খাদ্যে ভেজাল: সচেতন হোন, প্রতিরোধ করুন

অর্ণব


Nov. 19, 2024 | | views :880 | like:0 | share: 0 | comments :0

বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল এক ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। সর্ষের তেল থেকে শুরু করে ফল-মূল, শাকসবজি, সবেতেই ভেজালের রমরমা। বস্তুত ভেজাল এক আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়, পাশ্চাত্য হোক বা প্রাচ্য, প্রথম বিশ্ব হোক বা তৃতীয় বিশ্ব, সর্বত্র তার বিচরণ। তবে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে জনসচেতনতা কম সেখানে খাদ্যে ভেজাল ধরা ও আটকানো এক কঠিন কাজ। যদিও এ ব্যাপারে দেশে আইনকানুনের কমতি নেই। ভারতবর্ষে প্রাথমিকভাবে ১৯৫৪ সালের খাদ্যে ভেজাল নিরোধক আইন (Prevention of Food Adulteration Act, 1954) দিয়ে ভেজালের মোকাবিলা করা হয়। এই আইন অনুযায়ি কোনও  খাদ্যবস্তুতে ভেজাল আছে বলা যায় তখনই যখন-


খাদ্যবস্তুটি যে গুণমানের বলে দাবি করা হচ্ছে সেই গুণমানের না হয়। খাদ্যবস্তুটির কোনও উপাদান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়।

খাদ্যবস্তুটি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক কোনও পাত্রে রাখা থাকে। খাদ্যবস্তুটিতে নিজস্ব উপাদানের বদলে নিম্নমানের বা সস্তার উপাদান মেশানো থাকে। খাদ্যবস্তুটিতে কোনও বিষাক্ত উপাদান থাকে। খাদ্যে আংশিকভাবে বা পুরোপুরিভাবে কোনও নোংরা, পচা, রোগযুক্ত প্রাণীজ বা উদ্ভিজ্জ উপাদান থাকে। ফলে খাদ্যবস্তুটি খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। খাদ্যবস্তুটিতে অনুমোদিত নয় এমন রঙ মেশানো থাকে। খাদ্যবস্তুটির শুদ্ধতা নির্দিষ্ট মানের নীচে থাকে। খাদ্যবস্তুটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হয় বা রাখা হয়। যার ফলে সেটি থেকে রোগ সংক্রমণের সম্ভবনা থাকে ইত্যাদি।


কৃত্তিম খাদ্য রঙের রমরমা কারবার খাবারে রঙ মেশানোর প্রথা আজকের নয়। এই প্রথার শুরু হয়েছিল সেই ব্যাবিলনীয় সভ্যতার সময় থেকেই। তবে আগেরকার দিনে খাবারে শুধুই প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করা হত। ১৮৫৬ সালে প্রথম কৃত্রিম খাদ্য রঙ আবিষ্কৃত হয়। বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে সারা পৃথিবীতে খাদ্য ব্যবসায়ীরা ব্যাপক হারে কৃত্তিম রঙের ব্যবহার শুরু করেন। এর উদ্দেশ্যে ছিল ক্রেতাদের মন জয় করা।


বাজারে বা দোকানে ক্রেতারা খোঁজেন লাল টকটকে টমেটো, ঝকঝকে সবুজ শাকসবজি, লাল দই, রঙীন মিষ্টি, চকচকে মুগ বা মুসুরির ডাল। এখানেই ক্রেতাদের অসচেতনতার সুযোগ নেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। আর কৃত্রিম রঙ মেশানো খাবার খেয়ে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়েন হাজার হাজার মানুষ।


সাধারণভাবে বাড়িতে তৈরি খাবারদাবারে যে সব রঙ ব্যবহার করা হয় সেগুলো হল নিরাপদ প্রাকৃতিক রঙ। সেগুলো নিয়ে অত চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। বাড়িতে মূলত মশলাপাতি দিয়ে খাবারে রঙ আনা হয়। যেমন হলুদ দিয়ে হলদে রঙ, লংকা দিয়ে লাল রঙ। মশলা বিশুদ্ধ হলে এতে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, বরং উপকার আছে। তাই বাড়ির রান্নায় ব্যবহৃত মশলাপাতি বিশুদ্ধ কিনা, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করে নিতে হবে।


