আমিও হাত দেখতে পারতাম!

মুজিব রহমান


Nov. 20, 2024 | | views :886 | like:0 | share: 0 | comments :0

ছাত্রজীবনে হাত দেখা শিখেছিলাম। একবার এক সন্তানসম্ভবা তরুণীবধূর হাত দেখে বললাম, আপনার ছেলে হবে; তবে সাধবানে থাকবেন ফাঁড়া আছে। আপনার মেয়ে হবে এটা কখনো কাউকে বলতাম না, বিশেষ করে প্রথম সন্তান মেয়ে হবে এটা অধিকাংশেরই প্রত্যাশা থাকে না বলেই মনে হতো। তরুণীবধূর পুত্রসন্তান হয়ে মারা যায়। অর্থাৎ ঝড়ে বগ মারা গেল কিন্তু ওই পরিবারের বিশ্বাসের মাত্রাটা ছিল অনেক বেশি। আবারো সন্তানসম্ভবা হলে আমাকে বারবার তার বাসায় দাওয়াত দিতে থাকেন। আমি থাকি হলে আর ওই মহিলা থাকে সূত্রাপুর। যাওয়া কঠিনই। ওনার স্বামী কয়েকবার আসলেন আমি তালবাহানা করি। একদিন এসে ধরে নিয়ে গেলেন। আবারো হাত দেখে বললাম এবারো ছেলে হবে এবং কোন ফাঁড়া নাই, সুস্থ সন্তান হবে। কাকতালীয়ভাবে মিলে গিয়েছিল। 


আমি একাধিক বইতে দেখেছি একই রেখার ভিন্ন ব্যাখ্যা, উল্টো ব্যাখ্যা। আসলে কথাচ্ছলে কিছু বিষয় জেনে নিয়ে সেই তথ্যই উপস্থাপন করা, যার হাত দেখবো তার সম্পর্কে কিছু তথ্য আগে থেকেই জেনে নেয়া এবং মানুষের চেহারা দেখেও কিছু অনুমান করেই হাত দেখা হয়। ওই মহিলার আত্মীয়া ছিল আমার সহপাঠী বান্ধবী। ওর কাছ থেকে কিছু তথ্য আগেই জেনেছিলাম।


আমিতো সৌখিন ছিলাম। কিন্তু এটাকে ব্যবসা হিসাবে নিয়ে প্রতারণা করছে অনেকে। এই সব প্রতারণার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কোন প্রচারণা নেই। তবে ভারতে রয়েছে। ভারতের যুক্তিবাদী সমিতি ঘোষণা দিয়েছিল, যদি হাত দেখে কেউ পঞ্চাশ ভাগ সত্য বলতে পারবে তবে তাকে দেয়া হবে ১০ লক্ষ টাকা (এখন সম্ভবত ৫০ লক্ষ)। তো একজন হস্তরেখাবিদ আসলেন।


১। তাকে দেয়া হয় একটি বানরের হাতের ছাপ। জ্যোতিষি বললেন, এই শিশুটি ৮০ বছর বাঁচবেন, ২৫ বছরে বিয়ে করবেন আর উচ্চ শিক্ষা লাভ করবেন।


২। এরপর তার সামনে আনা হয় একজন সফল মানুষকে যিনি দেখতে কদাকার ও রুগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী। তাকে দেখে জ্যোতিষি বলল, নিদারুণ দারিদ্রের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। পারিবারিক অশান্তি রয়েছে। সন্তানকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছেন।


৩। একজন খুবই সুদর্শন দরিদ্র মানুষকে ভাল পোষাক পরিয়ে তার কাছে আনা। এবার জ্যোতিষি শুধুই সফলতার কথা বললেন।


হস্তরেখা ব্যবসা একটি প্রতারণামূলক ব্যবসা। এখন এই ব্যবসার অবস্থা পৃথিবীজুড়েই বেশি ভাল না। তবুও বাংলাদেশে জ্যোতিষসম্রাটরা প্রতারণা ফাঁদ পেতে বসে আছে। বিক্রমুপুরের লিটন দেওয়ান একসময় বাসের হেল্পার ছিল এখন জ্যোতিষ সম্রাট!  মূর্খ নায়ক-নায়িকা ও নেতাদের হাত দেখার ভিডিও বিজ্ঞাপন হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিনেতাদের মহাজ্ঞানী ভেবে কিছু অর্বাচিনও জ্যোতিষিদের স্মরণাপন্ন হচ্ছে। লিটন দেওয়ান একজন বড় মাপের প্রতারক। দেশের বহু নায়ক-নায়িকারাই তাকে হাত দেখান। রাষ্ট্রপতি আ. হামিদসহ বহু মানুষ তাকে হাত দেখিয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষ সহজেই প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়। লিটন দেওয়ান বিভিন্ন রকম অপকর্ম করে এখন মুক্তিদাতার আসন গেড়ে বসেছেন।


মুঠু ভাজ করার কারণেই হাতে রেখা তৈরি হয়৷ এখানে ভাগ্য লেখা থাকে না৷ বাস্তবিক ভাগ্য বলেও কিছু নেই এবং তা হাত বা কপালসহ কোথাও লেখা থাকে না৷

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929