দিনটি ছিল ২৩ আগষ্ট ২০১৭। অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরত, কাঁদছিলেন সায়রা বিবি, কাঁদছিলেন নার্গিস, তাবসসুম এর মতন অনেকেই। এই কান্না কোনো দুঃখের নয়, বরং আনন্দের। আজ প্রবল তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই ঐতিহাসিক একটি রায়-এ "তিন তালাক" বাতিল করে ভারতের শীর্ষ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে- “তিন তালাক, অসাংবিধানিক, অবৈধ এবং ইসলামের অংশ নয়”।
প্রধান বিচারপতি জে এস কেহর (শিখ) এর নেতৃত্বে ছিলেন পাঁচজন ভিন্নধর্মমতের বিচারপতির বেঞ্চ। যথা, এস আব্দুল নাজির (মুসলিম), কুরিয়েন জোসেফ (খ্রিস্টান), ইউ ইউ ললিত (হিন্দু) এবং রোহিন্তন ফলি নরিম্যান (পার্সি)। উক্ত পাঁচজন ব্যক্তিরা, আজ তাৎক্ষণিক বা Instant তালাক অর্থাৎ মাথাগরম করে শুধুমাত্র তিনবার তালাক উচ্চারণ করেই যে তালাক দেওয়ার কু-প্রথা সেটাই বাতিলের পথে হেঁটেছেন। যদিও আজ তালাক-এ-বিদ্দত বাতিল হলেও চালু থাকছে, তালাক-এ-এহসান এবং তালাক-এ-সুন্নত।
৩:২ অনুপাতে তিন তালাক মামলার নিষ্পত্তি হল অর্থাৎ তিনজন বিচারপতি পক্ষে এবং ২ জন বিচারপতি বিপক্ষে ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট আরো জানিয়েছে, সরকারকে আগামী ৬ মাসের মধ্যে আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং সরকার যদি এই কাজে ব্যার্থও হয় তাহলেও তিনবার তালাক উচ্চারণ করে কেউই বিবাহবিচ্ছেদ গ্রাহ্য হবে না।
তালাক শব্দের অর্থ বিচ্ছিন্ন, ত্যাগ করা ইত্যাদি। ইসলাম ধর্মে আনুষ্ঠানিক বিবাহবিচ্ছেদকে তালাক বলা হয়। স্বামী সর্বাবস্থায় তালাক দিতে পারেন। স্ত্রী শুধুমাত্র তখনই তালাক দিতে পারবেন, যদি বিয়ের সময় এর লিখিত অনুমতি দেওয়া হয়। পরিভাষায় তালাক এর অর্থ "বিবাহের বাঁধন তুলিয়া ও খুলিয়া দেওয়া, বা বিবাহের শক্ত বাঁধন খুলিয়া দেওয়া "স্বামী তার স্ত্রীর সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়া।
২০০৮ সালের হিসেবে দেখা যায় বাংলাদেশে পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যেই তালাক প্রবণতা বেশি। কারণ পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বর্তমানে নারী মুখবুজে সব অন্যায় অত্যাচার সহ্য করেন না। প্রতিবাদ করেন। ইসলামে তালাকের পর একজন মহিলাকে ইদ্দত পালন করতে হয়। সেই (ইদ্দত কালীন) সময়ের মধ্যে একজন মুসলীম নারীর পুন:বিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ। একজন মুসলীম নারীর জন্য ইদ্দত দুই প্রকার বা ভাগে ভাগ করা সম্ভব। প্রথমত তালাকের পর, একজন মুসলীম নারীকে তার তালাকের পর ৯০ দিন বা তিন চন্দ্রমাস অপেক্ষা করতে হবে। এই ৯০ দিন হচ্ছে ইদ্দত কালীন সময়।
উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে,পদ্ধতিগত দিক দিয়ে তালাক তিন প্রকারঃ- (ক) আহসান বা সর্বোত্তম তালাক, (খ) হাসান বা উত্তম তালাক এবং (গ) বিদ'ই বা শরিয়া বিরূদ্ধ তালাক। আবার, ক্ষমতা বা এখতিয়ার গত দিক দিয়ে তালাক পাঁচ প্রকারঃ- (১) তালাক-এ-সুন্নাত (২) তালাক-এ-বাদী (৩) তালাক-এ-তাফবীজ (৪) তালাক-এ-মোবারত এবং (৫) খোলা তালাক। অন্যদিকে কার্যকর হওয়ার দিক দিয়ে তালাক প্রধানত দুই প্রকারঃ- (১) তালাক-এ-রেজী ও (২)তালাক-এ-বাইন। তালাক-এ- বাইন আবার দুই প্রকারঃ- (১)বাইনে সগির ও (২) বাইনে কবির। মর্যাদা ও অবস্থানের দিক থেকে তালাক চার প্রকারঃ- (১)হারাম (২)মাকরুহ (৩)মুস্তাহাব ও (৪)ওয়াজিব।
২৮ ডিসেম্বর ২০১৮। অনেক আলোচনা, সমালোচনা, তর্ক-বিতর্কের মাঝেই কেন্দ্রীয় সরকার অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদীর সরকার দ্বারা আজ লোকসভায় পাশ হলো তিন তালাক বিল।
