পশুবলি ও অ্যানিমেল প্রটেকশান ল
অভিষেক দে।
Nov. 19, 2024 | | views :287 | like:0 | share: 0 | comments :0
"জীবে প্রেম করে যে জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর " - এটা কী শুধুই একটা বাণী না পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত বলে শুধু পড়তে হয়? আমরা কালি পূজা,দূর্গা পূজা ও মনসা পূজা উপলক্ষে হাজার হাজার পাঠা, মোষ, হাস বলি দি প্রতি বছর। কুরবানীর ঈদে গরু,মোষ,দুম্বা,উট কুরবান দি নির্বিকার চিত্তে। শিশু বৃদ্ধ সবার চোখের সামনে ধারালো অস্ত্রের কোপে ধড় থেকে নিরিহ, অবলা প্রানীদের মাথাটাকে বিচ্ছিন্ন করা হয় সেটা নৃসংশতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
শুধুমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ থেকে প্রানী হত্যা যা খুশি করা যায়।কেউ প্রতিবাদ তো করবেই না উলটে এই কাজ পূন্যের মনে করেন অনেকেই।আর কেউ যদি বাধা দেয় তাকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে উম্মত্ত একদল অমানুষ এর দ্বারা। যে দেশে মানুষই হৃদয়বিদারক অবস্থায় বসবাস করছে, সে দেশের প্রাণিদের দুর্দশার কথা চিন্তা করা কঠিন।
কিন্তু আমরা কিছু সময়ের জন্য আপনাদের এটাই বিবেচনা করার অনুরোধ করছি যে, উৎসর্গ হবার জন্য যে সমস্ত উট, ভেড়া, ছাগল,গরু রা অবলা প্রানী বলেই কি ইচ্ছা মত যা খুশি করা যায় তাদের সাথে??
ধর্মের ধ্বজাধারীরা প্রচার করে থাকেন, ধর্মীয় কারনে পশুবলি দিলে মানসিক শক্তির বিকাশ হয়। তারা যুক্তি রূপে টেনে আনেন তন্ত্রের বা কুরবানির কথা। অথচ পুজোর বা কুরবানির নামে এই নৃশংস প্রথা কোনো ভাবেই মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করেনা বরং দুর্বল এবং অবলা প্রানীদের যে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় এতে খুনী মানসিকতার জন্ম নেয়। বিশেষত শিশুমনে বলিপ্রথার কু প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এ থেকে মানসিক রোগ, ভীতি, হিংস্রতা বৃদ্ধি, নিদ্রাহীনতা হতে পারে। সারা পৃ্থিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের এমনটাই অভিমত।
ধর্মীয় কারনে পশুবলির বিরুদ্ধে আমাদের দেশের আইন কি বলছে?
১) The prevention of cruelty to animals act, 1960 অনুসারে, প্রকাশ্যে পশুবলি নিষিদ্ধ। কোন প্রত্যক্ষদর্শী ওই বলির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানালে মন্দিরের পূরোহিত সমেত পুজো কমিটির কর্মকর্তা ও বলি দানে অংশগ্রহনকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে।
২) Wild life protection act অনুসারে যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী প্রানী হত্যা দন্ডণীয় অপরাধ। জেল এবং জরিমানা দুটোই হতে পারে।
৩) Public nuisance act অনুসারে কোনো ব্যক্তির চোখের সামনে বলি দেওয়া নিষিদ্ধ।
৪) Arms Act অনুসারে লাইসেন্স ছাড়া বলি দেওয়ার অস্ত্র যেমন, খাঁড়া, চপার, কাটারি ইত্যাদি জিনিস, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মজুদ রাখা বেআইনি এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
৫) Cow Protection Act অনুসারে ধর্মের নামে পশুহত্যা নিষিদ্ধ হয়েছে। হাইকোর্টের নিষিদ্ধকরণের সাথে সুপ্রিম কোর্টও এই রায়ে অভিমত দেয়, বকরি ইদের সময় গরু কুরবানি দেওয়া মুসলিম ধর্মে প্রয়োজনীয় নয় এবং কুরবানি আইনত নিষিদ্ধ। এটিকে জনস্বার্থে নিষিদ্ধ করা উচিত। (মহম্মদ হানিফ কুরেশি বনাম বিহার সরকার, এ.আই.আর ১৯৮৫, এস.সি ৭৩১)
এছাড়াও পশু প্লেস নিবারণী আইন, দৃশ্য দূষণ আইন ইত্যাদি সবগুলি প্রযোয্য।
