অন্য গ্রহের আগন্তক বনাম ইমাম মাহাদী

সাহাদাত হোসেন


Nov. 24, 2024 | | views :284 | like:0 | share: 0 | comments :0

খোরাশান ফারসি শব্দ, যাহা 'খোর' ও 'আসান' শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত। 'খোর' অর্থ সূর্য এবং 'আসান' অর্থ উদয়াচল। অর্থাৎ 'খোরাসান' মানে সুর্যের উদয়াচল। খোরাসান নামের এই বিশাল ভূখণ্ড ওই অঞ্চলের পূর্বদিকে অবস্থিত হওয়ার কারণে তাকে 'খোরাসান' বলা হয়। মাদ্রাসা পড়ুয়ারা 'খোরাসান' শব্দের সাথে বেশ পরিচিত। হাদিসের গ্রন্থাদি থেকে নিয়ে প্রায় সব আরবি কিতাবাদীতে 'খোরাসান' শব্দটি পাওয়া যায়। কারণ, এসব কিতাবের লেখক বা কিতাবে উল্লেখিত মুসলিম পণ্ডিতদের প্রায় অনেকেরই জন্মস্থান এই খোরাসান। 

প্রাচীণকালে 'খোরাসান' বলতে এক বিশাল ভূখণ্ড বুঝানো হত। বর্তমান পৃথিবীর পাঁচটি দেশ নিয়ে ছিল প্রাচীন 'খোরাসান'র ভৌগলিক সীমারেখা। এই পাঁচটি দেশ হলো- পূর্ব ইরান, উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান। তবে এখনও ইরানের একটি প্রদেশ 'খোরাসান' নামে পরিচিত। এসব দেশ বর্তমানে মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত। আজও এসব অঞ্চলে ইসলামি নিদর্শনাবলী অতীত কীর্তি ও ঐতিহ্যের কালসাক্ষী হয়ে আছে। নব্বই দশকেই আগে এই দেশগুলো কম্যুনিস্ট বিপ্লব গ্রাস করে নিয়েছিল। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই খোরাশান থেকেই নাকি ইমাম মাহদীর নেতৃত্বে ঘোড়ায় চড়ে হাতে তলোয়ার নিয়ে বিমান, মিজাইল, এটমবোম, সাবমেরিনসহ অনেক অত্যাধুনিক অস্ত্রের মোকাবেলা করে সমগ্র পৃথিবী করায়ত্ব করবে? বিষয়টি শুনতে হাস্যকর মনে হয়। তবে এটি হাস্যকর নয় আফগানিস্তানের খোরাশান নামক অঞ্চলের লোকদের নিকট কারণ বিংশ শতাব্দীর এই আধুনিক যুগেও যাদের একমাত্র যানবাহন হলো ঘোড়া।

কোন গ্রহে প্রাণ সৃষ্টি নির্ভর করে সেখানকার তারা বা নক্ষত্র থেকে নিঃসৃত আলোর পরিমানের উপর। সূর্যের চারিদিকে প্রান সৃষ্টির সহায়ক সিস্টেমকে ইকোসিস্টেম বলে। আমাদের সৌরজগতে ইকো সিস্টেমের অন্তর্গত অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে পৃথিবী এবং মঙ্গল গ্রহ।

অন্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব:

আমাদের সূর্যের ন্যায় আনুমানিক ২০ হাজার কোটি তারা নিয়ে গঠিত হয়েছে আমাদের Glaxy, যার নাম ছায়াপথ বা Milky Way। অনন্ত অসীম বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এই পর্যন্ত 2 লক্ষ কোটি Galaxy এর সন্ধান পাওয়া গিয়াছে।


সৌরজগতের ন্যায় প্রতিটি তারার নিজস্ব ইকোসিস্টেম রয়েছে। কেবলমাত্র ইকোসিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত হলেই কোন গ্রহে প্রাণ সৃষ্টি হবে না। এক্ষেত্রে গ্রহের আকার, তার মাধ্যাকর্ষণ আকর্ষণও গ্রহের সমস্ত পদার্থকে ধরে রাখতে তথা প্রান সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

উপরোক্ত দুটি বিষয়কে বিবেচনা করে কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করেছেন, অন্ততপক্ষে ১০০টি তারার গ্রহের মধ্যে একটি গ্রহেও যদি প্রাণ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকে তাহলেও এই পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্যালাক্সি সমূহে পৃথিবীর ন্যায় হাজার হাজার কোটি গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। মানুষ প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এই সমস্ত গ্রহের প্রাণীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। ভবিষ্যতে টেকনোলজি আরো অনেক উন্নত হবে এবং তখন যোগাযোগ সম্ভব হবে।

দ্বিতীয়ত: পানিতে যেমন জলজ প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে, স্থলে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী তদ্রূপ কিছু বিজ্ঞানীর মতে গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে ও গ্যাসীয় প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। যাহা আমাদের নিকট দৃশ্যমান নয়। 

যে সমস্ত গ্রহে প্রাণের সঞ্চার আমাদের চেয়ে অনেক পূর্বে সংঘটিত হয়েছে তারা নিশ্চয়ই আমাদের চেয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে রয়েছে এবং যাদের আমাদের চেয়ে পরে হয়েছে তারা আমাদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমান সময়ের প্রযুক্তি দিয়ে পৃথিবীর অতি নিকটের গ্রহ মঙ্গল গ্রহেই মানুষ যেতে পারেনি। এর চেয়েও উন্নত মানের প্রস্তাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সূর্যের সবচেয়ে কাছের তারকা আলফা সেন্টুরিতে যেতে এবং ফিরে আসতে কমপক্ষে 3000 বছর সময় লেগে যাবে। 