বাড়িতে রান্নার সময় খাবারে রঙ আনার আরেকটা উদাহরণ দিই। মাংস রান্নার সময় অনেকে আগে তেলে কিছুটা চিনি ভেজে নেন। এই চিনিটাকে একটু লালচে করে ভেজে নেওয়া হয়। তাতে ঝোলের রঙটা দেখতে আকর্ষণীয় হয়। বাড়ির রান্নাবান্নায় কৃত্রিম রঙ দেওয়ার চল নেই বললেই চলে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অজান্তে কৃত্রিম রঙের পরোক্ষ ব্যবহার হয়ে যেতেই পারে। যেমন, বাজার থেকে কিনে আনা তৈরি খাবার আজকাল আমরা অনেকেই দেদার খাই। সেগুলোতে প্রায়শই কৃত্রিম রঙ প্রচুর পরিমানে মেশানো থাকে। আবার বাজার থেকে কেনা কাঁচা শাকসবজি, মশলাপাতি এবং অন্যান্য খাদ্যবস্তুতেও কৃত্রিম রঙের ব্যবহার থাকতে পারে। সেগুলার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।


অনুমোদিত খাদ্য রঙ

আমাদের দেশে ১৯৫৪ সালে খাদ্যে ভেজাল নিরোধক আইন তৈরি হওয়ার পর থেকে সরকার খাদ্যে কয়েকটি রাসায়নিক রঙ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। আইন অনুযায়ী খাবারের রঙ নিয়ে পরিষ্কার গাইড লাইনও দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রধান দুটো বিচার্য বিষয় হলো:

১) খাবারে যে কৃত্তিম রঙ মেশানো হচ্ছে সেটা অনুমোদিত খাদ্য রঙ কিনা এবং

২) অনুমোদিত রঙ হলে সেটা নির্ধারিত মাত্রায় মেশানো হচ্ছে কিনা


খাদ্যে ভেজাল নিরোধক আইন কতোটা রক্ষিত হচ্ছে সেটা দেখার দায়িত্ব মূলত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, মিউনিসিপ্যালিটি বা কর্পোরেশন সবাই মিলেই এই ব্যাপারটা পরিদর্শন করে। এজন্য সরকারের নানান কমিটি আছে। দরকার মতো সেই সব কমিটি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা রাসায়নিক পরীক্ষা করিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় খাবারে কোন রঙ কতোটা ব্যবহার করা ঠিক, আর কতোটা ঠিক নয়।


বর্তমানে আমাদের দেশে বেশ কিছু রাসায়নিক রঙকে খাবারে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া আছে। এগুলোর মধ্যে আছে লালের জন্য পনকিউ ফোর আর (Ponceau-4 R), কারমোসিন (Carmosine) এবং এরিথ্রোসিন (Erythrosine)। হলুদের জন্য টারট্রাজাইন (Tartrazine) ও সানসেট ইয়েলো (Sunset Yellow)। নীলের জন্য ইনডিগো কারমাইন (Indigo Carmine), ব্রিলিয়ান্ট ব্লু এফ.সি.এফ. (Brilliant Blue FCF)। এছাড়া আছে সবুজের জন্য ফাস্ট গ্রিন এফ.সি.এফ. (Fast Green FCF)।


চাই ক্রেতাদের সচেতনতা

আইন অনুযায়ী খাদ্য বিক্রেতাদের কেবল অনুমোদিত খাদ্য রঙ ব্যবহার করলেই চলবে না, সেটাও করতে হবে নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমার মধ্যে। যেমন মনে করুন, আইসক্রিম, বিস্কুট, পেস্ট্রি, কোল্ড ড্রিংক্স, ইত্যাদিতে কৃত্তিম রঙ ব্যবহার করা যেতে পারে প্রতি ১০ গ্রামে সর্বোচ্চ ১ মিলি গ্রাম। আবার মনে করুন, ফ্রুট সিরাপ, স্কোয়াশ, জ্যাম ও জেলি জাতীয় খাবারে প্রতি ১০ গ্রামে সর্বোচ্চ ২ মিলিগ্রাম রঙ দেওয়া যেতে পারে। এই সব খাদ্যবস্তুতে অনুমোদিত মাত্রার থেকে বেশি রঙ মেশানো ভেজালেরই সমার্থক। এর ফলে খাবার থেকে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভবনা থাকে।


অনুমোদিত খাদ্য রঙের বাইরে অন্য যে কোনও রাসায়নিক রঙ খাবারে ব্যবহার করা শুধু আইনবিরুদ্ধই নয়, স্বাস্থ্যের পক্ষে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। ক্রেতাদের কর্তব্য হল বাজার থেকে খাবার কেনার সময় খাবারের প্যাকেটটা খুঁটিয়ে দেখা। সাধারণত প্যাকেটের লেবেলে ব্যবহৃত খাদ্য রঙ সম্পর্কে উল্লেখ করা থাকে। এটা নিয়মের মধ্যেই পড়ে।


