পর্ব - ১
"ব্রহ্ম সত্য অগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ।
ইদমেব তু সাত্রমিতি বেদান্ত ডিণ্ডিমঃ।।"
২১ (ব্রহ্ম জ্ঞানাবলী মালা)
এই শ্লোকের সরল অর্থ- "ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা, জীব স্বরূপ, ব্রহ্ম হতে জীব ও জগতের পৃথক কোন সত্তা নাই।
#“ঈশ্বর আছে বলা যেমন বিশ্বাস, নেই বলাও তেমনি একটি বিশ্বাস।” বা “নাস্তিকদের ‘বিশ্বাসের’ ভিত্তিতে একটি বিশ্বাস বা আরেকটি ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা। এগুলো ভুল ধারনা, কিছু নাস্তিকও নাস্তিকতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত পড়ালেখার অভাবের কারণে এই ভুলটি বলে থাকেন। ভারতবর্ষে উদ্ভূত দর্শনসমূহকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় আস্তিক ও নাস্তিক। যে দর্শন বেদকে প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করে তা আস্তিক। সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত এই ছয়টি আস্তিক দর্শন এবং এগুলিকেই একত্রে বলা হয় ষড়দর্শন।
আর চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন বেদে বিশ্বাসী নয় বলে এগুলি নাস্তিক দর্শন হিসেবে পরিচিত। উলে¬খ্য যে, আস্তিক-নাস্তিকের ক্ষেত্রে ঈশ্বরে বিশ্বাস-অবিশ্বাস কোনো কারণ নয়, যেমন ষড়দর্শনের মধ্যে সাংখ্য ও মীমাংসা জগতের স্রষ্টারূপে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, অথচ উভয়ই বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করে। বৈশেষিক দর্শনেও সরাসরি ঈশ্বরের কথা নেই। সাংখ্য ও যোগ জগতের স্রষ্টা হিসেবে পুরুষ ও প্রকৃতিকে স্বীকার করলেও যোগ ঈশ্বরের স্বতন্ত্র সত্তায় বিশ্বাসী। ন্যায় আত্মা ও ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়েও জগতের স্বতন্ত্র সত্তাকে স্বীকার করে এবং বেদান্ত ঈশ্বর (সগুণ ব্রহ্ম) তথা ব্রহ্মে (নির্গুণ) বিশ্বাসী; বেদান্তমতে ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, আর সব মিথ্যা। ফলে দেখা যায় যে, একই উৎস থেকে জন্ম হলেও আস্তিক দর্শনগুলির মধ্যে কোনো কোনো বিষয়ে অমিল রয়েছে এবং জগৎ ও জীবন সম্পর্কে সেগুলি ভিন্ন ভিন্ন মতামত পোষণ করে।
চার্বাক দর্শন না নাস্তিক দর্শন জড়বাদী। চার্বাক বা নাস্তিক দর্শন যে অতি প্রাচীন। প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থ ও সাহিত্যে,মহাভারতে এই মতের উল্লেখ পাওয়া যায়। জড়বাদী দর্শন ঘোরতর বেদ-বিরোধী এবং বেদ নিন্দুক তাই মনুস্মৃতি তে মনু মহারাজ বলেছেন "নাস্তিকো বেদনিন্দুকঃ"-অর্থাৎ যে বেদ নিন্দা করে (অপমান, ত্যাগ অথবা বিরূদ্ধাচরণ)। কেউ যদি চেতন-সত্ত্বা কে অস্বীকার করে জড়বাদী হয়, তা তার বুদ্ধি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা।
