হিজাব, একটি বিতর্ক এবং..

অভিষেক দে


Nov. 19, 2024 | | views :882 | like:0 | share: 0 | comments :0

ফেব্রুয়ারি ২০২০-এর প্রথম সপ্তাহ থেকে হিজাব নিয়ে বিতর্কে সরগরম কর্ণাটক। ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য সপ্তাহ খানেক আগে। কর্ণাটক রাজ্যের উদুপি জেলায় একটি সরকারি কলেজে ছয়জন ছাত্রীকে হিজাব পরে ক্লাস করতে বাধা দেওয়ায় শুরু হয় বিতর্ক। সেই ঘটনায় আদালতের দ্বারস্থ হন একজন ছাত্রী। পরে বিতর্কের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে আরও কয়েকটি কলেজে। অন্যদিকে গত ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ (বৃহস্পতিবার) ওই জেলার সৈকত-শহর কুন্দাপুরের একটি কলেজে হিজাব পরে আসা কয়েক জন জন ছাত্রীকে ক্লাস করতে বাধা দেওয়া হয়। ছয় ঘণ্টা ক্লাসের  বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁরা। শুক্রবারও একই ভাবে তাঁদের ক্লাসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে চারটে ঘটনার ভিডিও। একটিতে দেখা গেছে, শ’খানেক ছাত্র গেরুয়া শাল পরে একজন বোরখা পরিহিত মুসলিম তরুণীকে "জয় শ্রীরাম" স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে এবং সেই তরুণীটি পাল্টা "আল্লাহ্‌ আকবর" স্লোগান দিচ্ছে। দ্বিতীয় ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে কর্নাটকের একটি স্কুলে গেরুয়া পতাকা উত্তলন করছে রামের নামে স্লোগান দেওয়া একজন তরুণ। তৃতীয় ভিডিওতে, একটি বন্ধ ক্লাসরুমের বাইরে বেশকয়েকজন উত্তেজিত যুবকেদের "জয় শ্রীরাম" স্লোগান ও দরজা খুলে দিলে তাদের হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ। চতুর্থ ভিডিওতে দেখা গেছে, রাস্তা দিয়ে যাওয়া কয়েকজন বোরখা পরিহিত তরুণীদের উদ্দ্যেশ্যে একদল যুবকেরা জল ছুঁড়ে দিচ্ছে। 


এইমূহুর্তে অন্য কিছু আলোচনা কোথায় যেন হাওয়া। পাড়ার চায়ের দোকান থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, মাছবিক্রেতা মন্ডলদা থেকে বাড়ির পরিচারিকা মুন্নির এখন একটাই প্রধান ইস্যু -"হিজাব"। ওদিকে, সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকা এবং আতঙ্কে রাখা মিডিয়াতেও করোনাতঙ্ক ভ্যানিশ হয়ে হিজাব বিতর্কটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। শুরুতে যে ঘটনাটা উল্লেখ করেছি সেটা খুবই সাধারণ একটা ব্যপার, হটাৎই স্মরণে এলো বলেই লিখলাম। কিন্তু কোথাও যেন এই হিজাব বিতর্কের সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে। আমি কি পোশাক পরবো, কি বই পড়বো, কোথায় ঘুরবো, কি খাবো কিংবা কি দেখবো অথবা শুনবো সেটা সম্পূর্ণ আমার অথবা একজন ব্যক্তিনির্ভর ব্যপার। এতে কেউই হস্তক্ষেপ করতে পারেনা অথবা জোর করে কিছু চাপিয়েও দিতে পারেনা। 


ইসলামধর্মাবলম্বী পরিবারের কোনো মহিলা যদি স্ব-ইচ্ছায় হিজাব কিংবা বোরখা পরিধান করতে চান তাহলে ব্যপারটা আলাদা কিন্তু কোনো মহিলাকে জোর করে উক্ত জিনিস দুটো পরিধান করানো কিন্তু অবশ্যই নিন্দনীয়। তাছাড়া একটা বাস্তব সত্যি হচ্ছে, বোরখা কিংবা হিজাব মধ্যযুগীয় কু-প্রথা এবং অবশ্যই কট্টর পুরুষতান্ত্রিক। আমার পরিচিত একজন দিদি সোশ্যাল মিডিয়াতে ঠিক এমনই কিছু লিখেছিলেন সম্প্রতি। দেখলাম, সেখানে একজন বাংলাদেশের মুমিন ব্যক্তি কমেন্টে লিখেছে - " ও হিন্দুম্যাডাম, এসব ডায়লগ নিজের বাড়িতে বসে ঝাড়ুন গে। আপনি বিকিনি পরে কিংবা উলঙ্গিনী হয়ে ঘুরতে ভালোবাসতে পারেন, তবে আমাদের ইসলাম একে মান্যতা দেয়না। শুধু চোখ দুটি ছাড়া নারীকে পর্দানশীন রাখা ইসলামের অঙ্গ। তাই না জেনে উল্টোপাল্টা লিখবেন না। আমাদের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত দেওয়ার আপনি কে হে? "।