এছাড়া মিষ্টির দোকানে বা হোটেল-রেস্তোঁরায় খেতে গিয়ে যদি কারো রঙের ক্ষেত্রে সন্দেহজনক কিছু মনে হয়, দোকানদার বা পরিবেশকের কাছে তাদের খাবারে ব্যবহৃত রঙ সম্পর্কে জানতে চাওয়াটা ক্রেতার অধিকারের মধ্যেই পড়ে। ১৯৮৬ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইনে ক্রেতাদের এই অধিকার দেওয়া হয়েছে।


এখানে আরও একটা কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সরকারী ভাবে অনুমোদিত কৃত্তিম খাদ্য রঙগুলোও কিন্তু রাসায়নিক খাদ্য রঙ। দীর্ঘদিন ধরে এধরনের রাসায়নিক রঙ মেশানো খাবার বেশি বেশি খেলে শারীরিক ক্ষতির সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই সবচেয়ে ভালো হল, রাসায়নিক রঙ মেশানো খাবার যথাসম্ভব না খাওয়া, কেবলমাত্র প্রাকৃতিক খাদ্যরঙ যুক্ত খাবারই গ্রহণ করা।


খাদ্যবস্তুতে বিষের বিপদ

সুগন্ধ আনতে কিংবা পচন রোধ করতে কিংবা উৎপাদন বাড়াতে বাজারি খাবারদাবারে প্রায়শই নানান বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়, যেগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে রীতিমতো বিপজ্জনক। কয়েকটা উদাহরণ দিতে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।

➤জ্যাম, জেলি, মাখন, চিজ, ইত্যাদিতে জীবাণু বৃদ্ধি ঠেকানোর জন্য বহু ক্ষেত্রে বেঞ্জোয়েট জাতীয় যৌগ ব্যবহার করা হয়। এ থেকে মাথা ও বুক ব্যাথা এবং ঘাড়ের যন্ত্রণা হতে পারে।

➤পচন রোধের উদ্দেশ্যে অনেকসময় বাজারের কাঁচা মাংসে সোডিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করা হয়। এ থেকে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, এমনকি পাকস্থলীর ক্যান্সারও হতে পারে।

➤কাটা ফল ও সবজিকে দীর্ঘসময় তাজা দেখানোর জন্য অনেক সময় সালফেট ও সালফাইড জাতীয় যৌগ ব্যবহার করা হয়। এ থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।

➤আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয়, স্কোয়াশ, চকোলেট, ইত্যাদি মিষ্টি জাতীয় খাবারে প্রায়শই স্যাকারিন ও অ্যাসপারটেম ব্যবহার করা হয়। এগুলো স্বাস্থ্যের পক্ষে দারুণ ক্ষতিকারক।

➤বাজারে প্রতিদিন যে টন টন ছানা আসছে মিষ্টি তৈরির জন্য, বহু ক্ষেত্রেই তা সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে কাটানো দুধ থেকে তৈরি করা। এই অ্যাসিড দিয়ে কাটানো দুধের ছানা বেশি সময় টাইট থাকে। মিষ্টির মাধ্যমে সালফিউরিক অ্যাসিড যুক্ত ছানা চলে যাচ্ছে খাদ্যরসিক ক্রেতাদের পেটে।


সরষের তেলে শিয়ালকাঁটার তেল ভেজাল দেওয়ার কাহিনী বেশ পুরোনো। এছাড়াও সর্ষের তেলে পেট্রোলিয়াম জাত খনিজ তেল ট্রাইক্রিসাইল ফসফেট ভেজাল দেওয়ার ঘটনা বহুবার শোনা গেছে। ১৯৮৮ সালে কলকাতার বেহালা অঞ্চলে যে ভেজাল সর্ষের তেল খেয়ে বহু মানুষ পঙ্গু হয়ে গেছিলেন তাতে ট্রাইক্রিসাইল ফসফেট ভেজাল দেওয়া হয়েছিল।


নিষিদ্ধ রঙ হইতে সাবধান

বাজারে অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ঠকাতে ছোলার ডাল, মুগ ও মুসুর ডাল, গুঁড়ো বা গোটা হলুদ, মিষ্টি ইত্যাদিতে মেটানিল ইয়েলো রঙ মিশিয়ে বিক্রি করে। আবার শুকনা লংকা, রাঙা আলু, জ্যাম, জেলি, সস, লজেন্স, চকোলেট, আইসক্রিম ইত্যাদিতে লাল রঙ আনতে অনেকে নিষিদ্ধ কঙ্গো রেড রঙ ব্যবহার করে। এইসব রঙের বিষক্রিয়ায় মস্তিষ্ক, মূত্রাশয় ও চোখে ক্ষত তৈরি হতে পারে।


