আস্তিকতায় পেট ভরে না, রোগ সারে না
সায়ক সরকার
Nov. 21, 2024 | | views :283 | like:0 | share: 0 | comments :0
যখন খুব খিদের পরে গরম ভাতের গন্ধটা নাকে আসে, তখন মনে হয় এটাই স্বর্গ কিন্তু পৃথিবীর অনেক মানুষ এই স্বর্গ সুখ ঠিকমত পায় না, তারা তাদের দুঃখের কথা বললে কোনো ধার্মিক গুরু বলবে এখন এতো কষ্ট করছ, দেখবে মৃত্যুর পরে তুমি সুখ পাবে, আসলে এসব বলে একটি মানুষ কে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো। যখন করোনা হলো তখন ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, NGO, রেড ভলান্টিয়ার্স (ভারত)-দের আমাদের ফ্যারিস্তা বলে মনে হয়েছিল। এই কিছুদিন আগে বাংলাদেশে যখন বন্যা হলো, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের ধর্মীয় গুরু, ইউটিউবার-রা, তাদের অর্থ বল জুগিয়েছিল সাধারণ মানুষ। তাহলে সব তো আমরাই করলাম। তাহলে অদৃশ্যমান ঈশ্বর কোথায়? যেই গরম ভাতের গন্ধ আমাকে সুখ দিয়েছিলো সেই ভাতের ধান কৃষকরা বানায়, বানানোর সময় নজর রাখে সারের বৈজ্ঞানিক উপাদান, জলবায়ুর প্রকৃতি, মাটির উর্বরতার উপর, সোজা কোথায় তারা একটা অঙ্ক করে ফেলে, তারপরে নিজেদের উত্তর বের করে, এই অঙ্ক করতে লাগছে যুক্তি, তাহলে হঠাৎ করে কিছু হলো না।
অনেক লোক যেমন অনেক রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করেছে, ঠিক সেইভাবে অনেক ভাবে ধর্ম প্রচার করেছে, তাতে যে যা ভেবেছে সেটা বলে গেছে, তারাও আমাদের মতো এই পৃথিবীতে এসেছিলো, তাদের ও হাত-পা ছিল, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোন ছিল না, ছিল না বিজ্ঞানের দুর্দান্ত আবিষ্কার, সময় বদলে গেছে আমাদের সেই ধর্মীয় চিন্তাকে প্রশ্ন করতে হবে।
আজকে চিকেন পক্স হলে আমাদের ডাক্তার দেখাতে হবে, একটা সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত ছিল না, তাই মানুষ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতো, নিরামিষ খেত।
আজকেও অনেকে করে এটা, করে কি লাভ? ত্বকের উপরে ছোপ দাগ থেকে যায়, ওষুধ খেলে খুব তাড়াতাড়ি সেরে যায়, না তো সেই ভোগাবে। আবার প্রশ্ন করছি ঈশ্বর কোথায়? দিন রাত এক করে আমরা ওষুধ আবিষ্কার করেছি।
আজও কোনো জটিল অপারেশন হলে রোগীর বাড়ির লোক নামাজ পরে, প্রার্থনা করে, কিন্তু কাজ করছে ডাক্তারদের একটা দল, তারা কতটা কি পারছে তার উপরে জীবন নির্ভর করছে, অতএব সেই ডাক্তার রাই তখন ভগবান তুল্য।
বাংলাদেশে আজ একটা পোশাক নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয়েছে, ছোট পোশাক পড়া অশালীন, পুরো চেহারা জুড়ে পোশাক পড়া শালীন। না বললেও আমরা জানি এটা একটা ধর্মীয় বেড়াজালের থেকে কোনো অংশে কম না, আসলে ধর্মের অজুহাতে মেয়েদের একটা খাঁচার মধ্যে রাখার চেষ্টা চলেছে, যেই ধর্মীয় বিধিনিষেধ মানুষের নিজের মতো বেঁচে থাকার অধিকার কে মূল্য দেয় না, আমি তার পক্ষে কেন থাকবো?
যেই মন্দিরে বসে আমরা পুজো করছি, যেই মসজিদে বসে আমরা নামাজ পড়ছি, সেই মন্দির মসজিদ বানিয়েছে শ্রমিকরা, সেই বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা কেমন হবে, সেটা করেছে আর্কিটেক্ট-রা, ভগবানের উপাসনা করতে গিয়ে অসুস্থ হলে আপনাকে দেখবে ডাক্তাররা। অতএব চারদিকে স্বর্গের রূপে যা আছে সেটা বাড়ি হোক বা ডাক্তারখানা বা এম্বুলেন্স, সবটা করেছে মানুষের শ্রম আর উদ্ভাবনী শক্তি।
লিখতে লিখতে বাংলাদেশের এক রাজনৈতিক ব্যক্তির কথা মনে পড়লো, কমরেড জসিমুদ্দিন।
সোজা ভাষায় কথা বলতেন উনি, ওনার অঙ্ক খুব সোজা ছিল, উনি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইতেন, সেটা হলেই সমাজের সকল মানুষ নারী-পুরুষ- তৃতীয় লিঙ্গ এর মানুষ সকলে নির্দ্ধিধায় শিল্পকলা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, উঁচু ইমারত গর্বে, তখন বুঝতে পারবে যা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি, সবই মানুষের শ্রম ও উদ্ভাবনী শক্তির জন্যে।