ঈশ্বরের স্বর্গবাস

মহম্মদ মহসীন


Nov. 25, 2024 | | views :622 | like:0 | share: 0 | comments :0

বাড়ির কর্তা কী কী দায়িত্ব পালন করে? বাড়ির কর্তা কতটা ভাল খায়৷ কতটা মাখে। কতটা ভোগ করে। সাধারনত আমরা দেখি, জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই তার দায়। তিনি থাকেন বটগাছের মতো। সংসারের সকলেই তার উপর নিশ্চিন্ত। তারা জানে, বাবা-মা নিজেরা না খেয়েও সকলের মুখে খাবার তুলে দেয়।

 আচ্ছা বাবা-মা কি এর বদলে থ্যাঙ্কস চায়?  'আমায় পুজো করো পুজো করো, আমায় ভয় করো' বলে? নিজে থাকে স্বর্গে, তার হুকুম যে মানে, সেই ছেলেকে সঙ্গে নেয় সেই সুখের স্বর্গে।  দস্যি ছেলেটিকে ছুঁড়ে দেয় নরকের যন্ত্রণা ভোগ করার জন্যে? আসল বাবা তো নিজের জন্য বেছে নেয় যন্ত্রণার জীবন, সন্তানকে দিতে চায় নিরাপদ, নিশ্চিন্ত স্বাচ্ছন্দময় জীবন। 

  বাবামায়ের সাথে ঈশ্বরের একটু তুলনা করে দেখুন, কার ত্যাগ বেশি।

   হিন্দি সিনেমায় দেখি, ভিলেন তার গুণ্ডাবাহিনী নিয়ে বাজারে তোলা তোলে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সর্বদা। মানুষের মনে ভয় জিইয়ে রাখে।  ভগবানের কাণ্ডকারখানাও সেই সিনেমার ভিলেনের মতো। মানুষের  মনে ভয় সৃষ্টি করাই তার সাম্রাজ্য বিস্তারের মূল কথা। লোকেও বলে থাকে,  ভগবানকে ভয় করো। শ্রদ্ধা করো। ভক্তি করো। অর্থাৎ তারা জানে ভগবান ভয়ানক কিছু "একটা বা না-একটা"  বিষয় বা বস্তু। তাকে ভয় করতে হয়, ভক্তি করতে হয়, ঠিক হিন্দি সিনেমার সেই ভিলেন যেমন চায়। ঈশ্বর পুজোর কাঙাল। ভক্তির কাঙাল,  শ্রদ্ধার কাঙাল। 

  মানুষের যৌক্তিক চেতনার স্তর কেমন দেখুন। 

 এদিকে যতই জুজুর ভয় দেখানো হোক, শিশুর মন থেকে জুজুর ভয় একদিন কেটে যায়, কারণ বোধ আসে, জুজু-টুজু বলে কিছু নেই। জুজু-বিশ্বাস কেটে যায়।

 ভূতের ভয়ও অনেকের কেটে যায়, দুই একজনের কাটে না। ভগবানে বিশ্বাসও কাটে না।

 স্বনামধন্য এক সাহিত্যিক অকপটে বলেন, তিনি ভূতে বিশ্বাস করেন। অনেকে শুনে হাসেন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন বলেন। আমি বলি কি, উনি ওঁর যুক্তিতে ঠিক আছেন। ভগবান যদি থাকে, তাহলে ভূতও আছে, 

আত্মা যদি থাকে, প্রেতাত্মাও আছে। কাজেই যিনি ভগবানে বিশ্বাস করেন, তাঁর ভূতে বিশ্বাস থাকাটাও খুবই জরুরি। ভগবান আছে, কিন্তু ভূত নেই, এই দ্বিচারিতা অন্তত আমাদের সেই স্বনামধন্য সাহিত্যিকের নেই।

  আসলে দৈনন্দিন জীবনে, বাস্তবের ঘাত প্রতিঘাতে মানুষের যৌক্তিক চেতনা বলে ভূত-টুত কিছু নেই, কিন্তু   