খাদ্যবস্তুতে উজ্জ্বল লাল রঙ আনতে আরেকটি নিষিদ্ধ রঙের ব্যবহারও বাজারে চালু আছে। তার নাম রোডামাইন বি। রোডামাইন বি-এর কারণে মূত্রাশয়, যকৃত ও প্লীহাতে ক্ষত তৈরি হতে পারে। এমনকি ক্যানসার হওয়ারও সম্ভবনাও থাকে।


অবৈধ রঙের কারবার থেকে আমাদের চিরপরিচিত মুড়িও আর মুক্ত নয়। আজকাল মুড়ি ধবধবে সাদা এবং আকারে বড় করার জন্য বহু উৎপাদক দেদার ইউরিয়া মেশাচ্ছে। এমনিতে ইউরিয়া প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মুড়ির সাথে বেশি মাত্রায় ইউরিয়া শরীরে গেলে নানা অসুবিধে তৈরি হতে পারে। কিডনির সমস্যা হতে পারে।


সবুজ শাকসবজি, যথা, পটল, ঢেঁড়শ, উচ্ছে, বিনস,মটরশুঁটি ইত্যাদিকে তরতাজা দেখাতে অনেক সময় অসাধু বিক্রেতারা নিষিদ্ধ ম্যালাকাইট গ্রিন রঙ ব্যবহার করে। এই রঙ-এর জন্য মূত্রাশয়, কিডনি, যকৃত ও প্লীহাতে বিভিন্ন রোগ, বিশেষ করে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


সবজিতে নিষিদ্ধ ম্যালাকাইট গ্রিন রঙ দেওয়া হয়েছে কিনা তা বোঝার একটা সহজ উপায় আছে। খানিকটা তুলো তরল প্যারাফিন বা নারকেল তেলে ভিজিয়ে তা দিয়ে সবজির খোসা কয়েকবার ঘষুন। যদি তুলোটা সবুজাভ হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন সবজিতে নিষিদ্ধ রঙ ব্যবহার করা হয়েছে।


এবারে চায়ের কথায় আসি। একটা ভেজা সাদা কাগজের ওপর বাজার থেকে কিনে আনা চা পাতা ছড়িয়ে দিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাগজের ওপর লালচে ছোপ ফুটে উঠলে বুঝবেন আপনার চায়ে ভেজাল আছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা চা পাতায় প্রায়ই কোলটার ডাই মিশিয়ে থাকে। এটাও শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।

ঠান্ডা জলে চা পাতা দিলে সাধারণত কোনও রঙ বেরোনোর কথা নয়। যদি বেরোয়, তাহলে আপনি সন্দেহ করতেই পারেন যে সেই চা পাতায় রঙ মেশানো আছে। এটা চা পাতা ভালো কি মন্দ, বোঝার একটা সহজ উপায়।


খাদ্যে নিষিদ্ধ রঙ ধরার কিছু সহজ পরীক্ষা

1. বাজারের শাকসবজি তরতাজা দেখানোর জন্য অনেকসময় বিক্রেতারা ম্যালাকাইটগ্রিন নামের নিষিদ্ধ রঙ ব্যবহার করে। এই রঙ ধরার সহজ উপায় হলো খানিকটা তুলো তরল প্যারাফিনে ভিজিয়ে তা দিয়ে সবজির খোসা ঘষতে হবে। যদি তুলোটা সবুজাভ হয়ে যায়, তাহলে বোঝা যাবে সবজিতে নিষিদ্ধ রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সবজির বোঁটার দিকটা লক্ষ্য করেও নিষিদ্ধ রঙের উপস্থিতি ধরা যায়। সাধারণভাবে সবজির বোঁটা হওয়া উচিত হালকা সবুজ বা ধূসর বর্ণের। কিন্তু রঙে চোবানো সবজির বোঁটাও হবে ঘন সবুজ। বাজার থেকে এধরনের সবজি কেনা উচিত নয়।


2. মিষ্টি, শুকনা লংকা, রাঙা আলু, জ্যাম, জেলি, সস, লজেন্স, চকোলেট, ইত্যাদিতে নিষিদ্ধ লাল রঙ কঙ্গো রেড ব্যবহার করা হয়েছে কিনা ধরার জন্য কাজে লাগাতে হবে মিউরিয়েটিক অ্যাসিড। সন্দেহজনক খাদ্যবস্তু জলে গুলে তার মধ্যে মিউরিয়েটিক অ্যাসিড যোগ করুন। কঙ্গো রেড থাকলে জলীয় দ্রবণের রঙ লাল থেকে নীল হয়ে যাবে। 


