পরিবার ও সমাজের চাপেই মানুষ ধর্মে প্রবেশ করে

শম্ভুনাথ চার্বাক


Nov. 20, 2024 | | views :815 | like:2 | share: 2 | comments :0

নাসিরুদ্দিন শা অনুপম খের এর অভিনীত বিখ্যাত এ ওয়েডনেসডে চলচ্চিত্রে পরিচালক নাসিরুদ্দিনের মুখ দিয়ে তোতলামো করিয়ে বলিয়েছিলেন “ WE ARE RELIGIOUS BY FORCE “।কারণ ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থা ধর্মের সুড়সুড়ি ক্রমশ বাড়ছিল। এখনতো একথা বললে সিনেমার সেট পুড়িয়ে দেওয়া হবে। কোন ইসলামিক দেশে এর আসেপাশে কোন কথা বললে তার মুন্ডুর দাম দশ লক্ষ ডলার ধার্য হবে।মহম্মদের ছবি আঁকার জন্য যদি কয়েকশ প্রাণ নিতে পারে ইসলাম ; বিনা কারণেই ব্লাশফেমি চার্জ এনে বধ্যভূমিতে হাজির করবে। 

পরিবার সমাজ বাধ্য না করলে আমরা অনেকেই ধার্মিক হতাম না , আর বিজ্ঞানের যুগে ধর্ম পালন করলে লোকে পাগল বলতো ----- এটা কি মিথ্যা ? শিশুর জন্মের পরেই পরিবার ও সমাজ কি বাধ্য করেনা ধর্মাচারণ করতে ? আমরা ছোটবেলা থেকেই বাবা –মা বা অন্য পরিজনেরা মন্দিরে নিয়ে গিয়ে মাথা ধরে ঠুকে বলে নম করো বা মসজিদ গির্জায় নিয়ে গিয়ে আল্লা যীশুর নামে প্রেয়ার করায় না কি ? এবং শিশুর মনও পরিবারের সেই ধর্মের আদলে গঠিত হতে থাকে ধর্মে ঢোকানোর জন্য ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও শাসক বরাবর সক্রিয়। ফলে প্রচুর ধর্মানুষ্ঠান আর আচারের নিগড়ে বাঁধা প্রতিটি মানুষকে। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে প্রচার ও ধর্ম প্রসারের সহায়ক। নাস্তিকদের চ্যানেলের অনুমতী কি সরকার দেবে ?

। নিজে থেকে কোন মানুষ ধর্মে প্রবেশ করেনা। একমাত্র বুদ্ধিমান মানুষই ধর্মাচারণ করে , অন্য কোন প্রাণী এই গ্রহে ধর্মাচারণ করেনা। সুন্দরবনে হিন্দু বাঘ বা মুসলমান বাঘ নেই কিন্তু হিন্দু মুসলমান মানুষ আছে।এবং আমাদের বৈদিক ধর্মের এক করুণ পরিণতি মানুষের বর্ণ বিভাগ। সুন্দরবনে ব্রাহ্মণ বাঘ বা চারাল বাঘের সন্ধানও কেউ পায়নি। বৃত্তি বিভাজনকে চালাকি করে বর্ণ বিভাজনে পরিণত করে ধর্মের মোড়কে হাজার হাজার বছর ধরে শোষণ করার করুণ পরিণতি আমাদের দেশেই ঘটেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই বৃত্তি বিভাজন হয়েছে উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদেই , ইংল্যান্ডেও পটার( কুমোর) , বুচার( কষাই) , স্মিথ (কামার) বারবার ,মিলার প্রভৃতি পদবি আছে। এরা ধর্মতত্ত্ব( থিওলজি বিষয়ের পাঠ্য ) পাস করলেই গির্জার যাজক হতে পারে , কিন্তু ব্রাহ্মণের বাইরে কেউ পুরোহিত হতে পারে এই দেশে ? এখন ধর্মান্তরকরণ ও আন্দোলনের ঠেলার ভয়ে কিছু কিছু পরিবর্তন আসছে। নারীরাও পুজো করছে কলকাতায়। কিন্তু পুরোহিত দর্পণের শূদ্রাচমন আর নারী বিরোধী কথাগুলিতো এখনো গমগমিয়ে চলছে।পুরোহিত দর্পণের শূদ্র ও নারীদের এই অপমানগুলিকে বাদ দেবেন কি করে ?? ব্রাহ্মণ ও ধর্ম বিরোধী আন্দোলন আরো ব্যাপৃত হলে হয়তো ধর্ম ও ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এগুলিকেও এক সময় বাদ দিতে হবে। এবং আশ্চর্যের বিষয় যাদের এগুলি দ্বারা অপমান করা হয়ে থাকে তারা অর্থাৎ শূদ্র ওনারীরাই এই ধর্মকে আরো বেশী করে আঁকড়ে ধরে সমাজে সঞ্চালিত করে। 

