বর্তমানে আমাদের দেশে দেশপ্রেমেরের জোয়ার বইছে। অভুক্ত শরীরেও দেশপ্রেম টগবগ করে ফুটছে।
কিন্তু দেশপ্রেম কি?
তা হইতো অনেকেই জানেন না।দেশপ্রেম বলতে শুধুই দেশের প্রতি প্রেম বোঝায় না, দেশের মানুষের প্রতি প্রেমও বোঝায়।
দেশ যদি ভালোবাসার মতো কাজ করে, তবে দেশের মানুষ আপনা আপনি দেশকে ভালোবাসবে। কাউকে জোর করে বলার দরকার নেই, দেশকে ভালোবাসো, দেশকে ভালোবাসো।
কিন্তু ভারত সরকার থুড়ি মোদীর সরকার দেশের জনগনকে এখন ঘাড় ধরে দেশপ্রেমের পাঠ শেখাতে নেমেছে। আর এখানেই দেশের বহুত্ববাদের সঙ্গে বিরোধ বাঁধছে। মোদীর সরকার যা বলছে তা ভুল হলেও ঠিক বলে চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে হবে, নইলে আপনাকে দেশদ্রোহী, বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে ছাপ মেরে দেবে।তারপর যা ঘটে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভারত সরকার ও মোদী সরকার এখন সমার্থক হয়ে উঠেছে। সরকার দেশপ্রেমের নামে উগ্র হিন্দু তালিবানী শাসন চালু করতে চাইছে। যা ভারতের মতো ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে যথেষ্ট চিন্তার বিষয় বটে।তাই সাধারণ শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের এখনই এই স্বৈরাচারী শাসনের উপরে প্রতিবাদ না জানালে, আগামী দিনে হয়তো চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছু উপায় থাকবে না।
দেশ জুড়ে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদের চাপে ও গৈরিক বাহিনীর ভয়ে দেশের এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে সামরিক সাঁজোয়া গাড়ি মোতায়েন থাকবে, যা দেখে ছাত্র ছাত্রীদের মনের মধ্যে দেশপ্রেমেরের বাতাবরণ তৈরি হবে। কিন্তু এতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। যেহেতু জোর করে মানুষের মনে দেশপ্রেম কখনও জাগানো যায় না।
মাদ্রাজ হাই কোর্টের মহামান্য বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন যে, দেশের স্কুল, কলেজ, অফিসে এখন থেকে "বন্দে মাতরম" গানটি বাধ্যতামূলক ভাবে গাইতে হবে। কিন্তু এর ফলে কি দেশপ্রেম বাড়বে? তা হইতো আগামী দিনে বোঝা যাবে।তবে দেশের শাসন বিভাগের নির্দেশে বিচার বিভাগ অতি সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ফলে জন সাধাণের চিন্তা বাড়ছে বলে মনে হয়।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতো মানুষকে যেভাবে দেশের সরকার পদে পদে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে, অপমান করছে।সেটা মোটেই ভালো লক্ষণ নই। দেশ এক ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
দেশের এক ভণ্ড যোগগুরু তো প্রকাশ্য সমাবেশে হুমকি দিচ্ছে, "ভারত মাতা কি জয়" না বললে মুণ্ডু কেটে নেওয়া হবে।এটাই কি দেশপ্রেম এর স্বরূপ? এগুলো কি মেনে নেওয়া যায়?
এখন তো আবার একটি নিরীহ পশুকে নিয়ে দেশের সরকার যেভাবে মেতে উঠেছে, তা দেশের মানুষের কাছে যথেষ্ট চিন্তার বিষয়ই বটে। মোদী রাজে যেখানে সেখানে অপ্রীতিকর ঘটনা বেড়েই চলেছে।মানুষের জীবনের চেয়ে এই পশুটি এখন মহা মূল্যবান হয়ে উঠেছে। এই পশুটিই বর্তমানে মোদী সরকারের রাজনৈতিক প্রানী হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরুর জন্য মানুষকে প্রতিনিয়ত খুন বা গনধোলাই এর শিকার হতে হচ্ছে। এরকম দেশপ্রেম আমরা চাই না।যে দেশপ্রেম মানুষের থেকে পশুকে মূল্যবান মনে করে।
এই মেকি দেশপ্রেমেরের প্রতিবাদ চাই। তাই দেশের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের কাছে অনুরোধ করবো, দেশকে বাঁচাতে, দেশের মানুষ কে বাঁচাতে, দেশের গনতন্ত্র কে প্রতিষ্ঠা করতে, দেশের বহুত্ববাদকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে।