ধৰ্ম, ঈশ্বর এবং নৈতিকতা

জাহিদ রুদ্র


Nov. 23, 2024 | | views :285 | like:0 | share: 0 | comments :0

ধৰ্ম এবং ঈশ্বর বিশ্বাস প্রতিটা মানুষের একটা ব্যক্তিগত বিষয়৷ ধৰ্ম এবং ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস যে কেউ রাখতেই পারে অথবা না রাখতেও পারে, সেটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়৷ কিন্তু কথা হলো ধৰ্ম এবং ঈশ্বর বিশ্বাস মানুষের সহজাত প্ৰবৃত্তি নয়! সহজাত কথাটা বলতে জন্মগতভাবে লাভ করা মানুষের বৈশিষ্ট্যকেই বোঝায়৷ উদাহরণ স্বরূপ: ক্ষুধা, রাগ, যৌন অভিলাষ ইত্যাদি প্ৰবৃত্তিগুলো সকলেরই থাকে৷ প্ৰাবল্য অথবা নিয়ন্ত্ৰণ কম বেশি হলেও এই সহজাত প্ৰবৃত্তিগুলো সকল সুস্থ মানুষের মধ্যে দেখা যায়৷ কিন্তু ঈশ্বরের বিশ্বাস করে না অথবা ঈশ্বরের চেতনার মধ্যে 

উপাসনা, ধৰ্মের উপর বিশ্বাস রাখাটা মানুষের সহজাত প্ৰবৃত্তি নয়৷ মনোবিজ্ঞানের দিক থেকেও ঈশ্বর বিশ্বাস মানুষের সহজাত প্ৰবৃত্তি রূপে গণ্য করা হয় না।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈশ্বর বিশ্বাসীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, এর মানে এটা নয় যে মানুষের সহজাত প্ৰবৃত্তিও কমে যাচ্ছে৷ যদি ঈশ্বর বিশ্বাস মানুষের সহজাত প্ৰবৃত্তি নয় তবে এই ধারণা আসে কোথা থেকে?


একটা শিশুর জন্ম হয় নাস্তিক হিসেবে৷ সদ্যজাত শিশুটি এটুকুও বুঝতে পারে না যে তার ধৰ্ম কি আর ঈশ্বরও বা কি বস্তু? ঘরের পরিবেশ এবং সমাজ ব্যবস্থাই একটা শিশুকে ধৰ্মীয়করণ বা ঈশ্বর বিশ্বাসী হিসেবে বানিয়ে নিতে সহায়তা করে৷ তার ইচ্ছা, চাহিদা কে উপেক্ষা করে অৰ্থাৎ বাধ্য করানো হয়৷ মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের বিশ্বাস নিয়ে ছোটবেলা থেকেই একটা পরিবেশের সৃষ্টি করা হয় যে শিশু অবস্থা থেকে মনে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্ৰতি এমন একটা দৃঢ় ধারণা আঁকড়ে ধরে যা পরবর্তী সময়ে বহু কম সংখ্যকই এই বিশ্বাস থেকে মুক্ত হতে পারে৷ প্ৰতিটা শিশুই জন্মলগ্নে অনুসন্ধিৎসু হয়ে জন্ম নেয়, কিন্তু তাদের অনুসন্ধিৎসু মনকে ধ্বংস করা হয় এভাবে -

ছোট্ট একটা শিশু তার বাবাকে যদি প্ৰশ্ন করে ‘বাবা, আমাদের পৃথিবী, মানুষ এসব কে সৃষ্টি করেছেন?

বাবার সহজ উত্তর: “সবকিছু, ঈশ্বরই”।

সে আবার জিজ্ঞেস করে “বাবা, এই ঈশ্বরকে কে সৃষ্টি করেছেন?”

বাবা, বিরক্তিকর উত্তর: “কেন একটার পেছনে লেগে আছিস’? বুঝবে না বাবা, এগুলো বলতে নেই, ঈশ্বর খারাপ ভাবেন ৷”


মন্দিরে প্ৰণাম- প্ৰাৰ্থনা, মসজিদে নামাজ, জিকির বা চার্চে গডের সম্মুখে প্রে করতেই হবে।

ঈশ্বর-আল্লাহ-গডের গুণকীৰ্তনের মধ্য দিয়ে ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বর নামের কাল্পনিক ধারণা বিভিন্ন ভাবে মানুষের মনে এভাবে মিশিয়ে দেয়া হয় যে জীবনের পরবর্তী সময়ে এর থেকে মুক্ত হওয়ার প্ৰবণতা ক্ষীণ হয়ে পড়ে৷

