Hate Politics বলে কিছু হয়না, নিরপেক্ষ বলে কিছু হয়না
সন্ধ্যা মুখার্জী
Nov. 20, 2024 | | views :810 | like:0 | share: 0 | comments :0
মাস গেলে মোটা বেতন, শহরের বুকে ৩ বি এইচ কে ফ্ল্যাটে অত্যাধুনিক ফার্নিচার, দামি গাড়ি চেপে স্ত্রী আর ছেলে মেয়ে কে নিয়ে সপ্তাহান্তে অন্তত একবার আইনক্স তে সিনেমা দেখে ফেরার পথে ম্যাকডোনাল্ড তে ঢুঁ মারা আর বাড়ি ফিরে এসে হালকা করে এসি টা ছেড়ে দিয়ে দামি সোফায় বসে বিশাল বড় এলসিডি টিভির সামনে বসে বনধ, ধর্মঘট, রাস্তায় মিটিং মিছিল এর সমালোচনা করে গুষ্টি উদ্ধার করা। এই তো জীবন কালিদা।
কিন্তু জীবনের কি নিষ্ঠূর পরিহাস দেখুন এই সেদিন পর্যন্ত বনধ, ধর্মঘট, রাস্তায় মিটিং মিছিল এর সমালোচনা করা মানুষ গুলো আজ নিজেরাই রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। কিছুদিন আগে রাতারাতি চাকরি খুইয়ে ছিলেন জেট এয়ারওয়েজ এর প্রায় ১৭০০০ কর্মী। এক রাতের মধ্যে শহরের বুকে ৩ বি এইচ কে ফ্ল্যাটে র ওই নিশ্চিত জীবন থেকে রাস্তায় মিটিং মিছিল এর ওই অচেনা ময়দানে নামিয়ে দিয়েছিলো ওনাদের। হয়তো ওঁরা নিজেদের জীবন দিয়ে একটু একটু করে বুঝেছেন রাস্তায় নেমে এইসব আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তাটা কতটা, হয়তো বা ওঁরা বুঝছেন ওঁদের ভাষায় সমাজের ওই ছোটোলোক মানুষ গুলো শখ করে পথে নামেন না,পথে নামেন একদম দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াই তে।
দেশের গাড়ি শিল্প বাণিজ্য ধ্বংসের মুখে, ফেডারেশন অফ অটোমোবাইল ডিলার্স এসোসিয়েশন এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত কয়েক মাসে ৩ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন আগামীদিনে আরো ১০ লক্ষ মানুষ কাজ হারাবেন, টেক্সটাইল সেক্টর এর অবস্থা আরো ভয়াভব গত একবছরে ৩৫℅ উৎপাদন কমেছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ রুজিরোজগার হারিয়েছেন গত একবছরে, দেশের ৩০ টি ইস্পাত কারখানা বন্ধের মুখে, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনস্থ এন এইচ এম এবং আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের ১৩১৮ জন কে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হচ্ছে, ৩ লক্ষ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা চলছে রেলতেও, বিস্কুট প্রস্তুতকারী সংস্থা পার্লে এই আর্থিক মন্দার জেরে তাদের ১০ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করতে চলেছে। আই টি সেক্টর এর অবস্থাও খুব একটা আশানরুপ নয়, ২০১৮ সালে যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা খাতে ব্যায় বৃদ্ধি পেয়েছিলো ৬.৭ হারে এবছর সেটি হ্রাস পেয়ে ৩.৮ হওয়ার সম্ভাবনা।
চাকরি থেকে ছাঁটাই হওয়া এই কয়েক লক্ষ কর্মীর প্রায় অধিকাংশই এই সেদিন পর্যন্ত বনধ, ধর্মঘট, রাস্তায় মিটিং মিছিল এর সমালোচনা করে পাড়া মাথাতে তুলতেন।
কিন্তু জীবনের কি নিষ্ঠূর পরিহাস দেখুন ওই নিশ্চিত জীবনের ড্রয়িং রুম ছেড়ে ছোটলোকদের ওই আন্দোলনে আজকে ওনারা পা মেলাতে বাধ্য হয়েছেন, খুব কিউট ব্যাপার না?
রেল, বি এস এন এল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলো (PSU) কেউ আর সুরক্ষিত নয়। একের পর এক সব শিল্পপতিদের হাতে বেচে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি চাকরিটাও আর মানুষের কাছে সুরক্ষিত নয়।
- তাই ফেসবুক স্টেটাস তে নামের পাশে আপনিI Hate Politics লিখতেই পারেন, সারাদিন সেক্স, পরনিন্দা -পরচর্চা নিয়ে আলোচনা করতে ভালো লাগলেও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে ওসব নোংরা জিনিস বলে আপনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে ই পারেন, মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াইতে পথে নেমে সাধারণ মানুষের আন্দোলনকে আপনি ডিসগাস্টিং বলে ছোটলোকদের নোংরামি বলে দাগিয়ে দিতেই পারেন, অফিস থেকে বাড়ি ফিরে গিন্নির হাতের ইলিশ ভাপা খেয়ে হাত চাটতে চাটতে আমি রাজনীতি করিনা কথাটা ১০৮ বার আপনি বলতেই পারেন, কলেজ পাস করার পরও বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই স্কুল সার্ভিস এক্সাম টা দিতে না পেরে পেট চালানোর দায়ে কলকারখানায় কাজ করার পরও আমি রাজনীতি করিনা কথা টা আপনি বলতেই পারেন কিন্তু জেনে রাখুন মশাই এই নিরপেক্ষতার ভনিতা আপনাকে বেশি দিন বাঁচাবে না।
ছোটবেলায় রাখালের বাঘ পড়ার গল্পটা কমবেশি তো সবাই পড়েছিলেন, এই ঘুণ ধরে পচে গলে যাওয়া সমাজের আজকের রাখাল যদি জেট এয়ারওয়েজ এর ওই কর্মীরা হয় কালকের রাখাল যদি বিএসএনএলের কর্মী রা হয় তাহলে জেনে রাখুন আগামীদিনের রাখাল কিন্তু আপনি। তাই আজ না হয় কাল বাঁচতে গেলে পক্ষ আপনাকে নিতেই হবে, এই নিরপেক্ষতার ভনিতা আপনাকে বেশি দিন বাঁচাবে না। আর পক্ষ বলতে তো ২ টো, একদিকে যা কিছু অন্যায়, যা কিছু মিথ্যে যা কিছু অত্যাচার তার সব কিছু নিরপেক্ষতার ভনিতা করে নিজের শিরদাঁড়া বেচে দিয়ে মেনে নেওয়া আর একদিকে সমাজের ওই উঁচু শ্রেণীর ভাষায় ছোটলোকদের ওই শেষ বিন্দু পর্যন্ত শিরদাঁড়া সোজা রেখে রাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখে নিজের মতো করে, নিজের সামর্থ অনুযায়ী যা কিছু অন্যায়, যা কিছু মিথ্যে যা কিছু অত্যাচার তার বিরোধিতা করা। তাই বাঁচতে গেলে পক্ষ আপনাকে নিতেই হবে কারণI Hate Politics বলে কিছু হয়না, নিরপেক্ষ বলে কিছু হয়না।