প্রিয় বন্ধুরা, লক্ষ্য করুন এই ব্যক্তির বক্তব্য যা অনেককিছুই স্পষ্ট করে দিচ্ছে। যারা নারীকে সম্মান জানতে পারেনা, যাদের কাছে একজন নারী শুধুমাত্র "মানুষ" না হয়ে, ভোগের সামগ্রী হয়ে ওঠে, যারা নারীকে শিক্ষার আলো থেকে শতহস্ত দূরে রেখে নিজেদের বানানো আইনে শৃঙখলাবৃত করে রাখতে পছন্দ করে তারা চাইবেই নারীকে সারাজীবন পর্দানশীন রাখতে। এইসব নারীলোভীদের এই প্রশ্নটা করলেই দেখবেন তারা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবে যে, "তাহলে কি এটাই মেনে নেবো যারা নারীকে পর্দানশিন রাখতে একপ্রকার ফতোয়া জারি করেছে তারা প্রত্যকেই ছিল নারীভোগী। তাই অন্য পুরুষের কু-নজর থেকে বাঁচতে এমন বিধান লিখেছিলেন?" মজাটা হচ্ছে, সেই ব্যক্তির যুক্তি মানলে এটাই দাঁড়ায় পৃথিবীর সকল পুরষেরাই যেহেতু নারীলোভী তাই নারী নিজেকে সর্বদা পর্দানশিন রাখবে নিজেকে। সত্যি, হাস্যকর (কু)যুক্তি। এমন অদ্ভুত নিয়মকানুনের ফতোয়া যে ধর্ম দেয়, তাকে কি সহিষ্ণু, মানবিক বলা চলে? প্রত্যেক দেশেই রয়েছে নানানরকম ধর্মীয় নিয়মের বাঁধন তাই অন্যান্য দেশের কথা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ভারতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পারছি যে, দেশে প্রতি দিন ৯১ টি ধর্ষণ ঘটনা ঘটে ( সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা, ১০ জানুয়ারি ২০২০, পৃ.৬)। কিছু অতিবোদ্ধারা ধর্ষণের ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীকে দোষারোপ করে, বিশেষ করে তার সাজপোশাক কে। কিন্তু এইসব অতিবোদ্ধাদের কেউ এটা অবশ্যই জানিয়ে আসবেন যে, ধর্ষণের ক্ষেত্রে শুধু এবং শুধুমাত্র বিকৃত মানসিকতা, যৌন বিকার ইত্যাদি প্রধান দায়ী, সাজপোশাক নয়। এই মানসিক বিকারগ্রস্তদের কারনেই আসিফা, নির্ভয়া, পুতুল, হাথরস, উন্নাও, বিন্দুদের মতন ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে আকছার। সরকারের অপদার্থতায় এবং রাজনৈতিক পরিচয় ও অর্থের জোরে ধর্ষকদের মতন জঘন্যতম অপরাধীরা আইনকে পকেটে পুরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। জনগণের দেওয়া করের টাকায় এইসব অপরাধীদের জেলে বসিয়ে চারবেলা খাওয়ানোর কি প্রয়োজন জানা নেই। এদের জন্য একটাই শাস্তি - To be hang till death. (এখানে অনেকেই হয়তো বলতে পারেন ফাঁসি কেন? তাদের বলবো সভ্য দেশে ফাঁসি হয়না। কিন্তু যেখানে প্রতিদিন ৯১ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে সেই দেশটাকে সভ্য দেশ কিভাবে বলবো?) 


