দেহদান মানবতার এক অঙ্গীকার

পৃথ্বীশ ঘোষ


Nov. 20, 2024 | | views :9722 | like:454 | share: 523 | comments :0

দেহদান ও চক্ষু দান এর কথা মনে পড়তেই প্রথম যে বাধার সম্মুখীন হই আমরা তা হল আজন্ম লালিত কিছু ধর্মীয় কুসংস্কার। যদি কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করি পুনর্জন্ম ( rebirth) হলে সেই অঙ্গ ছাড়াই প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মাতে পারে। তাছাড়া ধর্মীয় বাধা সামাজিক বাধা এগুলো এক এক করে আসে। যদি এসব বাধা  কাটিয়ে কেউ ইচ্ছে করলেই অনায়াসে এই মহৎ দানে ব্রতী হতে পারে। মরণোত্তর দেহদান হল মৃত্যুর পর শবদেহ ধর্মীয় প্রথাসিদ্ধ মতে সৎকার না করে চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বার্থে দান করা।

যাঁর মৃতদেহ তিনি কিন্তু নিজে এই দান করতে পারে না, সেটাই স্বাভাবিক। কারন মৃত্যুর পর তিনি দান করবেন কি করে? কোন ব্যক্তি জীবিতকালে শুধুমাত্র তাঁর এই ইচ্ছার কথা অঙ্গীকারের মাধ্যমে জানিয়ে রাখতে পারেন শুধু। তাঁর ইচ্ছাপূরণের দায়টা কিন্তু নিকটজনের। আর এই ইচ্ছাপুরণটা যাতে হয় সেক্ষত্রে অঙ্গীকারকের একটা ভূমিকা আছে। তা হল এই অঙ্গীকারের বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। যা দিয়ে সে নিকটজনকে মোটিভেটেড করতে পারবে।

আমি 2010 সালেই গণদর্পন এর মাধ্যমে এই অঙ্গীকার করেছিলাম। আপনার প্রিয়জন যার ইতিমধ্যেই ব্রেন ডেথ হয়েছে তার সুস্থ সবল অঙ্গ দিয়ে অন্য আর একজন ভালোভাবে বাঁচতে পারবে। বলতে গেলে তিনি অন্য একজনের মধ্যেই স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবেন। আপনার প্রিয়জনের দুটি চোখ দুজন অন্ধ মানুষ কে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারে । তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রদের গবেষণায় নানাবিধ সাহায্য হয়ে থাকে।  যদি ইতিহাসের পাতায় ফিরে যাই পৃথিবীর প্রথম মরণোত্তর দেহদান হয় 1832 সালে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত চিন্তাবিদ জেরমে বেন্থাম এর। ভারতে 1956 সালে পুনের শিক্ষাবিদ পান্ডুরঙ শ্রীধর আপ্তে। পশ্চিমবঙ্গে 1990 সালের 18 ই জানুয়ারি সুকুমার হোমচৌধুরী।  পূর্ব অঙ্গীকার মতো সুকুমার হোমচৌধুরীর মরদেহ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে দান করা হয়।

1905 সালের 7 ডিসেম্বর প্রত্যঙ্গদানে ঘটে যুগান্তকারী ঘটনা। ঘটনাটি ঘটে চেকশ্লোভাকিয়ায় চক্ষু চিকিৎসক এডোয়ার্ড কনরাড জার্ম (Eduard conarad Zirm) হাত ধরে। 45 বছরের অ্যালোস গ্লোগা (Alois Gloga) কর্ণিয়াজনিত কারণে দুটি চোখেই দৃষ্টিহীন। তখন এডোয়ার্ড কনরাড জার্ম 11 বছরের কার্ল ব্রুয়ের ( Karl Brauer) একটি চোখের কর্ণিয়া নিয়ে অ্যালোস গ্লোগার চোখে প্রতিস্থাপন করেন। হ্যাঁ, এই কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন ছিল জীবিত মানুষের থেকে নিয়ে। আর এই ছিল একমাত্র প্রথম ও শেষ জীবিত কারো থেকে কর্ণিয়া সংগ্রহ করে কর্ণিয়াজনিত কারনে কোন ব্যাক্তিকে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন। দক্ষিণ ভারতের বিজ্ঞান আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ আব্রাহাম কোভুর ও আক্কা কোভুর। তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী তাঁদের মৃত্যুর পর তাদের মরদেহও চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে ব্যবহৃত হয়। ঘটনাটি ঘটে 1970 সালে। 1987 সালে শ্রীলঙ্কায় এল টি টি ই-র নেতা দিলীপ থেলাপ্পান অনশন চলাকালীন মারা যান। উনার অঙ্গীকার অনুযায়ী উনার মৃতদেহ জাফনা মেডিক্যাল কলেজে দান করা হয়। 