তবে শুধু তাৎক্ষণিক তিন তালাক বন্ধের বিল টাই আজ পাশ হয়েছে, তিন তালাক বন্ধের নয় কিন্তু। আমাদের মনে রাখতে হবে, তাৎক্ষণিক তিন তালাক ও তিন তালাক এক নয়। তালাক-এ-বিদ্দত বন্ধের জন্য বিল পাশ করিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীর সরকার কিন্তু বাকি তিন তালাক যেমন চলছে, তেমনই কি চলবে? প্রশ্নটা তুলেছেন বহু বিজ্ঞানমনষ্ক ব্যক্তিরা। তাদেরেই অনেকে জানাচ্ছেন, "আজ লোকসভায় নরেন্দ্র মোদী সরকার তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিল পাশ করানোয় অনেকেই এমন ভাবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে যেন তিন তালাক প্রথাটাই বন্ধ হয়ে ভারত থেকে চিরতরে।"
এইপ্রসঙ্গে জানাই, সংবিধানে উল্লেখিত "ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র" ভারতে তিন তালাক চালু রয়েছে শুধু তাই নয়, তথাকথিত স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরেও ভারতে লাগু আছে শরীয়া আইন- "The Muslim Personal Law (Sharia) Application Act, 1937"। আইনিবিশেষজ্ঞ ওসমান মল্লিক জানাচ্ছেন, ভারতে এই শরীয়া আইন শুধু মুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মূলতঃ বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, দত্তক, অভিভাবকত্ত্ব এর মত বিষয় গুলি শরিয়া আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ক্ষেত্রে এখানে শরীয়া আইন কার্যকরী নয়। মূলতঃ এই আইন দ্বারা ভারতীয় মুসলিম মহিলারা নিষ্পেষিত ও শোষিত।
অন্যদিকে কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তিরা জানাচ্ছে- "তাৎক্ষণিক তিন তালাক ইসলামে তো এমনিতেই অবৈধ এবং নিষিদ্ধ। তাছাড়া পৃথিবীর ২০টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র তাৎক্ষণিক তালাক বহুদিন পূর্বে থেকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
সাংবাদিক শুভজ্যোতি ঘোষ
বিবিসি বাংলা, দিল্লি, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ এর একটি রিপোর্টে লিখেছেন-
"গত বছরের অগাস্টে এক ঐতিহাসিক রায়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে বেআইনি ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে আইন প্রণয়নের ভার তারা ছেড়ে দিয়েছিল সরকারেরই ওপর। এরপর এই প্রথাকে শাস্তিযোগ্য করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার 'দ্য মুসলিম উইমেন প্রোটেকশন অব রাইটস ইন ম্যারেজ অ্যাক্ট' নামে একটি বিলও আনে, যা সাধারণভাবে 'তিন তালাক বিল' নামেই পরিচিতি পায়। গত বছরের ডিসেম্বরে ওই বিলটি ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হয়ে গেলেও রাজ্যসভায় সেটি বিরোধীদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে।
অনেক বিরোধী দলের নেতাই যুক্তি দেন, ভাল করে খুঁটিয়ে দেখার জন্য বিলটিকে একটি সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো উচিত। ওই বাধার মুখে বিলটি পাস করাতে না-পেরে সরকার এখন ঘুরপথে সেটিকে অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে আইনে পরিণত করল। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভারতের আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এরপর বিরোধী কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন,"তাদের দলের সর্বোচ্চ নেত্রী একজন মহিলা (সোনিয়া গান্ধী), তা সত্ত্বেও নিছক ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির জন্য তারা পার্লামেন্টে আইন করে এই বর্বর প্রথা বন্ধ করতে রাজি হলেন না, সেটাই আশ্চর্যের ও দু:খের।" তবে পার্লামেন্টে যে বিলটি আনা হয়েছিল, তার তুলনায় এদিন আনা অর্ডিন্যান্সে শাস্তির বিধান বেশ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। মূল বিলটিতে ছিল তিন তালাক হয়েছে বলে অভিযোগ যে কেউ আনতে পারেন, এমন কী প্রতিবেশীরাও। অর্ডিন্যান্সে অবশ্য বলা হয়েছে কেবল মাত্র তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ও তার রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়রাই অভিযোগ আনতে পারবেন।