 এভাবেই মানুষের মনে ঈশ্বরের ধারণা দৃঢ়ভাবে প্রবেশ করে ঈশ্বর এবং ধৰ্মের ভয় দেখিয়ে ভালো হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। ধৰ্ম এবং ঈশ্বর বিশ্বাসের ভয় মানুষকে সৎ পথে আনার হাজার বছরের যে বৌদ্ধিক প্ৰক্ৰিয়া, সেই প্ৰক্ৰিয়ায় যে ব্যৰ্থতা রয়েছে তা বহু সময়ে বহু ভাবে আমাদের উপলব্ধি ও প্রমাণিত হয়েছে৷ এই ধরনের প্ৰক্ৰিয়ার বিফলতাই সৃষ্টি করেছিল ‘রাম মন্দির-বাবরি মসজিদের নামে হত্যা আর হিংসা। এইধরনের প্ৰক্ৰিয়ার বিফলতার জন্যই ধৰ্মীয় ধারণার বিপরীতে কথা বলা জিওৰ্দানো ব্ৰুনোকে জ্বালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল৷ এই প্ৰক্ৰিয়ার বিফলতাই সৃষ্টি করেছে ইসলামিক মৌলবাদের, আফগানিস্তান,ইরান, সহ মুসলিম বিশ্বে চলছে ধর্মযুদ্ধ,নারী নির্যাতন, অশান্তি৷ এতসব ঐতিহাসিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও, যারা ধর্মে নৈতিকতা এবং ঈশ্বরের ভয় শেখায়, তারা কি সন্ত্রাসীদের ঈশ্বর এবং ধার্মিকদের ঈশ্বরের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে?


ধৰ্ম এবং ঈশ্বরের নামেই তো চারিদিকে চলছে হত্যা-হিংসা, সন্ত্ৰাস৷ একটা ধৰ্মের উপর অন্য একটা ধৰ্মের আক্ৰমণ, হুংকার৷ এই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে কেন্দ্ৰ করে গড়ে উঠেছে আধুনিক চাঁদাবাজি সংস্কৃতিরও৷ ধৰ্মের রোষানলে উঠে পড়ে লেগেছে রাজনীতির বিষবাষ্প! ধৰ্ম রক্ষার নামে অলি-গলিতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে কত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান৷ তথাপিও কমছে কি হত্যা-হিংসার জেনোসাইড? ধাৰ্মিক হওয়ার প্ৰতিযোগিতায় কোনো ধাৰ্মিক ঘুষখোর বা অসৎ উপায়ে পাওয়া টাকা দিয়ে সমাজে প্ৰতিপত্তিশীল দেখাবার জন্য দান খয়রাত করছে মন্দির, মসজিদে৷ আর ঐশী আবেগ বা অনুভূতিতে আল্লাহর নামে আত্মঘাতী বোমারু নিয়ে হচ্ছে অগ্রসর৷ ধৰ্ম, ঈশ্বর এবং আধ্যাত্মিকতাতেই এইসকল মানুষকে কেন নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া হয়না? সন্ত্ৰাসবাদী এবং বিভিন্ন কেলেংকারীতে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা এই মানুষগুলোকে জিজ্ঞাসা করা হলে ঠিকই বলবে ঈশ্বরের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস। কোনো ধাৰ্মিক বা 

ধৰ্ম প্ৰচারক হয়তো বলবেন ঈশ্বরের প্ৰতি আস্থা না থাকার দরুণ এহেন অপকৰ্মে হয়তো লিপ্ত হয়েছে৷ কিন্তু তার প্ৰমাণ কি করতে পারবেন?

