করে, জিংক, ফলিকএসিড, আয়রণ, ভিটামিন এ, বি, ডি, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।
অথাৎ শারীরিক এবং মানসিকভাবে যে সমস্ত শিশুরা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মায়, কেন হয়, তার বিজ্ঞানসন্মত কারন আমরা জানতে পারলাম, তাই কোনো বিকলাঙ্গ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুকে দেখে এটা আল্লাহর বা ভগবানের দান, পূর্বজন্মের পাপের ফল, এই ধরনের মন্তব্য করবেন না; এতে ঐ শিশুটি এবং তার পিতা-মাতা উভয়কে অপমানিত করা হয়। এই ধরনের বক্তব্য শোনার পর পিতা-মাতার মধ্যে যে অন্যায় বোধ কাজ করে সেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আমি এক প্রতিবন্ধী শিশুর মায়ের সাথে কথা বলে বুঝেছি তিনি কতটা হীনমন্যতায় ভুগছেন, কতটা কষ্টে রয়েছেন!
তাই সকলের কাছে অনুরোধ আপনারা বিজ্ঞানমনস্ক হন, ধর্মীয় কাল্পনিক, অবৈজ্ঞানিক গল্প কথায় বিশ্বাস করে কাউকে নিজের অজান্তেই অপমান করবেন না।
প্রামাণিক পাড়া, ফলতা,
দ. ২৪ পরগনা, প: ব: