ফ্ল্যাশব্যাক ১) দিনটা ছিল ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই ফেব্রুয়ারী।মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক কালো দিন হিসেব আজও যা চিহ্নিত। এই দিনে জিওর্দানো ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিল ধর্মের ধ্বজাধারী রক্ষকরা। বড় নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় তাকে। শেষ কথা বলার সুযোগই তাঁকে দেওয়া হয়নি। একটা দন্ডের সাথে পেছনে হাত বেঁধে, জিহ্বায় একটা পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে ব্রুনো কোনোরকম শব্দ করতে না পারে। তারপর তাকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলো সেসময়ের ধর্ম যাজকরা। মৃত্যুর আগে কারাগারে আট বছর তাঁর উপর চলেছিল নির্মম অত্যাচার। ব্রুনোর অপরাধ, তিনি ছিলেন মুক্তচিন্তাকারী। অন্ধের মতন কোনোকিছু না মেনে সবেতেই প্রশ্ন তুলতে ভালোবাসতেন। ১৫৯১ সালে তিনি ইতালি ফিরে আসার কিছুদিন পর জিওভাননি মচেনিগো নামক একজন ব্যক্তি ব্রুনোর বিরুদ্ধে ধর্ম ও ঈশ্বর বিরোধীতার অভিযোগ আনেন। ১৫৯২ সালের ২২ মে ব্রুনোকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে ভেনিশিয়ান ইনকুইজিশনের মুখোমুখি করা হয় (ইনকুইজিশন হলো রোমান ক্যাথলিক গির্জার একটি বিচার ব্যবস্থা, যেখানে ধর্ম অবমাননাকারীদের বিচার করা হতো)। ব্রুনো খুবই দক্ষতার সাথে তাঁর বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করেন ও তাঁর বিরোধীতাকারীদের যুক্তি খণ্ডন করেন। বেশ কয়েক মাস ধরে জেরা চলার পর ১৫৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রুনোকে রোমে পাঠানো হয়। সাত বছর ধরে রোমে ব্রুনোর বিচারপর্ব চলতে থাকে। এসময়ে তাঁকে নোনা টাওয়ারে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সেই মহা ঐতিহাসিক বিচারকাজের গুরত্বপূর্ণ কিছু নথি হারিয়ে গিয়েছে। বেশিরভাগই সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল এবং ১৯৪০ সালে বিচারকাজের সেসময়ের একটি সার-সংক্ষেপ পাওয়া যায়। এতে তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগগুলো ছিল- (১) ক্যাথোলিক ধর্মমত ও ধর্মীয় গুরুদের মতের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ (২) খ্রিস্টীয় ধর্মমত অনুসারে স্রষ্টার ত্রি-তত্ত্ববাদ, যীশুর মৃত্যু ও পরে আবার শিষ্যদের কাছে দেখা দেয়ার বিষয়গুলো বিশ্বাস না করা (৩) যীশু ও তাঁর মা মেরিকে যথাযথ সম্মান না করা (৪) এই মহাবিশ্বের মতো আরো মহাবিশ্ব আছে, পৃথিবী গোল, সূর্য এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় এবং এটি একটি নক্ষত্র ছাড়া আর কিছু নয়- এই ধারণা পোষণ করা।
সেদিনের ধর্মযাজক আজ নেই। নেই সেখানে উপস্থিত সেইসব জনতারাও যারা ব্রুনোকে হত্যার সময় উল্লাসিত হয়েছিল। ব্রুনোকে তারা খুন করেছিল ঠিকই কিন্তু ব্রুনো মারা গিয়ে এই প্রশ্নটা রেখে গেলো যে, "মুক্তচিন্তকদের হত্যা করেও কি মুক্তচিন্তার গতিকে রোধ করা কি আদৌ সম্ভব?"
