দুই বন্ধুই নামকরা চিকিৎসক, অর্থাৎ সমাজের দৃষ্টিতে বেশ লেখাপড়া করা শিক্ষিত লোক।
তাঁদের একজনের সমস্যা, তিনি কিছুতেই সিগারেট ছাড়তে পারছেন না, অথচ খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন, সিগারেট না ছাড়লেই নয়। অন্যজন মদ্যাসক্ত ছিলেন, এখন ছেড়ে দিয়েছেন। না, সিগারেটের নেশা তাঁর নেই। তিনি নিজেকে দেখিয়ে বন্ধুকে বলেন, আমি মদ ছেড়ে দিতে পারলাম, আর তুই সিগারেট ছাড়তে পারছিস না। অন্য জনের যুক্তি, মদ তো খেতিস একবার শুধু সন্ধ্যে বেলায়। ও ছাড়া এমন কি আর কেরামতি। আমি সিগারেট খাই দিনরাত, সব সময়, দিনে অন্তত দশবার। সেটি ছাড়া কি মুখের কথা। তবে আমি চেষ্টা চালাচ্ছি। একেবারে ছেড়ে দেওয়া যাবে না, একটা করে কমাচ্ছি। এই যেমন সামনের মাস থেকে প্রতিদিন গুনে গুনে নয়টির বেশি খাবো না।
আমাদের ধর্মের নেশাটিও ঠিক এমনটাই। ভোর থেকে দুপুর রাত, এমনকি রাত্রির মধ্যেও, জীবনের প্রতিটি কাজেই ধর্মের অনুষঙ্গ। নেশা যাতে কেউ ছাড়তে না পারে তার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা।
দুটি লোকের দেখা হচ্ছে, “আসসালামু আলায়কুম, ওয়ালেকুম আসসালাম, ওয়া বরকাতুহু, আল্লাহ তোমার কে আশির্বাদ করুক, তোমার ধনবৃদ্ধি ঘটুক”, গুরুর জয়, রামকৃষ্ণের জয়, সারদার জয়, শ্রীরামের জয়, বাবার জয়, মাতার জয়। এর মূল লক্ষ্য আপনার নেশাকে প্রতিক্ষণে জাগিয়ে রাখার কৌশল। এগুলি হলো নেশা চাগিয়ে তোলার মন্ত্র। অন্ধকারের উপাসনা।
এই উপাসনা মানুষকে করে তোলে নির্বোধ। করে তোলে স্বার্থপর। শেখায়, তুমি একা। এসেছ একা, যাবে (কোথায়?) একা। এরা ভিক্ষা দেয় স্বর্গের লোভে, অপরের পাশে দাঁড়ায় স্বর্গের লোভে। এরা জানে এটা তার নিজের ধর্ম। এটা আছে বিপদে। অতএব মনের মাঝে পুষে থাকে এক ঘৃণা। প্রতিনিয়ত চলে এই কু-শিক্ষা।
মহালয়া। তর্পন করে। পিতৃপুরুষের আত্মাকে তিল জল খেতে দেয়। জিজ্ঞেস করি, তাহলে যে শুনেছিলাম আত্মা কিছু খায় না। আর আমায় কিছু খেতে দাও, খাওয়ার পর, দেখ প্লেট খালি।
তোমরা যে খেতে দাও আত্মাকে, খাবার কি চোখের সামনে ভ্যানিশ হয়?
তাহলে আত্মা খাচ্ছে কিভাবে বুঝলে?
আত্মা খাচ্ছে না, কারণ আত্মা নেইই।
আর যদি থাকেই, সে আত্মারও জাত সম্প্রদায় আছে। হিন্দু আত্মার পূনর্জন্ম হয়। মুসলিম, খৃষ্টান, ইহুদি আত্মার পূনর্জন্ম হয় না।
আত্মা অন্য জন্ম নেয়, এই যদি আপনার বিশ্বাস হয় তাহলে, তাহলে সে কিভাবে সে আপনার তর্পনে সাড়া দেবে? সে তো ইতোমধ্যেই জন্ম নিয়ে বড় হয়ে হয়তো সেও এক মৌলানা অথবা চারর এর ফাদার। ও হিন্দু আত্মা শুধু হিন্দুই হয়। তাহলে হয়তো সে বড় হয়ে আজ তার নতুন বাবার তর্পন করছে। তাহলে আপনি কেন তার তর্পন করছেন?
অর্থাৎ একই সাথে দুই বিপরীত কাজ করে বোঝাচ্ছেন, ধর্ম আপনার যুক্তিবাদী মানুষকে অন্ধ করে দিয়েছে।
ধর্মে কোনো যুক্তি চলে না।
একজন মুসলিম বিশ্বাস করে হজরত মোহাম্মদ গাধায় চড়ে মাহাকাশ ভ্রমণ করেছিল। আমাদের মহাপুরুষেরা ধর্মের এজেন্ট। প্রতিটি মুহূর্তে তারা মানুষকে অন্ধকারের উপাসনার শিক্ষা দিয়ে চলে। সমাজে তা প্রতিষ্ঠা পেয়ে আসছে।
এ জগদ্দল পাথর সরানো একদিনের কর্ম নয়, জেনেই যুক্তিবাদীরা আলো আনার প্রচেষ্টা করে চলেছেন। নিরন্তর। নিরলস।