বাইবেল ও কোরানে মহাবিশ্বের সৃষ্টি
শম্ভুনাথ চার্বাক
Nov. 23, 2024 | | views :284 | like:2 | share: 2 | comments :0
বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন এবং সপ্তম দিনে বিশ্রাম নেন যা সাবাতের দিন নামে খ্যাত। বাইবেলের পুরাতন নিয়মের এই কথা প্রচন্ড ধার্মিক ঈশ্বর বিশ্বাসী খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন। যেহেতু সৃষ্টির আগে সূর্যের অস্তিত্ব ছিলনা তাই বোধহয় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হতো না। আর পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টির সময়কে দিন (ছয় দিন) ধরে হিসাব করা স্পষ্টত অসম্ভব।
প্রশ্ন হচ্ছে - কেন ঈশ্বর মানুষের আবিষ্কার করা সময়ের মাপদণ্ড দিয়ে তার সৃষ্টির সময়কে হিসাব করবেন? কেন তিনি পৃথিবী নামক গ্রহের সময়কে একক ধরে হিসেব করবেন? অন্যান্য দূরবর্তী গ্রহ ইউরেনাস বা নেপচুনের সময়কে একক হিসেবে ধরবেন না? ঈশ্বর সূর্য ও পৃথিবী সৃষ্টি করার আগের সময়ে দিন ও রাত কিভাবে সংঘটিত হতো?
মহাবিশ্বকে ছয়দিনে সৃষ্টি করার কথা কোরানে কমপক্ষে আটবার আছে। এছাড়া আরবী শব্দ আরশ কথাটির অর্থ রাজসিংহাসন বিভিন্ন আয়াতে (৭:৫৪/২৫:৫৯/১১:৭/২৩: ৮৬-৮৭, ১১৬/৩২:৪) আল্লাহর আরশে বসার কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে – নিরাকার আল্লাহ কি করে আরশে বসেন? নিরাকার জীব আল্লাহকে কেন আরশে বসতে হব? কোরানে স্পষ্ট বলা হয়েছে আল্লাহর আরশ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির আগে পানির ওপর ছিল। তাহলে পৌত্তলিক আরবীয়ানদের আল্লাহই কি নবির আল্লাহ? নবির বাবার নাম ছিল আবদুল্লাহ, এর অর্থ আল্লাহর দাস এবং আবু লাহাবের নাম ছিল আব্দুল ওজ্জা যার অর্থ ওজ্জা দেবীর দাস। আর আকাশ পৃথিবী সৃষ্টির আগেই আল্লাহর আরশ পানির ওপরে ছিল মানে কি? (সুরা ইউনুস – আয়াত ৩ ও সুরা আরাফের আয়াত ৪৪)। পৃথিবী সৃষ্টির আগে পানি আসে কোথা থেকে? এটা সম্ভবত বাইবেলের কপি পেস্ট। এদিকে আল্লাহ নিজেই বলেছেন – আমি আকাশ পৃথিবী এবং দুইয়ের মধ্যবর্তী সব ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি। ক্লান্তি আমাকে স্পর্শ করেনি (সুরা কাফ –আয়াত ৩৮)। তাহলে সর্বশক্তিমান আল্লাহরও নিশ্চয় ক্লান্তি আসে? এই আয়াতটি সত্যি বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। বাইবেলে সপ্তম দিন অবশ্য বিশ্রামের দিন বলা হয়েছে। নীচে মহাবিশ্ব সৃষ্টি সংক্রান্ত সুরা ও আয়াতের কিছু কিছু তুলে দিলাম যা বর্তমান কালে শুধুই হাসির উদ্রেক করবে।
১) তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, তারপর তিনি আরশে সমাসীন হন। সুরা ইউনিস, আয়াত - ৭)
২) যখন তাঁর আরশ পানির ওপর ছিল তখন তিনিই আকাশ ও পৃথিবী ছয়দিনে সৃষ্টি করেন। (সুরা হুদ - ৭)
মনে প্রশ্ন জাগে - আকাশ জমিন সৃষ্টির আগেই সিং হাসন ও পানি কি করে ছিল?
৩) আমি আকাশ পৃথিবী এবং দুইয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি, ক্লান্তি আমাকে স্পর্শ করেনি (সুরা কাফ - ৩৮)
এই আয়াতটি বিস্ময়কর ছেলে-মানুষি, সর্বশক্তিমান নিরাকার আল্লাহকে এ ধরণের বালখিল্লের মতো পরিচয়জ্ঞাপন বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
৪) বল তোমরা কি তাকে অস্বীকার করবে, যিনি দুদিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন; আর তোমরা তার সমকক্ষ দাঁড় করাবে।(সুরা হামিম সিজিদা-৯)
৫) তিনি পৃথিবীর উপরিভাগে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন ও সেখানে কল্যাণ রেখেছেন-(৪১:১০)
৬) তারপর তিনি আকাশের দিকে মন দিলেন, আর তা ছিল ধোঁয়ার মত। তারপর তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে বললেন তোমরা কি স্বেচ্ছায় আসবে না অনিচ্ছায় - (৪১:১১)
৬) তারপর তিনি আকাশকে সাত আকাশে পরিণত করলেন আর প্রত্যেক আকাশকে তার কাজ বুঝিয়ে দিলেন(৪১:১২)। এই আয়াতে অতিরিক্ত দুটি দিনের কথা বলা হয়েছে যা আকাশকে সজ্জিত করার জন্য ব্যয় হয়েছে।
- এই আয়াত কোরানের ছয় দিনের সাথে সাংঘর্ষিক। এত বিশৃঙ্খলা সবজান্তা আল্লাহর কাছে আশা করা যায় না। সুরা তওবার দিনপঞ্জি সংক্রান্ত আয়াতটিও বড্ড গোলমেলে
আবার একটি আয়াতে বলা হয়েছে যে – অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে আকাশ ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশেছিল? তারপর আমি উভয়কে পৃথক করলাম (সুরা আম্বিয়া ৩০) একে অনেক ইছলামিক পণ্ডিত বিগ ব্যাং থিওরী বলে চালাতে চায়। এরা জানেনা যে বিগ ব্যাং এর হাজার কোটি বছর পরে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে।
সব ধর্মগ্রন্থেই এইরকম গ্যাজাখুড়ি আছে। তবে ধর্ম মোহে আক্রান্ত কিছু ধীমান মানুষের গোল গোল ব্যাখ্যা আজ আর সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না।
এই গোঁজামিল থাকাই স্বাভাবিক, কারন তখনকার দিনের লোকদের হাতে উন্নত টেলিস্কোপ ছিলনা আর মহাকাশ বিজ্ঞানের এত প্রসার ঘটেনি। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ঘটনাতেও এই জলের কথা বলা আছে সেটা অনেকদিন আগেই আমি পোস্ট দিয়েছিলাম। আর কোরানের বাক্যগুলি এমনই যে কোনটা কে বলেছে সেটা না বুঝতে পারার মতো নয়। নবি হজরত মুহাম্মদ এই ব্যালেন্সটা রাখতে পারেননি। বেশ কিছু আয়াতে তিনি ধরা পড়ে গেছেন যে এগুলি ওনারই বক্তব্য।