ফ্ল্যাশব্যাক ২) " সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোক, প্রতিষ্ঠানিক ধর্ম এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানহীন, সেখান কোনো ধর্মগুরুর জীবনীপাঠও বন্ধ হোক। ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষার্জন করুক, বৃদ্ধি পাক তাদের জ্ঞানের উন্মেষ, তারা হয়ে উঠুক মুক্তমনা, বিজ্ঞানমনষ্ক এবং মানবতাবাদী "।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি ( Science and Rationalists’ Association of India) দীর্ঘবছর ধরে ওপরের দাবীগুলোতে সরব। কিন্তু চাইলেই তো আর সবকিছু খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব নয়। সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন- "স্বাধীনতা কেউ দেয় না, ছিনিয়ে নিতে হয়"। অনেকটা সেইরকম ব্যপার।
স্বাভাবিক ভাবেই যুক্তিবাদী সমিতির এই দাবীদাওয়া আজও মেনে নিতে পারেনি শিক্ষকসমাজের একাংশ এবং বেশকয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন। ২০০১ সাল থেকে যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া শাখার সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে সরস্বতী পুজো ও নবী দিবস পালনকরা বন্ধ হোক। এইকাজ করতে গিয়ে প্রতিপদে বাঁধা এসেছে, মধুসূদন মাহাতোকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ফোনও এসেছে তবুও যুক্তিবাদী সমিতির সহযোদ্ধারা নিজেদের দাবী এবং লক্ষ্যে আজও অবিচল। সুভাষচন্দ্র বসুর একটি উক্তি এখনে স্মরণ করা যাক। উনি বলেছিলেন- "জীবনে সংগ্রাম আর ঝুঁকি না থাকলে জীবনে বেঁচে থাকাটাই ফিকে হয়ে যায়"।
গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে সামান্যতম হলেও আলোর দেখা পাওয়া গেছে। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে "এইসময়" পত্রিকার অনলাইন পোর্টালে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম- "বিশ্ববিদ্যালয় 'ধর্মনিরপেক্ষ', মিলল না সরস্বতী পুজো করার অনুমতি"। সরস্বতী পুজো আয়োজনের অনুমতি দিল না কেরালার এক বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রছাত্রীরা পুজো করতে চাওয়ায় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিল, বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মনিরপেক্ষ, সেখানে পুজোর অনুমোদন দেওয়া যাবে না। এরই পাশাপাশি বেশকয়েকটি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে এসেছে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমস্তরকম ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে। অন্যদিকে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজো বন্ধ করার খবর দিল্লির মোট ১০/১৫ টি খবরেরকাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। রইলো কিছু লিংক -1) http://www.sabguru.com/yukthivadi-samiti-demands-to-stay-on-saraswati-puja-in-govt-schools/
2) http://www.matnews.in/national/11330
ফ্ল্যাশব্যাক ৩) ৯ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ দিনটি কালোদিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেলো একটি সংবিধানে উল্লেখিত 'ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে'। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির ত্রিপুরার কমলপুর শাখার অন্যতম সংগঠক সহযোদ্ধা দুলাল ঘোষ, মদ্ভাগবদগীতা থেকে রেফারেন্স তুলে কিছু প্রশ্ন রেখেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। খুব স্বাভাবিকভাবে এটি ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি কট্টর ধার্মীক বা ব্রাহ্মণ্যবাদীরা। তাই উন্মত্ত ধার্মীকদের দল চড়াও হয় দুলাল বাবুর বাড়ি। আসবাবপত্র ভাঙচুর থেকে দুলাল বাবু এবং তার পরিবারেকে হেনস্তা ও শারীরিক নিগ্রহ করে। এরপরে দুলাল ঘোষের পরিবার কমলপুর থানার অফিসার ইনিচার্জকে সম্পূর্ণ ঘটনার বিবরণ জানিয়ে চিঠি লেখেন। চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়, SDM- Kamalpur Dhalai, SDPO -Kamalpur Dhalai, DM-Dhalai Ambassa, SP- Dhalai Ambassa সহ বেশকয়েকটি যায়গায় ও মিডিয়ায়। উক্ত ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি, ত্রিপুরা যুক্তিবাদ বিকাশ মঞ্চ, ত্রিপুরা বিজ্ঞান মঞ্চ সমেত অনেকগুলো সংগঠন। শোনা গেছে, পুলিশ প্রশাসনের অপদার্থতায় অপরাধীরা নাকি এখনও বুক ফুলিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় খন্ডে, নাগরিকদের ছয়টি (৬) মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে। যেমন - (১) সাম্যের অধিকার, (২) স্বাধীনতার অধিকার, (৩) শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, (৪) ধর্মীয় অধিকার ( সংবিধান আমজনতাকে দিয়েছে ধর্মপালন বা ধর্মাচারণ করার স্বাধীনতা কিন্তু সেটা কখনওই প্রকাশ্যে নয় বরং একান্তে এবং অবশ্যই উগ্রতাবিহীন) (৫) সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার, (৬) শাষনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার। ভারতের সংবিধান ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি থেকে চালু হয়। এবং ১৯৭৬-সালের ১১ নভেম্বর ভারতের পার্লামেন্ট অনুমোদিত এবং ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত ৪২তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতের সংবিধানে ' Secular ' শব্দটা যুক্ত হয়। ভারতীয় সংবিধানের মুখবন্ধের ( Preamble) প্রথম অনুচ্ছেদে ' ধর্মনিরপেক্ষ ' ( Secular) শব্দটি ব্যাবহার করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে - "We The People Of India, having solemnly resolved to costitute India into a SOVEREIGN, SOCIALIST, SECULAR, DEMOCRATIC, REPUBLIC and to secure to all its citizens;" অর্থাৎ, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র হল সংবিধানের মৌলিক নীতি। আবার সংবিধান জানাচ্ছে, প্রতিটি নাগরিকদের কর্তব্য হচ্ছে বিজ্ঞানমনস্কতা, মনুষ্যত্ব এবং অনুসন্ধিৎসা ও সংস্কার সাধনের মানসিকতার বিকাশ ঘটানো। "It shall duty of every citizen of India to develop the scientific temper humanism and the spirit of inquiry and reform.{Article 51A(h)Part iv A}"। দুলাল বাবু সংবিধানকে সম্মানে করেন বলেই আর্টিকেল ৫১ এ(এইচ) পার্ট-৪এ কে স্মরণে রেখেই মদ্ভাগবদগীতা থেকে শুধু প্রশ্ন তুলেছিলেন যেটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কারন, একমাত্র মুক্তমনারা কোনোরকম অন্ধবিশ্বাসে বশ না হয়ে প্রশ্ন তোলেন, সঠিক প্রমাণভিত্তিক যুক্তি খোঁজেন অন্যদিকে সবকিছু বিনাপ্রশ্নে মেনে নেওয়া ধার্মীকদের স্বভাব।
সেদিন দুলাল ঘোষ সমেত অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, "চমকে,ধমকে, অস্ত্র দেখিয়ে কিংবা কোপ মেরে কি মুক্তচিন্তকদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করা যায়?"
ফ্ল্যাশব্যাক ৪) সম্ভবত ২ ফেব্রুয়ারী ২০২২ থেকে হিন্দুধর্মের শাস্ত্র-গ্রন্থ থেকে তথ্য তুলে ধরে সরস্বতীপুজো সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন গবেষক, সুলেখক এবং দলিতদের ন্যায্য অধিকারের দাবীদাওয়া নিয়ে আন্দোলনকারী শরদিন্দু বিশ্বাস ওরফে শরদিন্দু উদ্দিপণ। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি র মতন উনিও দাবী জানিয়েছিলেন সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোক ধর্মমুক্ত সেখানে সমস্তরকম ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ধর্মগুরুদের জীবনী পাঠ বন্ধ হোক। এতে ধর্মানুভূতী আক্রান্ত হয় ধার্মীকদের। শাস্ত্রগ্রন্থর সত্য ( যা ধর্মবেত্তা কিংবা ব্রাহ্মণরা জানাতে চায় না) প্রকাশ পাওয়া দেখে ভীত হয়ে তারা কলকাতা সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চে অভিযোগ জানায় এবং নরেন্দ্রপুর থানায় এফআইআর করে। এরফলে ০৩/০২/২০২২ সকাল সাড়ে বারোটা নাগাদ নরেন্দ্রপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর সুশোভন সরকারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ শরদিন্দু বাবুর বাড়ির দরজায় গিয়ে ডাকেন এবং দরজা খুলে দিলে শরদিন্দু বাবুকে ধাক্কা মেরে বিনা নোটিশে ওনার ঘরে ঢুকে টেবিল থেকে মোবাইল তুলে নেয় এবং ল্যাপটপ, বইপত্র ইত্যাদি ঘাটতে শুরু করেন। অবশেষে