এমন কী, তিন তালাক দেওয়া স্বামী যদি আপষ মীমাংসায় রাজি থাকেন, তাহলে স্ত্রী-র সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ারও সুযোগ থাকছে অর্ডিন্যান্সে।
অভিযুক্ত স্বামীর এর আগে জামিন পাওয়ারও কোনও সুযোগ ছিল না। কিন্তু অর্ডিন্যান্সটি বলছে, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর বক্তব্য শোনার পর বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করতে পারবেন। কংগ্রেস এর আগে সরকারকে জানিয়েছিল, তারা পার্লামেন্টে বিলটিকে সমর্থন করতে রাজি - যদি কথা দেওয়া হয় যে তিন তালাক দেওয়ার অভিযোগে কোনও স্বামীর জেল হলে সে সময় তার স্ত্রীর আর্থিক ভরণপোষণের দায়িত্ব সরকারই নেবে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অবশ্য সে প্রস্তাব মেনে নেয়নি। তবে বিলের সমর্থনে তারা বেশির ভাগ রাজ্য সরকারের সমর্থন পেয়েছে বলেই দাবি করছে।
আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এদিন আরও বলেছেন, শুধুমাত্র ভারতের মুসলিম নারীদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তার কথায়, "এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণই জেন্ডার জাস্টিস (সব লিঙ্গের জন্য ন্যায়) নিশ্চিত করার জন্য, এর সঙ্গে ধর্ম বা ভোটের রাজনীতির কোনও সম্পর্কই নেই।" খবরটির লিংক- https://www.bbc.com/bengali/news-45574788
৩০ জুলাই ২০১৯। ভারতের সংসদের উচ্চ কক্ষে তিন তালাক বিল পাশ হয়েছে। বিলটির নাম ‘মুসলিম মহিলা বিল-২০১৯ [The Muslim Women (Protection of Rights on Marriage) Bills, 2019]। এই বিলটির দুটি বিষয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে। যেমন- ৩নং ধারায় বলা হয়েছে, কোনও মুসলিম স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি তালাক উচ্চারণ করলে, তা লিখিত বা যে ভাবেই হোক, সে তালাক বাতিল বা অবৈধ হবে (Sec. 3. Any pronouncement of talaq by a Muslim husband upon his wife, by words, either spoken or written or in electronic form or in any other manner whatsoever, shall be void and illegal.)।
৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, যে কোনও মুসলিম স্বামী উপরের ৩নং ধারা অনুযায়ী তার স্ত্রীর প্রতি তিন তালাক উচ্চারণ করলে সেই স্বামীর তিন বৎসর জেল এবং জরিমানা হবে (Sec. 4. Any Muslim husband who pronounces talaq referred to in Sec. 3 upon his wife shall be punished with imprisonment for a term which may extend to three years and shall also be liable to fine)।
এবারে তুলে ধরছি BBC News, বাংলা'র ৩১ জুলাই ২০১৯ এর অনলাইন পত্রিকার খবর। লিংক- https://www.bbc.com/bengali/news-49174195
"তিন তালাক দিলে তিন বছরের কারাদণ্ড, ভারতে আইন পাস।"'তিন তালাক' প্রথাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য করে একটি আইন অনুমোদন করেছে ভারতের পার্লামেন্ট। মুসলমানদের 'তিন তালাক' প্রথাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য করে একটি আইন অনুমোদন করেছে ভারতের পার্লামেন্ট। এই আইন ভঙ্গ করলে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। প্রথা অনুযায়ী, তিন বার তালাক উচ্চারণ করে, বার্তা পাঠিয়ে বা ইমেইল করে মুসলিম স্বামী তাদের স্ত্রীকে তালাক দিতে পারতেন।
