বার্নাম এফেক্ট

পঞ্চানন মন্ডল


Nov. 21, 2024 | | views :294 | like:0 | share: 0 | comments :0

আমি শুনতে চাই তাকে,

মস্তিষ্ক মিল পায় যাকে।

আমাদের মস্তিস্ক বিভিন্ন ঘটনার মিল খুঁজতে পারদর্শী। যে কোনো ধরণের বক্তব্য বা কথা আমরা নিজেদের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করে যাই। নিজেদের অহংবোধ আর মস্তিস্কের মিল খোঁজার প্রবণতা মিলে আমরা যে কোনো গল্পে নিজেদের খুঁজে পাই, তবে শুধু মিল গুলো! অমিলগুলো যেন নিজে থেকে নিভে যায়।

জ্যোতিষ, রাশিফল,বাবাজী, মাতাজী, সাধুবাবা কথায় বা অতীত বা ভবিষ্যৎবানীতে আমরা এভাবে মিলটাই খুঁজে নিই। কিন্তু একবার ভাবুন অন্য যারা একই রাশিফল পড়ছে তারাও আপনার মতই মিল খুঁজে পাচ্ছে- যদিও তাদের জীবন আপনার জীবন সম্পূর্ণ আলাদা।

এ’যেন কিছুটা এমন -

ধরুন, আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা একটি মেয়ে/ছেলে স্ট্যাটাস দিয়েছে, “আমি আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা একটি ছেলেকে/মেয়েকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু সাহস করে বলতে পারছি না।কি ভাবে বলি বলুন তো?”

আপনি এই স্টাটাস দেখে তৎক্ষণাৎ ভাবতে পারেন, স্ট্যাটাসটি হয়তো আপনাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে।


মজার বিষয় হলো, ঠিক একইভাবে আরো কয়েকজন ফেসবুক ফ্রেন্ড একই কথা ভাববেন যে, মেয়েটি/ছেলেটি হয়তো তাদের উদ্দেশ্যেই কথাটি বলেছেন।  এটাই বার্নাম ইফেক্ট। এই ধরনের বাক্যগুলোতে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয় না। একটা কথা বলা হয়, যা সবার জন্যই প্রযোজ্য হতে পারে কিন্তু সবাই মনে করে কথাটি কেবল তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে।


"বার্নাম এফেক্ট" হলো মস্তিষ্কের এমন এক অনুভূতি যখন কোনও সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে নিজের মতামত শুনে বা কোনও রাশিফল পড়ে, আপনি মনে করেন: “এটি অবশ্যই আমার সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ আমার জীবনের কথা"। "আমিতো এমন"। হাঁ আমার জীবনেই তো এমন ঘটেছে"। "আমার সঙ্গেই তো এমনটা ঘটে"। "হাঁ, আমার জীবনে এগুলো ঘটতে পারে"!


১৯৪৮ সালে মনোবিজ্ঞানী বার্ট্রাম ফোরার একটি পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তিনি তার ছাত্রদের নিয়ে একটা পার্সোনালিটি টেস্ট করেছিলেন। তিনি সকল ছাত্রদের পৃথক ভাবে ডেকে একটি পত্রিকায় যেমন রাশিফল দেয় তেমন  লেখা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন তাদের সঙ্গে কতটা মেলে তা পয়েন্ট দিয়ে জানাতে। সব মিলে গেলে ১০ পয়েন্ট। শিক্ষক একই কথা লেখা কাগজ প্রত্যেকের হাতে তুলে বলেছিলেন দেখো তোমার কথা লেখা আছে কি না। তবে লেখাটি নির্দিষ্ট করে কারোর জন্য ছিল না। তবুও বেশীরভাগ ছাত্র পয়েন্ট দিয়ে জানিয়েছিল তার কথাই লেখা হয়েছে।


কী লেখা ছিল সেই কাগজে? "তুমি সবাইকে আপন ভাবো, ভালোবাসো, কিন্তু সবাই তোমাকে ভালোবাসে না। তোমার কথার সবাই সমালোচনা করে কিন্তু পরে দেখা যায় তোমার কথাই ঠিক ছিল। তোমার কিছু ব্যক্তিগত দুর্বলতা থাকলেও তুমি সেগুলো কাটিয়ে ঠিক নিজের পায়ে দাঁড়াবে।কারণ তোমার মধ্যে যা প্রতিভা লুকানো আছে তা অনেকের নেই।তোমার শৃঙ্খলাবোধ, দায়বদ্ধতা, আত্মবিশ্বাস তোমার সম্পদ। সেগুলোই অন্যদের ঈর্ষার কারণ। তবে তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে বা সঠিক কাজটি করেছো কিনা তা নিয়ে মাঝে মাঝে তোমার সন্দেহ হয়।তুমি কিছু বৈচিত্র্য, বিশালতা, আর নিজস্বতা পছন্দ করো।কিন্তু তা পাওনা বলে মাঝে মাঝে অস্থির লাগে। তুমি স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পছন্দ করো; আবার উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া সবকিছু বিশ্বাস করো না। তুমি জেনে গেছো যে অন্য লোকের সাথে খুব খোলামেলা হওয়া খুব বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই কখনও কখনও তুমি অন্তর্মুখী, সতর্ক আর মিতভাষী।তাই বলে উচিত কথা বলতে তুমি পিছপা হয় না। তবে তোমার কিছু আকাঙ্ক্ষা অবাস্তব।সেটা তুমিও জানো। তবু তুমি স্বপ্ন দেখো। যাইহোক তোমার মধ্যে যা পজিটিভিটি আছে তা দ্বারা অনেক কষ্টের মধ্যেও তুমি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে"।


