একবিংশ শতকের নতুন আতঙ্ক সিএএ

পৃথ্বীশ ঘোষ


Nov. 19, 2024 | | views :87 | like:0 | share: 0 | comments :0

ছোটবেলায় যখন লেখা পড়া শুরু করেছিলাম তখন বই খুললেই প্রথমে সংবিধান এর প্রস্তাবনা দেখে দেখে মুখস্ত হয়ে গেছিল। তাতে সমানাধিকার এর কথা থাকত। বর্তমান শাসক শ্রেণী ধর্মীয় মেরুকরণ ও জাতপাত নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে এই সমানাধিকার এর ব্যাপারটাই গুলিয়ে দিতে চাইছে। যে রাষ্ট্রে সাক্ষরতার হার খুব সন্তোষজনক নয় তাদের কত শতাংশ মানুষ যে এটা বুঝবে সন্দেহ। আমাদের দেশে বিল (সি এ বি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল) টি খুব কম লোকেই পড়েছে বেশিরভাগ লোকেই কিন্তু শাসক বিরোধী বক্তব্য শুনে বিভ্রান্ত এমন অবস্থায় 2019 সালের 11 ডিসেম্বর গভীর রাতে পাস হয়ে গেল। বিলের উদ্দেশ্য 1955 সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব  লাভের সুযোগ রয়েছে। মুসলিমদের জন্য এখানে কোন সুযোগ রাখা হয়নি। শাসকশ্রেণী বোঝাল এতে হিন্দুদের কোন অসুবিধা নেই খালি ঘুসপেটিয়া দের তাড়িয়ে দেওয়া হবে, ওহ কি মজা। বিধি বাম। 31 আগস্ট 2019 আসাম এনার্সির তালিকা থেকে দেখলাম 19 লক্ষ মানুষের নাম বাদ। পাঠক এতটুকু শুনেই অবাক হচ্ছেন আর একটা তথ্য পেশ করি তার মধ্যে 12 লক্ষ হিন্দু বাঙালির। আপনি ভাবলেন বিজেপি তো হিন্দু দের কিছু করবে না বেছে বেছে মুসলিম দের তাড়াবে, আজ্ঞে না এরকম কোন দিবাস্বপ্ন দেখলে এখুনি বেরিয়ে আসুন। বাংলার এক গো নেতা সেদিন বললেন এনার্সি হলে নাকি 2 কোটি লোকের নাম বাদ যাবে। এই আনন্দে রাম্ভক্ত হনু ভক্ত গো সন্তান রা যদি আনন্দে আমোদে ফেটে পড়ে কিছুদিন বাদে এনার্সি লাগু হলে তাদের কয়েকজন এর নাম বাদ যায় তাহলে কারা বাঁচাবে?? যেমন টা আসামে বিজেপি নেত্রী ববিতা পাল এর নাম বাদ গেছে। ইনি কিন্তু এনার্সি র পক্ষে জোরদার প্রচার চালিয়েছেন।