ওই প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে ২০১৭ সালে রায় দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এই আইনের সমর্থকরা বলছেন, এর ফলে মুসলমান নারীরা আরো নিরাপদ হবেন। তবে বিরোধীদের দাবি, ফৌজদারি শাস্তির বিধানের কারণে হয়রানি এবং অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। আইনের এই প্রস্তাবটি ২০১৭ সালেই প্রথম উত্থাপন করা হয়। কিন্তু পার্লামেন্টের রাজ্যসভায় সেটি আটকে যায়, কারণ কোন কোন সংসদ সদস্য প্রস্তাবটিকে অন্যায্য বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ভারতীয় জনতা পার্টি বিলটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, আর প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের অবস্থান বিপক্ষে। তবে রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। মঙ্গলবার বেশ কয়েকজনের ওয়াক-আউট আর অনুপস্থিতিতে এই বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ৯৯ আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ৮৪।
এই ফলাফলকে 'লৈঙ্গিক সমতার' বিজয় বলে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে অনেকে অভিযোগ করছেন, এর মাধ্যমে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি আসলে মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করছে। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন পার্টির এমপি আসাদুদ্দিন ওইসি বলেছেন, নতুন আইনটি মুসলিম সত্ত্বার ওপর বিজেপির আরেকটি আঘাত। দলটি ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে।
এর আগে মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে তিন তালাক প্রথাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ভারতে এই প্রথার ব্যবহার চলে আসছিল, যা বিবাহ এবং বিচ্ছেদের আইনের সঙ্গে খাপ খায় না।
২০১৮ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর তিন তালাক প্রথাকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা একটি অর্ডিন্যান্স বা নির্বাহী আদেশ জারি করে।
তিনবার তালাক উচ্চারণ করে স্ত্রীকে বিবাহ বিচ্ছেদ দিলে এই আইন অনুযায়ী মুসলিম পুরুষদের তিন বছরের জেল ও আর্থিক জরিমানার বিধান থাকছে। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর খোরপোষ পাওয়ারও অধিকার থাকবে। গত বছরের অগাস্টে এক ঐতিহাসিক রায়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে বেআইনি ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে আইন প্রণয়নের ভার তারা ছেড়ে দিয়েছিল সরকারেরই ওপর। এরপর এই প্রথাকে শাস্তিযোগ্য করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার 'দ্য মুসলিম উইমেন প্রোটেকশন অব রাইটস ইন ম্যারেজ অ্যাক্ট' নামে একটি বিলও আনে, যা সাধারণভাবে 'তিন তালাক বিল' নামেই পরিচিতি পায়। ডিসেম্বরে ওই বিলটি ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হয়ে গেলেও রাজ্যসভায় সেটি বিরোধীদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে। তবে এখন সেটি আইনে পরিণত হলো।"
তাৎক্ষণিক তিন তালাক এর মতন অমানবিক কু-প্রথার বিরুদ্ধে বিল পাশ করানো নিঃসন্দেহে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিড়াট বড় সাফল্য। অনেকেই ওনাকে বিদ্যাসাগর, রামমোহনদের মতনই বড় মাপের সমাজ সস্কারক ভাবতে শুরু করেছেন ইতিমধ্যে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আছেন নিজের মধ্যেই। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যা ইসলামে ইতিমধ্যেই বাতিল ও নিষিদ্ধ, যা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশও নয় তাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়, বিল পাশ করানো এবং গেরুয়া শিবিরের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস, সত্যিই হাস্যকর। নরেন্দ্র মোদী সরকার কেন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড লাগু করতে উদ্যোগী নন? কেন শুধু তালাক-এ-বিদ্দত? কেন তালাক-এ-আহসান এবং তালাক-এ-সুন্নতকেও পুরোপুরি বাতিল করার বিল পাশ করানোর উদ্যোগ নেই প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীর?
