উল্কার সাতকাহন

অনির্বাণ মন্ডল


Nov. 25, 2024 | | views :901 | like:0 | share: 0 | comments :0

আমরা হয়তো অনেকেই ‘তারা খসা’ (shooting star) কথাটার সাথে পরিচিত। এই বিষয়টি সত্যিই কি আমি আজ এই লেখার মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করবো। ‘তারা খসা’ (shooting star) বিষয়টির সাথে কোন তারা বা নক্ষত্রের আসলে কোন সম্পর্ক নেই। যখন মহাকাশ থেকে আগত কোন কঠিন বস্তুপিন্ড আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে তখন তাকে বলা হয় ‘মেটেওরয়েড (Meteoroid)’। এবার এই তীব্র গতিসম্পন্ন বস্তুপিন্ড বা ‘মেটেওরয়েড (Meteoroid)’ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করলে বায়ুমন্ডলের সাথে প্রবল ঘর্ষণে তাপ উৎপন্ন করে এবং জ্বলতে শুরু করে। আমাদের আকাশে বা বলা উচিৎ বায়ুন্ডলে এই যে তীব্র জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড/আলোর ঝলকানি দেখতে পাওয়া যায় একে ‘মেটেওর (Meteor)’ অথবা অনেক সময় ‘ফায়ারবল’ও বলা হয়ে থাকে। যদি কোন ‘মেটেওর (Meteor)’-এর কিছু অংশ পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের দিকে তার এই অগ্নিময় যাত্রাপথে ভাগ্যবশত বেঁচে থাকে তখন সেই ভাগ্যবান পিন্ডটিকে বলা হয় ‘মেটেওরাইট (Meteorite)’ বা উল্কাপিন্ড। অর্থাৎ এই তারাখসা বিষয়টি উল্কাপতন ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

যদিও এই উল্কাপতন একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা (Random Event)। কিন্তু উল্কাপতনের যখন কোন ঘটনা দেখতে বা শুনতে পাওয়া যায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যদি কোন উল্কাপিন্ড খুঁজে পাওয়া যায় তখন তাকে ‘Falls’ উল্কাপিন্ড নামে আখ্যায়িত করা হয়। আর আমাদের অগোচরে থাকা কোন উল্কাপিন্ডকে যখন খুঁজে পাওয়া যায় মরুভূমির বুকে বা কোন হিমবাহের জমাট বাঁধা বরফের মধ্যে তখন তাকে ‘Finds’ উল্কাপিন্ড নামে আখ্যায়িত করা হয়।

 

যাই হোক এতো বলা হল উল্কাপতনের ঘটনা। কিন্তু এই উল্কা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এতো উৎসাহিত কেন?

 মানবভ্যতার ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত যে নভোযানগুলো মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে তাদের মধ্যে একমাত্র চাঁদ ব্যতীত অন্য কোন গ্রহ বা উপগ্রহ থেকে সেভাবে কোন নমুনা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নিয়ে আসা সম্ভবপর হয়নি। নাসার ছয়টি অ্যাপোলো মিশনে প্রায় ৩৮০ কিলোগ্রাম শিলা ও ধূলিকণা চাঁদ থেকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা হয়েছিল। এছাড়াও, সোভিয়েত রাশিয়ার বিভিন্ন ‘লুনা’ মিশন, চীনের ‘চাঙ্গে’ মিশনেও চাঁদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। চাঁদ ব্যতীত ‘স্টারডাস্ট’ মিশনে ৮১পি/ওয়াইল্ড নামক ধূমকেতু, জাপানের ‘হায়াবুসা’ মিশনে ‘ইটোকাওয়া’ গ্রহাণু, ‘হায়াবুসা-২’ মিশনে ‘রিয়্যুগু’ গ্রহাণু থেকে মিলিগ্রাম পরিমাণ ধূলিকণার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।

 

সুতরাং, নমুনার অভাব বিজ্ঞানীদের আগ্রহ শতগুণ বাড়িয়ে দেয় উল্কার প্রতি। কারণ, প্রাকৃতিক নিয়মেই উল্কা এসে আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন গ্রহাণু, গ্রহ, উপগ্রহ থেকে।

 

উল্কা কোথা থেকে আসে?

 এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে যেসকল উল্কাপিন্ড পাওয়া গেছে তারা মূলত মঙ্গলগ্রহ, চাঁদ ও বিভিন্ন গ্রহাণু থেকে নির্গত হয়েছে। এখানে পাঠকের প্রতি দুটি প্রশ্ন রাখছি। (১) আমরা কীভাবে জানতে পারি যে, কোন উল্কা মঙ্গল থেকে বা চাঁদ থেকে বা গ্রহাণু থেকে এসেছে? (২) শুক্র বা বুধজাত গ্রহাণু পাওয়া কি সম্ভব পৃথিবীর বুকে? আলোচনা হোক কমেন্টে।

 

উল্কার শ্রেণীবিন্যাস:-

উল্কার শ্রেণীবিন্যাস বিশদে উল্লিখিত। 

উল্কাকে সাধারণত দুটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। (১) Undifferentiated ও (২) differentiated। Undifferentiated হল সেইসকল উল্কা যাদের কোনপ্রকার রাসায়নিক পরিবর্তন হয়নি,সৌরমন্ডলের জন্মকাল থেকেই একই উপাদান নিয়ে এরা বিরাজমান। এদের মূল উপাদান হল ‘কনড্রাইট (Chondrite)’। এরা মূলত পাথুরে প্রকৃতির হয়। আর differentiated হল বাকী সকল উল্কা যাদের রাসায়নিক পরিবর্তন হয়েছে। এরা পাথুরে  ও ধাতব বা লৌহজাত উভয় প্রকৃতির বা উভয়ের মিশ্রণ হতে পারে।

 

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ভারতে যেসকল উল্কাপিন্ড পতিত হয়েছে বা খুঁজে পাওয়া গেছে  সেগুলোকে সংরক্ষণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার হাতে। জিএসআই-এর কোলকাতা পার্কস্ট্রীট সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার অফিসে উল্কার একটি গ্যালারি রয়েছে।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929