কোভিড মহামারীর মধ্যেই গনদর্পন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও দেহদান আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্রজ রায়ের করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর (13,may,2021) পর প্যাথলজিক্যাল অটোপসি করা হয়। এই প্রথম পূর্ব ভারতে কোনও কোভিডে মৃত ব্যক্তির প্যাথোলজিক্যাল অটোপসি হয় বলে আরজি কর হাসপাতাল সূত্রে দাবি। মৃত্যুর সঠিক কারণ কী, কোভিডের কারণে মৃতের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, প্যাথলজিক্যাল অটোপসির মাধ্যমে তা জানা সম্ভব।

1994 সালে ভারত সরকার ‘দ্য ট্রান্সপ্লানটেশন অব হিউম্যান অরগ্যান অ্যাক্ট – 1994’ আইন চালু করেন। এই আইনের ফলেই সাধারণ মৃত্যুর পাশাপাশি মস্তিষ্কের মৃত্যুও স্বীকৃতি পায়। এরফলে যান্ত্রিকভাবে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ চালু রেখে মৃতের দেহ থেকে প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে রাস্তা সুগম হয়। 1995 সালে আমাদের রাজ্য এই আইন গ্রহণ করে। কিন্তু 2010 সাল পর্যন্ত আমাদের রাজ্যে শুধুমাত্র কর্ণিয়া ছাড়া মৃতদেহ থেকে অন্যকোন অরগ্যান সংগ্রহ ও প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয় নি। ২০১০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী এস এস কে এম হাসপাতালে জয়দেব পালের মৃতদেহ থেকে লিভার সংগ্রহ করে সিরোসিস অব লিভারে আক্রান্ত জয়তী চট্টোপাধ্যায়ের দেহ প্রতিস্থাপিত হয়। নদীয়ার দীনেশচন্দ্র মোদক হঠাৎই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান। তখন উনার একমাত্র কন্যা বন্দনা মোদকও বিকল দুটি কিডনী নিয়ে মৃত্যুর দিনের অপেক্ষায়। তখন চিকিৎসারত চিকিৎসক ডাঃ এম সি শীল মৃত দীনেশচন্দ মোদকের স্ত্রী লক্ষ্মীদেবীকে জানান যে উনার স্বামীকে ফিরে পাবেন না কিন্তু আপনি আপনার মেয়েকে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারেন যদি দীনেশবাবুর মৃতদেহ থেকে কিডনী বন্দনার দেহে প্রতিস্থাপনের অনুমতি দেন। লক্ষ্মীদেবী অনুমতি দেন। বন্দনা আজো বেঁচে আছে আমার আপনার মতই। 


সাধারণ মৃত্যুর পর যেসব অরগ্যান নেওয়া সম্ভব


১) চোখ (গ্লুকোমা, ক্যানসার, হেপাটাইটিস, এইচ আই ভি বা সেপটোসেমিয়া থাকলে সম্ভব নয়) (একমাত্র কর্ণিয়া জনিত কারনেই দৃষ্টিহীন হলেই তাকে দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব) (যদি কেউ কর্ণিয়াজনিত কারণ ছাড়া অন্যকারনে দৃষ্টিহীন হয় তবে সেই দৃষ্টিহীন ব্যাক্তিও চোখ দান করতে পারেন)। আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী ৪ ঘন্টার মধ্যে।

২) ৪ ঘন্টার মধ্যে অস্থি, ত্বক, ইয়ারড্রাম ও ইয়ার বোন।

৩) ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে কিডনী।


কিছু অরগ্যান যা রক্ত সঞ্চালন অবস্থায় সংগ্রহ করতে হয়।


সেগুলো হচ্ছে ১) কিডনী, ২) হার্ট ও হার্ট ভালভ, ৩) প্যাঙক্রিয়াস, ৪) অস্থিমজ্জা, ৫) রক্ত ও অনান্য সব।