কলকাতা নিবাসী একজন গুণী বাঙালি লেখক জানিয়েছেন, "ভারতের সর্বশেষ ২০১১ আদমসুমারি অনুযায়ী ২৩ লক্ষ ৭০ হাজার মহিলা বিবাহ বিচ্ছিন্না ছিলেন, যাদের মধ্য ১৯ লক্ষ হিন্দু মহিলা এবং মুসলিম বিবাহ বিচ্ছিন্না মহিলা ছিল ২৮ হাজার। এই ২৮ হাজার মুসলিম মহিলাদের কতজন তাৎক্ষণিক তিন তালাকের শিকার ছিলেন তার কোনও সরকারি তথ্য নেই। তবে ১৯ লক্ষ হিন্দু বিবাহ বিচ্ছিন্না মহিলাদের কেউ তিন তালাকের শিকার ছিলেন না, এ বিষয়ে দ্বিমত চলে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মুসলিম মহিলাদের কথা ভেবে তিন তালাক বিল পাশ করাতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন যা খুবই ভালো পদক্ষেপ কিন্তু শুধু মুসলিম মহিলাদের সাথে হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী মহিলাদের দিকটাও যেন উনি ভাবেন।"
তাৎক্ষণিক তিন তালাক বন্ধের বিল পাশ করে তিন তালাক বন্ধের কথা প্রধানমন্ত্রী বলছেন। তবে এটার জন্য বিল পাশ করার কোন দরকার নেই। সরকার যদি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিল পাশ করতেন তাহলে আর কোন বিলের এ ব্যাপারে প্রয়োজনই ছিলোনা। যারা বিল পাশ করছেন তারা সব বোঝেন, কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর অন্ধভক্তরা এসব কবে বুঝবেন? প্রশ্ন উঠেছে, মুসলিম পার্সোনাল ল-বোর্ড এর আচরণ, 'দ্য মুসলিম ওম্যান বিল ২০১৭ 'এর উদ্দেশ্য, অবিজেপি রাজনৈতিক দলের আলপটকা মন্তব্য এবং ভূমিকা নিয়েও (জানিনা কেন হটাৎ রাহুল গান্ধী ২০১৯ সালে মন্তব্য করেছিলেন-কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে তিন তালাক আইন বাতিল করবেন)। আপাতত তিন তালাক বিলটি জম্মু কাশ্মীর বাদে পুরো ভারতেই চালু হবে। সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের রায়ই দেশের আইন। সেই অনুযায়ী তাৎক্ষণিক তালাক এখন বৈধ বা গ্রাহ্য নয়।
২০১৯ সালে, জনৈক ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হওয়া একটি ভাইরাল পোস্টে তুলে ধরলাম - "সংসদের উভয় কক্ষেই ইতিমধ্যে পাশ হয়ে গিয়েছে তিন তালাক বিল। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়ে বুধবার থেকেই তা পরিণত হয়েছে আইনে। এই আইন মোতাবেক কোনও ব্যক্তি যদি তাঁর স্ত্রীকে তাৎক্ষনিক তিন তালাখ দেন তাহলে তিন বছর পর্যন্ত কারাবাসের সাজা হতে পারে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিলটির প্রধান চারটি বৈশিষ্ট।
তাৎক্ষনিক তিন তালাখ এখন একটি ফৌজদারি অপরাধ। এর সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের জেল। অভিযুক্ত স্বামী আদালতে জামিনের আবেদন জানালে শুধুমাত্র পুলিশের বক্তব্য শুনেই তার ফয়সালা করতে পারবেন না বিচারক। তিন তালাক আইনের সেকশন ৭ (সি) অনুযায়ী যে মহিলাকে তাৎক্ষনিক তিন তালাখ দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ অভিযুক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর বক্তব্যও এক্ষেত্রে শোনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শুধু বাধ্যতামূলক নয়, সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে অভিযোগকারিণী মহিলার বক্তব্যকেই।
আইনের ভাষায় তিন তালাক দেওয়া একটি কম্পাউন্ডেবেল অপরাধ। অর্থাৎ অভিযোগকারিণী যদি চান, সেক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পেতে পারেন অভিযুক্ত স্বামী। তিন তালাক আইনের ৭ (বি) ধারায় বলা হয়েছে অভিযোগকারিণী স্ত্রী যদি চান তাহলে তিনি তাঁর স্বামীকে অভিযোগ থেকে মুক্ত করতে পারেন। যদিও বিচারক মনে হলে কিছু বাড়তি শর্তাবলিও যুক্ত করতে পারেন অভিযুক্তের মুক্তির ক্ষেত্রে।
