উর্দু ভাষার ট্র্যাজেডি এবং হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ

অনুজ বিশ্বাস


Nov. 23, 2024 | | views :877 | like:0 | share: 0 | comments :0

এবিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই যে, উর্দু ভাষার জন্ম ও বিকাশ এই ভারতবর্ষের মাটিতেই হয়েছে। উর্দু আর হিন্দি ভাষা সংস্কৃতের যমজ উত্তরাধিকারী। ষোড়শ মহাজনপদের অন্যতম রাজ্য সুরসেন, তথা দিল্লী থেকে মথুরা পর্যন্ত যমুনার তীরবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতক থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে সৌরসেনী প্রাকৃত অপভ্রংশের ব্যাপক প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। অনেকগুলি কথ্য ভাষার মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করে তা হল কৌরবী উপভাষা। এই কৌরবী উপভাষা থেকেই কালক্রমে উর্দু ও হিন্দি ভাষার জন্ম। দ্বাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়কালের মধ্যে সৌরসেনী কৌরবী প্রাকৃত এর সাথে হরিনাভী, অবধী, ব্রজবুলি, ভোজপুরি, বুলেন্দী এবং নবাগত আরবী, ফার্সি ও তুর্কী ভাষার সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় হিন্দুস্তানী ভাষা। এটি একটি মিশ্র ভাষা, আর্য্যাবর্তের মিশ্র রাজনৈতিক ও নৃতাত্ত্বিক সঙ্করায়নের ফসল। হিন্দুস্তানী ভাষার নিজস্ব কোন সর্বজনগ্রাহ্য বর্ণমালা নেই, এটি একান্তভাবেই হিন্দুস্তানের কথ্য ভাষা, মধ্যযুগীয় উত্তর ভারতের নতুন সংস্কৃতি। 

হিন্দুস্তানী ভাষার প্রধান দুইটি লিখিত রূপ, একটি হল দেবনাগরী হরফে লিখিত হিন্দী এবং অপরটি নাসতালিক হরফে লিখিত উর্দু।

 হিন্দী আর উর্দু যমজ ভাষা, তাই এদের শব্দভাণ্ডারের অর্ধেক শব্দই এক ও সমার্থক।

              উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়কাল পর্যন্ত হিন্দুস্তানী সংস্কৃতি ভারতীয় সভ্যতায় সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে গণ্য হলেও, সিপাহী বিদ্রোহের পরবর্তী সময়ে ইংরেজ সরকারের ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি চালু হওয়ার সাথে সাথে উর্দু ভাষার জীবনে দুর্দশা নেমে আসে। হিন্দু-মুসলিম আলাদা করার সাথে সাথে সরকার বাহাদুর খুব সুনিপুণ ভাবে দ্বি-জাতি ও দ্বি- ভাষা তত্ত্ব (Two Nations and Two Languages Theory) একত্রে মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে দেয়। ১৮৫৮ সালের মহারাণীর ঘোষণা পত্রের মধ্যে অবধারিত দেশভাগের সাথে সাথে উর্দু ভাষার মৃত্যু পরোয়ানাও যে লুকিয়ে আছে তা বোধ করি স্বয়ং মির্জা গালিবও সেদিন বুঝতে পারেননি। ব্রিটিশ সরকার সমাজের উচ্চস্তরে এজেন্ট নিয়োগ করে। হিন্দু ব্রাহ্মণ এবং উর্দুভাষী এলিট মুসলিম সমাজকে নিয়োগ করা হয় ভাষা পরিশোধনের কাজে। কুলীন ব্রাহ্মণদের হিন্দি ভাষার সংস্কৃতায়নের কাজে লাগিয়ে, হিন্দি ভাষায় তৎসম শব্দের ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে এটিকে কেবল হিন্দুদের ভাষা হিসাবে তুলে ধরা হয়। এ’থেকেই হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্তান তত্ত্বের জন্ম এবং তার অনিবার্য ফলশ্রুতি আজকের হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ। অপরদিকে উর্দু ভাষাকে স্থানীয় প্রভাব থেকে মুক্ত করে ভাষার মধ্যে আরবী ও ফারসি শব্দ ভান্ডার ও বাকধারার প্রয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে এলিট মুসলিম সমাজকে ইংরেজরা যথেষ্ট তোল্লাই দেয়। সরকারী পৃষঠপোষকতায় সৈয়দ আহমেদ খানের নেতৃত্বে আলীগড় আন্দোলন ও পরবর্তীকালে খিলাফত আন্দোলন গড়ে ওঠে। 