এবার চক্ষুদান নিয়ে কিছু কথা বলি আপনার চোখে দৃষ্টি পাবে দৃষ্টিহীন কেউ। এই মহত কাজটি অনেকেই মৃত্যুর আগে নির্দ্বিধায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। কিন্তু অনেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তর ভাবনাচিন্তা করে। কিন্তু ওই যে নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আর হয়ে ওঠেনা।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশে চোখ দানের

প্রয়জনীয়তা রয়েছে। তবে পাশাপাশি, আসল প্রক্রিয়া, উপকারিতা, কল্পনা, মিথ এবং ঘটনাগুলি সম্পর্কে ভুলধারণা রয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ভারতে আনুমানিক ১৫ মিলিয়ন মানুষ দৃষ্টিহীন এবং ৩০ মিলিয়ন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে লড়ে চলেছে।  ডাক্তার হর্ষবর্ধন ঘোড়পাদে বলেছেন  ভারতে চোখের দান সম্পর্কে সচেতনতা প্রচার হয়না। কারণ এর চারপাশে বহু মিথ ও কুসংস্কার রয়েছে; চোখ দান সম্পর্কে মানুষকে আরও সচেতন করা উচিত। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে বিভিন্ন বিজ্ঞান ক্লাব গুলি । সেই সঙ্গে আমরা যতটা রক্তদানে আগ্রহী তার সিকিভাগ যদি এই ব্যাপারে উৎসাহী হই তাহলে সমাজের পক্ষেই মঙ্গল হবে । এখন তো বিভিন্ন ক্লাব তাদের রক্তদান কর্মসূচির মধ্যেই দেহদান ও চক্ষুদান কে অন্তর্ভুক্ত করছে আমি বলাগড়ে ব্লকে দেখেছি ।


●চোখ দানের পিছনে যে ভুল ধারণা রয়েছে দেশেজুড়ে তা হল -

◆চোখের দান করলে পরের জন্মে চোখ হবে না। মুখের আদল নষ্ট হয়ে যাবে। মৃত্যুর পরও যে জন্ম হয়, তার নিশ্চিত পরীক্ষামূলক তথ্য নেই। তাছাড়া বিভিন্ন কারনে অনেক সময় জীনগত কারনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।

◆সঠিক তথ্য- চক্ষু দান করলে মুখের চেহারা নষ্ট হয় না। কর্নিয়া নেওয়া হয়। যখন চোখ বন্ধ থাকে , তখন স্বাভাবিকই থাকবে।

●কোনও ব্যক্তি জীবিত থাকাকালীন তাদের চোখ দান করতে পারে।

◆সঠিক তথ্য: না। কিডনি বা যকৃতের কিছু অংশ জীবিত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য ব্যক্তিকে দান করা যেতে পারে, তবে মৃত্যুর পরে চোখ দান করা হয়। আপনি জীবিত থাকাকালীন আপনার চোখ দান করার শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দিয়ে অঙ্গীকার করতে পারেন।

● চক্ষু দান সমস্ত অন্ধ মানুষকে সাহায্য করতে পারে।

◆সঠিক তথ্য: শুধুমাত্র কর্নিয়ার অস্বচ্ছ ব্যক্তিরাই উপকৃত হতে পারে, অন্যদিকে রেটিনা বা অপটিক নার্ভের জন্য অন্ধত্ব এলে তারা চোখ দান থেকে উপকৃত হবে না।

● আপনি যদি রেটিনার রোগে ভোগেন বা আপনার চোখে শল্যচিকিৎসা হয়ে থাকে, আপনি দাতা হতে পারবেন না।

◆সঠিক তথ্য:  রেটিনা বা অপটিক নার্ভ সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের পর চোখ দান করা যায়।

● চোখ মৃত্যুর পরে যে কোনও সময় দান করা যায়।


◆সঠিক তথ্য: মৃত্যুর ৬ ঘন্টার মধ্যে কোনও দাতার কাছ থেকে চোখ সংগ্রহ করা দরকার। দাতার দেহকে শীতল পরিবেশে রাখা উচিত।   চোখ বন্ধ করা, আর্দ্র সুতির কাপড় চোখের উপরে রাখা এবং মাথার নীচে দুটি বালিশ রাখতে হবে। কারণ, স্থানীয় চক্ষু সংগ্রহ কেন্দ্র (হাসপাতাল) বা চক্ষু ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সময় প্রয়োজন। আর সেই সময় যাতে চোখ ঠিক থাকে তার জন্যই এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