এখানে বিগত দিনের ‘দ্যা টেলিগ্ৰাফ’ পত্রিকায় প্ৰকাশিত খবরের কথা মনে পড়ে গেল৷ ইংল্যাণ্ড থেকে প্ৰকাশিত বিখ্যাত ‘দ্যা টেলিগ্ৰাফ‌’ (২২ মাৰ্চ, ২০১৬) পত্রিকায় প্ৰকাশিত খবর অনুযায়ী নেদারল্যান্ডে অপরাধের মাত্ৰা এতোই হ্ৰাস পেয়েছিল সেদেশে পাঁচটা জেলখানায় ১৩,০০০ টা কোঠা শূণ্য হয়ে পড়েছিল। সেইজন্য এই পাঁচটা কারাগার বন্ধ হয়ে থাকাটাও স্বাভাবিক। যার ফলে কারাগারে কর্মচারীদের চাকরির স্থায়িত্ব সংক্ৰান্তে প্ৰশ্নবোধক চিহ্নে এসে ছিল৷ আকৰ্ষণীয় কথা হলো দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮৩% মানুষই নাস্তিক বা অজ্ঞেয়বাদী৷ কেবল মাত্ৰ ১৭% মানুষ ধৰ্ম কিম্বা ঈশ্বর-বিশ্বাসী। অন্যদিকে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্ৰের মোট জনসংখ্যার ৯০% মানুষ আস্তিক; ধৰ্ম এবং ঈশ্বরের উপর তাদের অটল আস্থা। কিন্তু বি.বি.সি.-র দেয়া তথ্য অনুসারে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্ৰে মোট জেলবন্দীর সংখ্যা প্ৰায় বিশ লক্ষেরও অধিক৷ এদিকে নেদারল্যাণ্ডে অপরাধীর অভাবে কারাগার বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল৷ অপরদিকে সমস্ত আমেরিকার কারাগারের প্ৰায় একশো শতাংশ কোঠাই অপরাধীদের দ্বারা পূৰ্ণ হয়ে আছে। সেইজন্য নাস্তিকের সংখ্যাধিক্য থাকা দেশ থেকে, ধৰ্ম এবং ঈশ্বরের প্রতি আস্থাশীল লোকের গিজগিজ করতে থাকা আমেরিকাতে অপরাধের মাত্ৰা বেশি!

বিজ্ঞানের বলে আমরা বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডকে নতুন দৃষ্টিভংগীতে দেখতে সক্ষম হয়েছি৷ কিন্তু বিজ্ঞান কখনও জিজ্ঞেস করে নাই যে ঈশ্বর আছেন না নাই! বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এই প্ৰশ্ন গুরুত্বহীন৷ আদিম কাল থেকেই মানব সভ্যতা দুটা বড় প্ৰশ্নের মুখামুখি হয়ে আসছে৷ একটা হলো ‘কিভাবে’ এবং অন্যটি ’কেন’৷ যে ’কিভাবে’ এই প্ৰশ্নের উত্তর সন্ধানে লাগলো তাঁরা বিজ্ঞান জগতে প্রবেশ করলো আর যে ’কেন’ প্ৰশ্ন নিয়ে অগ্রসর হতে লাগলো, তাঁদের একটা সময়ে স্তব্ধ হতে হলো৷ যেখানে তথ্যের অভাব ছিল অৰ্থাৎ মানুষের সীমাবদ্ধতা বা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ছিল৷ যার ফলে ঈশ্বরের নামে অলৌকিক শক্তির ধারণাটি এসে দাঁড়ালো৷ সেইজন্য ঈশ্বরের বিপক্ষে আর কোনো প্ৰশ্নের স্থান নেই৷ আর জিজ্ঞাসা বা অনুসন্ধান সেখানে স্তব্ধ হয়ে পড়লো।


ঈশ্বর হচ্ছে মানুষের মনের সৃষ্টি৷ প্ৰাকৃতিক পৰ্যবেক্ষণের পর কল্পনায় কিছু কথা সংযোজন করলেই ‘ঈশ্বর’র মতো কোন এক ধারণার সৃষ্টি হয়৷

 ভারতের অৰ্থাৎ সিন্ধু উপত্যকার ঈশ্বরসমূহের কাল্পনিক রূপসমূহ যদি দেখা যায় তবে লক্ষণীয় যে তাদের সাদৃশ্য ভারতীয়দের সঙ্গে রিলেটেড ৷ অৰ্থাৎ দেবী দূৰ্গার কাল্পনিক রূপটিতে যেভাবে আলঙ্কারিক সৌন্দৰ্যে আৰ্য দেবী হিসেবে অঙ্কন করা হয়েছে ঠিক সেইভাবে বাঘের ছাল, অৰ্ধ উলংগ একজন অনাৰ্য দেবতা হিসেবে শিবের চিত্ৰরূপ দেয়া হয়েছে৷ ঠিক সেইভাবে আফ্ৰিকা বা গ্ৰীসে দেবতাদের যদি দেখা হয় সেই কাল্পনিক রূপ সমূহ আফ্ৰিকা বা গ্ৰীসের মানুষের সঙ্গে মিল দেখা যায়৷ এই কাল্পনিক ঈশ্বরকে কেন্দ্ৰ করে পৃথিবীর সৰ্বাধিক ধৰ্মের সৃষ্টি হয়েছে৷ যেগুলো ধৰ্ম বেশি প্ৰাচীন সেখানে ঈশ্বরের বিভাগের কথা বলার বিপরীতে তুলনামূলকভাবে নতুন ধৰ্ম (খ্ৰীষ্টান, ইসলাম, প্রমুখ) এবং পুরানো ধৰ্মের সংশোধনী হিসেবে একজন ঈশ্বরের ধারণা দেয়া হয়েছে।