চার্বাক মতে, পাপ নেই,পুণ্য নেই। পাপ-পুন্যের কর্মফল ভোগও নেই। অতিপ্রাকৃত কিছুই নেই। ঐহিক ইন্দ্রিয় সুখই একমাত্র সুখ। দেহের মৃত্যুর পর আর কিছুই থাকে না। ইন্দ্রিয়লিপ্সু সাধারণ মানুষের কাছে চার্বাক নিতি খুবই হৃদয়গ্রাহী বা মনোরম, বর্ত্তমানে বিশেষত যারা ইসলাম ত্যাগ করে দিশেহারা (দিগ্ভ্রান্ত)। সহজ কথায় বেদ, উপনিষদ, ব্রাহ্মনগ্রন্থ, আয়ুর্বেদ.. ভারতীয় দর্শনের মূল চিন্তাভাবনা থেকে চার্বাক, নাস্তিকতা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন। এই দর্শনের কথা হল-কামের (ইন্দ্রিয়-সুখ) চরিতার্থই মানুষের জীবনের চরম লক্ষ্য বা পরমপুরুষার্থ যা অন্যান্য দর্শন ও বৈদিক শাস্ত্রে ত্রিবিধ দোষ থেকে মুক্তির উপায় বা মোক্ষ প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে। এই দর্শন বলে-যতদিন বাঁচবে ভোগ-সুখে বেঁচে থাক, প্রয়োজন হলে ঋণ করেও ঘি খাও। জীবনে খাও-দাও ফূর্ত্তি কর, কেননা আগামীকালই তোমার মৃত্যু হতে পারে। ভবিষ্যতের না-পাওয়া সুখের মিথ্যা ছলনায় বর্ত্তমানকে ত্যাগ করো না। বাকী কিছু বৈদিক মান্যতা গ্রহণ করে তাঁরা এটা মানে সুখই স্বর্গ, দুঃখই নরক কিন্তু সুখের পরিভাষা তাঁদের আলাদা।
এই মতে দেহাতিরিক্ত আত্মা নেই, দেহের সুখই আত্মার সুখ। কোন কারণেই নিজেকে ইহলৌকিক সুখ থেকে বঞ্চিত করো না। সাধারণ লোকের কাছে এই ধরনের কতা শ্রুতিমধুর বা চারুবাক্ বলে এই দর্শনের নাম "চার্বাক" হয়েছে। তবে অনেক পন্ডিতের মতভেদ আছে "চার্বাক" নামের উৎপত্তি বিষয়ে।
যেমনঃ "চর্ব"-ধাতুর অর্থ হল "খাওয়া দাওয়া করা বা চর্বণ করা"। এই দর্শনের খাওয়া দাওয়াকে, ইন্দ্রিয়-সুখকে, জীবনের পরমপুরুষার্থ বা কাম্যবস্তুরূপে মনে করে বলে এর নামকরণ "চার্বাক" হয়েছে। চার্বাকের একটি নীতিবাক্য হল "যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ ঋনং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ"। আবার অনেকের মতে এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা দেবগুরু বৃহস্পতি। চারু শব্দের একটা অর্থও বৃহস্পতি। তাহলে "চারুর্ বাক্" অর্থাৎ "বৃহস্পতির কথা"। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে এই দর্শন অনুসরণ করে অসুরকুল যাতে সমূলে ধ্বংস হয় তার আয়োজন। এই দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায় আছে যথাঃ বৈতন্ডিক, ধূর্ত, সুশিক্ষিত।
এই জ্ঞানতত্ত্বের সার কথা হলঃ (ক) প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ [প্রত্যক্ষমেকৈব্-Perception is the only source of Knowledge], চার্বাকের এই মত মানলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। দৈনন্দিন জীবে ধূম দেখে বহ্নির অনুমান না করলে চলে না। লোকযাত্রা নির্বাহের জন্য তাই প্রত্যক্ষ-অতিরিক্ত অনুমানকেও স্বীকার করতে হয়। (খ) অনুমান প্রমাণ নয়, (গ) আগম বা শব্দ প্রমাণ নয়, (ঘ) বেদবাক্য, শ্রুতিবাক্য প্রভৃতি নির্ভরযোগ্য় নয় কোন বিজ্ঞানীর শ্রুতি বাক্য বা অনুমান তাঁর মান্যতাদেয়। প্রত্যক্ষের অর্থ প্রথমত অনুভব {ইন্দ্রিয়-অভিজ্ঞতা, ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সন্নিকর্ষ(যোগ) জনিত অনুভব}, দ্বিতীয় প্রত্যক্ষ অপরোক্ষ অনুভব [টেবিল দেখে টেবিলের যে জ্ঞান তা অন্য