সম্পর্কে না হলেও মেলামেশায় খুব কাছের আত্মীয়। আমার অবশ্য তার বাড়ি যাওয়া হয় না বহুদিন। তবে ওরা মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়ি আসার ফুরসত পায়। আমার অনেক উপকারও করে দেয়।
আসতে তাদের বেশ দেরি হলো। দেরি হওয়ার কারন হিসাবে পুজোর ভীড় বলতেই সে শোনালো এক কাহিনী। আমাদের জানা কাহিনী, কিন্তু সে বললে তার মনের মাধুরী মিলিয়ে মিশিয়ে পল্লবে পল্লবে জড়িয়ে, আপন রঙ ছিটিয়ে, ছড়িয়ে।
দুর্গা কাহিনী। দুর্গা হল এক বারাঙ্গনা। আর্যরা ভারতবর্ষ দখল করতে এসে যুদ্ধের প্রতিপক্ষ হিসাবে এদেশের আদি বাসিন্দাদের সম্মুখীন হলো। তাদের সাথে যুদ্ধে এঁটে উঠতে পারলো না। কিন্তু এদের চরিত্র সম্বন্ধে কিছু ব্যাপার স্যাপার জেনে গেল। এরা কোনো নারীর সঙ্গে যুদ্ধ করে না। কাজেই তারা দুর্গাকে যুদ্ধে এগিয়ে দিয়ে নানান অস্ত্রের যোগান দিয়ে গেল। যারা সুরা পান করে তারা হলো সুর। আর যারা সুরা পান করেনা তারা হলো অসুর।
মহিষী মানে রাণী, এ আমরা অনেকেই জানি, যেমন রাজমহিষী।
মহিষ মানে রাজা। অসুরদের রাজা হলো মহিষাসুর।
তো সেই মহিষাসুরকে যখন মারতে এলো দুর্গা। রাজা তার সাথে যুদ্ধই করলো না, বীরের মৃত্যু বরণ করলো।
এই লজ্জার বিজয়কে কাপুরুষ জয়ীরা আজও এমন একটা প্রতিমা বানিয়ে উল্লাস করে।
এই প্রতিমার মূল কথা হলো যুদ্ধ জয়।
তার কাহিনী শুনলাম। ভাবলাম, এই ব্যক্তিটি প্রতিদিন নামাজ পড়তে পারে, রমজানে সারামাস উপবাস করতে পারে, কিন্তু এর মাঝেও আছে কিছু যুক্তিশীল ধ্যানধারণা। কাজেই এর কাছে মুখ খোলা যেতে পারে।
আসলে বুঝিনি, ধার্মিক মানেই ধর্মান্ধ। সে বুঝবে যুক্তি?
তাকে বললাম, দেখো ধর্ম ব্যাপারটাই এমন, ধার্মিকেরা তোমার মতো এতটা গভীর-গভীর বিষয়ের খোঁজই রাখে না।
এই আমাদের হজরত মোহাম্মদের কথাই ধরো না। একদিন ভোরবেলা বলে দিলেন গাধার চেয়ে একটু বড়, খচ্চরের চেয়ে একটু ছোট প্রাণী বোরাকে চড়ে আকাশে উড়ে আল আকসা মসজিদে যান, মহাকাশ ভ্রমণ করেন, আকাশের ১নং গেট, ২নং গেট এইসব খুলে আল্লাহের সাথে দেখা করেন।
আগ্রহী পাঠকের জন্য, মেরাজের গাল গল্পটি একটু বিশদে জানার জন্য নিচে লিংক দেওয়া হল:-
রেফারেন্স : link
আবার দেখো উইকিপিডিয়া বলছে, এক হাদিস মতে
ঐ রাতে তিনি উম্মে হানীর ঘরে ছিলেন, আবার অন্য হাদিস মতে তিনি কাবা মসজিদে ঘুমাচ্ছিলেন।
এখন দেখো দুই রকম কথা হচ্ছে, কাজেই এখানে দুটোই সত্য হতে পারে না, এর একটি তো অবশ্যই মিথ্যা। আর বোরাকের কথা তো মিথ্যাই। কারন প্রাণীবিজ্ঞানে এমন কোনো প্রাণীর কথা নেই যেটি মহাকাশে উড়তে পারে। পাখী ওড়ে বাতাসে। মহাকাশে সম্ভব নয়। এটা তো মোহাম্মদ স্পষ্টত মিথ্যাচার করেছেন।
কথা তখনও শেষ হয়নি। আমার সেই আত্মীয় তেড়ে এলো আমার দিকে, বললে, আর একটা কথা বলবেন না। তাহলে আমি কিন্তু কোনো রেয়াত করবো না।
আমার নবীজীর সম্বন্ধে যে কু-ইঙ্গিত করবে, মিথ্যাচারী বলবে তার ব্যবস্থা করতে আমার এতটুকু আফসোস হবে না।
আমি প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম, পরে উপলব্ধি করতে পারলাম, এটিই স্বাভাবিক।
এরা প্রকৃতই অন্ধভক্ত। যুক্তি বোঝে না। অন্য ধর্মের অলৌকিকতায় সমালোচনার সাইক্লোন বইয়ে দেয়, নিজ ধর্মের কথা এলেই অন্ধত্বের কুৎসিত নখ দাঁত বেরিয়ে আসে।
তবু শান্ত স্বরেই বললাম, সে নাহয় তুমি মারধোর করবে, কিন্তু কথাটা হলো, হাতের কাছেই তো আছে, উইকিপিডিয়া, দেখে নিতে পারো। সে এসব দেখে ইমান অর্থাৎ মোহাম্মদের উপর বিশ্বাস নষ্ট করতে চায় না। আমাদের যাদের ইমান নষ্টের আশঙ্কা নেই, আমরা দেখে নিতে পারি তো। (লিঙ্ক: link….)