দেখা যায় একজন বিজ্ঞানী আস্তিক হলে, এই বিজ্ঞানী বহু আস্তিকের উদাহরণ হয়ে উঠেন ৷ ঈশ্বর, ধৰ্ম বিশ্বাসের কথা আসলে অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত ডিগ্রীধারী বা প্ৰফেশনাল ডিগ্ৰীধারী মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে নিজের বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে প্ৰতিষ্ঠা করতে দেখা যায়৷ কিন্তু কথা হলো প্ৰফেশনাল ডিগ্ৰীর সাথে একজনের চিন্তাধারার মানসিকতা সর্বদা সমানুপাতিক নাও হতে পারে৷ অৰ্থাৎ একজন ভালো উচ্চ-শিক্ষিত মানুষের চিন্তাধারার থেকেও কখনও একজন অশিক্ষিত মানুষের ভালো চিন্তা, ভালো আদৰ্শ হতে পারে৷ তদুপরি বহুজনের প্ৰশ্ন বা যুক্তি, যদি ঈশ্বর অস্তিত্ব নেই এই পৃথিবীতে তবে কেন বেশি ঈশ্বর বিশ্বাসী? এই প্ৰশ্নের উত্তর একটা ঐতিহাসিক উদাহরণ দিয়ে কিছু উপলব্ধি করতে পারি৷ আজ থেকে হাজার হাজার বছর পূর্বে অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করেছিল যে পৃথিবী স্থির অৰ্থাৎ সূৰ্যই পৃথিবীর চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে৷ সেইমতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাও দেয়া হয়েছিল৷ হাজার হাজার বছর ধরে সেই ধারণা মানুষের মধ্যে প্ৰচলিত ছিল৷ কিন্তু সেইসময়ত জিওনাৰ্ড ব্ৰুনো, কোপাৰ্নিকাস, গেলিলিওকে মুখ্য করে যুক্তিবাদী এবং অনুসন্ধিৎসু মনের অধিকারী মুষ্টিমেয় কিছুসংখ্যক সংখ্যাগরিষ্ঠদের স্রোতের বিপরীতে গিয়ে এই ধারণার বিরোধিতা করেছিল৷ যার জন্য তাদেরকে বিভিন্নভাবে শাস্তি প্ৰদান করা হয়েছিল৷ কিন্তু বৰ্তমান সময়ে পূৰ্বের ধারণার বিপরীতে সূৰ্যকেন্দ্ৰিক ধারণার বৈজ্ঞানিক সত্য রূপ মেনে নিয়েছি! সেইজন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিশ্বাস মানেই বৈজ্ঞানিক প্ৰমাণ নাও হতে পারে। আস্তিকের সংখ্যা থেকে নাস্তিক, নিরশ্বরবাদী বা অজ্ঞেয়বাদীর সংখ্যা পৃথিবীতে বহু পরিমাণে কম যদিও বিগত দশক থেকে বহু দেশে নাস্তিক বা মুক্তমনা মানুষের সংখ্যা দ্ৰুত বৃদ্ধির বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্ৰতিবেদন দেখা গেছে৷


কিছু সংখ্যক মানুষ মনে করেন যে একজন ব্যক্তি যে ঈশ্বর বা ধর্মকে মানে না সে “বিশৃঙ্খল, অহংকারী, অনৈতিক, অমানবিক।নৈতিকতা এবং ধর্ম-বিশ্বাসকে বিভ্রান্ত করা অনেকের মনে জাগা এটি স্বাভাবিক প্রশ্ন ৷

কিন্তু ঈশ্বর বা ধৰ্মের ভয় দেখিয়ে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া একটা অবৈজ্ঞানিক ধারণা।