কোন জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে না],তৃতীয় প্রত্যক্ষ সম্যক অনুভব [সম্যক অর্থে সংশয়শূন্য ও বিপর্যয়শূন্য। অনিশ্চিত জ্ঞান হচ্ছে সংশয়। যেমন- ঐ বস্তুটি মূর্ত্তি, না মানুষ ? মিথ্যা জ্ঞানকে বলে "বিপর্যয়"-আকাশে দুটি চাঁদের জ্ঞান]। প্রত্যক্ষ দ্বিবিধ-বাহ্যপ্রত্যক্ষ [চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক-এই পাঁচটি বাহ্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বাইরের জগতের যে সাক্ষাৎ] ও মানসপ্রত্যক্ষ [মনের সাহায্যে সুখ, দুঃখ প্রভৃতি মানসিক অবস্থার সাক্ষাৎ]।
ন্যায় দর্শন বা বৈশেষিক দর্শনের সমস্ত প্রামাণ কে চার্বাক দর্শন গ্রহন করে না, বৈদিক দর্শন শাস্ত্রে "প্রত্যক্ষ" শব্দটি-কে যেমন যথার্ত জ্ঞান লাভের উপায় অর্থে ব্যবহার করা হয় তেমনি আবার 'যথার্থজ্ঞান' অর্থেরও ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ "প্রত্যক্ষ" শব্দটি একই সঙ্গে "প্রমাণ" এবং "প্রমা" অর্থে ব্যবহার করা হয়।
চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষ আবার সবিকল্প অথবা নির্বিকল্প হতে পারে[যেমন- আমি "একটা কিছু" দেখেছি, কিন্তু সেটা কি বস্তু, সে জ্ঞান একনও হয়নি]। যাই হোক অন্যান্য দর্শন শাস্ত্রে প্রত্যক্ষকে প্রমাণরূপে স্বীকার করলেও একমাত্র প্রমাণরূপে স্বীকার করেন না। চার্বাক মতে পরোক্ষ জ্ঞান অস্পষ্ট ও অযথার্থ, এই যুক্তি তে প্রত্যক্ষ জ্ঞানকেও অযথার্থ বলতে হয়, কেননা প্রত্যক্ষজ্ঞানও পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ জ্ঞান ইন্দ্রিয়-নির্ভর, তাই তা পরোক্ষ তা অযথার্থই।
আবার দেখুন নাস্তিক চার্বাক মতে "সকল ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ জ্ঞান যথার্থ"-সকল ক্ষেত্রেই বলতে বর্তমান,অতীত ও ভবিষ্যতের প্রত্যক্ষ-জ্ঞান বোঝায়, যা প্রত্য়ক্ষের দ্বারা যাচাই করা যায় না। তাহলে মানতে হয় যে, চার্বাকরা প্রত্যক্ষ ছাড়াও অনুমানকে প্রমাণরূপে স্বীকার করেছেন। চার্বাক মতে, 'অনুমান ও শব্দ" প্রমাণ নয়, যেখানে ঋষি বাক্যও বৈদিক সংস্কৃতিতে শব্দ প্রমাণ মানা হয়। চার্বাক মতে অনুমান ও শব্দ-প্রমাণ অনেক সময় ভ্রান্ত জ্ঞান দেয়। একই যুক্তিতে প্রত্যক্ষেও প্রমাণরূপে প্রহণ করা যায় না, কেননা প্রত্যক্ষজ্ঞানও অনেক সময় ভ্রান্ত হয়। রুজ্জুতে সর্পভ্রম হয়, শুক্তিতে (মুক্তো) রজত (রৌপ)-ভ্রম হয়।
চার্বাক মতে অনুমান প্রমাণ নয়, কেননা অনুমানের দ্বারা "প্রমা" অর্থাৎ নিঃসন্দিগ্ধ জ্ঞানলাভ হয় না। ধূম দেখে বহ্নির যে জ্ঞান তা অনুমানলব্ধ জ্ঞান। এ জ্ঞান প্রত্যক্ষজ্ঞানের মতে কখনই নিঃসন্দগ্ধ হতে পারে না। অনুমান ব্যাপ্তিজ্ঞানের ওপর নির্বর করে। ব্যপ্তি হল হেতু ও সাধ্যের মধ্যে নিয়ত সহচর-সম্বন্ধ। দূরের পাহাড়ে ধূম দেখে যখন "সেখানে আগুন আছে" বহা হয়, তখন তা হল অনুমান। এখানে অনুমান প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপঃ
ঐ প্রর্বতটি ধূমযুক্ত
যে যে বস্তু ধূমযুক্ত সেই সেই বস্তু বহ্নিযুক্ত
পর্বতটি বহ্নিযুক্ত।