যাইহোক মূল আলোচনা অর্থাৎ হিজাব নিয়ে যে বিতর্ক সেখানে ফেরা যাক। তার আগে একটি বিশেষ খবরের দিকে পাঠক বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই। ঘটনাটি মার্চ ২০১৮ সালের। মহারাষ্ট্রর থানে জেলার ‘সাঁই হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ'এর একজন শিক্ষার্থীকে হিজাব পরবার অনুমতি দিতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশনা দেয়ার জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন। 

তার পিটিশনে বলা হয়, তাকে হিজাব পরে তার কলেজে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়া হোক অথবা অন্য কোনো কলেজে তাকে স্থানান্তর করার অনুমতি দেওয়া হোক যেখানে কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই তিনি তার ধর্মীয় বিশ্বাস অনুশীলন করতে পারেন।

এছাড়াও কারো ধর্ম বিশ্বাসের ওপর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করতে না পারে, সেজন্যও জন্য পিটিশনে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। 


সেই শিক্ষার্থীর আইনজীবী মিহির দেসাই জানিয়েছিলেন, হিজাব পরে লেকচারে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি না দেয়ার কারণে তার মক্কেল ঠিকমত কলেজে উপস্থিত হতে পারেন নি। কলেজে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দিন উপস্থিতি না থাকার কারণে তাকে গত বছরের পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। মেডিকেল কলেজের ওই শিক্ষার্থী আদালতকে আরও জানায় যে, তিনি যখন কলেজে ভর্তি হন, তখন তিনি বোরখা ও পরতেন না। ওই সময় এই নিষেধাজ্ঞা কেবল বোরখাতেই ছিল।


বিচারপতি আর এম সাভান্ট ও সারাঙ্গ কোতওয়ালের একটি বেঞ্চে এই রিট আবেদনের শুনানি হয়।

আবেদনকারী তার আবেদনে বলেন, তিনি কেবল হিজাব এবং একটি লম্বা গাউন পরতে চান এবং অন্য ছাত্রীদের মতোই এর উপরে অ্যার্পন পরতে ইচ্ছুক। সব পক্ষের বক্তব্য শুনানির পরে আদালত শিক্ষার্থীদেরকে হিজাব এবং গাউন পরার অনুমতি দিতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেন। কলেজ থেকে স্থানান্তরের জন্য প্রার্থনার প্রয়োজন নেই সেটাও জানিয়ে আদালত পিটিশনটির নিষ্পত্তি করেন। 


তাহলে এখন এটা স্পষ্ট, এই হিজাব বিতর্ক আজকের নতুন কিছু নয়। বহুবছর ধরেই বিষয়টি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক থেকে গেছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের একশ্রেণীর ব্যক্তিদের দাবী- "এটা আমাদের ইসলামে স্বীকৃত ব্যপার। আমাদের বাড়ির মেয়ে বউরা কি পোশাক পরে বাইরে বেরুবে সেটা নিয়ে যেচে কেউ যেন জ্ঞান না দেয় অথবা অন্যকেউ যেন এতে নিজেদের নাক না গলায়। আমাদের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত যেন না লাগে এটা সকলের দেখা বিশেষ প্রয়োজন "। 


সত্যিই, ধার্মীকরা বড়ই মিষ্টি। "আমার ধর্ম ইসলাম পৃথিবীর সবেচেয়ে সুন্দর, মানবিক, সহিষ্ণু, শান্তি-সম্প্রীতির ধর্ম" ইত্যাদি বলে প্রচার করলেও যখনই তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে তখনই নিজদের ভদ্র মুখোশের আড়ালে থাকা কুৎসিত মুখটা বের করে এনে উগ্রধর্মান্ধতার ভয়াবহতা কেমন হতে পারে সেটা প্রকাশ করে ফেলে এরা (বহুর মধ্যে উদাহরণ, বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তমনা ব্লগার দের নৃশংশভাবে হত্যাকান্ড)। তখন, শান্তি-সম্প্রীতি, সহিষ্ণু মানবিক ইত্যাদি কথাগুলো কেমন যেন জেলো হয়ে যায়। এই ব্যপারটা পৃথিবীর প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানিক ধর্মের (Religion) অনুসারী ধার্মিকদের ক্ষেত্রেই সমান প্রযোজ্য।