জোরপূর্বক তাঁকে নরেন্দ্রপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ঐদিনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে শরদিন্দু বাবুর অনুগামীরা ও শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুরা নরেন্দ্রপুর থানায় ধিরে লধিরে জড়ো হতে থাকেন এবং কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক বড়বড় উকিল এসে থানার বড়বাবুকে প্রশ্ন করা শুরুকরলে অবশেষে ৬ ঘন্টা পর শরদিন্দু বাবুকে এফআইআর এর কপিতে সই করিয়ে থানা থেকে ছাড়া হয়। ওনার নামে আইপিসি ৫০৪, ৫০৫ ধারায় মামলা রুজু হয়। গত ০৭/০২/২০২২ তারিখে তিনি কোর্টে উঠলে তাঁকে জামিন দেয়া হয়।
গত ০৮/০২/২০২২- এ, AISA, APDR, AIPWA, CPI(ML) লিবারেশন সহ বেশকয়েকটি গণসংগঠনের সদস্যরা নরেন্দ্রপুর থানায় গিয়েছিলো শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখাতে ওই অন্যায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে। কিন্তু
কর্তব্যরত পুলিশ অফিসাররা বিক্ষোভকারীদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালায়। শোনা গেছে ছাত্র সংগঠন AISA-র মহিলা কর্মীদের ওপর পুরুষ পুলিশরা অত্যাচারও নাকি করেছেন ( যেটা আআইনত দণ্ডনীয় অপরাধ)। এছাড়া সেদিনই সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন দলের রাজ্য কমিটির নেতা মলয় তেওয়ারীসহ ১৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতারও করে। এই ঘটনাগুলো প্রামাণ করে মুক্তচিন্তকদের ওপর এভাবেই আঘাত চলছে, চলবেও।
খ্রিস্টজন্মের ৫০০ বছর আগে পিথাগোরাস, এনাকু, সিমেন্ডের মতো গ্রীক অনুসন্ধিৎসু পণ্ডিতেরা জানিয়েছিলেন, পৃথিবী সূর্যের একটি গ্রহ, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ও অন্য গ্রহগুলো ঘুরছে। এইকথাগুলো বলবার বিনিময়ে ধর্ম- বিরোধী, ঈশ্বর- বিরোধী, নাস্তিক মতবাদ প্রকাশের অপরাধে এঁদের বরণ করতে হয়েছিল অচিন্তনীয় নির্যাতন, সত্যের ওপর অসত্যের নির্যাতন, ধর্মের নির্যাতন।
উক্ত মতকে ২০০০ বছর পরে পুস্তকাকারে তুলে ধরলেন পোল্যান্ডের নিকোলাস কোপারনিকাস। তাঁরই উত্তরসূরি হিসেবে এলেন জিওর্দানো ব্রুনো, গ্যালিলিও গ্যালিলি সহ অনেকেই। প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন বৈজ্ঞানিক সত্যকে — "সূর্যকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীসহ গ্রহগুলো"।
বিগত কয়েক দশকে আমরা দেখেছি মুক্তচিন্তকদের ওপর কট্টর ধার্মীকদের আক্রমণ। আমরা হারিয়েছি- অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নিলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় (নীলয় নীল), অনন্ত বিজয় দাস, ফয়সাল আফেরিন দীপন,
নাজিমুদ্দিন সামাদ, রাজিব হায়দার,শাফিউল ইসলাম, শাহজাহান বাচ্চু, রেজাউল করিম সিদ্দিকি, জুলহাজ মান্নান, মাহবুব রাব্বি তনয়, মহম্মদ শহীদুল্লাহ, মীর সানাউর রহমান, গোবিন্দ পানসারে, এম.এম.কালবুর্গি, গৌরী লঙ্কেশ, নরেন্দ্র দাভলকার সহ অনেকে। কিন্তু এতো হত্যা করেও কি মুক্তচিন্তকদের অগ্রগমন রোধ করা গেছে কি? কট্টরপন্থী ধার্মীক বা মৌলবাদীদের কাছে এই প্রশ্ন রেখে গেলাম।
পরিশেষে জানাই, যুক্তির বা সত্যের পথে অনেক কাঁটা বিছানো। তবুও আমরা চলেছি সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করেই। আজ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার বিচারে নাস্তিক /অধার্মিক / যুক্তিবাদীরা তৃতীয় স্থানে ( সূত্র- মনোরমা ইয়ারবুক ২০১৯। যাকে মান্যতা দেয় ওয়ার্ল্ড অ্যালম্যানাকও)। ২০১২ সালের 'উইন গ্যালপ গ্লোবাল ইনডেক্স অফ রিলিজিয়ন রিপোর্ট' অনুযায়ী ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ ছিল ঘোষিত নাস্তিক। এই হিসেবে ১৩০ কোটির ভারতে নাস্তিকদের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৯০ লক্ষ। মুক্তমনা, যুক্তিবাদী মানুষের জয় নিশ্চিত। তাদের দুর্বার গতিকে আটকানোর সাধ্য নেই কারোরই।
বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের সাথে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্নোত্তর
[হৃদয় মন্ডলকে এই প্রশ্নোত্তরের ভিডিওটির জন্য গ্রেফতার করা হয়, পরবর্তীতে মুক্তচিন্তকদের চাপে জামিন দিতে বাধ্য হয়]
