1. পুজোর পৌরাণিক বৈদিক শাস্ত্রীয় মত:
ছট পুজো এই উপমহাদেশের একটি পরিচিত একটি পুজোতে বললেই চলে। হিন্দু বর্ষপঞ্জীর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে উদযাপিত একটি পুজো! যা বিহারে শুরু আমরা তাই জানি সূর্য্যোপাসনার এই অনুপম লৌকিক উৎসব পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে এই পার্বণ প্রবাসী ভারতীয়দের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত হয়েছে। ছটে কোনও মূর্তি পূজা করা হয় না। কিন্ত এই পৌরাণিক হিন্দুধর্মের এই পুজোর কোনো শাস্ত্রীয় প্রমাণ আমি পাইনি...
রামায়ণে উল্লেখ থাকা মতে, রামের কুলদেবতা সূর্য্যের জন্য রাম এবং সীতা এই পূজা করেছিলেন। মহাভারতে উল্লেখ থাকা মতে, দ্রৌপদী ধম্য ঋষির উপদেশ মতে সূর্য্যকে আরাধনা করে অক্ষয় পাত্র লাভ করেছিলেন। সঙ্গে মহাবীর কর্ণের কোমর পর্যন্ত জলে নেমে সূর্য্যের উপাসনা করা উল্লেখ আছে। তবে আমরা যখন মহাভারত রামায়ণ পড়ি তখন এই ছট পুজোর নিয়ম আলাদা” তার কারণ এই পুজো শুধুমাত্র ক্ষত্রিয়দের ছিল। শূদ্র বৈশ্য ব্রাহ্মণদের ও নয়। তবে এই পুজো পৌরাণিক নয়। বৈদিক যেহেতু মূর্তি পুজো নেই। ঋগ্বেদের শ্লোকসমূহে সূর্য্যবন্দনার স্পষ্ট নিদর্শন আছে। তবে যজ্ঞ ও আহুতি দিয়ে, কিন্ত এখানে কোনো যজ্ঞ নেই। এক কথায় ভিন্ন সব কিছুই। বৈদিক ব্রাহ্মণ্য ধর্ম মতে এই পুজোর এমন রুপ পাওয়া যায়নি। যা বর্তমানে পুজার রুপ! তবে বেদ আরণ্যক ব্রাহ্মণ গ্রন্থে কোথাও এই পুজোর তথ্য নেই।
2 ||ঐতিহাসিক ও যুক্তির দিক)
এই পুজোর কোনো যুক্তি নেই আছে শুধুই জল দূষণ। এবং পরিবেশের ক্ষতি, আপনি হয় জানেন বিগত বছর ধরে রবীন্দ্র সরোবরের ঘটনা যা হাইকোর্টেও বেশ চলছিল। জল দূষণ নিয়ে। পৌরাণিক বৈদিক তথ্য এই পুজোর সঠিক কোনো অস্তিত্ব নেই। আর থাকবেও না যখন আমরা ঐতিহাসিক তথ্য দেখব এই ছট পুজোর কোনো অস্তিত্ব নেই। বিহারের পুরাতন নাম মগধ পাটালিপুত্র যা বৌদ্ধদের ইতিহাস দখল করে আছে। আর ছট পুজোতে স্তুপ এর ব্যবহার থাকে যা পুজো হয়। আমরা যারা বৈদিক ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও জৈন বৌদ্ধ আজিকাদের নিয়ে পড়াশোনা করি। তারা সবাই জানে জৈন বৌদ্ধদের কোনো না কোনও উৎসব রীতি ইতিহাস দখল করা ব্রাহ্মণদের।
আর বলে রাখি এই পুজো ব্রিটিশ সময়কালে শুরু বললেই চলে। আমরা যখন ইতিহাসের দিকে তাকাই তখন পৃথিবীর ভিন্ন স্থান থেকে বুদ্ধ অশোক সময়কালে অনেক কেউ এই ভারতে পড়াশোনা করতে আসত অনেক জ্ঞান তারা নিয়ে যেত গ্রীকের মেগাস্থিনিস চীনের হিউয়েন সাঙ ও আরবের আল বুরুনির মত ব্যক্তিরা ভারত ভ্রমণ করে তারা নিজেদের বইতে ভারত নিয়ে অনেক কথা লিখেছেন। যার মাধ্যমে আমরা সেই সময়কার ভারতের কথা জানতে পারি। তবে মেগাস্থিনিস, হিউয়েন সাঙ, আল বুরুনি কেউ এই ছট পুজোর কথা লেখেনি। এমন কি সংস্কৃত নামক বঙ্গদেশে মহা পন্ডিত বানভট্ট মহাশয় এই পুজো লেখেনি। না লিখেছে গৌড়ের রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেব তার কর্তৃক সংস্কৃত ভাষায় রচিত গীতগোবিন্দম্ মহা কাব্য জয়দেব কে বাদ দিলেও বিষ্ণু বর্মা, এমন কি মাধবাচার্য আদি শঙ্করাচার্য কেউই এই পুজোর ইতিহাস লেখেনি।
এই পুজো বৌদ্ধদের স্তুপ দখল করে চলছে রমরমিয়ে পুজো যা ব্রিটিশ সময় কাল থেকেই আমরা দেখি এর ইতিহাস যা। অনেকেই জানে না। জানার কথা নয়, প্রশ্ন করার মতো সবার জ্ঞান চাই যা আমাদের চোট থেকে ধার্মিক তৈরি করে প্রশ্ন করার যায়গা শেষ করা হয়। যেমন গীতা 4:40 তে বলা হয়েছেম ‘যারা সংশয়বাদী হবে শাস্ত্র ও গুরুর কথার উপর তারা দুঃখ ভোগ করবে।’ এর জন্য ব্রাহ্মণরা নতুন নতুন ভগবানের আমদানী করে থাকে যা তাদের জন্য সারা বছরের জীবিকা হয়ে ওঠে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের বললেও ভুল হবে। বৈশ্যদের জন্যও নানান বৈদিক পৌরাণিক পুজোর থেকে কেনা-বেচা চলে নানান সামগ্রী কিন্ত এতে আমাদের ভারত আরও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হচ্ছে। বুদ্ধ বা মহানবীর সব সময়ই শিক্ষার কথা বলছে এইসব কুসংস্কারের কথা নয়। তাদের অস্তিত্ব শেষ করতে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা এইসব পুজো শুরু করছে। আর ব্রাহ্মণ্যবাদীদের আরো শক্তিশালী করছে! মুসলিমরা তারাও ভয় পেয়েছে। বৌদ্ধ ও জৈনদের ঈশ্বরহীন ধর্ম কে। সেজন্য দেখি বৌদ্ধদের অনেক কিছুই মুসলিম ও ব্রাহ্মণরা মিলে ধ্বংস করেছে। মুসলিম শাসন কালে অনেক ব্রাহ্মণ শাস্ত্র রচনা বচন করা হয়েছে। তার তথ্য আমি আবার লিখব লাইভ আলোচনাও করবো ঐতিহাসিক তথ্য দিয়ে, তবে এই দখলের ইতিহাস আজকের নয়। নিজেকে প্রশ্ন করুক নিজেকে জানার চেষ্টা করুন, এটাই বুদ্ধ বলেছেন। আমাদের কুসংস্কার মুক্ত হতে হবে।