আজ এটা দিনের আলোর মতন স্পষ্ট, একটি পুরোনো বিতর্কিত বিষয়কে ইচ্ছেকরেই প্রচারে আনা হচ্ছে এবং একটি রাজনৈতিক দল ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে বিষয়টাকে খুঁচিয়ে বের করে এনে বিতর্কের আগুন পোহাচ্ছে। আরেকটি কথা, যেসকল তরুণেরা গলায় গেরুয়া গামছা পরে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছে তাদের উস্কানিও এরাই দিচ্ছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে। এইসব তরুণ যুবকরা "ধর্ম" নামক আফিমে এতোটাই আচ্ছন্ন যে, এরা জানেও না কোন মারণ ফাঁদের দিকে এরা নিজেদের পা বাড়াচ্ছে। নিজেদের রাজনীতির স্বার্থেই যারা এদেরকে ব্যবহার করছে তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে এইসব যুবকেরাও শেষ। এদের কি মনে হয় সরকার ওদের জন্য উচ্চশিক্ষা এবং তারপরে একটা ভালো স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করবে? তাহলে অনুরোধ, টিভিতে পোগো চ্যানেল এদের জন্য আদর্শ। (তবে "জয় শ্রীরাম" স্লোগানের সেইসব যুবকদের যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার  সেইসব হিন্দুবীর যুবমোর্চাকে গৈরিক শুভেচ্ছা জানাই। জনগণের পরিহিত কোনো পোশাক কিংবা যে কোনো চিহ্ন যেটা কোনো ধর্মীয় ইঙ্গিত বহন করে, সেটা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। ওমুক যায়গায় তমুক লেখা রয়েছে তাই চলবে কিংবা দীর্ঘবছর ধরে এই নিয়ম চলে আসছে বলেই চলতে দেওয়া হবে এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারনা। সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে জিজ্ঞাস্য, চুরিবিদ্যাটা যুগযুগ ধরে চলে আসছে কিংবা ধর্ষণের মতন চরমতম অপরাধ যুগে যুগে ঘটে চলেছে বলে কি আপনি আজও এসব মেনে নেবেন? তবে আশা রাখবো, কোনো মহিলার হিজাব ব্যান করার আন্দোলনে নামার আগে নিজের কাঁধের গেরুয়া গামছা থেকে শুরু করে নিজের মা,বোন, দিদি, স্ত্রীর শাঁখা, সিঁদুর, ঘোমটা আর ব্রাহ্মণদের পৈতে, টিকি, তিলক অবশ্যই বাতিল করে তারপর যেন মুসলিম মহিলাদের হিজাব বাতিলের জন্য নামবে এই তরুণ শক্তিতে পরিপূর্ণ হিন্দুবীর যুবমোর্চা বাহিনী।)


বিগত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বচ্চ বেকারত্ব কিন্তু একজন মন্ত্রীমশাইয়ের রাজত্বে। "চাকরি দেওয়ার দায় সরকারের নয়।" সংসদে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি এমনই বুঝিয়ে দিয়েছেন সেই মন্ত্রীমশাই। এছাড়া উনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, "দেশে বেকারত্বও নেই, মূল্যবৃদ্ধিও নেই।" ২০১৪ সালে যিনি বলেছিলেন, বছরে ২ কোটি চাকরি দেওয়া হবে, সেই মন্ত্রীমশাই এটাও জানিয়ে দিয়েছেন - "কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের উপর ভরসা করে থাকার দিন শেষ হয়েছে। সবকিছু সরকার করে দেবে এই ভাবনা আর চলবে না। আগে মনে করা হতো, সরকারই ভাগ্যবিধাতা, সেই জীবিকার সব দায়িত্ব নেবে। কিন্তু এই ভাবনা ভুল। যুবসমাজ নিজে নিজেকেই গড়বে।" 


অন্যদিকে, দিনকয়েক আগে কেন্দ্রীয় বাজেট (Union Budget 2022) পেশ করতে গিয়ে ভারতের মাননীয়া অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন- "আগামী পাঁচ বছরে ৬০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান হবে।" অর্থাৎ প্রতি মিনিটে কি ২.২৮ জনের চাকরি? আরেকটি কথা, এই কেন্দ্রীয় বাজেটে বড়বড় শিল্পপতিদের ট্যাক্স ১৮% থেকে কমিয়ে ১৫% করা হলেও সাধারণ মানুষের ট্যাক্স একটাকাও কমানো হয়নি। 


১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে কর্ণাটক হাইকোর্ট অন্তবর্তী রায়ে জানিয়েছিল- " শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন ধর্মীয় পোশাক নয়"। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছে সেইসকল তরুণীরা যারা দাবী জানাচ্ছে "হিজাব আমাদের সাংবিধানিক অধিকার "। 