প্রতিটি অনুমানের ক্ষেত্রে তিনটি পদার্থ থাকে-পক্ষ, হেতু ও সাধ্য (যা অনুমিত হয় তা সাধ্য)। এখানে 'বহ্নি" হচ্ছে সাধ্য, কেননা বহ্নি অনুমিত হয়েছে। যার সম্বন্ধে অনুমিত হয় তা পক্ষ। এখানে "পর্বত" সম্বন্ধে অনুমিত হয়েছে। তাই পর্বত হচ্ছে "পক্ষ"। যার সাহায্যে বা য়ার ওপর নির্বর করে অনুমিত হয় তা হেতু। এখানে ধূম হচ্ছে "হেতু", কেননা ধূম-প্রত্যক্ষের ওপর নির্ভর করে পর্বতে বহ্নি অনুমিত হয়েছে।হেতু ও সাধ্যের নিয়ত সহচর-সম্বন্ধ হল ব্যপ্তি। হেতু ও সাধ্যের 'নিয়ত সম্বন্ধ" বলতে বোঝায়- যেখানে হেতু সেকানে সাধ্য এবং এমন কোন ক্ষেত্রে নেই যে, হেতু আছে কিন্তু সাধ্য নেই। উল্লিখিত উদাহরণে ধূম (হেতু) ও বহ্নি (সাধ্য) মধ্যে নিয়ত সাহচর্য বা ব্যপ্তি-সম্বন্ধ আছে। যেখানে ধূম আছে সেখানে বহ্নি আছে এবং এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেকানে ধূম আছে কিন্তু বহ্নি (আগুন) নেই।
নাস্তিক দর্শনগুলি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না; সেগুলি অনাত্মবাদী ও জড়বাদী। চার্বাকদের মতে প্রত্যক্ষই জ্ঞানলাভের একমাত্র উপায় এবং যেহেতু ঈশ্বর প্রত্যক্ষযোগ্য নন, সেহেতু তাঁর কোনো অস্তিত্ব নেই। বৌদ্ধদর্শনের আলোচ্য বিষয় মানবজীবন; মানুষের দুঃখমোচনই এ দর্শনের একমাত্র লক্ষ্য। বৌদ্ধমতে জগতের সবকিছু ক্ষণস্থায়ী, পরিবর্তনই জগতের একমাত্র সত্য; যেহেতু কোনো কিছুই শাশ্বত নয়, সেহেতু নিত্য আত্মা বলতেও কিছু থাকতে পারে না। জৈনরা দ্বৈতবাদে বিশ্বাসী। এ দর্শনে দ্রব্যসমূহকে ‘অস্তিকায়’ ও ‘নাস্তিকায়’ নামে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যার বিস্তৃতি ও কায় (দেহ) আছে তা অস্তিকায়, যথা জীব ও অজীব (জড়) এবং যার বিস্তৃতি ও কায় নেই তা নাস্তিকায়, যথা কাল (time)। বঙ্গদেশে উপরিউক্ত দর্শনসমূহের প্রত্যেকটিরই কম-বেশি চর্চা হয়েছে এবং এখনও গুরুপরম্পরা ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে হচ্ছে; তবে ন্যায়, বিশেষত নব্যন্যায়ের চর্চার জন্য এক সময় এদেশ সমগ্র ভারতে বিখ্যাত ছিল।
নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাস নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য। ইংরেজি ‘এইথিজম’(Atheism) শব্দের অর্থ হল নাস্তিক্য বা নিরীশ্বরবাদ। এইথিজম শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক ‘এথোস’ (ἄθεος) শব্দটি থেকে। শব্দটি সেই সকল মানুষকে নির্দেশ করে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর প্রতি অন্ধবিশ্বাস কে যুক্তি দ্বারা ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করে। দিনদিন মুক্ত চিন্তা, সংশয়বাদী চিন্তাধারা এবং ধর্মসমূহের সমালোচনা বৃদ্ধির সাথে সাথে নাস্তিক্যবাদেরও প্রসার ঘটছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম কিছু মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার ২.৩% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দেয় এবং ১১.