মুন্সিগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্রদের সাথে তাদের বিজ্ঞানের সিনিয়র বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের সাথে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্নোত্তরের একটি ভিডিও সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। প্রায় ১৩ মিনিটের এই টেপটি ওই ক্লাসের ছাত্রদেরই রেকর্ড করা, যেটা পরে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। শিক্ষক ও ছাত্রের প্রশ্নোত্তরের পুরো ট্রান্সক্রিপটি আজ পড়লাম। এইটা যদি উদ্যেশ্যপ্রণোদিত না হয়ে স্বপ্রনোদিত হয়ে জানার আগ্রহ থেকে হতো তাহলে এইটা হতে পারতো একটা উদাহরণীয় ছাত্র শিক্ষকের প্রশ্নোত্তর।
আমি অনেকটা নিশ্চিত করে বলতে পারি, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের অনেক শিক্ষকও এতটা ধৈর্যের সাথে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে এমনভাবে ছাত্রদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতো না। আমি আরো হলপ করে বলতে পারি বাংলাদেশের খুব কম শিক্ষার্থীদের কপালেই এমন অসাধারণ বিজ্ঞানের শিক্ষক জুটেছে। কিন্তু এইখানে এমন ঘটনা ঘটেছে যা কোন সভ্য দেশে কল্পনাতীত। এমনকি ১০-২০ বছর আগের বাংলাদেশেও কল্পনাতীত। এখানে নতুন একটি ঘটনা ঘটে। দশম শ্রেণীর সেই ক্লাসের কোন এক ছাত্র গোপনে হৃদয় বণিকের এই বক্তব্য রেকর্ড করে। চিন্তা করে দেখুন কেমন মানের ছাত্র আমরা এখন পয়দা করছি যে আপন শিক্ষককে বিপদে ফেলতে ইচ্ছে করে শিক্ষককে প্রশ্ন করা হয় এবং উদ্যেশপ্রণোদিত ভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর রেকর্ড করা হয়।
হৃদয় মন্ডলের সাথে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর পড়ে আমার মনে হয়েছে এই শিক্ষককে বাংলাদেশের সেরা শিক্ষক হিসাবে ঘোষণা করা উচিত। অথচ যেই কারণে তার সেরা শিক্ষক হওয়ার কথা সেই কারণে সে নিগৃহীত হচ্ছে। নিচে প্রশ্নোত্তরের কথোপকোটনটি কাট & পেস্ট করলাম। যেটি পড়লে জানবেন যে শিক্ষার্থীরা এক পর্যায়ে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" বই পড়তে উপদেশ দিচ্ছে। এই বইই আমাদের নতুন প্রজন্মকে শেষ করে দিচ্ছে। এই বই পড়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম বিজ্ঞান বিমুখ হচ্ছে। অথচ এই বইকে আমাদের বিজ্ঞানের বড় বড় শিক্ষকরাও প্রমোট করছে। এরা নিজেরাতো কূপমণ্ডূকতায় ভুগছেই সাথে আমাদের আগামী প্রজন্মকে অন্ধকারে ধাবিত করছে।
"[00:00]
স্যার: কেউ দেখেছে? কোন কিছুইতো কেউ দেখেনি। এটা তারা বিশ্বাসের উপর রেখেছে। তোমরা যখন বিজ্ঞান আরো পড়বে তখন দেখবে বিজ্ঞানে আরো কতকিছু আসছে। আসলে আমরা বুঝে উঠতে পারি না বা চাই না সত্য জানতে। দেখো উন্নত বিশ্ব ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে। আর আমরা ধর্মান্ধ হচ্ছি।
[00:35]
ছাত্র: বহু ধরনের কথা ও থিওরিতো ধর্ম থেকেই এসেছে। বিজ্ঞানীরা ধর্ম থেকে এসব আবিস্কার খুঁজে পেয়েছেন।
স্যার: কোন কথা ধর্ম থেকে নেয়া হয়নি। কোনভাবেই না। বরং বিজ্ঞান থেকে নিয়ে ধর্ম চলছে, ধর্ম বানানো হয়েছে।
[01:10]
ছাত্র: আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) বহু বিজ্ঞানের সকল উৎস দিয়ে গেছেন। সাড়ে চার হাজার বছর আগে আমাদের হযরত মোহাম্মদ (স:) এসব বিজ্ঞানের কথা বলে গেছেন।
স্যার: সাড়ে চার হাজার বছর আগে কীভাবে? হযরত মোহাম্মদ তো ছিলেন সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগে। বিজ্ঞানীরা আবিস্কার শুরু করেছেন বহু আগে থেকে। মানে হযরত মোহাম্মদের আমল থেকেই বিজ্ঞান শুরু হয়েছে এমনটা তো নয়।
[01:30]
ছাত্র: হ্যাঁ স্যার, হযরত মোহাম্মদ (স:) এর পূর্বে যারা বলে গিয়েছেন তাদেরটায় কোন যুক্তি পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) যা বলে গেছেন তা সব যুক্তিপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছে৷
স্যার: হযরত মোহাম্মদ এমন কী বলে গেছেন যার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা তার কাছ থেকেই পেয়েছেন? এমন কোন আবিস্কার ছিলো যা বিজ্ঞানীরা আগে করতে পারেননি?