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হিজাব পরার কী সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে? ভারতীয় সংবিধানে কিন্তু সরাসরি ভাবে হিজাব পরার কোনো উল্লেখ নেই,  আর্টিকেল ২৫ (১)- এ সুস্পষ্ট ভাবে বলা আছে “Freedom of conscience and the right to freely profess, practise, and propagate religion.” সুপ্রীম কোর্ট বিভিন্ন সময়ে নিদান দিয়েছেন যে অত্যাবশ্যক ধর্মীয় আচরণ পালনে বাধা দেয়া যাবে না। ভারতীয় সংবিধানের ধারা-২৫ এর প্যারা নং ২ বেশ অন্যরকম। অবশ্য এগুলো যুক্তিবিদ্যার বিষয়। আবেগের নয়। কারন, আবেগ যুক্তির প্রধান শত্রু। অন্যদিকে সংবিধানে ১৫৩এ, ২৯৫,২৯৫এ ইত্যাদি ধারাগুলোও আছে। আসলে ভারতের সংবিধানে এমন অনেক কিছুই রয়েছে যা বিতর্কিত আবার এমনও অনেক কিছু রয়েছে যা যথেষ্ট চিন্তার খোরাক যোগাতে বাধ্য। 


ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় খন্ডে, দেশের নাগরিকদের ছয়টি (৬) মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে। যেমন -  (১) সাম্যের অধিকার, (২) স্বাধীনতার অধিকার, (৩) শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, (৪) সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার, (৫) শাষনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার এবং 

(৬) ধর্মীয় অধিকার। এই বিষয়ে সামান্য আলোচনার অবকাশ রয়েছে। সংবিধান আমজনতাকে দিয়েছে ধর্মপালন বা ধর্মাচারণ করার স্বাধীনতা কিন্তু সেটা কখনওই প্রকাশ্যে নয় বরং একান্তে, ব্যাক্তিগত ভাবে। 


পৃথিবীতে ৫৬ টি ইসলামিক রাষ্ট্রে হিজাব বা বোরখা পরিধান বাধ্যতামূলক। এরমধ্যে, আফগানিস্তান, ইরান, মৌরিতানিয়া, ব্রুনেই, মালদ্বীপ, সৌদি আরব অন্যতম। শরিয়া আইনে চলা রাষ্ট্রে একজন অমুসলিম মহিলাকেও পাবলিক প্লেসে মাথায় কাপড় দিতেই হয়। নয়তো শরিয়া আইন লংঘনের অভিযোগে শাস্তি দেয়া হয়। বিশেষ করে ইরানে বিষয়টি গর্হিত অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। 


অপরদিকে পৃথিবীর বেশকিছু ইসলামিক রাষ্ট্রে মুসলিম এবং অমুসলিম দেশে বোরখা বা হিজাব নিষিদ্ধ। যেমন, তাজিকিস্তান, সিরিয়া, তিউনিসিয়া (এই দেশের ধর্মনিরপেক্ষ বা Secular সরকার হিজাবকে Fundamentalism আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করেছে। তাদের যুক্তি, Hijab is the tool of Political Islam and Oppression Against Women), কসোভো,আজারবাইজান, মিশর (এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকাব পড়া নিষিদ্ধ। ক্লাস চলাকালীন পুরো মুখ ঢেকে রাখা যাবে না। ২০১৫ সাল থেকে এই আইন বহাল আছে), তুর্কি (মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক পাবলিক প্লেসে যেকোনো ধরনের ধর্মীয় পোশাক পড়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। তা প্রায় ৮০ বছর বহাল ছিলো কিন্তু ২০১৩ সালে এরদোয়ান সেই আইনে পরিবর্তন এনেছেন), কাজাখস্তান, কিরঘিস্তান, মালয়েশিয়া, আলজেরিয়াসহ আরো বেশ কিছু মুসলিম দেশে হিজাব বা বোরকার প্রতি বেশ কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া, অমুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, বুলগেরিয়া, সুইজারল্যান্ড, গ্যাবন,চাদ, কঙ্গো,নেদারল্যান্ডস, চীন, শ্রীলংকা ইত্যাদি দেশ হিজাব বা বোরখা নিষিদ্ধ করেছে,


আসলে, কিছু দেশ পাবলিক প্লেসে হিজাব পড়লে শাস্তি দেয়। আবার কিছু দেশ পাবলিক প্লেসে হিজাব না পড়লে শাস্তি দেয়। ফলে এটি এখনও অত্যন্ত অদ্ভুত এবং বিতর্কিত। 