3. মাছের কানকোতেও নিষিদ্ধ কঙ্গো রেড রঙ ব্যবহার করার রীতি আছে। দেখে মনে হয় যেন রক্ত। সত্যিকারের রক্ত হলে বার বার জল দিয়ে ধুলে চলে যায়। কিন্তু কঙ্গো রেড হলে বারবার ধোয়ার পরেও লাল রঙ থেকে যায়।


4. সিরাপ, জ্যাম, জেলি, সস, করমচা, আইসক্রিম, লজেন্স, শুকনো লংকা বা রাঙা আলুতে লাল রঙ আনতে আরেকটা নিষিদ্ধ রঙের ব্যবহার চালু আছে যার নাম রোডামাইন বি। এই রঙ ধরার জন্য আগের মতো প্যারাফিন বা নারকেল তেলে তুলো ভিজিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন। তুলো লালাভ বর্ণ ধারণ করলে বুঝবেন খাদ্যে নিষিদ্ধ রোডামাইন বি রঙ আছে।


5. মুড়িতে ইউরিয়া আছে কিনা সেটাও আপনি ঘরোয়া রাসায়নিক পরীক্ষার সাহায্যে সহজেই ধরতে পারেন। খানিকটা মুড়ি নিয়ে অল্প জলে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ছেঁকে জলটা সংগ্রহ করে তাতে কয়েক ফোঁটা ফিনলপথ্যালিন মেশান। জলীয় দ্রবণটা হালকা গোলাপী বর্ণ ধারণ করলে বুঝবেন মুড়িতে ইউরিয়া আছে। ফিনলপথ্যালিন না পেলে লাল লিটমাস পেপার দিয়েও এই পরীক্ষা করা যাবে। লাল লিটমাস ওই দ্রবণে ডোবালে যদি নীলাভ রঙ নেয়, তাহলে বুঝবেন আপনার মুড়িতে ইউরিয়া আছে।


6. খাদ্যে সুগন্ধ আনতে আমরা অনেকসময় যে হিং ব্যবহার করি তাতে ভেজাল হিসেবে গদ, রেজিন, এমনকি নিষিদ্ধ রঙও মেশানো হয়। হিং খাঁটি হলে একে জলে গুললে দুধের মতা সাদা মিশ্রণ তৈরি হবে। তাছাড়া খাঁটি হিং আগুনে দিলে উজ্জ্বল শিখায় জ্বলতে থাকে। এই দুটো ক্ষেত্রেই অন্যরকম কিছু ঘটলে বুঝবেন আপনার হিং-এ গন্ডোগোল আছে। ওই হিং খাবারে ব্যবহার করা নিরাপদ নাও হতে পারে।


দুধের ভেজাল ধরবেন কীভাবে?

আমাদের খাদ্য তালিকায় দুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেহের প্রায় সব প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানই দুধের মধ্যে রয়েছে। তাই দুধকে বলা হয় সুষম খাদ্য। দুধ থেকে প্রচুর পরিমানে দুগ্ধজাত খাদ্য তৈরি হয়। যেমন, পনির, ছানা, রসগোল্লা, সন্দেশসহ বহু ধরনের মিষ্টি, আইসক্রিম ইত্যাদি।


ইদানিং খোলা বাজারে এমন অনেক গুঁড়ো দুধ, প্যাকেটজাত দুধ, পনির, ছানা, খোয়া ক্ষীর বিক্রি হচ্ছে যেগুলোর FSSAI এর ছাড়পত্র নেই। এগুলোর অধিকাংশই নিম্নমানের। অবশ্য FSSAI ছাড়পত্র থাকলেই যে সেই দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্য ভেজাল মুক্ত হবে চোখ বুঁজে এমন ধরে নেওয়ারও কোনও কারণ নেই।

বাজারে ভেজাল দুধ তৈরি করতে জলের সঙ্গে মেশানো হয় সাদা রঙের সস্তা ভোজ্য তেল, চিনি, ইউরিয়া, ডিটারজেন্ট পাউডার, ইত্যাদি। আসুন আজ আমরা জেনে নিই, দুধের নানা ভেজাল কীভাবে হাতে কলমে পরীক্ষা করে সহজেই ধরে ফেলা যায়।


দুধে ইউরিয়া

এক কাপ দুধে ১ চামচ অড়হর ডালের গুঁড়ো মিশিয়ে কয়েক মিনিট রাখুন। এরপর তাতে লাল লিটমাস ডোবালে যদি রঙ নীলচে হয়ে যায় তবে বুঝবেন দুধে ইউরিয়া আছে।


দুধে চিনি

ভেজাল দুধে মিষ্টত্ব আনতে চিনি বা বাতাসা মেশানো হয়। ১০০ মিলি দুধে ৪০ মিলি ঘন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড সহ ১ গ্রাম রিসরসিনল মিশিয়ে গরম করুন। দ্রবণটির রঙ যদি লাল হয়ে যায় তাহলে বুঝবেন দুধে চিনি বা বাতাসা মেশানো হয়েছে।


