বিশেষ বিবাহ আইন (Special Marriage Act- 1954)
ঈশান
Nov. 19, 2024 | | views :111 | like:0 | share: 0 | comments :0
ফি রোববার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আমরা প্রায়শই দেখে থাকি পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপনে তাদের ধর্ম,জাত ইত্যাদির উল্লেখ থাকে। কিন্তু যারা কোনোরকম প্রতিষ্ঠানিক ধর্মে (Religion) বিশ্বাসী নন অর্থাৎ আমরা যাদেরকে যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক বলে অবহিত করে থাকি, তারা বিশেষ বিবাহ আইনের মাধ্যমে বিয়ে করতে পারেন। ১৮৭২ সালের এই আইন নতুনভাবে ৯ অক্টোবর ১৯৫৪ সালে ভারতীয় সাংসদে পাশ হয় এবং ১ জানুয়ারী ১৯৫৫ সালে সমগ্র ভারতে লাগু হয়। [ The Special Marriage act was passed in 9th October 1954. It was passed with an intention to regulate marriage between two individuals (of the opposite sex) irrespective of their caste or religion. It applies to the whole of India except for the states of Jammu and Kashmir.]
১৮ মে, ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইন (Hindu Marriage Act - 1955) অনুসারে পাত্র-পাত্রী উভয়কেই হিন্দু হতে হয় নতুবা সেই বিয়ে অবৈধ ঘোষনা করা হয়। প্রসঙ্গত জেনে রাখা ভালো, ভারতীয় সংসদের আইন দ্বারা গঠিত এই আইনে হিন্দু কোড বিলের (Hindu Code Bill - 1950) অংশ হিসাবে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হয়েছিল। যেমন- হিন্দু উত্তরাধিকার আইন (hindu inheritance act- 1956), হিন্দু সংখ্যালঘু ও অভিভাবকত্ব আইন (The Hindu Minority and Guardianship Act of 1956), হিন্দু দত্তক গ্রহণ ও রক্ষণাবেক্ষণ আইন (The Hindu Adoptions and Maintenance Act - 1956)।
অন্যদিকে, মুসলিম বিবাহ আইন অনুযায়ী একজন মুসলিম পাত্র কোনোও অমুসলিম পাত্রীকে বিয়ে বা নিকাহ করতে পারেন না (ব্যতিক্রম, সুন্নি মুসলমান পুরুষ একজন খ্রিস্টান বা ইহুদি নারীকে বিয়ে করতে পারেন) আবার বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে এই আইন অনুযায়ী বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। বিবাহ সম্পন্নের ৩০ দিনের মধ্যে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার পরও যদি কেউ এই আইন অমান্য করে তবে সেই ক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৩০০০/- টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড দিতে হতে পারে। ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে কোনো মুসলিম ব্যক্তি ইচ্ছা করলে অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তিকে মুসলিম আইন অনুযায়ীই বিয়ে করতে পারেন।
বিয়ে যেহেতু দুটি হৃদয়ের বন্ধন তাই, বিশেষ বিবাহ আইনে পাত্র-পাত্রী ভিন ধর্মের বা অধার্মিক হলেও কোনো সমস্যা নেই। বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে করতে হলে পাত্র-পাত্রীকে অবিবাহিত থাকতে হবে। বিয়ের সময় বিয়ের উভয় পক্ষগণের মধ্যে কারোরই কোনো জীবিত স্বামী বা স্ত্রী থাকা চলবে না। পাত্রের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর এবং পাত্রীকে ১৮ বছর হতে হবে (গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ এ, মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বেড়ে ২১ করার জন্য একটি বিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় পাশ হয়েছে। এর অর্থ ২১ বছরের নীচে মেয়েদের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে)।
এই বিয়েতে প্রথমত পাত্রপাত্রী উভয়কেই (কোনো শারীরিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে কোনো এক পক্ষকে) বিয়ের ইচ্ছে প্রকাশ করে আদালত অথবা ম্যারেজ রেজেস্ট্রি অফিসে গিয়ে, ম্যারেজ রেজেস্ট্রি অফিসারের কাছে নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পুরন করতে হবে এক মাসের নোটিশ দিয়েই। নোটিশের একমাস কাল উত্তির্ণ হওয়ার পর পাত্রপাত্রী উভয়কেই আদালত অথবা ম্যারেজ রেজিস্টার অফিসে সরাসরি হাজির হয়ে ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসারের কাছে শপথগ্রহণ করে নির্দিষ্ট আবেদনপত্রে সাক্ষর করতে হবে। বিশেষ বিয়েতে নোটিশ প্রসঙ্গে একটি খবর জানিয়ে রাখা ভালো-
বিশেষ বিবাহ আইনে নোটিশ প্রকাশ বাধ্যতামূলক নয়, রায় এলাহাবাদ হাইকোর্টের