তিন তালাক আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি যদি তাঁর স্ত্রীকে আইন মেনে তালাক দেন, তাহলে সেই দম্পতির নাবালক সন্তানদের নিজের হেফাজতে চাইতে পারবেন না স্বামী। এছাড়াও নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য স্বামীর থেকে খোরপোশ পাবেন স্ত্রী। কেবল মাত্র নাবালক সন্তানদের জন্যই নয়, বাকি নির্ভরশীল সন্তানদের জন্যও খোরপোশের আবেদন জানাতে পারবেন বিবাহ বিচ্ছিন্না স্ত্রী।
এছাড়াও বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আনতে আইনে বলা হয়েছে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসেই হবে তালাক মামলার শুনানি। দাম্পত্য বিবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় দেখা গিয়েছে বাড়ি থেকে আদালতের দুরত্ব বেশি হওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অসুবিধায় পড়েন মহিলারা। সেই সমস্যার সুরাহা করতেই সরকারের এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।"
অন্যদিকে ভারতে বসবাসকারী সেইসব ধর্মপ্রাণ মুসলিম ব্যক্তিদের (যারা নিজেদেরকে সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে দাবী জানান)ও আজ এটা বুঝে নেওয়া বিশেষ প্রয়োজন যে, তিন তালাক যখন ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয় এবং ইসলাম একে সমর্থনও করেনা তখন আপনাদেরই উচিৎ এগিয়ে আসা এবং এর বিরোধিতা করা। মনে রাখবেন সরকারের দুর্নীতি, শোষণ, ফ্যাসিবাদ, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ইত্যাদি কাজকর্মের বিরোধীতা এবং একটি প্রাচীন কু-প্রথা বাতিলের বিরোধীতা এক জিনিস নয়। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই, আরব অঞ্চলে 'ইদ্দা' নামক এক ধর্মীয় বিধান রয়েছে। এই বিধান মতে, স্বামী তার স্ত্রীকে তিন মাসের জন্য 'তালাক ' দিতে পারে এবং তিন মাস পরে আবার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে গ্রহণ করতে পারে। এই মধ্যবর্তী সময়ে স্বামী কোনও নারীকে স্ত্রী করে তার চারটি স্ত্রী রাখার ধর্মীয় অধিকার বজায় রাখতে পারে। ধর্মের সূত্র ধরে মরোক্কোর সংবিধানে স্ত্রীকে স্বামীর আইনি ক্রিতদাসী করা হয়েছে। ও দেশের সংবিধানে বলা হয়েছে -স্ত্রী বাধ্য ও বিশ্বস্ত থাকবে স্বামীর কাছে, স্বামীর পিতা-মাতা ও আত্বীয়স্বজনের সম্মান রক্ষা করবে। স্ত্রী যদি তার মা- বাবাকেও দেখতে চায়, তাহলে স্বামীর অনুমতি নিতেই হবে (সূত্র- The Sisterhood of Man, by Newland Kathleen : W.W.Norton & Co..New York : 1979, Page- 24)। আপনারা যদি সত্যিই নারীকে "মানুষ" হিসেবে মনে করেন, যদি আপনারা নারী প্রগতি ও নারীপুরুষের সাম্য চান তাহলে সমস্তরকম কু-প্রথা, যুক্তিহীন ধর্মীয় বিশ্বাস বা আচার অনুষ্ঠান এবং কুসংস্কারের বিরোধীতা করুন। তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের উচিৎ, সুপ্রিম কোর্টের রায় ও পাশ হওয়া এই বিলটিকে সম্মান জানানো।
তিন তালাক এবং ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা হচ্ছিল ওসমান মল্লিক সমেত কয়েকজন সংবিধান এবং আইনিবিশেষজ্ঞদের সাথে। এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সম্পর্কে ওসমান বাবু জানিয়েছেন -
"সংবিধানের খসড়া বা ড্রাফটে ইউনিফর্ম সিভিল কোড ছিল ৩৫ নম্বর আর্টিকেল এর অন্তর্গত। সংবিধান সভায় এটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। মুসলিম সদস্যদের দিক থেকে এর জোরালো প্রতিবাদ হয়। বেশিরভাগ মুসলিম সদস্যদের বক্তব্য ছিল মুসলিম ব্যক্তিগত আইন অলঙ্ঘনীয়। এই আইনে কোনো পরিবর্তন আনা যাবেনা। তাই ইউনিফর্ম সিভিল কোড এর কথা সংবিধানে থাকা চলবেনা।
