অন্ধদের হাতি দর্শনে হাতি গালগল্প?

মুজিব রহমান


Nov. 23, 2024 | | views :292 | like:0 | share: 0 | comments :0

আমরা পাঁচ অন্ধের হাতি দর্শনের গল্পটি জানি৷ পাঁচ অন্ধকে হাতি দেখতে গেল৷ যার হাতে যা ঠেকলো সে সেটাকে ভালমতো উপলব্ধি করলো৷ সবাই নিশ্চিত হয়েই বলল আরে হাতি হল—

যে হাতির পা ধরেছিল সে বলল, ঠিক খাম্বার মতো৷ যে লেজ ধরেছিল সে বলল, ঠিক রশির মতো৷ যে শূঁড় ধরেছিল সে বলল, ঠিক সাপের মতো৷ যে পেট ধরেছিল সে বলল, ঠিক দেয়ালের মতো৷ যে কান ধরেছিল সে বলল, ঠিক কূলার মতো৷ সবাই নিজের দর্শনে অনড়৷ আলাদা অঙ্গ না ধরলে এই পাঁচটি উপাদান মিলালেও হাতি আসবে না৷

কমপক্ষে হাজার বছর আগের ধর্মগ্রন্থগুলোতে একেকটি বিষয়ের বর্ণনা অনেকটাই এরকমই৷ পৃথিবী, আকাশ, মানুষ, আত্মা. ইত্যাদি বহু বিষয়ের ব্যাখ্যাগুলো অন্ধের হাতি দর্শনের মতোই৷

তখন বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের মানুষও মনে করতো তারাই পৃথিবী, তারাই একমাত্র জনগোষ্ঠী৷ সে মোতাবেকই আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া এমনকি জাপানের আদি বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল৷ মানুষ ব্যাখ্যা তৈরি করতে নিয়ে এসেছে পেট-বানানো গল্প৷ সেই গল্পগুলোর বিবর্তনও ঘটেছে কালক্রমে৷


একটা বিষয় নিশ্চিত যে তারা মনে করতো প্রাণীর দুটো উপাদান৷ একটি নশ্বর শরীর আরেকটি অবিনশ্বর আত্মা৷ আত্মার বিশ্লেষণ করতে হলে শরীর কিভাবে সচল থাকে সেটা উপলব্ধির দরকার ছিল৷ কিন্তু ওই সময় এটা মানুষ বুঝতে শিখেনি৷ তাই আত্মা নিয়ে একেক গ্রন্থে একেক রকম ধারণা দেয়া হয়েছে৷ সেমিটিক ধর্মে বলা হয়, 'স্রষ্টা আগেই আত্মা সৃষ্টি করে রাখে৷ জন্মের আগে ঢুকিয়ে দেয় গর্ভের শিশুর মধ্যে৷ স্রষ্টা আত্মা ছিনিয়ে নিলেই মৃত্যু৷ কবে কখন ও কিভাবে ছিনিয়ে নিবে সেটাও নির্ধারিত৷ পৃথিবী ধ্বংসের পরে পুনর্জিবীত আত্মার বিচার সভা বসবে'৷ বৈদিক তথা হিন্দু ধর্মে বলা হয়, 'আত্মা ভাল মন্দের কর্মের জন্য পরের জন্মে কোথায় জন্ম নিবে তা কর্মের দ্বারা নির্ধারিত হয়৷ বৌদ্ধ ধর্মে আবার আত্মা ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন প্রাণির মধ্যেও৷ সৎ কর্ম করলে বা বৌদ্ধ ভিক্ষু হলে আত্মা মুক্তি পায় এবং বিলীন হয়ে যায় যাকে বলে নির্বাণ হওয়া৷ 

আর আজ বিজ্ঞান দেখাচ্ছে কিভাবে জীবন সচল থাকে এবং সেখানে আত্মা অপ্রয়োজনীয়৷

অন্তত এক হাজার বছর আগের মানুষ নিজেদের ভূখণ্ডগুলোকেই ভাবত দুনিয়া৷ জাপানের দ্বীপগুলো যাকে তারা দলতো নিপ্পন বা সূর্যোদয়ের ভূখণ্ড৷ তারা খবর রাখতো না কোরিয়া বা চীনের৷ অথচ বহু বছর আছে তারাও ছিল একই ভূখণ্ডে৷ ফলে শিন্টো ধর্মের পৃথিবী হল ওই নিপ্পন দ্বীপমালা! দেবতারা থাকতো সমুদ্রে৷ তারা কাদাকেলি করতে করতে সমুদ্রে বিভিন্ন দ্বীপ তৈরি করে৷ সেটাই পৃথিবী৷ এমন একটা বিশ্বাসও দেখি না যেখানে বলা হয়েছে পৃথিবী গোলাকার এবং পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে৷

সেমিটিক গ্রন্থে স্রষ্টা ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করে৷ বাইবেলে একদিন বিশ্রামের কথা আছে৷ আমরা আজ সপ্তাহে যে একদিন ছুটি পাই সেটা ওখান থেকেই আসা৷ স্রষ্টা সমতল পৃথিবীকে শক্ত রাখার জন্য পেরেক মেরেছে পাহাড়গুলো দিয়ে৷ পৃথিবীর উপর সাতটি আসমান দিয়েছে দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান খুঁটি দিয়ে৷ দুনিয়া সৃষ্টির হাজারো রকমের ধর্মীয় ব্যাখ্যার একটিও মিলে না আজ৷

মানুষ সৃষ্টি নিয়েও হাজারো ব্যাখ্যা৷ হিন্দু ধর্মের সেই বিরাট পুরুষের কথা জানি যিনি খণ্ডবিখণ্ড হয়ে সব কিছু তৈরি করেছেন৷ তার মাথা থেকে ব্রাহ্মণ, বাহু থেকে ক্ষত্রিয়, বুক থেকে বৈশ্য, পা থেকে শূদ্র তৈরি হয়েছে৷ নাড়িভূড়ি থেকে অন্যসব প্রাণি-উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়৷ সেমিটিক ধর্ম বলে স্রষ্টা নিজে একজন পুরুষ ও একজন নারী সৃষ্টি করেন৷ স্রষ্টার কথা না শোনায় তিদের স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে পাঠায়৷ বাকি ধর্মগুলোতে একেকটায় একেক রকম বিশ্বাস৷ কোনটায় বলা হয়েছে এক দানবের বগলের দুই তলা থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারী সৃষ্টি হয়৷ ওয়াক! কোথাও বলা হয়েছে, দেবতারা দাস তৈরি করতেই মানুষ তৈরি করেন৷ হাজারো ব্যাখ্যা৷ আবার মিলগুলোর মধ্যেও প্রভেদ অনেক৷ আদম-হাওয়া, এডাম-ইভ বা মনু-শতরূপা পুরোপুরি মিলবে না৷ অথচ বিজ্ঞান বলছে মানুষ এসেছে বিবর্তনের পথ ধরে৷

৪৩০০ টি ধর্ম বিশ্বাসের কোনটিতেই সঠিক ব্যাখ্যা মিলে না৷ আবার ব্যাখ্যাগুলোকে একত্রিত করলেও মিলে না৷ বিশ্বাসে পাওয়া তথ্যগুলো বিজ্ঞানের চোখে নিছকই গালগল্প!

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929