পিতৃতন্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদ

ঈশা চক্রবর্তী


Nov. 24, 2024 | | views :293 | like:2 | share: 2 | comments :0

প্রাচীন ইতিহাস বা মধ্যযুগিয় বা আধুনিক যুগ, প্রতি যুগেই সামন্ততান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পিতৃতন্ত্রের হাত ধরেই বিদ্যমান হয়েছে। এই পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা গুলিই সাম্রাজ্যবাদের জন্ম দেয়। কিছু "অহিংস" রাজা বাদে প্রাচীন ভারতের যেকোনো রাজাই অন্য প্রদেশ আক্রমণ করেছে, লুট করেছে, জয় করেছে এবং নিজের প্রতিপত্তি বিস্তার করেছে।

       সামন্ততন্ত্র হলো একটি পিতৃতান্ত্রিক মানসিকিতা তাই বিজয় ও বিস্তার ই একমাত্র ধর্ম। কেনো সামন্ত তন্ত্র পিতৃতান্ত্রিক? প্রাচীনকালে মানবসভ্যতা ছিলো মাতৃতান্ত্রিক। নারী যেহেতু অন্য প্রাণের জন্ম দিতে পারতো, তাই সমাজের সর্বোচ্চ স্থানে থাকতো মহিলারা। এই সময় সমাজ সঙ্গবদ্ধ পরিবারের রূপে বসবাস করতো। শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে খাদ্য সংগ্রহ সবই লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলে মিলে করতো। লিঙ্গ নির্ধারিত কাজের বা জেন্ডার রোলস এর কোনো অস্তিত্বই ছিলো না। কিন্তু পুরুষ ক্রমে জন্মদানে নিজেদের ভূমিকা সম্পর্কে অবগত হলো। পরিবারে বিভক্ত হতে শুরু করলো সমাজ। পরিবারের সংগ্রহিত সম্পদ পরিবারেই যাতে থাকে, তার জন্য পিতৃসূত্রে প্রাপ্ত ধনের প্রথা শুরু হলো। সংগ্রহিত সামগ্রী আর কলেক্টিভ সমাজে বিতরণ হতো না। পরিবারে নারীর ক্ষমতা কমিয়ে লিঙ্গ নির্ধারিত কাজের ব্যবস্থার জন্ম দিলো। যেহেতু মাতার মেয়ে অন্য পরিবারের অংশ হবে ভবিষ্যতে তাই পুঁজি সংরক্ষণ পিতা-পুত্র সূত্রে প্রজন্মের পর প্রজন্মে সঞ্চারিত হলো। তৈরী হলো পিতৃতন্ত্রের। মানুষের লোভ জন্ম দিলো এমন একটি সমাজ ব্যবস্থার , যা সাম্রাজ্যবাদের মতো ঘৃণ্য ও ধ্বংসাত্মক মানসিকতার মূল কারিগর।

       বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজ ও একই মনোভাবাপন্ন। কারণ এর মূল ভিত্তি সেই কম্পিটিশন। নিও লিবারেল পুঁজিবাদে নারীর উত্থান বিভিন্ন পদে সম্ভব হলেও পুঁজিবাদী ধনকুবের তারাই হতে পারে যাদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পুঁজি আছে কাজে লাগানোর জন্য। সেই পুঁজি দিয়ে উৎপাদনের সামগ্রী ও শ্রম কেনা সম্ভব হয়। যা জন্ম দেয় আরও পুঁজির। এর ফলে উত্তরোত্তর পুঁজির বৃদ্ধির ফলে ধনকুবের পুঁজিবাদীদের উত্থান হয়। যারা শ্রমিক সম্প্রদায়কে শোষণ করে পুঁজির বৃদ্ধি ঘটায়। “পুঁজিবাদের চরম স্তর হলো সাম্রাজ্যবাদ!” কারণ এই ব্যবস্থা যখন একটি দেশ অপর অনগ্রসর দেশের শ্রমকে কাজে লাগিয়ে নিজের পুঁজি বৃদ্ধির মাধ্যমে গড়ে তোলে। তখনই পুঁজিবাদ হয় সাম্রাজ্যবাদী।

       ইতিহাসে হিন্দু মুসলিম বা তামিল এগুলো বড়ো কথা নয়, প্রত্যেকেই বিজয় ও বিস্তার করেছে অপরকে শেষ করে। সুলতানী আমলের পূর্বে হিন্দু রাজা বৌদ্ধদের উপরে বা অপর হিন্দু রাজার উপরে আক্রমণ করেছে বিস্তারের উদ্দেশ্যে। তখন কোনো ভারতবর্ষ ছিলো না, বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশ ছিল। মৎসন্যায় পড়লেই রাজাদের বিজয় ও বিস্তারের ক্ষুধা জানা যায়। মোগল বা তার আগে সুলতান রাও একই কাজ করেছে। হিন্দুরা বৌদ্ধ স্থাপত্য ভেঙেছে, মুসলিম রাজারা হিন্দু স্থাপত্য ধ্বংশ করেছে। আবার পরবর্তীকালে হিন্দুরা বহু ইসলাম স্থাপত্য ধ্বংস করেছে বদলার নামে।

       কাজেই এই পিতৃতান্ত্রিক দুই ব্যবস্থা যথা সামন্ততন্ত্র ও পুঁজিবাদ চিরকাল একটি হিংসার কালচক্রের মানে cycle of hatred এর জন্ম দিয়েছে, যার নাম সাম্রাজ্যবাদ।

Bibliography: ~

1. "Origin of family..." by Friedrich Engels.

2. "Imperialism: the highest stage of capitalism" by V.I. Lenin.

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929