●চোখ দান করে বিক্রি করা হয়।  

◆সঠিক তথ্য: যে কোনও মানব অঙ্গ বিক্রি ও ক্রয় করা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ; এটি একটি মহৎ কাজ এবং অনুমোদিত সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

শেষ করব বাংলাদেশের মুক্তমনা আরজ আলী মাতুব্বর দেহদান সম্পর্কে কি লিখেছেন আসুন জেনে নিই -


আরজ আলী মাতুব্বর (১৯০০–১৯৮৫)

আমাদের মত শিক্ষিত বলে কথিত সুশীলদের গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিয়েছেন আরজ আলী মাতুব্বর। শুধু জীবিত অবস্থায় নিজেকে আর অন্যদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেননি, তিনি তার মৃত্যুর  সময়েও এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, যে সাহস এর আগে কোন শিক্ষিত সুশীলেরা করে দেখাতে পারেনি। পাঠক মনে রাখবেন বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপট ও তৎকালীন সময়ে মৌলবাদীদের অত্যাচার ।

তিনি তার মৃতদেহ কবরে দাফন না করে মানব কল্যাণে দান করার সিদ্ধান্ত নিলেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে লেখা  ‘কেন আমার মৃতদেহ মেডিকেলে দান করেছি’ শীর্ষক  প্রবন্ধে তিনি বলেন –


‘…আমি আমার মৃতদেহটিকে বিশ্বাসীদের অবহেলার বস্তু ও কবরে গলিত পদার্থে পরিণত না করে, তা মানব কল্যাণে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমার মরদেহটির সাহায্যে মেডিক্যাল কলেজের শল্যবিদ্যা শিক্ষার্থীগন শল্যবিদ্যা আয়ত্ত করবে, আবার তাদের সাহায্যে রুগ্ন মানুষ রোগমুক্ত হয়ে শান্তিলাভ করবে। আর এসব প্রত্যক্ষ অনুভূতিই আমাকে দিয়েছে মেডিকেলে শবদেহ দানের মাধ্যমে মানব-কল্যাণের আনন্দলাভের প্রেরণা।’


মাতুব্বরের মৃতদেহ দানপত্রটি হুবহ তুলে দিলাম –  যা এখনো আমাদের মতো মানবতাবাদীদের জন্য অফুরন্ত প্রেরণার উৎস –


অধ্যাপক আহমদ শরীফ ( 1921 - 1999)

মাতুব্বরের মতো বাংলার বিবেক, অধ্যাপক আহমদ শরীফও তার মৃতদেহকে  মেডিকেল মানব কল্যাণে দান করে গেছেন। আরজ আলী মাতুব্বরের মৃতদেহ দানপত্রের মতো আহমদ শরীফের সম্পাদিত ( মৃত্যুর চার-পাঁচ বছর আগে)  তার ‘অছিয়তনামা’ আর ‘মরদেহ হস্তান্তরের দলিল’ দুটিও বাংলা আর বাঙালির মুক্তবুদ্ধির ইতিহাসে অনন্য কীর্তি।


অছিয়তনামায়  তিনি লিখেছিলেন –


“আমি সুস্থ শারীরিক এবং সুস্থ মানসিক অবস্থায় আমার দৃঢ় সঙ্কল্প বা অঙ্গীকার স্থির সিদ্ধান্ত-রূপে এখানে পরিব্যক্ত করছি।


আমার মৃত্যুর পরে আমার মৃতদেহ চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের  অ্যানাটমি এবং ফিজিওলজি সংক্রান্ত কাজে ব্যবহারের জন্য ঢাকার ধানমন্ডিস্থ বেসরকারী মেডিকেল কলেজে অর্পণ করতে চাই। … চক্ষুদান এবং রক্তদান তো চালুই হয়েছে। চোখ শ্রেষ্ঠ প্রত্যঙ্গ, আর রক্ত হচ্ছে প্রাণ-প্রতীক। কাজেই গোটা অঙ্গ কবরের কীটের খাদ্য হওয়ার চেয়ে মানুষের কাজে লাগাই তো বাঞ্ছনীয়।”