দুধে নিষিদ্ধ রঙ

ভেজাল দুধে হলুদ রঙ আনতে অনেক সময় নিষিদ্ধ মেটানিল ইয়েলো রাসায়নিকটি মেশানো হয়। বিশেষ করে মোষের দুধে জল মিশিয়ে মেটানিল ইয়েলো প্রয়োগে হলদেটে ভাব তৈরি করে গরুর দুধ বলে বেচে দেওয়া হয়। শুধু দুধে নয়, দুগ্ধজাত খাদ্য, যেমন, রসগোল্লা, ছানা, সন্দেশ, বরফি বা খোয়াতেও প্রায়শই মেটানিল ইয়েলো মেশানো হয়।

এ ধরনের দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড যোগ করলে তার রঙ বদলে লালচে-বেগুনী হয়ে যাবে। মেটানিল ইয়েলো না থাকলে দুধের স্বাভাবিক রঙ বজায় থাকবে।


বিপদের নাম আজিনামোটো

আজিনামোটো এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যার বৈজ্ঞানিক নাম মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট। এটা হলো এক প্রকার গন্ধ-বর্ধক বা ফ্লেভার এনহ্যান্সার। অর্থাৎ, এর নিজের কোনও গন্ধ নেই কিন্তু এটা অন্য গন্ধকে বাড়াতে সাহায্য করে। চাইনিজ ও জাপানিজ খাবারে আজিনামোটো বেশি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আজিনামোটো যুক্ত খাবার নিয়মিত বেশি পরিমানে খেলে পরিপাকের নানা সমস্যা দেখা দেয়। আজিনামোটোর কারণে ‘চাইনিজ রেস্তোরা সিনড্রোম’ নামের এক রকম রোগ হয়। যার ফলে প্রথম প্রথম গা-হাত-পা-ঘাড়ে ব্যথা হয়। পরের দিকে গায়ের চামড়া ঝুলে যায়। অল্প বয়েসেই বৃদ্ধদের মতো দেখতে লাগে।


আজিনামোটো যুক্ত খাবার সকলেরই পরিহার করা উচিত। বিশেষ করে, শিশুদের খাবারে আজিনামোটো দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়। সন্তান সম্ভবা মহিলাদেরও আজিনামোটো এড়িয়ে চলা ভালো। আজিনামোটো মস্তিষ্কের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। ফলে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। আজিনামোটো তো বটেই, বাজারে চালু নুডলস মশলাও আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত।


পরিচিত খাদ্যের প্রচলিত ভেজাল

ঘি-র ভেজাল

বনস্পতি বা ডালডায় কৃত্তিম গন্ধ যুক্ত করে 'ঘি' নামে বিক্রি করার গল্প খুবই পুরোনো। এধরনের নানান ভেজাল 'ঘি' দেশের বহু 'কারখানায়' প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি তৈরি হচ্ছে। এই সব তথাকথিত 'ঘি' শুধু যে নিম্নমানের তাই নয়, এগুলো রীতিমতো বিপজ্জনক অর্থাৎ এগুলো খেলে যেকোনও  লোক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। সৌভাগ্যক্রমে এমন কিছু সহজ পরীক্ষা আছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি বাজারি ঘি-র কয়েক রকম চালু ভেজাল ধরতে পারেন।


বাড়িতে একটা টেস্টটিউব জোগাড় করে কিছুটা ঘি (বা মাখন) নিন। তাতে ১ চামচ ঘন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) অ্যাসিড ও সামান্য চিনি যোগ করে মিশ্রণটাকে সামান্য গরম করে ঝাঁকান। কিছু সময় পরে মিশ্রণের নীচের স্তর গাঢ় খয়েরি রঙ ধারণ করলে বুঝবেন আপনার ঘি-র নমুনায় ডালডা বা বনস্পতি মেশানো আছে।

ঘি গলিয়ে তার মধ্যে একটুখানি টিংচার আয়োডিন যোগ করুন। মিশ্রণটা নীলবর্ণ ধারণ করলে বুঝবেন ঐ ঘি-তে আলুসেদ্ধ মেশানো আছে।