এটা বিজ্ঞানের ক্লাস, ধর্মের ক্লাস নয়। বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত। আর ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাস।
[02:00]
ছাত্র: স্যার আছে, অনেক প্রমাণ আছে যে ধর্মই বিজ্ঞানসম্মত।
স্যার: ধর্মের কোন প্রমাণ নেই। শেষমেশ ধর্মের ব্যখ্যা কোথায় যায় জানো? শেষমেশ ওই ঈশ্বর দেখে, ঈশ্বর সমাধান দেবেন, পরকালে বিচার হবে। এসব বিশ্বাসের বিষয়। কোন প্রমাণ নেই৷
[02:15]
ছাত্র: একটি বই আছে, পড়বেন। নাম হচ্ছে ‘থিওরি অব এভরিথিং’। পাবেন ডিমের ভেতর কুসুম কীভাবে আছে তা আল্লাহ আগেই বলে দিয়েছে৷
স্যার: আমি সব পড়েছি। না পড়লে কি বিজ্ঞান পড়ানোর শিক্ষক এমনিই হয়েছি? এগুলো সব গোঁজামিল দাবী। ওই বইয়ে এমন কিছুই লেখা নেই। বস্তুত ধর্ম মানুষের লেখা৷ সব ধর্ম মানুষের লেখা।
[02:45]
ছাত্র: স্যার বিজ্ঞানও তো মানুষের লেখা৷
স্যার: হ্যাঁ বিজ্ঞান অবশ্যই মানুষের লেখা।
[02:55]
ছাত্র: স্যার, ধর্মের প্রমাণ আছে।
স্যার: ধর্মের কী প্রমাণ আছে আমাকে দেখাও।
[02:04]
ছাত্র: কী যে বলেন স্যার! সারা বিশ্বে মুসলিমদের নিয়ে গবেষণা হয়েছে। সবাই দেখে ইসলামই সত্য। এটাই সত্য ধর্ম আর বাকি সব মিথ্যা। এটা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছে।
স্যার: কোরআন যদি বিজ্ঞানের উৎস হয়ে থাকে তবে দেখাও কোরআন পড়ে কতজন বিজ্ঞানী হয়েছেন? পৃথিবীর ৯০% বিজ্ঞানী খ্রিষ্টান বা খ্রিষ্টান পরিবার থেকে আসা।
[03:24]
ছাত্র: স্যার আমরা যেটাকে ধর্ম বলছি, এটাকে যদি আমরা [বিজ্ঞানের] দিকে নিয়ে যাই তবে সেটাই বিজ্ঞান। আর যদি বিজ্ঞানকে ধর্মের দিকে নিয়ে যাই তবে ওটাই বিজ্ঞান। মূল কথা হচ্ছে দুটোই এক জিনিস।
স্যার: এই যে খ্রিষ্টানরা এতোকিছু আবিস্কার করে, তাদের ধর্মের নিয়ম সেভাবে কেউই মানে না। তারা কি ধর্ম ব্যবসা করতে পারে না? অবশ্যই পারে। তারা ধর্ম ব্যবসা করছে কি? তারা ধর্মের ধারেকাছেও নেই। তারা আছে আবিস্কার নিয়ে৷ এই মুসলমানরা এগিয়ে যেতে হলে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে থাকতে হবে৷ ধর্মান্ধতা বাড়লে সেটা সম্ভব নয়৷ এই চৌদ্দ শত বছর আগে ইসলাম এসেছে। বিজ্ঞান উন্নত হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ বছরে৷ তাহলে এতোদিন হুজুররা কী করেছেন? কী আবিস্কার করেছেন তারা?
[04:40]
ছাত্র: শুরু থেকেই হুজুররা যা বলতেন তাই বিজ্ঞান হিসেবে মেনে নেয়া হতো।
স্যার: তোমাদের হুজুররা বিজ্ঞানের কী পড়েছেন? কী জানেন? তারাতো বিজ্ঞান পড়েইনি সে অর্থে। এই যে ডারউইনের কথা বললাম, ডারউইন কি ধর্ম পড়ে বিজ্ঞানী হয়েছেন?
[05:08]
ছাত্র: স্যার, ডারউইন যে ধর্ম পুস্তক পড়েনি তার প্রমাণ কী স্যার?