২০১১ সালে সেকুলারিজম এর আদর্শকে পাথেয় করে আমরা একটি সংগঠন গড়ি। নাম- 'সেকুলার মিশন'। মূলত : সেকুলার স্টেট ও সেকুলার ফ্যামিলি এর আদর্শেকে প্রচারের উদ্দেশ্যেই এই সংগঠন। এরই মাঝে আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম - ইউনিফর্ম সিভিল কোড এর ড্রাফট তৈরীর। আপনাদের সকলকে জানাই সেই ড্রাফট এখন রেডি। A Complete Draft of Uniform Civil Code of India 06th December 2021 জমা পড়েছে law Commission সহ বিভিন্ন দপ্তরে। Marriage, Divorce, Maintenance, Succession, Adoption ও Guardianship -এই সব কটি বিষয়ই এই কোডের অন্তর্গত। রয়েছে ১১৫ টি সেকশন ও ৫টি তপশীল।
কি আছে এই ড্রাফটে? চেষ্টা করছি আমরা একটি বাংলাতে বই বের করার। তার পরিশিষ্ট অংশ থাকবে এই ড্রাফট। সব ঠিক ঠাক এগোলে আগামী বইমেলাতেই আপনারা হাতে পাবেন এই বইটি। এখানে এই খসড়ার দু একটি সেকশন তুলে ধরছি :
1. (2): It extends to the whole of India, and applies to all citizens of India, irrespective of their religion, caste, creed, and custom
3. (b) any other law in force immediately before the commencement of this Act shall cease to apply in so far as it is inconsistent with any of the provisions contained in this Act.
(c) any practice, custom, or usage, in contravention of this Act, shall be treated null &void, ineffective, and illegal.
(d) there is no bar to practicing rituals or customs, subject to public order, decency, morality, and mutual consent of the parties, but no such customs or rituals shall have the status of Law.
লেখাটি শেষ করবার আগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে আরেকবার চোখ বোলানো যাক।
১) ৩১ জুলাই ২০১৯-তিন তালাক বিরোধী আইন পাশ করেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। এর পুরো নাম- "The Muslim Women (Protection of Rights on Marriage) Bills, 2019"। ২০১৭-র ১৮ মে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে এই আইন পাশ হয়।
২) ২০১১-র জনগণনা অনুসারে দেশের আট শতাংশ মহিলা মুসলিম। ১৫ অক্টোবর, ২০১৫- বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে মুসলিম মহিলারা বৈষম্যের শিকার কি না তা দেখার জন্য প্রধান বিচারপতিকে জানায় সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
৩) ফেব্রুয়ারি, ২০১৬- উত্তরাখণ্ড ভারতের বাসিন্দা শায়রা বানু একটি পিটিশন দায়ের করেন ৷ তিনি আদালতকে জানান, উত্তরাখণ্ডে বাপের বাড়িতে গেছিলেন চিকিৎসার জন্য। সেইসময় তাঁর শওহর অর্থাৎ স্বামী তাঁকে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে তাৎক্ষণিক তালাক দেন শায়রার শওহর এরপর ১৫ বছর ধরে শওহরের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তিনি ৷ এমনকী তাঁর সন্তানদের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন শায়রা। শায়রার শওহর এলাহাবাদে থাকতেন ৷ আদালতের কাছে তাৎক্ষণিক তিন তালাক বন্ধের আর্জি জানান তিনি পাশাপাশি শায়রা জানান, মুসলিম ব্যক্তিরা তাঁদের বিবিদের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করেন। ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬- অ্যাটর্নি জেনেরাল মুকুল রোহাতগিকে এই বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেন।
