কাল পঁচিশে ডিসেম্বর। স্কুলের বাচ্চারা খুব খুশি। কিন্তু রোহন একটু মনমরা। রোহনের বয়স ছয় বছর। স্কুলের অন্য বন্ধুরা গল্প করছে, গতবার পঁচিশে ডিসেম্বর রাতে ওদের বাড়িতে সান্তা এসেছিল। কাউকে খেলনা, কাউকে চকোলেট, কাউকে রং পেনসিল, কাউকে ক্যাডবেরি দিয়ে গেছে। কিন্তু রোহনতো কিছু পায়নি। ওর কাছে তো সান্তা আসেনি।
- তুই দুষ্টু, পচা। তাই সান্তা তোর কাছে আসেনি। পচা... পচা ...
রোহন আরও কুঁকড়ে গেল। ঐ তো ওর বাবা আজ ওকে নিতে এসেছে। রোহন দৌড়ে ওর বাবার কাছে চলে গেল। বাবাকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে।
- কি হয়েছে বাবা?
রোহন কোনো উত্তর না দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
- কি হয়েছে বাবা? ম্যাম বকেছে?
- না। বাবা, আমি পচা?... আমার কাছে সান্তা কেন আসে না? ....
রাহুল বুঝতে পারছে না কি বলবে। রোহনকে আদর করতে করতে বললো না, না তুমি খুব ভালো। বলে জড়িয়ে ধরলো। রাহুলেরও চোখের কোণে জল চিকচিক করতে লাগলো।
- বন্ধুরা সান্তার থেকে কতো গিফ্ট পায়....
রাহুল বুঝতে পারছে না কি করবে। রাহুল চেয়েছিল রোহনকে কুসংস্কার মুক্ত বাস্তববাদী চিন্তা ভাবনায় গড়ে তুলবে। তারপর বড়ো হয়ে ও যেটা ভালো বুঝবে। এই ছোটো বয়সে ওকে যুক্তি বোঝাতে গেলে, এখন থেকেই ওকে প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হতে হবে। না, না সেটা উচিত হবে না। আবার যদি ওর বন্ধুদের মতো সান্তা রাতে গিফ্ট রেখে যায়, তাহলে রোহন হয়তো খুশি হবে, কিন্তু ওর শিশুমনে অদৃশ্য কাল্পনিক শক্তির অস্তিত্ব সৃষ্টি হবে। রাহুল এখন কি করবে? কিছু ভাবতে পারছে না।
- ও মা। বাবা, বাবা এই দেখো .., সান্তা আমার প্রার্থনা শুনেছে।
- কি হয়েছে বাবা?
- এই দেখো রাতে সান্তা এসেছিল। দেখো কতো গিফ্ট। এবার আমিও বন্ধুদের বলবো, "আমি পচা না, আমাকেও কতো গিফ্ট দিয়ে গেছে। সান্তা Thank you. Thank you Santa."
ছেলের খুশি দেখে বাবা মায়ের চোখে জল চলে এলো। দুজন ছেলেকে খুব আদর করলো। আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো।
রাহুল সংশয়ে। ও কি ঠিক করলো? ওর হাত ধরেই আজ জন্ম নিলো কাল্পনিক শক্তির অস্তিত্ব। এবার রোহনও বিশ্বাস করতে শুরু করবে কাল্পনিক শক্তিকে। রাহুল কি ঠিক করলো??