স্যার: আরেহ ধর্ম পুস্তক পড়েই না ওরা বেশিরভাগ।
[05:10]
ছাত্র: স্যার, নাস্তিক ঠিক আছে। কিন্তু ওরা ধর্মের পুস্তক পড়েই এসব আবিস্কার করেছে। ধর্মের প্রমাণ পেয়েছে ওরা।
স্যার: আরেহ আবিস্কারগুলো ধর্ম পুস্তক থেকে আসেইনি। কোন সুরা কোন হাদিসে আছে আবিস্কারের কথা? আবিস্কারের সূত্র? ধর্মটাতো কাল্পনিক বিশ্বাস। বাস্তবতার সাথে ওর সম্পর্ক কী? হ্যাঁ স্রষ্টা আছেই। স্রষ্টা না থাকলে গাছপালা কোথা থেকে এলো? এই গাছপালাগুলো তো মানুষ সৃষ্টি করেনি। মাটি মানুষ তৈরি করতে পারে না। মায়ের পেটে বাচ্চা মানুষ তৈরি করতে পারে না, ডিম থেকে বাচ্চা হওয়া। পাওয়ারতো থাকতে পারে। পাওয়ার থাকলে সেটা কার? সেটাই আল্লাহ, সেটাই ঈশ্বর। এই যে হযরত মোহাম্মদ। এরা কী? এরা হইলো মহাপুরুষ। এরা কেউ ঈশ্বর নন।
[06:15]
ছাত্র: এরা আমাদের জ্ঞান দিয়েছেন।
স্যার: নৈতিক জ্ঞান হয়ত। ধর্ম মানুষকে জীবনযাপন এর কিছু নিয়ম বলে দেয়। মানুষ সেটা পালন করে। এর বাহিরে কি কিছু নেই? অবশ্যই ধর্ম পুস্তকের বাহিরে অনেক কিছুই আছে৷ ধর্ম এসেছেই মানুষকে শৃঙ্খলায় রাখার জন্য। আর কোন কিছুর জন্য নয়।
এই যে স্রষ্টা আছে বলা হয়, আমরাতো দেখিনি। যে জিনিস দেখিনি সে জিনিস নিয়ে মারামারি কাটাকাটির কোন মানে আছে? তোমার বিশ্বাস তোমার বিশ্বাসের জায়গাতেই রাখো। বিজ্ঞান হচ্ছে প্রমাণ সাপেক্ষ। বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়৷ আর ধর্মে অন্ধ হলে যা হয়, এই গরমে জোব্বা পরে থাকে। এটাতো বিজ্ঞানসম্মত নয়৷
এই যে তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাস হয়ে বাতি জ্বলে এটা বিজ্ঞান। এই যে A+B হোলস্কয়ারের সূত্র, এগুলো হিসেব করে মেলানো। এটাই বিজ্ঞান যা প্রমাণ সাপেক্ষ। এগুলো কি ধর্মগ্রন্থে আছে? আমরা অনেক সময় বিজ্ঞানকে ধর্মের সাথে মিলাই যা ঠিক নয়। হ্যাঁ ধর্ম মানুষকে সুশৃঙ্খল রাখে। বিজ্ঞান আলাদা কথা। বিজ্ঞান বিজ্ঞানই।
[08:27]
ছাত্র: ‘প্যারাডক্সিকাল সাজিদ’ বইটা পইড়েন স্যার। গুগল প্লে স্টোরে পাবেন।
স্যার: আমি পড়েছি। প্রতিনিয়ত আমি বিজ্ঞানের বই পড়ি। এসব গোঁজামিলের বইও আমার পড়া আছে। ওই বই থেকে বিজ্ঞান শিখতে হবেনা আমার৷ এই যে মুসলমানরা মুসলমানের মত ধর্ম প্রচার করে, হিন্দুরা হিন্দুদের মত আর খ্রিষ্টানরা তাদের মত করেই ধর্মের ব্যখ্যা করে। এই জাত আর ধর্ম নিয়েই দ্বন্দ্ব।
[09:00]
ছাত্র: আমরা যদি বলি, ধর্মের বিভিন্ন জিনিস যুক্ত করে বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের ক্রেডিট নিচ্ছে?
স্যার: আরেহ বিজ্ঞান তো প্রমাণ দিয়েই আসছে। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক কী? নেয়া দেয়ার প্রয়োজন কেন আসবে? বিজ্ঞান তো কোন বিশ্বাস নয়।
[09:12]
ছাত্র: আমরা যদি ১৪০০ বছর পেছনে যেতে পারতাম তবে তো আমরা দেখতেই পেতাম আমদের সামনে সব প্রমাণ চলে আসতো।
স্যার: ধর্ম পুস্তক ১৪০০ বছর আগের লেখা৷ তার আগে কোথায় ছিলো? এর আগে মানুষ ছিল না? সভ্যতা ছিল না? তবে?
