যুক্তিবাদীরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পশুবলির বিরুদ্ধে কেন?
চিত্রদীপ সোম
Nov. 23, 2024 | | views :285 | like:2 | share: 2 | comments :0
ঈদ বা এই জাতীয় উৎসব আসলে অনেক নাস্তিক বা মুক্তমনাই ধর্মীয় উৎসবে পশুবলিদানের বিরোধিতা করেন। এই নিয়ে অনেক ব্যঙ্গ টিটকিরিও সহ্য করতে হয় তাদের। অনেকেরই ধারণা যুক্তিবাদীরা ধর্ম মানেন না বলে নিজেরা অন্য সময় কবজি ডুবিয়ে মাংস খেলেও শুধুমাত্র অন্ধ ধর্ম বিরোধিতার কারণেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পশুবলির বিরোধিতা করেন। এটা তাদের ভণ্ডামো ও স্ববিরোধিতা ছাড়া কিছু নয়। ধর্ম পরিচয়ে মুসলিম এক বিপ্লবী এই মর্মে একটি দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছিলেন দেখলাম।
আসল সমস্যাটা হচ্ছে মূল বিষয়টা ধরতে না পারার ক্ষেত্রে। প্রশ্নটা পশু হত্যা বন্ধের নয়, প্রশ্নটা প্রকাশ্যে অমানবিকভাবে পশু হত্যা নিয়ে। প্রকাশ্যে এইভাবে অমানবিক পদ্ধতিতে পশুহত্যা করলে যারা দর্শক হয় তাদের মনের উপর দীর্ঘস্থায়ী খারাপ প্রভাব পড়ে।
বিশেষ করে কোমলমতি বাচ্চাদের মনের উপর। পরবর্তীকালে তাদের নিষ্ঠুর ও অপরাধপ্রবণ হবার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এই কারণে যুক্তিবাদীরা বরাবরই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পশুবলির বিরোধিতা করে, কারন তা করা হয় হাজার হাজার লোকের চোখের সামনে। খাদ্যের কারণে পশুহত্যার বিরোধিতা কখনও যুক্তিবাদীরা করে না। এবং জেনে রাখুন ধর্মের নামে পশুবলিদানের বিরোধিতা শুধুমাত্র যুক্তিবাদীরাই করেন তা নয়, ভারতীয় আইন অনুসারেও ধর্মীয় উৎসবে পশুবলিদান সম্পুর্ন বেআইনী।
The Prevention of Cruelty to Animals Act 1960 অনুসারে প্রকাশ্যে ধর্মের নামে পশুবলি দেওয়া রীতিমত দন্ডনীয় অপরাধ।
আইনভঙ্গকারীর জন্য ধার্য আছে জেল ও জরিমানার ব্যবস্থা (একইভাবে মাংসের দোকানগুলিতে যেভাবে প্রকাশ্যে মুরগীকে মারা হয় বা খাসীর দোকানে মৃত ছাল ছাড়ানো খাসী উলটো করে ঝুলিয়ে রাখা হয় বেআইনী সেটাও। আইন অনুযায়ী প্রতিটি স্লটার হাউসে লোকচক্ষুর আড়ালে প্রানীহত্যা করে খরিদ্দারকে তার চাহিদা অনুযায়ী মাংস প্যাকেটে ভরে দিতে হবে। এজন্য প্রতিটি স্লটার হাউসে উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকা আবশ্যক)। কিন্তু এদেশে আর কবে আইন মেনে সবকিছু করা হয়। তাই আরো হাজার হাজার আইনের মতো এটাও এদেশে মানা হয় না যথারীতি। এবং আমরাও উদাসীন। বরং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বা আশেপাশের মাংসের দোকানে ছোটবেলা থেকে আইন না মেনে পশুহত্যা দেখতে দেখতে আমরা এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি যে দিব্যি গা সওয়া হয়ে গিয়েছে আমাদের এসব। বাড়ির শিশুদেরও তাই নির্দ্বিধায় নিয়ে যাই মাংসের দোকানে।
এই প্রসঙ্গে আরো একটা কথা বলে রাখা ভালো, ইসলাম ধর্মে পশুকে আড়াই প্যাঁচে যেভাবে হত্যা করা হয় সেটাও অবৈজ্ঞানিক ও অমানবিক। খাদ্যের জন্য পশুহত্যা করতে হলে উচিত পশুকে এক কোপে কাটা, যাতে যতদূর সম্ভব কম যন্ত্রণা দেওয়া হয়। আরো ভালো হয় হত্যার আগে অজ্ঞান করে নিলে।
আশা করা যায় বোঝাতে পেরেছি কেন কিছু মানুষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আসলেই পশুবলিদানের বিরোধিতা করে হইচই করেন। এরপরেও কেউ আপত্তি করলে বুঝতে হবে ধর্ম তাদের বাস্তববোধ ও সংবেদনশীলতার ভিতকে নষ্ট করে তাকে করে তুলেছে অন্ধ ধর্মীয় অনুগামীমাত্র, যাদের কাছে ধর্মের নামে সবকিছুই করা 'জায়েজ'।