আমি এটা লেখার তাগিদ অনুভব করেছি এক মনস্তাত্বিক প্রক্রিয়া ও দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে। আমার পর্যবেক্ষণ এই যে, গোঁড়ামি ও অন্ধবিশ্বাস একজন মানুষের কাণ্ডজ্ঞান ও বিশ্লেষণী চিন্তাভাবনার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় সত্য অসত্য প্রবন্ধে লিখেছিলেন একজন অধ্যাপক ক্লাশে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের কারণ পড়িয়ে সারাদিন নিরম্বু উপবাস থেকে সন্ধ্যায় গ্রহণ ছাড়লে কীর্তনের দলের সাথে গঙ্গায় ডুব দিয়ে পবিত্র হয়ে আসেন। আমরা জানি শিশুকালে সামাজিকীকরণের সময় আমাদের মনে যেসব ধারণা প্রবিষ্ট করানো হয় তা পরবর্তীতে সবসময় আমাদের চিন্তার পটভূমিতে থাকে। ফলে যেকোন অযৌক্তিক ভাবনা চিন্তা যদি আমাদের মনে আসে তবে আমাদের শিশুকালে লব্ধ ভাবধারণার সাথে মিলিয়ে তার বৈধতা দিতে চাই।স্বল্প কিছু বিরল ব্যক্তি ছাড়া অনেক বিদ্বান অধ্যাপক বিজ্ঞানী ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তারও এই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারেননা। অযৌক্তিকতা ও কাল্পনিক ভাবনাকে বাস্তব বলে গ্রহণের জন্য প্রায়শই তাঁরা সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করেননা অথবা করলেও তখনই করেন যখন তা তাঁদের মনে প্রোথিত ধারণার সাথে খাপ খেয়ে যায়। আর তাই ধর্মপ্রাণ টলেমি পৃথিবী সূর্য চারদিকে ঘোরে বুঝেও নিজের মধ্যেই চেপে রেখে দিলেন বা আমাদের ইসরোর ডিরেক্টর ডঃঃ শ্রীনিবাস চন্দ্রযান উৎক্ষেপণের আগের দিন তিরুপতি মন্দিরে পূজা দিয়ে আসেন এবং চন্দ্রযান ছড়ার আগে নারকেল ফাটিয়ে পূজা করেন , কোপার্নিকাস তাঁর তত্বপ্রকাশ করেননি খ্রিস্টান যাজকদের ভয়ে বা এই বিশ্বাস থেকেই। এই বিশ্বাস এক ভাইরাসের মতো তা সমগ্র জাতিকে ধ্বংস করে দেয়। বিপরীত দিক দিয়ে বলা যায় এই মানবজাতিই পর্যবেক্ষণ এবং নায্য বিচার বিবেচনার অধিকারী। মানুষ তার এই জ্ঞানের জন্য নানা ধরণের বৈজ্ঞানিক সমস্যা সমাধান করতে পারে এবং ভয় ঠেলে সত্য প্রকাশ করতে পারে এবং তাই আমরা পাই গ্যালিলিও ও তাঁর অনুসারীদের। কিন্তু যখন ধর্ম ও রাজনীতির মিশেল সামনে আসে তখন মানুষ তার বিচার-বুদ্ধি , বিশ্লেষণী চিন্তা এবং যৌক্তিকতাকে পদ দলিত করে ফেলে ভয়ে বা অন্ধ ভক্তিতে। 

যুক্তি বিজ্ঞান এবং গণিত অনুযায়ী এই ব্রহাণ্ডের প্রাকৃতিক এবং রাজনৈতিক সামাজিক ---- প্রতিটি ঘটনার পেছনেই কার্যকারণ সম্পর্ক আছে। তবে সমাজবিজ্ঞান ভৌত বিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করলেও ভৌতবিজ্ঞানের রিজিড নিয়ম ধরে চলেনা। পৃথিবীর সবচেয়ে নবীনতম প্রাণী মানুষের বয়স কম এবং জ্ঞান বুদ্ধি সেই পর্যায়ে না যাওয়ার জন্য সমস্ত ঘটনা তারা বিশ্লেষণ করতে এখনও সক্ষম নয়।তবে জ্ঞানের প্রসার অনেক দূর গেছে সেটা বুঝতেই পারা যায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার প্রভূত অগ্রগতি দেখে। অনেক সময় এই কারণ প্রতীয়মান হয় দ্রুত আবার অনেক সময় তা দীর্ঘকাল নেয়।যেমন ক্যানসারের এখনো ঔষধ বা চিকিৎসা সেভাবে হয়না। তাই প্রতিটি মানুষকে আমরা যুক্তিবাদী হতে বলি বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা কুঁড়ে কুড়ে খায় সমজ ও ব্যক্তি জীবনকে।এবং সমাজের অধিকাংশ মানুষ কষ্টভোগ করে।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929