এই প্রশ্নটা এখন বেশি উঠে আসছে যে, সংবিধান বর্ণিত  ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতে কী হিজাব নিষিদ্ধ হবে? আসলে উত্তরটি জটিল। তবে দেখাযাচ্ছে ভারতে নির্বাচনী হাওয়া এলে এইরকম একটু আধটুক উস্কানি দেখতে হতে পারে। ঠিক যেমন ২০১৯ সালে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই পুলওয়ামার নৃশংশ হত্যাকান্ড। এই কান্ডে আমরা দেখলাম অদ্ভুত এক পরিস্থিতি। একদল উগ্রদেশপ্রেমীরা একপ্রকার মেরে ধরে আমাদের দেশপ্রেম শেখাতে নেমেছিল। যে অথবা যারাই এই হত্যাকান্ড নিয়ে বেশকয়েকটি প্রশ্ন তুলেছিলেন তারাই আক্রান্ত হয়েছিলেন এই স্বঘোষিত দেশপ্রেমী দলের হাতে। ফিরি হিজাব প্রসঙ্গে, ভারতের কেন্দ্রশাসিত সরকার রাজ্য সরকারকে কোনো আইন মানতে বাধ্য করাতে পারে না। তাই একেক রাজ্য একেক পদ্ধতিতে হয় হিজাব বাতিল করবে নয়তো হিজাব পড়ার অনুমতি দিবে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিমকোর্ট।


যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনষ্ক সংগঠনের দাবী- "শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোক প্রতিষ্ঠানিক ধর্ম এবং সমস্তরকম ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানবিহীন, সেখানে বিভিন্ন ধর্মগুরুদের জীবনীপাঠও বন্ধ হোক। ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষার্জন করুক, বৃদ্ধি পাক তাদের জ্ঞানের উন্মেষ, তারা হয়ে উঠুক মুক্তমনা, বিজ্ঞানমনষ্ক এবং মানবতাবাদী"। তাই শিক্ষাপ্রাঙ্গনে হিজাবই হোক কিংবা গেরুয়া গামছা দুটোই পরিধান বন্ধ হোক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় অগ্রাসনের এই রাষ্ট্রীয় চক্রান্তের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলুন। শিক্ষাপ্রাঙ্গনে জয় শ্রীরাম কিংবা আল্লাহ্‌ আকবর দুটো স্লোগানেরই বিরোধীতা করুন। 

হিজাব /বোরখা আমার চয়েস বলে অনেকেই গলা ফাটাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে ওগুলোর কোনটাই কারোর 'চয়েস' নয়। ওগুলো ধর্ম এবং পুরুষতন্ত্রের চাপিয়ে দেওয়া নিয়মকানুন / রীতিনীতি। আমি, সমস্ত প্রতিষ্ঠানিকধর্ম (Religion) মুক্ত একটা সুন্দর শিক্ষাঙ্গন চাই। সম্পূর্ণ ধর্মমুক্ত। আর ধর্ম! সেটা না হয় থাকুক ব্যক্তিগত পরিসরে।


পরিশেষে বলতে চাই, একটা শিশু, সে যেকোনো ধর্মীয় বিশ্বাসী পরিবারেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন সেই শিশুটি জানেই না তার ধর্মবিশ্বাস কি। শিশুটি জানেই না কেন বহুসংখ্যক হিন্দু-মুসলিম দের মধ্যে কেন একটা ঠান্ডা গরম লড়াই চলছে কিংবা ভারত পাকিস্তান কেন ভাগ হলো ইত্যাদি। শিশুটি শুধুই জানে প্রাণখুলে আনন্দ করতে, খেলতে। শিশুর মন একটা মাটির তালের ন্যায়। আমি, আপনি সেই তাল কে যেভাবে গড়তে চাইবো সেভাবেই গড়ে উঠবে। তাই অনুরোধ, ধর্মান্ধ মস্তিষ্কে যুক্তির সন্ত্রাস গড়তে চাইলে, আপনার শিশুটিকে প্রাণখুলে আনন্দ করতে দিন। ওকে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করুন। কোনোরকম ধর্মীয় নিয়মকানুন ইত্যাদি ওর মননে গেঁথে দেবেন না। শিশুটি বড় হলে ওকেই এটা সিদ্ধান্ত নিতে দিন সে, সরকারি কিংবা বে-সরকারি ফর্মের Religion কলামে Hinduism, Islam, Christian, Buddhist, Jainism, Sikhism ইত্যাদি যে ৪২০০ ধরনের Religion রয়েছে তার মধ্যে আদৌ কোনটা বেছে নিতে ইচ্ছুক, নাকি অনেকের মতন জন্মসূত্রে পাওয়া ধর্মীয় পরিচয় ত্যাগ করে Religion কলামে HUMANISM / ATHEISM / NON RELIGIOUS ইত্যাদি কিছু লিখতে চায়। সমস্ত অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ, শৈশবে শিশুদের মননে ছ্যুত অছ্যুৎ, জাতপাত, ধর্মীয় নিয়মকানুন, বিদ্বেষ ইত্যাদি ঢুকিয়ে উগ্রধর্মান্ধ তৈরী হওয়ার দিকে ঠেলে দেবেন না। 