সিটিজেন আমেন্ডমেন্ট আইন চালু হলে কতজন বাঙালি নাগরিকত্ব পাবে ? মাত্র 31 হাজার 313 জন। এর ভেতরে আপনার নাম থাকবে তো? কিছুদিন আগেই টাকলুভাই বললেন যে আধার ভোটার নাকি নাগরিকত্বের পরিচয় নয়। মানছি আধার শুধু পরিচয় কখনোই নাগরিকত্ব নয়। তাই বলে ভোটার কার্ড? উনি আরো বলেন অত্যাচারিত হয়ে যে এসেছে সে হিন্দু হলে তার হিন্দুত্বের প্রমান।  এরা কখন কি বলে মানুষ কে বিভ্রান্ত করে দেবে আপনি সেই বিভ্রান্তির মধ্যেই নিজ দেশে নিজেই বিদেশি হয়ে যাবেন ধরতে পারবেন না। খুব সুচতুর গেম প্ল্যান কষে এগোচ্ছে আরএসএস এন্ড কোং। মানুষের বেসিক চাওয়া শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থান চাকরি এগুলো থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতেই পাকিস্তানএর সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, 370 ধারা, নাগরিকত্ব, দেশীয় সংস্থা বিক্রি আর বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিস্কার যেমন গরু র দুধে সোনা, মহাভারত এ ইন্টারনেট, হাস জলে অক্সিজেন ছাড়ে এরকম কত কি। যে নাগরিকদের বৈধ ভোট দিয়ে গেরুয়া বাহিনী কে ক্ষমতায় আনল আজ তারাই দাবী করছে আপনি নাগরিক নন। বাহ চমৎকার এই তো গোলওয়ালকর, সাভারকার দের শিক্ষা। দিল্লির নির্বাচনী ফলাফল পরিষ্কার মানুষ জাত পাত, ধর্মের রাজনীতি পছন্দ করছে না।  হেঁয়ালি ছেড়ে পরিষ্কার কথায় আসি ধরুন আপনার পরিবারের 4 জনের নাম বাদ গেছে এবার নিয়ম মতো আপনাকে কাগজপত্র নিয়ে 120 দিনের মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল এ আপীল করতে হবে নিজেদের ভারতীয় প্রমান করার জন্য।সেখানকার রায় আপনার বিপক্ষে গেলে হাইকোর্ট কিংবা সুপ্রিমকোর্ট। হাইকোর্ট এ আবেদন করতেই লাগবে 19 থেকে 20 হাজার টাকা জনপ্রতি। সুপ্রিমকোর্ট ছেড়েই দিলাম এবার বলুন তো দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে 4 জনের যদি এরকম অবস্থা হয় আপনার মৃত্যু ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা থাকবে কি? রাতের ঘুম উড়িয়ে আপনাকে পুরে দেবে ডিটেনশন ক্যাম্পে। সেখানে আপনারা কেউ একসঙ্গে থাকতে পারবেন কিনা সন্দেহ। যারা আসামের হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয় নি তারা কি করে বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেবে? বিজেপির বাবার ও ক্ষমতা নেই দেবার আইনের নিয়ম অনুযায়ী। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যায় যে শরণার্থী ও নাগরিকত্ব এক জিনিস নয়। একজন নাগরিক সে যে যে সুবিধা পাবে একজন শরনার্থী সেগুলো পাবেনা। ভোটদান এর সুযোগ, শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থান এগুলোর কোন দাবী একজন শরনার্থী করতে পারে না। রাষ্ট্রের দয়া ভিক্ষা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে।  এখন প্রশ্ন এত মানুষ যে নাগরিকত্ব হারালো এরা যাবে কোথায়??? উত্তর খুব সহজ ডি ক্যাম্প। খুব সস্তা শ্রম এখন সারা বিশ্ব জুড়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পুঁজিবাদের কল্যানে। নাম মাত্র বা বিনামূল্যে হাড়ভাঙা খাটিয়ে নাম মাত্র খেতে চিকিৎসা দিয়ে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখা হবে। যে ক্যাম্প গুলো জার্মানি তে হিটলার শুরু করে গেছিলেন সেই একই কায়দায় নাম পাল্টে ডিটেনশন ক্যাম্প হয়ে ফিরে এসেছে। এখনো সময় আছে গর্জে না উঠলে সর্বনাশ। একনজরে দেখে নি আসাম এর বাদ পড়া জনজাতি গুলির পরিসংখ্যান-

বাঙালী হিন্দু 6.90 লাখ

পুর্ব বাংলা বংশোদ্ভূত মুসলিম 4.86 লাখ

 গোর্খা 85,000

অসমীয়া হিন্দু 60,000

কোচ রাজবংশী 58,000

গরিয়া মরিয়া দেশি 35,000 

বোরো 20,000

করবি 9,000

রাভা 8,000

হাজং 8,000

মিসিং 7,000

অহম 3,000

গারো 2,500

মাতাক 1,500

ডিমাসা 1,100

সোনোয়াল কাছারি 1,000

মারান 900

বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী 200

নাগা 125

হামার 75

কুকি 85

থাডো 50

বাইট 85

ভারতের নাগরিক তারাই যারা 1971 এর আগের দলিল ও ঠাকুর্দার ভোটার লিস্টে নাম দেখাতে পারবে। মোট দশটা প্রমাণপত্র। 76 এর বন্যায় অনেক মানুষের অনেক কাগজপত্রই নষ্ট হয়ে গেছে তারা পারবেন তো কাগজ দেখাতে? ওপার বাংলায় মুসলিম দের দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছেন সেই FIR কপিও দেখাতে হবে। যারা এসে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন সেই সংখ্যা কত? 31 হাজার 313 জন। আর সারা ভারত জুড়ে কতজন বিদেশি নাগরিকত্ব পাবেন 31 হাজার সেই 313 জন। কি মজা না।

NRC আতঙ্ক গ্রাম-শহরে ছড়িয়ে পড়ছে, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়ও নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী চিত্রটা ভয়াবহ:

এ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে NRC শহীদ ২২জন!

তথ্যসূত্র-  1- উইকিপিডিয়া ( এন আর সি)

          2- বিভিন্ন সময়ের এই সময় পত্রিকা।

          3- আ বা প - 1/9/19

          4-https://www.sabrangindia.in/article/over-7-lakh-hindus-among-those-excluded-nrc-leaked-data-suggests 

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929