[09:26]
ছাত্র: কোরানের আগেও ৩ টি বই ছিলো।
স্যার: যবুর ছিলো, ইঞ্জিল তো ২৫০০ বছর আগের। আর বৌদ্ধদের ছিলো। আমাদের হিন্দু ধর্মের বেদ ছিলো বড়জোর সাত হাজার বছর আগের। তাতে লাভ কী ? মানুষ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীতে। তখন এসব পুস্তক কোথায় ছিলো? তাহলে? এখন আমরা যতটুকু পাই সেটুকু নিয়েই ধর্মের কথা বলি৷ আমরা এখন ধর্ম নিয়ে গ্যাঞ্জাম করি! কেন করি? আমরা গ্যাঞ্জাম করব না। শিখব, জানব। কোনপ্রকার ঝামেলা করব না ধর্ম নিয়ে। অর্থাৎ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কোন মানে নেই। জিনিসটা হচ্ছে তোমরা বুঝে কাজ করবে৷ ধর্ম একটা কথা বললেই ঝাঁপিয়ে পড়বে না। ধর্ম বলল কান নিয়েছে চিলে আর চিলের পেছনে দৌড়াতে হবে ব্যপারটা এমন নয়।
হনুমান নাকি সূর্যটাকে কানের ভেতর রেখেছে। আমাদের হিন্দু ধর্মের যারা বয়স্ক তারা খুব বিশ্বাস করে যে এই হনুমানের কানের মধ্যে সূর্য থাকে, এখন প্রশ্ন হচ্ছে হনুমান যদি কানের ভেতর সূর্য রাখে তবে পৃথিবীর ১৩ লক্ষ গুন বড় হচ্ছে সূর্য। এই পৃথিবী সূর্যের ১৩ লক্ষ গুন ছোট! এই ছোট পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে হনুমান কিভাবে তার কানের ভেতর সূর্য রাখে?
এই রকম গাঁজাখুরি গল্প যারা করে তাদের গল্প বিশ্বাস করতেই হবে? কেন আমরা এসব বিশ্বাস করব? কমবেশি সব ধর্মের মধ্যেই এরকম গাঁজাখুরি গল্প আছে। আমরা সচেতন থাকবো। এসব বলতে গেলেই বিতর্ক। যাক তোমাদের পড়ানো শুরু করি। এসব বিতর্কে যেয়ে লাভ নেই।
ধর্মের ভালো দিকও আছে খারাপ দিকও আছে। ভালো না থাকলে খারাপ এলো কোথা থেকে? এই যে দিন দেখতে পাচ্ছো, এই দিন কীভাবে এলো? রাত আছে বলেই তো আমরা দিন বলতে পারি।
এই যে কালো ব্যাগ, এটা কালো তুমি বুঝলে কীভাবে? এই যে লাল ব্যাগ, তোমরা সবাই কেন লাল দেখতে পাচ্ছো?
এই যে বিজ্ঞান, বিজ্ঞান এরকমই স্পষ্ট বিষয়। বিজ্ঞান হচ্ছে বাস্তবতা।
এই গাঁজাখুরি গল্প করে, এসব কারা করে? খারাপ মানুষেরা করে।
এই গাঁজাখুরি গল্প খারাপ মানুষগুলো করে তাদের ব্যবসা টেকানোর জন্য।
এই যে হনুমানের গল্প, হিন্দুদের মধ্যে যারা পড়াশোনা করে তারা কিন্তু এসব বিশ্বাস করে না। যারা মূর্খ লোক আছে তারাই এসব বিশ্বাস করে। কিছু লোক আছে ঘুরেফিরে খায়। সারাদিন কাজ করে না। এরে ওরে এটা সেটা বলে বাটপারি করে অন্ন যোগায়। ওরাই এই মূর্খদের শিষ্য বানায়। এরপর বসে বসে খায়। তারাই বলে হনুমানের কানে সূর্য আছে আর এসব শুনে মূর্খ লোকেরা তাদের টাকাপয়সা দেয়।
এই যে তোমরা লেখাপড়া শিখেছো, তোমরা ধর্মের পুস্তক পড়বে। অন্যের কথা শুনে লাফাবে কেন? তোমরা তো মূর্খ নও।
[12:50]
ছাত্র: স্যার আমরা তো কোরআন পড়েই এসব পাচ্ছি। তাছাড়া ওয়াজ শুনি, ওয়াজ শুনেও অনেক কিছুই শিখছি।
স্যার: ওয়াজ যে শোন, ওয়াজে কত ধরনের কথাই বকে, ভেবে দেখেছো? মানুষকে হত্যা করতে বলে, বাজে কথা বলে। হিংসা ছড়ানো হয় খেয়াল করেছো? শুনে ধর্ম মানতে হবে কেন? নিজে পড়েই ধর্ম মানো।"