৯% মানুষ কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না। জাপানের ৬৪% থেকে ৬৫% নাস্তিক অথবা ধর্মে অবিশ্বাসী। রাশিয়াতে এই সংখ্যা প্রায় ৪৮% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ৬% (ইতালী) থেকে শুরু করে ৮৫% (সুইডেন) পর্যন্ত। পশ্চিমের দেশগুলোতে নাস্তিকদের সাধারণ ভাবে ধর্মহীন বা পরলৌকিক বিষয় সমূহে অবিশ্বাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের মত যেসব ধর্মে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয় না, সেসব ধর্মালম্বীদেরকেও নাস্তিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিছু নাস্তিক ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, হিন্দু ধর্মের দর্শন, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ এবং প্রকৃতিবাদে বিশ্বাস করে। নাস্তিকরা কোন বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী নয় এবং তারা সকলে বিশেষ কোন আচার অনুষ্ঠানও পালন করে না। অর্থাৎ ব্যক্তিগত ভাবে যে কেউ, যে কোন মতাদর্শে সমর্থক হতে পারে,নাস্তিকদের মিল শুধুমাত্র এক জায়গাতেই, আর তা হল ঈশ্বরের অস্তিত্ব কে অবিশ্বাস করা।
ইংরেজিতে Believe, Trust, Faith এই তিনটি শব্দের অর্থ আগে জেনে নেয়া যাক।
Believe (অনুমান, বিশ্বাস, বিশেষভাবে প্রমাণ ছাড়াই মেনে নেয়া)
1. accept that (something) is true, especially without proof.
2. hold (something) as an opinion; think.
যেমন, ভুতে বিশ্বাস করা। এলিয়েনে বিশ্বাস করা। অথবা, বিশ্বাস করা যে, অতীতে আমাদের পুর্বপুরুষ স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিল। যার সপক্ষে এই বিশ্বাসী মানুষটি কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলেও তা তিনি বিশ্বাস করেন।
Trust (আস্থা)
1. firm belief in the reliability, truth, or ability of someone or something.
কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা বা ধারণার আলোকে কোন বিষয় সম্পর্কে ধারণা করা। যেমন আমি আমার অমুক বন্ধু সম্পর্কে আস্থাশীল যে, সে টাকা ধার নিলে আমাকে ফেরত দেবে। বা ধরুন, অমুক পত্রিকাটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ছাপে বলে আপনি মনে করেন। কারণ, অমুক পত্রিকাটি কয়েকবছর ধরে পড়ার কারণে পত্রিকাটির প্রতি আপনার আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখানে, আপনার এই আস্থার পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে আপনার পুর্ব অভিজ্ঞতা।
Faith (বিশ্বাস, ধর্মবিশ্বাস, বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই পরিপূর্ণ বিশ্বাস)
1. complete trust or confidence in someone or something.
2. strong belief in the doctrines of a religion, based on spiritual conviction rather than proof.
যেমন, ইসলাম বিশ্বাস করা। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা। আল্লাহ ভগবান ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখা।
চলবে......