ডাল ও জিরেতে ভেজাল

নকল ডাল ও জিরের কারবার বর্তমানে রমরম করে চলছে। এক্ষেত্রে প্রথমে মাটির সঙ্গে সিমেন্ট মিশিয়ে বড়ো বড়ো তাল তৈরি করা হয়। সেগুলোকে রোদে খানিকটা শুকিয়ে নিয়ে লোহার জালে ঘষা হয়। জালের ছিদ্র বিভিন্ন আকারের হয়। এই পদ্ধতিতে তৈরি হয় নকল মুসুর ডাল বা কালো জিরের দানা। সব শেষে সেগুলো সোনালি মেটানিল ইয়েলো রঙে ডুবিয়ে দিলেই হয়ে যায় মুসুরি ডাল। কিংবা পোড়া মোবিল মাখিয়ে তৈরি হয় কালো জিরে। সস্তায় ঐ নকল ডাল বা জিরে কিনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ি ভালো ডাল বা জিরের সাথে পাইল দিয়ে বিক্রি করে বিভিন্ন বাজারে। দেশের বহু জায়গায় এভাবেই ভেজাল চক্রের ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে।


আলুতে রঙ

আলু বর্তমানে আমাদের সার্বজনীন খাবার। প্রায় সব রান্নাতেই আমাদের আলু চাই। আলু দিয়ে যে কতরকম স্পেশাল আইটেম হয় তা বলে শেষ করা যাবে না। আলুর দম, আলু-চানা, আলু পোস্ত, আলু-মটর, আলু-কাবলি, আলু চোখা, আলু ভাজি, আরো কতো কি। দুঃখের বিষয় সেই আলুতেও মেশানো হচ্ছে নানান ভেজাল। আলুতে ইটের গুঁড়ো, এলা মাটি সহ নানান লাল ও হলুদ রঙ মেশানো এখন বলতে গেলে ওপেন সিক্রেট। এই সব ভেজাল ও রঙ যুক্ত আলু খেলে অ্যালার্জি তো হতে পারেই, উপরন্তু হতে পারে কিডনি ও পেটের রোগ সহ নানা ধরনের রোগ।


চকচকে সবজি ও ফলে রঙ

বাজারের চকচকে বেগুন মানেই যে টাটকা ভালো বেগুন তা নাও হতে পারে। পোড়া মোবিল মাখিয়ে যে ঐ বেগুনকে চকচকে করা হয়নি তা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাবে না। ইদানিং আপেল ও অন্যান্য ফলে এক ধরনের রঙ পালিশ করে চকচকে করা হচ্ছে। এই রঙ শরীরের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক। পটল, করলা ও অন্যান্য সবজিও তুঁতের জলে রঙ করা হয় উজ্জ্বল সবুজ রাখার জন্য।


নকল আমলকি ও চেরি

ট্রেনে, বাসে আমলকির প্যাকেট আজকাল দেদার বিক্রি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এইসব আমলকির কুচির রঙ হয় কুচকুচে কালো। কাঁচা আমলকি রোদে শুকালে তার রঙ এতোটা কালো হওয়ার কোনও কারণ নেই। আসলে অনেক সময়ই ডুমুরকে ফালি করে কেটে বীটলবণ ও সাইট্রিক অ্যাসিডে ভিজিয়ে রেখে, পরে শুকিয়ে আমলকি বলে বিক্রি করা হয়।

আবার বাজারে যে লাল টকটকে চেরির প্যাকেট বিক্রি হয় তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো আদৌ চেরিফল নয়। আসলে কাঁচা করমচা চিনির রস ও কৃত্তিম লাল রঙ রডোমিন-বি এর দ্রবণে চুবিয়ে রেখে চেরি বলে বিক্রি করা হয়।


খাবারে প্রিজারভেটিভ

খাদ্যবস্তুর শেল্ফ লাইফ বাড়ানোর জন্য তাতে যেসব পদার্থ মেশানো হয়, তাদের বলা হয় ফুড প্রিজারভেটিভ। এই ফুড প্রিজারভেটিভদের আবার দুটো শ্রেণী আছে। ক্লাস ওয়ান এবং ক্লাস টু। ক্লাস ওয়ান প্রিজারভেটিভের মধ্যে পড়ে সাধারণ চিনি, লবণ, গ্লুকোজ, ইত্যাদি। ক্লাস টু প্রিজারভেটিভের উদাহরণ, নানান রাসায়নিক পদার্থ, যেমন, সালফার ডাইঅক্সাইড, সোডিয়াম বেনজোয়েট, সোডিয়াম মেটাসালফাইড, পটাসিয়াম নাইট্রেট, ইত্যাদি।


বিভিন্ন খাদ্য বস্তুর মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য বাজারে শত শত প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়। এর অনেকগুলোই প্যাকড ফুড বা টিনজাত খাবারে ব্যবহার করা হয়। বহু ক্ষেত্রেই এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়, বরং বেশ ক্ষতিকারক।