বিশেষ বিবাহ আইন নিয়ে বড়সড় রায় ঘোষণা করল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বুধবার রায় দিয়েছে যে বিশেষ বিবাহ আইন অনুসারে বিবাহের নোটিশ প্রকাশের প্রয়োজন বাধ্যতামূলক হবে না, বরং তা দম্পতির পছন্দ সাপেক্ষে হবে।
এই রায় দেওয়া হয় একজন হেবিয়াস কর্পাসের আবেদনের ভিত্তিতে। আবেদনে বলা হয়েছে যে অন্য ধর্মের প্রেমিককে বিয়ে করার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এক প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে আটক করা হয়। ওই যুগল হাইকোর্টকে জানিয়েছেন যে ৩০ দিনের এই বাধ্যতামূলক নোটিশ তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ ও বিবাহ সম্পর্কিত স্বাধীন ইচ্ছায় বাধা দেয়। হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরি জানিয়েছেন যে এই ধরনের নোটিশ প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার ফলে তা স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার মৌলিক অধিকারকে খর্ব করে। একজন ব্যক্তি তাঁর গোটা জীবন কার সঙ্গে কাটাতে চান এটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত ইচ্ছা। এছাড়াও আদালত জানিয়েছে যে বিয়ে করতে ইচ্ছুক যুগল বিবাহ আধিকারিককে ৩০ দিনের নোটিশ প্রকাশ করতে বা না করার অনুরোধ লিখিতভাবে জানাতে পারেন।
হাইকোর্ট এও জানিয়েছে যে যদি কোনও যুগল নোটিশ প্রকাশ করতে না চান তবে বিবাহ আধিকারিক নোটিশ প্রকাশ করবেন না এবং অন্য কারোর হস্তক্ষেপও তিনি বরদাস্ত করবেন না। তার বদলে বিয়ের অন্যান্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে এগিয়ে যাবেন।
উত্তরপ্রদেশে লাভ জিহাদ বিরোধী আইন চালু হওয়ার পর থেকে বেশি করে এ ধরনের মামলা আদালতে আসছে। ২৮ নভেম্বর রাজ্যে লাভ জিহাদ বিরোধী আইন চালু হওয়ার পর থেকে ১৬টি মামলা পুলিশ দায়ের করেছে।
খবরটির লিংক- https://bengali.oneindia.com/news/india/the-notice-were-not-mandatory-under-the-special-marriage-act-said-allahabad-highcourt-121410.html
বিশেষ বিবাহ আইনে সাক্ষী হিসেবে তিনজন (যাদের একজন অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে) উপস্থিত থাকতে হবে এবং পাত্রপাত্রীর মতন তাদেরও পাসপোর্ট সাইজ ছবি, বয়সের এবং ঠিকানার প্রমাণপত্র যেমন- আধার / ভোটার আইডি / প্যান ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে যা প্রয়োজন পরবে বিয়ের সময়ে।
ভারত কিংবা বাংলাদেশের কোনো হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, পারসি, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ইত্যাদি নন বা তাদের একজন যেকোনো একটি বা অন্য ধর্মে বিশ্বাসী তাদের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করতে হলে বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন উপযুক্ত বিবাহের ক্ষেত্রে ধর্ম ত্যাগ করা অত্যাবশ্যক। দুই পক্ষই ধর্ম ত্যাগ না করলে বিয়েটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
এই আইনের বিধানে যেকোনো ধরনের মিথ্যা বর্ণনা দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আবেদনকারী যদি বাস্তবে ধর্ম ত্যাগ না করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে ধরা হবে যে, তিনি মিথ্যা বর্ণনা দিয়েছেন।
যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তকরা জন্মসূত্রে পাওয়া প্রতিষ্ঠানিক ধর্ম (Religion) ত্যাগ করে মানবতাবাদী (Humanist / Humanism) ঘোষণা পত্র পেতে নোটারি পাবলিক কর্তৃক ‘নোটরাইজড’ করানো এফিডেফিট সংগ্রহে রাখুন বিশেষ বিবাহ আইনের ক্ষেত্রে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ডক্যুমেন্ট যা ম্যারেজ রেজেস্ট্রি অফিসে প্রয়োজন হবেই।
লক্ষ্যনীয় বিষয় এটাই যে, বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে এবং নবদম্পতির সন্তান বেড়ে উঠছে একটি অন্যরকম পরিবেশে যেখানে কোনোরকম ধর্মাচরণ বা ধর্মপালন হয়না এবং উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় পরিচয় বহনও করছে না। এই উত্তরাধিকারীদের মধ্যে আবার কেউ কেউ একটি ধর্ম বেছে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের জন্য কোনো আইন নেই।
'বিয়ের জন্য ধর্ম পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয়, বলল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট'