একটি গল্প মনে পড়ে গেল।

এক গ্রামের এক বাটপার ও সন্ত্রাসী গ্রামবাসীদের মিথ্যা মামলা, নারী নির্যাতন, সম্পত্তি দখল, চাঁদাবাজি সহ নানা ভাবে নির্যাতন করত। কিন্তু মৃত্যুর সময় গ্রামবাসীদের ডেকে সকলের কাছে মাফ চাইল এবং বলল, আমার মত পাপী লোক তোদেরকে বহু হয়রানি, নির্যাতন, জুলুম করেছে। এই পাপি মরলেও শান্তি পাবে না রে। আমার মত দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি যাতে এই গ্রামে সৃষ্টি না হয়, সেই জন্য মৃত্যুর পর আমার পাছা দিয়ে বাঁশ ঢুকাইয়া তিন রাস্তার মোড়ে ঝূলাইয়া রাখবি।

যেমন কথা তেমন কাজ। কিন্তু পুলিশের কাছে খবর গেল গ্রামবাসীরা একটি লোককে মেরে তিন রাস্তার মোড়ে ঝুলিয়ে রেখেছে। তাই সারা গ্রামে পুলিশি অভিযান শুরু হল এবং লোকজন ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালাতে লাগল। গ্রামবাসী বলতে লাগল- 

হায় রে বাটপার পাজি, বেঁচে থাকতে জ্বালাইয়াছিলি কিন্তু মরে গিয়েও শান্তি দিলি না।


ইমাম মাহাদীর পরিচয়

অতীতে কয়েকবারই ইমাম মাহাদির আগমনের সময় অতিক্রম হয়েছে এবং গত ১০০ বছরেও কয়েকবার ইমাম মাহাদীর পৃথিবীতে আসার সময় অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। 

তাছাড়া অতীত থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি নিজেদেরকে ইমাম মাহাদী বলে দাবি করেছিলেন। এখনও আফগানিস্তান, সৌদি আরব ও পাকিস্তানে ইমাম মাহাদীকে নাকি দেখা যাচ্ছে। তারপরও হুজুররা ইমাম মাহাদী আসবে বলে মানুষকে প্রতারিত করছে।

মূলত ইমাম মাহাদী, হযরত ঈসা, শ্রীকৃষ্ণরা হলেন সন্ত্রাসীদের গডফাদার। তাদের মুলা দেখিয়ে কুচক্রী মহল গোপনে সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করার চেষ্টা করছে এবং ইমাম মাহাদীর সৈনিক বানানোর জন্য মানুষকে জিহাদী তৎপরতায় অংশ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করছে।

এইভাবে সরল মানুষকে ভয় দেখিয়ে ধর্মের আবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ ধর্ম না থাকলে যে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তারা বলে থাকে, ধর্মের মৃত্যু হলে অর্থাৎ মানুষ ধর্ম বিমুখ হলেই পৃথিবীতে মুসলিমদের মতে ইমাম মাহাদী, খ্রিস্টানদের মধ্যে হযরত ঈসা হিন্দুদের মতে শ্রীকৃষ্ণ এবং ইহুদিদের মতে দাজ্জালের আগমন ঘটবে।

ইমাম মাহাদী যুদ্ধ করে পৃথিবীর ১/৩ অংশকে হত্যা করবে, ১/৩ অংশ পঙ্গু করবে এবং তারপর একশত বছরের মধ্যে পৃথিবী ধ্বংস হবে। এত বড় বিপর্যয়ের পর এবং পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করার পর কেয়ামতের বা পৃথিবী ধ্বংসের কোন যুক্তি কথা থাকতে পারে না। এটি কুচক্রী মহলের এই সুন্দর পৃথিবীকে ধ্বংস করার একটি নীল নকশারই অংশ মাত্র।

বাস্তবে মৃত্যুর পর কেউ কখনোই সশরীরে ফিরে আসতে পারে না কিন্তু এই ধর্মীয় বিশ্বাস ধর্মান্ধদের অন্তরে গেঁথে গিয়েছে। তাই ভবিষ্যতে যদি কখনো পৃথিবী অন্য গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন এই সমস্ত ধর্মান্ধ ধার্মিকেরা অজ্ঞতাবশত তাদেরকে ইমাম মাহাদি, ঈসা, শ্রীকৃষ্ণ ও গৌতম বুদ্ধ ইত্যাদি মনে করে তাদের পক্ষ অবলম্বন করবে এবং নিজেরা নিজেদের সুন্দর পৃথিবীর ক্ষতি সাধন করবে।

আমাদের চেয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক অগ্রসর অন্য গ্রহের প্রাণীরা পৃথিবীতে আমাদের জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে অনেক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করতে সক্ষম। ভবিষ্যতের এই অনাকাঙ্ক্ষিত তৎপরতার মোকাবেলা ও পৃথিবীর নিরাপত্তার জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক অগ্রসর হতে হবে।

বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস নিশ্চই কোন কিছ উপলব্ধি করে এইরুপ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন এবং আমাদেরকে সতর্ক করেছেন - "আমি মনে করি, একটি বিপর্যয় হবে। সম্ভবত বহিরাগতরা হবে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রসর। এই গ্রহেই একই প্রজাতির হলেও অগ্রসর গোষ্ঠীর সঙ্গে পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীর সাক্ষাতের ইতিহাসটা খুব একটা সুখকর হয়নি। আমি মনে করি, সতর্ক হওয়া উচিত আমাদের"

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929