আরেকটা জিনিস মনে রাখবেন, ভারতের সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকদের জন্য আশু কর্তব্য হিসেবে বলা হয়েছে, "It shall duty of every citizen of India to develop the scientific temper humanism and the spirit of inquiry and reform {Article 51A(h)Part iv A}" অর্থাৎ, বিজ্ঞানমনস্কতা, মনুষ্যত্ব এবং অনুসন্ধিৎসা ও সংস্কার সাধনের মানসিকতার বিকাশ ঘটানো। 


অতিরিক্ত সংযোজন : আজ ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২। গতকাল ছিল প্রেমের দিন। ভালোবাসার দিনেও হিজাব নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। হিজাব সংক্রান্ত 'এক্সক্লুসিভ খবর' নিয়ে খবরেরকাগজ গুলো লক্ষকোটি প্রিন্ট খরচ করতে যেমন ব্যস্ত, তেমনই অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোও এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই। বহুর মধ্যে মাত্র ৬ টি খবর (বলতে পারেন টপ সিক্স) প্রিয় পাঠক বন্ধুদের জন্য তুলে ধরলাম। 


খবর ১) হিজাব ছোঁয়ার চেষ্টা করলে হাত কেটে ফেলব, এসপি নেত্রীর মন্তব্যে বিতর্ক তুঙ্গে। ১২/০২/২০২২। আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন পোর্টাল।


উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের মধ্যে হিজাব নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী রুবিনা খানম। অখিলেশের দলের নেত্রীর দাবি, ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম অঙ্গ মেয়েদের ঘোমটা এবং হিজাব। কিন্তু তা নিয়ে যে ভাবে রাজনৈতিকীকরণ করা হচ্ছে, তা ঘৃণ্য। এর পরই এসপি নেত্রীর হুঙ্কার, ‘‘যে হাত হিজাব ছোঁয়ার চেষ্টা করবে, সে হাত কেটে ফেলা হবে।’’

খবর ২) ‘শরিয়ত নয়, সংবিধান অনুযায়ী চলবে ভারত”, হিজাব বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন যোগী আদিত্যনাথ।

১২/০২/২০২। বাংলা Hunt অনলাইন পোর্টাল।


কর্ণাটকে হিজাব বিতর্কের আলোচনা পুরোদমে। এদিকে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে হিজাব বিতর্কে বলেছেন যে, দেশ শরিয়ত নয়, সংবিধান দিয়ে চলবে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, দেশের ব্যবস্থা চলবে সংবিধান দিয়ে, শরিয়ত দিয়ে নয়। প্রতিটি সংস্থার নিজস্ব ড্রেস কোড প্রণয়নের অধিকার রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা চলবে।


খবর ৩) হিজাব বিতর্কের আগুন এবার পশ্চিমবঙ্গে, মুর্শিদাবাদে তালাবন্দি শিক্ষকরা। ১২/০২/২০২২। বাংলা Hunt অনলাইন পোর্টাল।


হিজাব বিতর্কের গনগনে আগুনে পুড়ছে গোটা দেশ। এবার সেই উত্তাপের আঁচ এসে লাগল বাংলাতেও। স্কুল ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকরা। আটকে রাখা হল শিক্ষকদেরও। কর্ণাটকের হিজাব বিতর্কের উত্তাপে কার্যতই অগ্নিগর্ভ মুর্শিদাবাদের সুতি।অভিযোগ, ছাত্রীদের স্কুলে কালো ওড়না পরে আসতে নিষেধ করেন সুতির বহুতালি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এই ঘটনা জানাজানি হতেই স্কুলে পৌঁছন পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। কথা বলতে চাওয়া হয় প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে। কিন্তু ততক্ষণে দাবানলের মতন বাড়তে শুরু করেছে উত্তেজনা। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরে কয়েক মুহুর্তেই। স্কুল চত্ত্বরে এসে জড়ো হয় স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকদের তালা দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয় একটি ঘরে। চলে অবস্থান এবং বিক্ষোভও। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। শেষ অবধি বহুক্ষণের চেষ্টায় উদ্ধার করা হয় আটক শিক্ষকদের।


