‘ঈশ্বরের’ নিবাস বাংলার অন্যতম তীর্থস্থান
সুদিন চট্টোপাধ্যায়
Nov. 20, 2024 | | views :777 | like:0 | share: 0 | comments :0
মধ্য কলকাতায় পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নিজস্ব বাসভবন।
বিদ্যাসাগর প্রথম জীবনে নিজে কোনও বাড়ি না তৈরি করলেও শেষ বয়সে তাঁর বিপুল গ্রন্থসম্ভার রাখার জন্যেই ১৮৭৬ সালে মধ্য কলকাতার ২৫ বৃন্দাবন মল্লিক লেনে (এখনকার ঠিকানা ৩৬ বিদ্যাসাগর স্ট্রিট ) এক টুকরো জমি কিনে একটি দোতলা বাড়ি তৈরি করেন। জীবনের শেষ চোদ্দ বছর তিনি কাটিয়েছেন এই বাড়িতেই। এই বাড়িতেই ‘সাগর দর্শন’ করতে এসেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। বহু জ্ঞাণীগুণী মানুষের নিত্য যাতায়াত ছিল এই বাড়িটিতে। রাত দুটো আঠারাে মিনিটে, ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে জুলাই, বঙ্গাব্দ ১২৯৮ সনের ১৩ ই শ্রাবণ এখানেই জীবনাবসান হয় বিদ্যাসাগরের। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ‘বিদ্যাসাগর এস্টেট’ নামে একটি ট্রাস্ট গঠিত হলেও তা এক সময়ে দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়ে। সেই সময়ে বিদ্যাসাগরের মহামূল্য গ্রন্থ সংগ্রহ লালগোলার মহারাজ নিলামে কিনে নেন। এই বাড়ি থেকেই বিদ্যাসাগরের সযত্ন সঞ্চিত গ্রন্থরাজি বাক্সবন্দি হয়ে চলে যায়। পরে অবশ্য বইগুলোর অধিকাংশই বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে ফিরে এসেছে। অল্প কিছু বই বিদ্যাসাগর কলেজে রয়েছে। গ্রন্থ সংগ্রহ রক্ষা পেলেও, বিদ্যাসাগরের ওই বাসভবনটি কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমেই জীর্ণ হয়ে পড়ে এবং এক সময়ে সেটি দুষ্কৃতীদের আড্ডায় পরিণত হয়। দীর্ঘ কাল ওই অবস্থায় থাকার পরে পশ্চিম বঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার আইনের লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বাড়িটি দখলে আনেন এবং সংরক্ষিত ঘোষণা করেন।বিদ্যাসাগরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িগুলির মধ্যে একমাত্র রক্ষা পেয়েছে এই বাড়িটিই। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ইচ্ছানুসারে, বিদ্যাসাগর মহিলা কলেজের তত্ত্বাবধানে বিদ্যাসাগরের এই বসত বাড়িটিতে নারী শিক্ষা ও নারী ক্ষমতায়নের নানা প্রকল্প চালু হয়েছিল। বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ও পোড়ামাটির কাজে সাজানো একটি মুক্ত মঞ্চও তৈরি হয়েছিল। আন্তরিকতার সঙ্গে বিদ্যাসাগর জন্মবার্ষিকী পালন করতো কলেজের ছাত্রীরা। বর্তমান সরকার এসব স্থগিত করে ভবনটি সরাসরি নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন, সুসজ্জিত স্মৃতি সংগ্ৰহশালা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে। জানি না সে কাজ কতদূর এগিয়েছে। আজ, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াণবার্ষিকী [২৯ জুলাই ১৮৯১], জানি না এ ভবন-দ্বার আজকের দিনে সর্বসাধারণের জন্যে অবারিত কিনা? গৃহটি এখন "ঐতিহ্য ভবন" হিসেবে চিহ্নিত।
একদা, 'ঈশ্বরের' নিবাস, বাংলার অন্যতম তীর্থস্থান।