কেবলমাত্র বিয়ের জন্য ধর্ম পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয়। একটি মামলার প্রেক্ষিতে আবেদনকারীকে শনিবার এ কথা জানাল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। বিয়ের তিন মাস পর পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক দম্পতি। আদালত সেই আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে।
জন্মসূত্রে এক মুসলিম মহিলা বিয়ের জন্য হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। আবেদনে ওই দম্পতি জানিয়েছেন যে তাঁরা চলতি বছরের জুলাই মাসেই বিয়ে করেন। এও অভিযোগ করেন, বিয়ের পরেও পাত্রীর বাবা তাঁদের জীবনে হস্তক্ষেপ করছেন। তার প্রেক্ষিতেই বিচারপতি মহেশ চন্দ্র ত্রিপাঠী এ দিন বলেন, ‘‘ওই মহিলা ২০২০ সালের ২৯ জুন নিজের ধর্ম পরিবর্তন করেন এবং ৩১ জুলাই বিয়ে করেন। এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় বিয়ের উদ্দেশ্যেই এই ধর্ম পরিবর্তন’’।
বিচারপতি এও জানিয়েছেন, আদালত এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয়। এর আগে ২০১৪ সালে নূর জাহান বেগমের একটি আবেদনের ভিত্তিতেও একই রায় দিয়েছিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। এ দিন ওই রায়ের কথাও উল্লেখ করেছে আদালত।
খবরটির লিংক- https://www.anandabazar.com/india/conversion-for-the-sake-of-marriage-is-not-acceptable-said-allahabad-high-court-dgtl-1.1222498
বিশেষ বিবাহ আইনের কয়েকটি প্রয়োজনীয় তথ্য-
১) আবেদনকারী পাত্রপাত্রীকে ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসারের কাছে জমা দেওয়া যাবতীয় তথ্য (যেমন- বয়সের প্রমাণপত্র, নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র, প্রতিষ্ঠানিক ধর্মহীনতার প্রমাণপত্র, ঠিকানার প্রমাণপত্র ইত্যাদি) সঠিক দিতে হবে। ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসারের সেইসব কাগজপত্র দেখে যদি সন্দেহজনক মনে হয় কিংবা অফিসার যদি তথ্যবিকৃতি পান তাহলে তিনি বিবাহ বাতিল করে আবেদনকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন।
২) বিশেষ বিবাহ আইনে পাত্রপাত্রীর মধ্যে যদি ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকে (যেমন মামাতো, কাকাতো ভাই বোন, দাদা বোন, ভাই দাদা কিংবা কাকা ভাইঝি, অথবা বিবাহবিচ্ছেদ না করে গোপনে কোনো পুরুষের সাথে নারীর বিয়ে) তাহলে এই বিয়ে অবৈধ ঘোষনা করা হয়।
৩) পাত্র কিংবা পাত্রীর মধ্যে কোনো একজন মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী অথবা ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক বিয়েও এই আইনে অবৈধ।
৪) কোনোরকম সমস্যাজনিত কারনে বিবাহবিচ্ছেদের প্রয়োজনে নূন্যতম বিয়ের তিন বছরের আগে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করা যাবেনা। এবং বিবাহবিচ্ছেদের একবছর পূর্ণ না হলে নতুন বিয়ে গ্রাহ্য হবে না।
৫) বিশেষ বিবাহ আইন- ১৯৫৪ এবং হিন্দু বিবাহ আইন- ১৯৫৫ অনুযায়ী স্ত্রী বর্তমানে থাকা সত্ত্বেও অর্থাৎ বিবাহবিচ্ছেদ না হলে পাত্র তার প্রাক্তন স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে বর্তমানে বিবাহ করলেও এই বিয়ে আইনত অবৈধ। আইনের ফাঁক গলে যদি এই বিয়ে হয়েও যায় তাহলে বর্তমান স্ত্রী, বর্তমান ই থাকবেন। পত্নীর স্বীকৃতি পাবেন না এবং সেই প্রাক্তন স্ত্রী তার স্বামীর বর্তমান বিয়ের অভিযোগ নিয়ে আইনের দারস্থ হলে স্বামীর হাজতবাস সঙ্গে মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান রয়েছে আইনে।
৬) বিবাহবিচ্ছেদ না হয়েও যদি বিশেষ আইনে কেউ বিয়ে করেন তথ্যগোপন রেখে তাহলে বর্তমান স্ত্রী সাথে তার স্বামীর দৈহিক মিলনে জন্মনেওয়া সন্তানকে অবশ্য বৈধ ধরা হবে এবং তার জন্মদাত্রী সন্তানের ভরণপোষণ এর জন্য স্বামীর কাছে আর্থিক সাহায্যও পাবেন। তাছাড়া ভবিষ্যতে এই সন্তান (প্রাক্তন স্ত্রীর নয়, বর্তমান স্ত্রীর) তার জন্মদাতার সম্পত্তির অধিকার নিয়ে আদালতে মামলা করত পারবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর জানিয়ে লেখাটির ইতি টানা যাক-
বিয়ের নামে ধর্মান্তরণ রুখতে অধ্যাদেশ যোগী সরকারের, ‘প্রমাণ’ হলে ১০ বছরের জেল ধর্ম পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিবাহের অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে।
বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে ‘লভ জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে আইন আনার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র। তার মধ্যেই বিবাহের নামে ধর্মান্তরণের বিরুদ্ধে অধ্যাদেশ জারি করল উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার। তাতে বলা হয়েছে, ছল-চাতুরি করে ধর্ম পরিবর্তন করানোর অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সাজা হবে।
মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অধ্যাদেশ জারি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যোগী নিজে এই বেআইনি ধর্মান্তরণ প্রতিরোধ অধ্যাদেশ ২০২০-এ অনুমোদন দেন বলে জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। ওই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ধর্মান্তকরণের উদ্দেশে যদি কোনও মহিলাকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করা হয়, তা হলে আইনের চোখে সেই বিবাহ বৈধ নয়। তা বাতিল বলে ধরা হবে।
শুধু তাই নয়, নিজের ইচ্ছেয় যদি কোনও মহিলা ধর্ম পরিবর্তন করতে চান, সে ক্ষেত্রে বিয়ের ২ মাস আগে জেলাশাসকের কাছে সেই মর্মে আবেদন জমা দিতে হবে। অন্যথায় ৪ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে। সেই সঙ্গে জরিমানা দিতে হতে পারে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকার।
জোর করে ধর্মান্তরণের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সাজা এবং ১৫ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা রয়েছে ওই অধ্যাদেশে। তবে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের কোনও মহিলা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কের ধর্ম পরিবর্তন করা হলে, সে ক্ষেত্রে ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে। জরিমানা দিতে হতে পারে ২৫ হাজার টাকা।
হিন্দু মেয়ে এবং মুসলিম ছেলের বিবাহকেই ‘লভ জিহাদ’ আখ্যা দিয়েছে গেরুয়া শিবির। তাদের অভিযোগ, ধর্ম পরিবর্তনের লক্ষ্যেই হিন্দু মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুসলিম ছেলেরা। বিজেপি নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে শুরু থেকে যোগী আদিত্যনাথই সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন। সম্প্রতি এই ‘লভ জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে আইন আনার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানায় মধ্যপ্রদেশ এবং হরিয়ানা সরকার। তার পর উত্তরপ্রদেশে এ নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে এ নিয়ে আইন মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। শেষমেশ এ দিন অধ্যাদেশ জারি করে যোগী সরকার।
গেরুয়া শিবিরে ‘লভ জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এর বিরুদ্ধে খুব শীঘ্র রাজ্যে আইন চালু হবে বলে শুক্রবারই জানিয়েছে সেখানকার স্বরাষ্ট্র দফতর। হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশ সরকারও একই পথে হাঁটছে। তবে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে মুসলিম যুবকের বিয়েতেই যাবতীয় আপত্তি তাদের। মুসলিম মেয়ের হিন্দু পরিবারে বিয়েতে কোনও আপত্তি তোলেনি তারা।
তবে বিজেপি এবং গেরুয়া শিবিরের এই ‘লভ জিহাদ’ তত্ত্বের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বিরোধী নেতারা। সাম্প্রদায়িক সংহতি নষ্ট করাই তাদের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন অশোক গহলৌতের মতো অনেকেই। সোমবার একটি মামলার রায়ে ইলাহাবাদ হাইকোর্টও জানিয়ে দেয়, নিজের পছন্দ মতো জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়া প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
খবরটির লিংক- https://www.anandabazar.com/india/uttar-pradesh-government-brings-ordinance-against-unlawful-religious-conversion-dgtl-1.1233735
বিদ্রঃ ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে প্রত্যাহার হয়েছিল ৩৭০ ধারা এবং ৩৫ এ। মনে করা হচ্ছে এবারে জম্মু এবং কাশ্মীরের কোনো স্থায়ী নাগরিক বিশেক বিবাহ আইনে নিজদের দাম্পত্যজীবন শুরু করতে পারেন।
ঋণ স্বীকার: সদ্যপ্রয়াত আইনজীবি শ্রী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায় এবং আইনজীবী প্রবাল মিত্র।