প্রসঙ্গত জানাই, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি এবং ভারতের মানবতাবাদী সমিতি, বহুদিন ধরেই ধর্মের নামে প্রকাশ্যে এই পশুহত্যার বিরোধিতা করে আসছে। ২০০৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিকাশ শ্রীধর শিরপুরকরের ডিভিশন বেঞ্চ যে শুধু রায় দিয়েছে, কালীঘাট মন্দিরে প্রকাশ্যে বলি দেওয়া যাবে না। প্রকাশ্যে বলি দেওয়া বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বর্ধমানের জেলা শাসক সৌমিত্র মোহন মহাশয় সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পশুবলি বন্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ায় সেটি বন্ধ করা গেছে। সম্প্রতি, ধর্মের নামে নির্বিচারে পশুবলি রুখতে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির জনস্বার্থ মামলা আদালতে গৃহীত হয়েছে।
সূত্র- https://kolkata24x7.com/to-stop-thousands-of-animals-kill-in-the-name-of-sacrifice-in-several-mandir-in-purulia-pil-filed-calcutta-high-court.html
https://kolkata24x7.com/to-stop-thousands-of-animals-kill-in-the-name-of-sacrifice-in-several-mandir-in-purulia-pil-filed-calcutta-high-court.html
ভাবলে অবাক হতে হয়, পশুবলির বিরুদ্ধে এতগুলি জোরালো আইন থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে দুর্গা, কালি, মনসাপুজো, ইদের কুরবানীর সময় কত কত পাঁঠা, ভেড়া, গরু, উঁট নির্বিচারে বলি দেওয়া হচ্ছে। আর দেশের নির্লজ্জ সরকার এবং প্রশাসন ধর্মের দোহায় দিয়ে এইসব বে-আইনী প্রথাকে পশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে ভারতীয় আইন ব্যবস্থাকে কদর্য রূপে প্রকাশ করছে। বিক্ষিপ্ত কিছু জায়গা বাদে (যেমন হিমাচল প্রদেশ, ঝারখণ্ড ইত্যাদি) সব জায়গাতেই প্রশাসন সূত্রে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।
কবিগুরুও তো বলিপ্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন। ‘বিসর্জন’ ও ‘রাজর্ষি’ নামক দুটি উপন্যাস ও নাটকের মাধ্যমে একশো বছর আগে ‘বলি’র বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। শুধুমাত্র ২৫ বৈশাখ আর ২২ শ্রাবনে গদগদ ভঙ্গিতে কবিতা পাঠেই তাঁকে সম্মান জানানোতে শেষ হয়ে যায়? তাঁর চিন্তা ধারাকে সম্মান জানাতে আমরা এটুকু করতে পারিনা? আমরা কী মানবিক হতে পারি না?
যাই হোক একটা কবিগানের কয়েকটা লাইন মনে পড়ছে, একজন ফকিরী সাধক বলছিলেন-
''কুরবানি করিতে হুকুম প্রাণপ্রিয় ধন,
গরু-ছাগল হইল কি তোর এতোই প্রিয়জন?
নিজের থেইক্যা প্রিয় বস্তু আর যে কিছু নাই,
আত্মত্যাগই আসল কুরবান জেনে নিও ভাই।
দশ ইন্দ্রিয়, ছয়টি রিপু পারলে দমন কর গো,
প্রেম রাখিও অন্তরের ভিতর.....''
সংযোজন: "কুরবানির ঈদ"। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে এই দিনটির গুরুত্বই আলাদা। তারা তাঁদের আল্লাহতালার উদ্যেশ্যে কুরবানি দেয় অবলা প্রানী দের। উঠ, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি কুরবানির তালিকায়। যে কোনো যুক্তিবাদী মানুষই ধর্মের নামে প্রানী হত্যার বিপক্ষে। অনেকেই উদ্ভট দাবী করে খাদ্যর সাথে পশুবলি কে এক করে দেন। আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে, খাদ্যর প্রয়োজনে একটা দুটো প্রানী কে হত্য করা এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে নির্বিচারে অবলা প্রানী দের হত্যা এক বিষয় নয়। ব্যাপার টা এভাবে ভাবুন যে, স্নানের জন্য বাথরুমে উলঙ্গ হওয়া এবং প্রকাশ্যে উলঙ্গ হয়ে স্নান করার ভেতর যথেষ্ট পার্থক্য আছে।
সরকার চাইলেই ধর্মের নামে প্রানী হত্যা কে বন্ধ করতেই পারে কঠোর ভাবে। কিন্তু মাজা ভাঙ্গা খাঁজা সরকার এই উদ্যোগ নিতে চায়না অসংখ্য কুযুক্তি দেখিয়ে। আসলে ভোট ব্যাঙ্ক বড় বালাই। তাই ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে সরকার আন্তরিক হয়না এই জঘন্য প্রথা কে বন্ধ করতে।
প্রানীরা অবলা তাই ধর্মের নামে যা খুশী তাই করা যায় তাদের সাথে। আর প্রতিবাদ করার মতন বুকেরপাটা ক'জনের থাকে মশাই।
নীরিশ্বরবাদ দর্শন " চার্বাক" এ একটা অসম্ভব সত্যি কথা বলা হয়েছে যে- ভণ্ডরা চায় খেতে পশুর, মাংস তাই তারা দিয়েছে বলির বিধান।