জ্যোতি বসু (১৯১৪ – ২০১০)


২০১০ সালের ১০ই জানুয়ারি কলকাতার সল্ট লেকের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার পর কিছু সময় পরেই তাঁর চোখের কর্নিয়া অপসারণ করেন চিকিৎসকরা, তারপর তার দেহ ছাত্র ছাত্রীদের গবেষণার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।   জ্যোতি বসু জীবিত অবস্থাতেই বলে গিয়েছিলেন  এভাবে –


“জানিনা আমার অশক্ত শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কারো কাজে আসবে কিনা! কিন্তু আমার ঐকান্তিক ইচ্ছা যে আমার মরদেহ যেন অন্তত গবেষণার কাজে লাগানো হয়।একজন কমিউনিস্ট হিসেবে জানতাম জীবিতকালে মানুষের সেবা করতে পারব। মৃত্যুর পরেও যে মানবতার কাজে লাগা যাবে, এটা জেনে প্রফুল্ল বোধ করছি।”


প্রথমেই জানাই আপনি যদি মরণোত্তর দেহদান ও প্রত্যঙ্গদানের জন্য অঙ্গীকার করতে চান তবে যোগাযোগ করতে পারেন।


1- গণদর্পণ

৪, ডি এল খান রোড, কর্পোরেশন ব্লিডিং, কলকাতা – ৭০০ ০২৫

দূরভাষ – (০৩৩) ২৪৫৪ ০৮৯১ / ২৪১৯ ১১৬৫

http://www.ganadarpanindia.in/index.php

ওয়েবসাইট এ গিয়ে প্লেজ ফর্ম পাবেন ডাউনলোড করে নিন পছন্দ মত ভাষায়। ফিলাপ করে ওদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলে ওরাই আপনাকে একটি কার্ড পাঠিয়ে দেবে। গণদর্পণ কোন চক্ষু বা মৃতদেহ সংগ্রহ করে না। একমাত্র প্রত্যঙ্গদানের ক্ষেত্রে সহয়তা করে।

চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও এই কাজটা করতে পারেন। https://www.notto.gov.in

2- বাংলাদেশে যারা মরণোত্তর দেহদানে আগ্রহীঃ

জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন

১০৮ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

বাংলামটর, ঢাকা

ফোন: ০১৫৫২৩৫৮০১৮

ইমেইল:

janabigganfoundation@gmail.com

ayubhoss@yahoo.com

3- Department of Anatomy, N.R.S. Medical College, 138, A.J.C. Bose Road, Kolkata - 700 014 Phone No. (033) 2265-3214 (EXTN.- 383)।

কলকাতার এন.আর.এস মেডিক্যাল কলেজ-এর Department of Anatomy থেকেও এই Pledge Formটি (একই ফর্মের দুটি কপি) সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারেন।


4- চক্ষু দান এর জন্য

RIO Calcutta Medical College & Hospital Eye Bank.

9433085756 / 9007064831 / 033-22123767 / 033-22413853


5- বর্ধমান

Durgapur Blind Relief Society

C/o: SDO Office

City centre, Pin – 713 216

(0343) 2572698 / 9732066165


6- জলপাইগুড়ি

Alipurduar Lions Eye Hospital

Chowpathi. P.O – Alipurduar Dist- Jalpaiguri Pin – 736 121

(03224) 255938


7- হুগলি

Doyen Dishani

37, Hanseswari Road, Banshberia, Hooghly, Pin – (033) 26344555 / 26527555 / 9433084563 / 9433052503


8- দার্জিলিং

Siliguri Lions Eye Bank

Hillcart Road, P.O – Shiliguri, Dist – Darjeeling

2511004 / 2519793


কলকাতা থেকে দূরে যাঁরা থাকেন তাঁদের অনুরোধ করব মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে আপনাদের নিকটবর্তী সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।


সূত্র-

1-সংশয় ডট কম/ মৃত্যুই শেষ কথা নয় ।

2- ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির ফেসবুক পেজ ।

3- 13/05/2021 এর আনন্দবাজার পত্রিকা ।

4- মুক্তমনা ব্লগ।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929