আমার আত্মীয় অবশ্য এসব দেখতেই চাইল না। তার বক্তব্য কাফেররা এসব লিখেছে। তারা শয়তানের অনুসারী। যারা মোহাম্মদের কথা বিশ্বাস করতো না, তাদের কাফের অর্থাৎ অবিশ্বাসী বলা হত। মোহাম্মদের এক কাকা আবু লাহাবও তার কথা বিশ্বাস করত না। আমার আত্মীয়টি বলে, এসব মিথ্যা হলে কোটি-কোটি লোক চুপ থাকতো? বললাম, মোহাম্মদকে উম্মেহানি এ কাহিনী বলতে নিষেধ করেছিল। আর কাফেররা তো শুনেই তৎক্ষণাৎ মিথ্যা বলেছিল। এমনকি মোহাম্মদের স্ত্রী আয়েশাও মোহাম্মদ সশরীরে মহাকাশে যাওয়ার ঘটনাকে সত্য বলে মেনে নেন নি। উৎস: উইকি।
“সারা পৃথিবী যখন সত্য বলে মেনে নেয়, সেখানে কয়েকজন কাফের মিথ্যা বললে কী যায় আসে?”
তাকে বোঝালাম, সত্য বলার জন্য লোকসংখ্যা নির্ভর করে না। হাজার লক্ষ কোটি লোকে সত্য সত্য বলে চিৎকার করলেও মিথ্যাটা সত্য হয়ে যায় না। সত্যটা হাজার লোকে বললেও সত্য, একজন বললেও সত্য।
আর এ জগতে এক ধর্মের লোকের অন্য ধর্মে বিশ্বাস নেই। কাজেই কোরাণে তথা আল্লাহে বা মোহাম্মদে বিশ্বাসীর সংখ্যার চেয়ে অবিশ্বাসীর সংখ্যাই বেশী। সকল ধর্মের ক্ষেত্রেই এটি বলা যায়। কাজেই এই বিশ্বে অবিশ্বাসীর সংখ্যাই বেশি, যদিও সংখ্যার উপর সত্য নির্ভর করে না।
আরেকটি ঘটনার কথা বলি।
আমার এক দাদা আছেন। তিনি একটু বেশি রকমেরই ঠাকুরভক্ত। পেশায় তিনি ডাক্তার। এম.বি.বি.এস।
আমার সেই আত্মীয়ের গল্পটি, অর্থাৎ দুর্গার কাহিনী তার গ্রুপে পোষ্ট করলাম। আমার লেখাটি বেশ সাবধানতা নিয়েই লেখা। তাতে আমার নিজের কোনো কথা ছিল না। ছিল আনন্দবাজারে প্রকাশিত দাশাই পরব নিয়ে লেখা। এই পোষ্টটি করার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রুপ থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এটা তারা সহ্য করতে পারলেন না। বাজারে দেখা হলে বেশ উষ্মা সহ তক্কো (তর্ক বা বিতর্ক নয়) করতে লাগলেন। শেষে আমার নামে রটালেন, আমি না কি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর উস্কানি দিচ্ছি।
এই যে উগ্রতা, তার ভিত্তি হল অন্ধ ভক্তি, অন্ধবিশ্বাস। এখানে লেখাপড়ার কোনো প্রভাবই নেই।
ধার্মিক মাত্রেই ধর্মে অন্ধ। সামজে একটু চোখ কান খোলা রাখলেই বোঝা যায়।
এক ধর্মের লোকের বুদ্ধিতে অন্য ধর্মের অবাস্তবতা, অলৌকিকতা খুব সহজেই ধরা দেয়। ভক্তিতে অন্ধ হয়ে যান নিজ ধর্মের বিষয় এলেই। তখন একবার বাস্তবে আসেন, আবার পরক্ষণেই ভাব জগতে চলে যান। নিজের অন্ধবিশ্বাস পোক্ত করার জন্য যেসব যুক্তির অবতারণা করেন, তা আসলে নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার জন্যই, নিজেরা যে একেবারেই অন্ধ সেটাই জাহির করার জন্য।
যাই হোক, এখানে এই সব কথা অবতারণার উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য হলো, এই সব ধার্মিক তথা ধর্মান্ধদের মধ্যে যুক্তিশীল মানসিকতা আনার কাজটা খুব-খুব কঠিন। এই দুরূহ কাজ তবু করে যেতে হবে। অন্ধকার কেটে একদিন আলো ফুটবেই। এ আশা, এ প্রত্যয় নিয়েই তো চলেছি আমরা।