 ভগবান-সংস্কারের অক্টোপাশ সমাজকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। ভগবানভীতি কেটে গেলেও পাছে লোকে কিছু বলের সংকীর্ণতা ছেড়ে বেরোনো যায় না। দেখবেন মানুষ মুখে বলে ভগবানকে ভয় করে, ভক্তি করে, তবু যত অন্যায় দুর্নীতি করে এই ঈশ্বরমানা লোকেই।  

 একটি রূপক। ভগবান সর্বত্র বিরাজমান। দোকানে দেখার কোনো লোক নেই, ভগবান সব দেখছে! আরও  লিখে দেওয়া হয়েছে, সঠিক মাল নিন। সঠিক দাম দিন। দোকানের প্রতিটি জিনিসের প্রতি তাঁর লক্ষ। খরিদ্দারসকল বেশ ভদ্রলোক, ধর্মপ্রাণ, অথচ দেখা গেল সব মাল শেষ, টাকার কাউণ্টারে টাকা কেউ দেয় নি।এমনটি হলে, বলাই যায়, ব্যবসা ডকে উঠতে তার দেরী নাই।

 কিন্তু যদি লেখা থাকে, আপনার গতিবিধির প্রত্যেকটি মুহুর্ত সিসিটিভিতে রেকর্ড হচ্ছে, দেখবেন মানুষ কত সৎ। ঠিক ঠিক জিনিস নিচ্ছেন, টাকাও দিচ্ছেন। বাস্তব জীবনে ভগবানভীতি না থাকলেও, সিসিটিভিভীতি আছেই। কারণ, এটি তাদের বিশ্বাসের ফলে নির্মিত সত্য নয়, বাস্তব উপলব্ধির মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা। 

ধর্মান্ধ তথা ধার্মিকে বিশ্বাস করে তার সব কিছুর নিয়ন্তা হল তার ঈশ্বর। জন্ম মৃত্যু, বিবাহ সব কিছু তার ঈশ্বর ঠিক করেই রেখেছে, তার এতটুকু নড়চড় করার ক্ষমতা কারুর নেই।  অথচ, এই ঈশ্বরের উপর নির্ভরতার নমুনাও দেখবার মতো। নিজের দুর্ভাগ্যের কথা,  বিপদ তথা ফাঁড়ার কথাও না কি গণনা করে জানা যায়। তা জানা যাক, গণনার ক্ষমতায় নির্ভুল এসব জেনেটেনে এবার যেটি করে তা কিন্তু তাদের বিশ্বাসেরই পরিপন্থি। জ্যোতিষী তাদের ঈশ্বরের লিখনকে পাল্টে দিতে পারে। ছোট্ট একটা আঙটি ভগবানের লেখা ভাগ্যকে নস্যাৎ করে দিতে পারে। ঈশ্বরে বিশ্বাস করেও তারা জ্যোতিষীকে, জ্যোতিষবিদ্যাকে, রত্নপাথরকে ঈশ্বরের ক্ষমতার চেয়েও শক্তিমান বলে বিশ্বাস করে। দেখুন,  কীরকম তাদের যৌক্তিকতা। একবার বিশ্বাস করে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তার ভাগ্যে বিপদ  লিখেছে, দুঃখ লিখেছে। আবার জ্যোতিষী তার থেকেও শক্তিমান।  আসলে এরা হল সুবিধাবাদী। লোভী। ভীত। স্বর্গের লোভে ঈশ্বর ঈশ্বর করে। মানুষের সাথে অন্যায় করে ক্ষমা চায় ঈশ্বরের কাছে। নরকের ভয়ে উপাসনা করে ঈশ্বরের। আবার কেউ গণনা-ফণনা করে তাকে ফাঁড়ার ভয় দেখালে শরণাপন্ন হয় তারই। সৌভাগ্যের লোভ দেখালে শরণাপন্ন হয় জ্যোতিষীরই। আসলে ধার্মিকের জীবনশৈলী গড়ে ওঠে এইরকম স্বার্থান্বেষিতায়। এরা তাই ধর্ম ছাড়া নৈতিকতার কথা ভাবতেই পারে না, ভাল কাজের জন্য ঈশ্বরের গিফটের বাইরেও কিছু চিন্তা করতে পারে না।

প্রকৃতপক্ষে এদের শিক্ষা নেই। শিক্ষার পথও রুদ্ধ করে দিয়েছে ধর্মীয় জীবনশৈলী।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929