৪) ২৮ মার্চ, ২০১৬- ‘মহিলা এবং আইন : পারিবারিক আইনের মূল্যায়ন এবং বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব ও উত্তরাধিকার সম্পর্কিত আইনের উপর লক্ষ্য’-বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের রিপোর্ট তৈরির জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। স্বতঃপ্রণোদিত এই মামলায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (AIMPLB)-এর মতো বহু সংস্থাকে যুক্ত করে শীর্ষ আদালত ৷
৫) ২৯ জুন, ২০১৬- সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ‘‘সাংবাধিনাকি পরিকাঠামোর কষ্টি পাথর’’-এ বিচার হবে ‘তিন তালাক’। ৭ অক্টোবর, ২০১৬- সাংবিধানিক ইতিহাসে প্রথমবার শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রীয় সরকার তিন তালাকের বিরোধিতা করে। লিঙ্গ-বৈষম্য ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো বিষয়ে ভেবে দেখার কথা জানায় কেন্দ্র। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭- মূল মামলার সঙ্গে আরও কয়েকটি আলোচনামূলক আবেদন যুক্ত করার অনুমতি দেয় শীর্ষ আদালত। ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭- পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ গড়ে সুপ্রিম কোর্ট। ওই বেঞ্চে তিন তালাক ও নিকাহ হালালা সংক্রান্ত যাবতীয় শুনানি ও আলোচনা হয়।
৬) মার্চ, ২০১৭ - AIMPLB সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, তিন তালাকের বিষয়টি বিচার ব্যবস্থার এক্তিয়ারের মধ্যে পরে না। ১৮ মে, ২০১৭- তিন তালাক সংক্রান্ত মামলার রায়দান স্থগিত রাখে। ২২ অগাস্ট, ২০১৭- তিন তালাককে বেআইনি বলে ঘোষণা করে শীর্ষ আদালত এবং কেন্দ্রকে এই বিষয়ে আইন পাশ করানোর কথা জানায়। ডিসেম্বর, ২০১৭- লোকসভায় পাশ হয় মুসলিম মহিলা (বিবাহের অধিকারের সুরক্ষা) বিল।
৯অগাস্ট, ২০১৮- তিন তালাক বিলের সংশোধনীতে অনুমতি দেয় কেন্দ্র। ১০ অগাস্ট, ২০১৮- রাজ্যসভায় পেশ করা হয় তিন তালাক বিল। সমর্থন না পাওয়ায় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন পর্যন্ত পিছিয়ে যায় বিল পাশ ৷১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮- মন্ত্রিসভায় অর্ডিন্যান্স পাশ হয় ৷ তিন তালাককে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং অপরাধ প্রমাণ হলে তিন বছরের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
৭) ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮- বিরোধীরা রাজ্যসভার নির্বাচিত প্যানেলের দ্বারা বিলের পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায়। ২০ জুন, ২০১৯ - রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সমস্ত রাজনৈতিক দলকে তিন তালাক বিল পাশের আর্জি জানান। ২০ জুন, ২০১৯ - রাজ্যসভায় পেশ হয় মুসলিম মহিলা (বিবাহের অধিকারের সুরক্ষা) বিল। ২১জুন, ২০১৯- লোকসভায় পেশ হয় মুসলিম মহিলা (বিবাহের অধিকারের সুরক্ষা) বিল ৷ ২৫ জুন, ২০১৯- বিরোধীরা ওয়াক-আউট করে ৷ লোকসভায় পাশ হয় তিন তালাক বিল।
৮) ৩০ জুলাই, ২০১৯- রাজ্যসভায় পাশ হয় তিন তালাক বিল। অবশেষে ১ অগাস্ট, ২০১৯ - মুসলিম মহিলা (বিবাহের অধিকারের সুরক্ষা) বিল বলবৎ হয়। তিন তালাক কে বেআইনি ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট।
পরিশেষে শুধু একটাই কথা রয়ে যায়, যা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলে গেছেন। উনি বলেছিলেন - "বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে, আমরা তখনও বসে/ বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি, ফিকাহ ও হাদিস চষে।"