নৈতিকতা মানে শুধু ঈশ্বরের বিশ্বাস নয় অথবা ঈশ্বরকে কেন্দ্ৰ করে তৈরি করা কোনো ধৰ্মাচরণও নয়৷ নৈতিকতা মানে সকাল-বিকেল ঈশ্বরের গুণকীৰ্তন করা নয়৷ নৈতিকতা মানে কোনো ধৰ্মের ধর্মীয় রীতিনীতির উপর আস্থা রেখে ভক্তিভাব নয়৷ নৈতিকতা হল সাধারণ নিয়ম ও প্রবিধানের সমষ্টি যা কারো ক্ষতি না করে নিজের এবং সমাজের উপকার করা৷ উচ্চ-নীচ, হিন্দু মুসলমান সকল জাতি-ধৰ্মের মানুষ সমান মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার মানসিকতাই হচ্ছে নৈতিকতা৷ নৈতিকতা হল এই ধারণা যে ঘুষ না নিয়ে কিছু সঠিক কাজ করা ৷ নৈতিকতা হল হৃদয়ে উপলব্ধি করা যে আমার নিজের স্বার্থে সমাজে অন্যদের ক্ষতি না করা৷ কারো কোন ক্ষতি না করা, চুরি না করা এবং সবার সাথে ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে কোন ধর্মের প্রয়োজন নেই৷ এই ন্যূনতম নৈতিকতা পশুর মধ্যে ও দেখা যায়৷ নৈতিকতা এবং ঈশ্বর বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়৷ নৈতিকতা এসেছে মানুষের সমাজের জন্য নিজে তৈরী করে নেয়া কিছু সমাজনীতি থেকে৷ সেইজন্য নৈতিকতা সমাজে নীতির সঙ্গে জড়িত শব্দ৷ সমাজ ছাড়া অন্য প্রাণীদের কোনো কৃত্রিম নৈতিকতা নেই৷ নৈতিকতা যেহেতু সমাজ নীতির সঙ্গে জড়িত শব্দ, অনেকেই ঈশ্বর বিশ্বাস, ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতাকে সমাজনীতির অংশে নৈতিকতার অধীনে নিয়ে আসেন ৷ কিন্তু ধৰ্ম, ঈশ্বর এবং আধ্যাত্মিকতাকে সমাজনীতির অধীনে এনে নৈতিকতার মৰ্যাদা দিলে কখনো কখনো এর পরিণতি হয় ভয়াবহ৷ এই ধরনের নীতি থেকে উদ্ভূত নৈতিকতা মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণ বা মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণের পক্ষে। এই ধরনের নীতি থেকে সৃষ্ট নৈতিকতা আবার রাম রহিমের মতো ধর্মীয় নেতাদের জন্ম দিতে পারে।


ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস (World Happiness Report) রিপোর্ট অনুযায়ী, রাষ্ট্রসংঘ দ্বারা পরিচালিত একটি বার্ষিক জরিপে দেখায় যে ধর্ম এবং ঈশ্বর বিশ্বাসের সাথে নৈতিকতার কোন সম্পর্ক নেই। দেশসমূহের জরিপে রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, মানবাধিকার এবং ধর্মীয় বিশ্বাস সহ আরও অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বের ১৫৬টি দেশের জরিপ অনুযায়ী, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং নরওয়ে এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। দুঃখজনকভাবে, ভারত 140 তম স্থানে রয়েছে৷মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ ধর্মীয় দেশ রয়েছে ৫০ এর নীচে৷ ঠিক সেইভাবে Institute for Economics and Peace (IEP)র তত্ত্বাবধানে সমীক্ষা চালিয়ে ২০১৮ সনের Global Peace Indexর প্ৰতিবেদনে ভারতের সুখী সূচকে একটি বিভ্রান্তিকর জায়গায়! 

মজার ব্যাপার হল, ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর জোর দেয় এমন লোকে ভরা একটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সুখের সম্পর্ক বিপরীত। এর মানে হল যে দেশগুলিতে বেশি সংখ্যক মানুষ যারা ঈশ্বর এবং ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করে তাদের সুখের স্তর নিম্নতর হয়,

 যেখানে কম সংখ্যক মানুষ যারা ঈশ্বর এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস করে তাদের সুখের স্তর বেশি। প্রতিবেদনে শীর্ষ পাঁচটি দেশে স্বঘোষিত নাস্তিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষে পরিপূর্ণ দেশগুলোতে মানুষের মধ্যে খুন-হানাহানি বেশি হওয়া উচিত ছিল বলে প্রচলিত ধারণা! কিন্তু কেন এমন দেশগুলো বেশি সুখী? যদিও পরিসংখ্যান একটি সম্পূর্ণ উপসংহার টানতে পারেনি যে ঈশ্বর বা ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষকে অপরাধ করতে প্ররোচিত করে, আমরা এই ধরনের পরিসংখ্যান থেকে একটি যৌক্তিক উপসংহার টানতে পারি যে ধর্ম এবং ধর্মীয় বিশ্বাস অপরাধ থেকে মানুষের সিংহভাগকে দূরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে! 

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929