উর্দু ভাষা শোধন করতে গিয়ে তার সমাধির পথ প্রশস্ত হয়।

 আরবী ও সংস্কৃত ভাষাকে খুড়োর কল বানিয়ে জাতিদাঙ্গা বাধিয়ে শুধু কোটি কোটি নিরপরাধ মানুষ খুন করাই নয়, এর সাথে হিন্দুস্তানী ভাষা ও সংস্কৃতিকেও খুন করেছে ইংরেজ সরকার, আর সেগুলোর সৎকার করে চলেছি আমরা, দেশের সাধারণ মানুষ।

            

  ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের সাফল্য বা ব্যর্থতা একটা জিনিস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, ভবিষ্যতে দেশভাগ অনিবার্য, নিদেনপক্ষে বাংলা আর আসাম প্রদেশের পুনর্বিভাজন অবধারিত। এরপরেই আসরে নেমে পড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি। 

একে একে গঠিত হয় মুসলীম লীগ ও হিন্দু মহাসভা। দুইদল হাতে হাত মিলিয়ে খাল কেটে কুমির আনতে বেশী সময় নেয়নি।

দুই জাতির সাথে দুই ভাষাও সম্মুখ সমরে নেমে পড়ে। হিন্দু মহাসভার সাথে যোগ দেয় সঙ্ঘ পরিবার। হিন্দু রাষ্ট্র ও জাতীয়তাবাদের আড়ালে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তি প্রস্তর হয়। মহাসভার নেতারা হিন্দি ভাষার প্রতি এতটাই মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েন যে তারা তাদের মাতৃভাষাকে অগ্রাহ্য করতে দ্বিধা বোধ করেন না। আশ্চর্যজনকভাবে হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্তান তত্ত্বের যারা প্রবক্তা এবং ধারক ও বাহক, তাদের কারও মাতৃভাষা হিন্দী নয়। সাভারকরের মাতৃভাষা মারাঠী, মদনমোহন মালব্যের মালয়ী উপভাষা (ওনারা মধ্যভারতের মালয় অঞ্চলের আদি বাসিন্দা, মালয়- মালয়ী- মালভী- মালব্য)। লাজপত রাইয়ের মাতৃভাষা গুরুমুখী পাঞ্জাবি, তার বাবা ছিলেন উর্দুর শিক্ষক। 

এছাড়া শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বা ডা. হেডগেওয়ার কারও মাতৃভাষা হিন্দী নয়, যথাক্রমে বাংলা ও মারাঠী। শুধু হিন্দুত্বের স্বার্থে তারা হিন্দি ভাষার দালালী করেছেন।

 উল্টোদিকে পাকিস্তানের ধ্বজাধারী মুসলীম লীগ উর্দু ভাষাকে হাতিয়ার করে দুর্বার গতিতে এগোতে থাকে। এখানেও অদ্ভুত সমাপতন। মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের কারও মাতৃভাষা উর্দু নয়। জিন্নার মাতৃভাষা গুজরাটি আর তৃতীয় আগা খানের পারসি। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার নামে মাতৃভাষার এমন নির্লজ্জ বলিদান ভারতবর্ষ আগে কখনও দেখেনি। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি যেন তেন প্রকারে আমাদের উপর হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। আমরা মানে ভারতবর্ষের সেই সত্তর ভাগ, প্রায় আশি কোটি মানুষ যাদের মাতৃভাষা হিন্দি নয়। চল্লিশ কোটি মানুষের দায়ভার চাপিয়ে দেওয়া হল আশি কোটি মানুষের উপর। বর্তমানে শুধু চাপিয়ে দেওয়াই নয়, নাগপুরের গোপন এজেন্ডা অনুযায়ী একদেশ একজাতি একভাষা নীতি কার্যকরী করার জন্য হিন্দী বাধ্যতামূলক করতে চায় দিল্লির সরকার। ২৬/১১ পরবর্তী সময়ে ইসলামোফোবিয়ায় ভুগতে থাকা ভারতে উর্দু ভাষার গায়ে সুনিপুন ভাবে সন্ত্রাসবাদী দেশদ্রোহীর তকমা এঁটে দেওয়া হয়েছে। শাহীনবাগ আন্দোলনের পর উর্দু ভাষা আর টুকরো টুকরো গ্যাং সমার্থক বলে পার্লামেন্টে আওয়াজ তুলেছেন আমাদের মন্ত্রীবর। এরসাথে ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা জারি আছে। হিন্দি ভাষার ধ্বজাধারীরা ভুলে গেছে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলা সাহিত্যের যা ভূমিকা, উর্দু কবিতা আর শায়ারীর ভূমিকা তারচেয়ে কোনও অংশে কম নয়। এমনকি যে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান ব্রিটিশের মেরুদণ্ডে কম্পন ধরিয়ে দেয় সেটির উদ্গাতা ছিলেন উর্দু কবি মওলানা হাসরত মোহানি। এখানেও লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, বর্তমান ভারতে যে দুইজন মানুষ হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের পোস্টার বয়, তাদের কারও মাতৃভাষা হিন্দী নয়, তারা দুজনেই গুজরাটি বানিয়া।