খবর ৪) ‘হিজাব পরা মহিলাই একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন’, চ্যালেঞ্জ ওয়েইসির।

১৩/০২/২০২২। সংবাদ প্রতিদিন অনলাইন পোর্টাল।  


হিজাব বিতর্কে (Hijab Row) নয়া মাত্রা যোগ করলেন AIMIM প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েইসি। তাঁর কথায়, ভবিষ্যতে হিজাব পরিহিতা মহিলাই হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এহেন মন্তব্য ঘিরেই নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের হিজাব পরা উচিত নাকি অনুচিত, সেই বিতর্কের জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এর মাঝেই উত্তরপ্রদেশের ভোটপ্রচারে হিজাব বিতর্ক টেনে আনলেন ওয়েইসি (AIMIM chief Asaduddin Owaisi)। এই ইস্যুতে বিজেপিকে তুলোধোনার পাশাপাশি মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়েও মুখ খুললেন তিনি।


খবর ৫) হিজাব না পরার জন্যই ভারতে ধর্ষণ সবচেয়ে বেশি, কংগ্রেস বিধায়কের মন্তব্যে বিতর্কের ঝড়।

১৪/০২/২০২২। সংবাদ প্রতিদিন অনলাইন পোর্টাল। 


কর্ণাটকের হিজাব বিতর্কে (Hijab Row) পক্ষে-বিপক্ষে উত্তপ্ত বাক্যবাণ অব্যাহত। গতকাল AIMIM প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েইসি (Asaduddin Owaisi) বলেন, হিজাব পরা মহিলাই একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। আজ কর্নাটকের কংগ্রেস (Congress) বিধায়ক জমির আহমেদ (Zameer Ahmed) বিতর্ক আরও বাড়ালেন। বললেন, মহিলারা হিজাব পরেন না বলেই ভারতে ধর্ষণের হার সবচেয়ে বেশি। কংগ্রেসের বিধায়কের মন্তব্যে নিন্দার ঝড় উঠেছে নেট দুনিয়ায়।

রবিবার সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জমির আহমেদ বলেন,” ইসলাম ধর্মে হিজাব হল এক ধরনের পর্দা। একটা বয়সের পর মেয়েদের সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখতে হিজাব ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আজ ভারতে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকে। এর কারণ কী? এই জন্যই যেহেতু অনেক মহিলাই হিজাব পরেন না।” জমির আরও বলেন, হিজাব কখনই বাধ্যতামূলক নয়, তবে যাঁরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে চান, নিজের সৌন্দর্যকে সকলের সামনে প্রকাশ করতে চান না, তাঁরাই হিজাব পরেন। জমির দাবি করেন, “হিজাব পরার ব্যাপারটা নতুন না, বহুকাল ধরে এই রীতি প্রচলিত।”

খবর ৬) মেয়েটার নাম আরুশা পারভেজ (Aroosa Parvaiz) সমগ্র কাশ্মীরে ক্লাস ১২ এ প্রথম স্থানাধিকারী। সে ৪৯৯ নং পেয়েছে ৫০০ এর মধ্যে।কিন্তু তাঁর এই বিশাল সাফল্য তাঁকে অপমান, কটুক্তি, হুমকি থেকে বাঁচাতে পারেনি। কারন, কট্টরপন্থীরা একপ্রকার মেয়েটির হত্যার ফতোয়া জারি করেছে। কারন, মেয়েটার মাথায় হিজাব নেই। এটাই তার মস্তবড় অপরাধ। 

অবশ্য এই প্রতিভাবান মেয়েটি ভয়ে আতঙ্কে সিঁটিয়ে থাকেনি। কট্টরপন্থীদের যোগ্য জবাব সে দিয়েছে। আরুশার জানিয়েছে -"I don't need to wear hijab to prove a good muslim.These comments do not matter to me, but my parents are undergoing a trauma.My religion, my hijab and my Allah are my personal issues. What I should wear or not should not bother people if they believe in the greatness of my religion." অর্থাৎ, আরুশা জানিয়েছে, সে হিজাব পরবে কি পরবে না সেটা একান্তই তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। তাকে কেউ বাধ্য করতে পারে না।  

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929