প্রতি বছরই রুটিন মাফিক মনসা পুজো থেকে শুরু করে দুর্গাপুজা, কালীপুজা এবং আরো অন্যান্য সমস্ত রকম ধর্মীয় পূজা-পার্বণ অনুষ্ঠানে (কখনো পারিবারিক কখনোবা সার্বজনীন) যেভাবে মাইক এবং বক্সের শব্দতাণ্ডব চালানো হয় তার থেকে কেউ রেহাই পায় না! ঐসব দিনগুলিতে দিনভর মণ্ডপ ও তার আশেপাশে মাইক বাজানো হয়। এ ছাড়াও ভাসানে মাত্রাতিরিক্ত জোরে সাউন্ড বক্স বাজানো ও শব্দ বাজি ফাটানো হয়। প্রকাশ্য রাস্তায় একটি ভ্যানে ১০ থেকে ১২টি সাউন্ড বক্স ও আট-দশটি চোঙা মাইক, সাথে জেনারেটর একসঙ্গে তুলে তারস্বরে বাজিয়ে উদ্দাম নাচতে নাচতে ভাসানে যাওয়াটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক ডেসিবেল (ডিবি)। শব্দের মাত্রা ৪৫ ডিবি হলেই সাধারণত মানুষ ঘুমাতে পারে না। ৮৫ ডিবিতে শ্রবণ শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে এবং মাত্রা ১২০ ডিবি হলে কানে ব্যথা শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি তিন বছরের কম বয়স্ক শিশু কাছাকাছি দূরত্ব থেকে ১০০ ডিবি মাত্রার শব্দ শোনে, তাহলে সে তার শ্রবণ ক্ষমতা হারাতে পারে। মানুষ সাধারণত ১৫ থেকে ২০ কিলোহার্টজ (KHZB) স্পন্দনের শব্দ শোনে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতানুসারে, সাধারণত ৬০ ডিবি শব্দ একজন মানুষকে সাময়িকভাবে বধির করে ফেলতে পারে এবং ১০০ ডিবি শব্দ সম্পূর্ণ বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শব্দবাজি এবং ডিজের আওয়াজে মানুষের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে এবং শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে। হৃদ্রোগীদের পক্ষেও জোর শব্দ ভীষণ ভাবে ক্ষতিকারক। তাই শব্দ দূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক।
আজ আমার রক্ত গরম, আমার বাড়িতে বয়স্ক কোন লোক নেই, বাচ্চা নেই, বক্স এবং মাইকের মুখ আমার বাড়ির দিকে নয়, তাই আমি গায়ের জোরে উচ্চস্বরে মাইক বক্স চালালে অন্যের ক্ষতি হবে, তাতে আমার কি! এই মানসিকতা নিয়ে যারা রয়েছেন তাদের বলব আগামী দিনে আপনিও বয়স্ক হবেন, আপনার বাড়ি তো একদিন না একদিন ছোট শিশু জন্মাবে! তখন যদি আগামী প্রজন্ম তাদের রক্তের গরমে চোখ দেখিয়ে আপনার বাড়ির দিকে মাইক বক্স করে উচ্চশব্দে গান-বাজনা চালায় তখন আপনি সহ্য করতে পারবেন তো?
মানবিকতার নামে দানবিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। নিজেদের আনন্দের জন্য যাঁরা আইন ভেঙে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলেন, তাঁদের জন্য আইনের সহায়তা নেয়া একমাত্র উপায়।
তাই বলব সার্বজনীন শুভ অনুষ্ঠান মানবিকতার দিক বজায় রেখেই করুন। আপনাদের অনুষ্ঠানের অর্থ যদি হয়ে থাকে সকলের মধ্যে সাম্য, মৈত্রী এবং ভালোবাসার সম্পর্ক বজায় রাখা, অন্যের ক্ষতিসাধন না করা, সকলের মুখে হাসি ফোটানো, তাহলে আশা করব আপনারা শব্দ দূষণকে নীরব ঘাতক হিসেবে ব্যবহার করবেন না। নির্ধারিত নিয়ন্ত্রিত মাত্রা বজায় রেখে অনুষ্ঠান করুন তাতে সকলেই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবে, সকলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
জাফরপুর, প্রামানিক পাড়া
ফলতা, দক্ষিণ 24 পরগনা