আপনারা নিশ্চয়ই বুঝেছেন, শিক্ষক মহাশয় অত্যন্ত চতুরতার সাথে এই লেখা লিখেছেন, যাতে বেশিরভাগ ছাত্রের মনের সাথে তা মিলে যায়। প্রত্যেকে যাতে প্রত্যেকের নিজের মতো বিবরণ খুঁজে পেতে পারে। 

এবার আসুন। জ্যোতিষীরা যেভাবে আপনার ভাগ্য বলে দেয়, আমিও সেভাবে আপনার অব্যর্থ ভাগ্যগনণা করে দিই। দেখুন তো এর মধ্যে কয়টি আপনার সঙ্গে মিলে যায়! 


১। আপনার যা Quality সেই পরিমাণ সাফল্য আপনি পান নি।

২। আপনি সবার জন্য করবেন, কিন্তু নাম পাবেন না।

৩। আপনি মুখ ফুটে নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারেন না।

৪। আপনার নিকটজনই কিন্তু আপনার সবথেকে বড় শত্রু।

৫। আপনার প্রতি শণি বিরূপ। বৃহস্পতি ও সদয় নয়। এদের সন্তুষ্ট করতে হবে। নইলে বিপদ। 

৬। বছরের প্রথম দিকে অর্থভাব খুব শুভ হলেও, বছরের মাঝখানে আর্থিক দিকে একটু সমস্যা দেখা দেবে। তবে সেটা সামলে ওঠার ক্ষমতা আপনার আছে।অর্থের ব্যাপারে সতর্ক থাকলে সঞ্চয় ভাল হবে। অর্থ ভাগ্য খুব ভাল হবে এই বছর।

৭। বায়ুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে ও সংসারের সকলের ভালো করতে গিয়ে টেনশন বাড়বে। হার্ট দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা। 

৮। সন্তানরা একটু অবাধ্য হয়ে উঠতে পারে।

৯। বিভিন্ন ছোটখাটো কারণে আপনার  স্বামী/স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদ চলবে। 

১০। অনেক দিনের পুরনো কোনও সম্পর্কে কোনও প্রকার চিড় ধরতে পারে। 

১১। নিজের প্রচেষ্টায়  কিছু আয় বাড়তে পারে।তার জন্য আপনার কলিগদের ঈর্শাভাজন হবেন।

১২। বছরের শেষে ভ্রমণের যোগ আছে।

১৩। প্রেমের বিষয়ে কোনও গোলমাল সামনে এলে, নিজেকে গুটিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

১৪।  সম্পত্তির জন্য ভাই ভাই বিবাদ হতে পারে। তার জন্য মানসিক চাপ বাড়তে পারে।

১৫। সামনে আপনাকে অনেকে ভালোবাসলেও প্রকৃত ভালোবাসা আপনি পাবেন না।

১৬। আপনি ভালো মানুষ। সবাইকে খুব সহজে  আপনি বিশ্বাস করেন। সেই সুযোগে তারা আপনাকে ঠকায়।সবাই তো আর আপনার মতো সরল মানুষ না।

১৭। আপনি সবসময় ঠিক কথাই বলেন। প্রথমে সেই কথার গুরুত্ব কেউ দেয় না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আপনার কথাই সত্যি হয়।

১৮। আপনি অপরের বিপদে সবসময় এগিয়ে আসেন। কিন্তু নিজের কোনো বিপদে কাউকে তেমন পাশে পান না।

১৯। সামনে একটা ফাঁড়া আসছে। সাবধানে থাকবেন। ভগবানকে ডাকবেন। বিপদে তিনি আপনাকে রক্ষা করবেন। 

২০। আগামী দু মাস আপনার জন্য অশুভ। 


এই সাধারণ কথাগুলো অনেকের সঙ্গে মিলে যাবে।আর আগেই বলেছি আপনার মস্তিষ্ক তো মিলটাই খুঁজে নেবে।যেটা মিলবে না সেটার কথা ভুলেও ভাববে না! বার্নাম এফেক্ট বা ফোরার এফেক্ট!

জ্যোতিষীরা আপনাকে দেখে এই কথাগুলো তাদের মতো করে আপনাকে বলে।তারা পেশেন্ট/ক্লায়েন্ট ঘেঁটে-ঘেঁটে প্রচুর অভিজ্ঞ। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের হিসেব নিকেষ যেমন ঠিকুজি, কুষ্টি, হস্তরেখা বিচার, কপাল বিচার, বাস্তুশাস্ত্র এইসব ভড়ং বা নাটক করে আপনার বিশ্বাস অর্জন করে। এরপর তারা আপনার মন বুঝে এমন সব কথা বলে যে আপনি সহজেই বিশ্বাস করে নেন যে এগুলো আপনার ভাগ্যে আছে। এই বিশ্বাসের সুযোগ তারা কেন হাতছাড়া করবে! তারা ধান্দাবাজ, চিটিংবাজ  বৈ তো কিছু নয়!!

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929