      ভারতে মত পাকিস্তানেও উর্দু ভাষার অবস্থা শোচনীয়। ১৯৪৮ সালে উর্দু ভাষাকে সেদেশের জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার সাথে সাথে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০% উর্দুভাষী, আর সেই ভাষাকেই দেশের জাতীয় ভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেওয়া হল। উর্দু কোনোভাবেই পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হতে পারে না, এটি ছিল মুসলীম লীগের পাকিস্তান আন্দোলনের একটা হাতিয়ার মাত্র। পাকিস্তানের পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান, খাইবার প্রদেশ এবং সমগ্র পূর্ব বাংলা জুড়ে উর্দু ভাষার লেশ মাত্র নেই। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের ৩০% মানুষ ছিল বাঙালী। বাকি ৬০% দখল করে আছে পাঞ্জাবি, পোস্তু, সিন্ধি এবং মুলতানি। পাকিস্তানে উর্দুভাষী মানুষের তুলনায় ভারতে উর্দুভাষী মানুষের সংখ্যা অন্তত তিনগুণ বেশি। বর্তমানে সেদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বলেন। পাকিস্তানের মানুষ উর্দু ভাষাকে আজও হিন্দুস্তানের ভাষা মনে করে, তেমনি ভারতের কাছে পাকিস্তানি জঙ্গীদের ভাষা হল উর্দূ। ১৯৪৮ সালে বাঙলা ভাষা কে কেন্দ্র করে যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সূচনা হয় তা সারা বিশ্বে ভাষা আন্দোলনের বিগ্রহ নড়িয়ে দেয়। বাঙলা আর উর্দু ভাষার সংঘাত চরমে ওঠে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। রক্ত দিয়ে রচিত হয় মাতৃভাষার বিজয়গাথা এবং বাঙালির আন্তর্জাতিক পরিচয় যার অনিবার্য পরিণতি হল ১৯৭১ সালের স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। রাজনৈতিক মেরুকরণের খেলায় ধর্ম যদি তুরুপের তাস হয় তবে ভাষা হল ইস্কাবনের টেক্কা যাকে ধর্ম দিয়েও ওভার ট্রাম্প করা যায় না। তাই মহম্মদ আলি জিন্না, যিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি উর্দু ভাষা ও নাসতালিক বর্ণমালার বিন্দু বিসর্গও জানেন না এবং লাল লাজপতরাই দেবনাগরী বর্ণমালা ও হিন্দী ভাষা সম্পর্কে বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন না করেও শুধু নিজেদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ধর্মীয় রাজনৈতিক কায়েমী স্বার্থ চরিতার্থ করতে উর্দু আর হিন্দি ভাষার হয়ে ওকালতি শুরু করেন।

একথা অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই যে, সরকারী মদতে যেমন কোনও ভাষার বৃদ্ধি ও বিকাশ সম্ভব নয়, তেমনি রাষ্ট্রের চরম বিরোধীতা সত্ত্বেও কোনও ভাষা হারিয়ে যায়নি।

 পাকিস্তানে উর্দু ভাষার একচ্ছত্র আধিপত্য করার মত ফাঁকা মাঠ থাকলেও আজ অবধি সমস্ত রকম সরকারী বদান্যতা সত্ত্বেও সেদেশে উর্দু ভাষার দুরবস্থা বেড়েছে বৈ কমেনি। আজ অবধি দ্বিতীয় কোনও গালিব, প্রেমচাঁদ, ইকবাল বা মন্টো কেউ উঠে আসেনি। 

তেমনি ভারতের মাটিতে বিশুদ্ধ হিন্দী ভাষা ক্রমশ লুপ্তপ্রায়। পরিবর্তে হিন্দী আর ইংরেজি ভাষার অবৈধ সহবাসের ফলে হিংলিশ নামক এক বর্ণসঙ্কর খিচুড়ি ভাষার সৃষ্টি হয়েছে।

 রাষ্ট্রশক্তি যখন কোনও ভাষার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করে তখন সমাজ নিজ দায়িত্বে সেই ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলে। ১৯৪৮ সালে জিন্না পূর্ব বাংলায় উর্দু ভাষা প্রতিষ্ঠা করার নিদান দেন, যার ফলশ্রুতি হিসাবে পরবর্তী দুই দশকের মধ্যে গোটা পূর্ব পাকিস্তান লাহোরের হাতছাড়া হয়ে যায়। পারস্য দেশে ইসলামী শাসন চালু হওয়ার পর লাগাতার চারশত বছর ধরে আরব খলিফারা বুলডোজার চালিয়েও ইরানে আরবী ভাষায় প্রচলন ঘটাতে পারেনি। ইরানীরা আরবী ভাষায় কোরআন পাঠ করতে সম্মত হলেও দৈনন্দিন জীবনে এবং ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে পারসি ভাষা ছাড়া এক চুলও নড়েনি, নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে তারা কোনও আপোস করেনি। এটি বিশ্বের ইতিহাসে দীর্ঘতম সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের অন্যতম উদাহরণ। বর্তমান ইরাকের কুর্দ জনজাতি হাজার অত্যাচার সহ্য করেও কুর্দিশ ভাষা ছাড়েনি, এমনকি স্বয়ং সাদ্দাম হোসেন কয়েক লক্ষ কুর্দ জনজাতি হত্যা করেও তাদের মধ্যে আরবী ভাষার প্রচলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে।

      ১৯৪৮ সালে জিন্না পূর্ব পাকিস্তানে গিয়ে একদেশ একভাষা নীতির পক্ষে সওয়াল করেন, যার মারাত্মক ফলাফল প্রত্যক্ষ করে পাকিস্তান আর কখনও ভাষা নিয়ে মাতব্বরি দেখানোর সাহস পায়নি। 

ভাষা আন্দোলনের সামনে পাকিস্তান চরম শিক্ষা লাভ করলেও, ভারতবর্ষ এথেকে কোনও শিক্ষা নেয়নি।


সাংবিধানিক ভাবে ভারতের জাতীয় ভাষা না হওয়া সত্ত্বেও, সংবিধানের ৩৪৩ ধারায় হিন্দি আর ইংরেজি ভাষাকে একত্রে শুধুমাত্র সরকারী কাজ চালানোর ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও, হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে দ্রাবিড়ভূমে প্রথম গণ আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ ভাষা আন্দোলনে নতুন দিশা দেখিয়েছে। দিল্লীর হিন্দি শাসক পরাজয় স্বীকার করে ফিরে গেছে। ভারতবর্ষ বহুত্ববাদে বিশ্বাসী, নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধানের দেশ। এখানে একদেশ একভাষা নীতি কখনই চলতে পারে না। 

বারংবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও দিল্লির শাসক এই সহজ সত্যটিকে অস্বীকার করে এসেছে। হিন্দী কখনই ভারতের জাতীয় ভাষা হয়ে উঠতে পারে না।

 সমগ্র দাক্ষিণাত্য ও উত্তরপূর্বে হিন্দী চলেনা। ভারতে প্রচলিত ২২৫টি দেশীয় ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষা হিসাবে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক, অন্তত পঁচাত্তর কোটি মানুষ আজকের দিনে কমবেশি ইংরেজী জানেন। অর্থাৎ, অভিন্ন ন্যুনতম জ্ঞান বা Common Minimum Knowledge এর সূচকে মাপলে ভারতের সবচেয়ে বেশি মানুষ যে ভাষা জানেন সেটি হল ইংরেজি। একমাত্র ইংরেজি হওয়া উচিত ভারতের Lingua Franca, কিন্তু তা হওয়ার নয়। আর্য্যাবর্ত, পশ্চিম ভারত জয় করে হিন্দি ধ্বজাধারী দের চোখ পড়ল বাংলার দিকে। বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পনা করে, গোবলয় থেকে হাজারে হাজারে হিন্দিভাষী মানুষকে বাঙলায় নিতে এসে, হিন্দু মুসলিমে আড়াআড়ি বিভাজন ঘটিয়ে, উত্তর প্রদেশ মডেলের সোনার পাথরবাটি দেখিয়েও হিন্দী বর্গীর দল বঙ্গদূর্গের দরজা খুলতে পারলো না। বাংলার মানুষ রাজনৈতিক ভাবে হিন্দী অসুরের আক্রমণ ঠেকিয়ে দিল। এরাজ্যের মানুষ জানে মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা কতখানি। বাঙালী মাতৃশক্তির পূজারী, পুরুষতান্ত্রিক অবতার তত্ত্বের পরোয়া করে না। বাঙলার কৃষ্টি সংস্কৃতি আক্রান্ত হলে রাম-আল্লাহ-যীশু কেউ বাঁচাতে আসবে না, বাঙালী নিজেই নিজেদের বাঁচাবে। হিন্দী আগ্রাসন গণতান্ত্রিক ভাবে প্রতিহত হয়েছে, এখন সময় হিন্দি ভাইরাস আর ইউপি মডেল থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার। বাংলার মানুষ একদিন বিলাতী পণ্য বয়কট করেছে, এবারে হিন্দী প্রলোভন বয়কট করবে।।


অনুজ বিশ্বাস, কৃষ্ণনগর, নদীয়া।

বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের ডাক বিভাগে কর্মরত।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929