এমন একটা ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ হলো সোডিয়াম বেনজোয়েট। এটা ফলের রস, আচার, জ্যাম, এমনকি ওয়াইন ও বিয়ারেও ব্যবহার করা হয়। ভারতে এটা নিষিদ্ধ হলেও বাজারে এর ব্যবহার চালু আছে। কারও কারও ক্ষেত্রে, এটা অ্যালার্জির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রিজারভেটিভ যুক্ত খাবার খেয়ে অনেকের বমিভাব বা পেটে ব্যাথা দেখা দেয়। এই রাসায়নিকের প্রভাবে মাথা ব্যথা ও শ্বাসের সমস্যাও হতে পারে।


আর একটা প্রচলিত প্রিজারভেটিভ হলো স্যালিসাইলিক অ্যাসিড। এর ব্যবহার বাচ্চাদের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর। পাঁউরুটি, কেক, বিস্কুট, পাস্তা, পেস্ট্রি, নুডলস, ইত্যাদিতে প্রোপিওনেট জাতীয় এক ধরনের প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়, যার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে সামান্য তেতো-তেতো ভাব আসে। অতিরিক্ত প্রোপিওনেট যুক্ত খাবার খেলে কিডনির কার্যকলাপ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাছাড়া এ থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনাও বেড়ে যায়।


সাধারণ ঘরোয়া পদ্ধতিতে খাদ্যে ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভদের উপস্থিতি ও পরিমান চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব। অতএব প্রিজারভেটিভ যুক্ত প্যাকড ফুড বা বাজারি খাবার যথা সম্ভব কম খেয়ে ঘরে রান্না টাটকা খাবারদাবার বেশি বেশি খাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।


অস্বাস্থ্যকর ভেজাল খাবার খেলে কী হয়?

ভেজাল বা নিম্নমানের খাবার এক আধবার খেলে বা অল্প পরিমানে খেলে হয়তো তেমন বড়ো কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। অবশ্য সেটাও খাবারের মধ্যে থাকা টক্সিসিটি বা বিষক্রিয়ার পরিমাণের ওপর নির্ভর করবে। আসলে এই টক্সিসিটি দু ধরনের হয়। এক, অ্যাকিউট টক্সিসিটি বা তীব্র বিষক্রিয়া। এই ধরনের বিষক্রিয়ায় শরীরে বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করার পর দ্রুত (২৪ ঘন্টার মধ্যে) শারীরিক ক্ষতি হতে দেখা যায়। যেমন, বমি, মাথাঘোরা, দ্রুত রক্তচাপ বৃদ্ধি, পঙ্গুত্ব, ইত্যাদি। দুই, ক্রনিক টক্সিসিটি বা দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া। এই ধরনের বিষক্রিয়ায় শরীরে বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করার সাথে সাথে ক্ষতির লক্ষণ প্রকাশ পায় না। যতদিন যেতে থাকে, ধীরে ধীরে এই বিষক্রিয়ার ফল প্রকাশ পায়। যেমন, ধীরে ধীরে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, চোখের দৃষ্টি কমে, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি হয়, হৃদরোগ দেখা দেয়, কিডনি বিকল হয়ে পড়ে, লিভারের ক্ষয় হয়, ইত্যাদি। ভেজাল ও রাসায়নিক বিষ-প্রভাবিত খাদ্য নিয়মিত খেলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির হাত থেকে বাঁচা প্রায় অসম্ভব।


ভেজাল খাদ্য বন্ধে আমাদের কী করণীয়?

ভেজাল খাদ্যের রমরমা কারবার বন্ধ করতে দরকার সর্বাত্মক সামাজিক উদ্যোগ। প্রথমেই ভেজাল সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়ানো দরকার। ভেজাল প্রতিরোধে প্রশাসনকেও তৎপর হতে হবে। প্রতিটি ব্লক ও পৌর এলাকায় খাবারের নমুনা দোকান থেকে সংগ্রহ করে উন্নত মানের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করতে হবে এবং দ্রুত রিপোর্ট প্রকাশ করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। ভেজাল সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি ঘটিয়ে ভেজালদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এর জন্য দরকার হলে আন্দোলনের মাধ্যমে প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।


প্রতিটা মানুষকে ভেজাল রোধে ব্যক্তিগত স্তরেও উদ্যোগী হতে হবে। এর জন্য রাসায়নিক সার ও বিষ বর্জিত, ভেজালমুক্ত খাদ্য সংগ্রহে জোর দিতে হবে। কৃত্তিম রং মেশানো খাবার, জাঙ্ক ফুড, প্যাকেজড ফুড, ইত্যাদি বর্জন করতে হবে। স্বাস্থ্যই যে সবচেয়ে বড়ো সম্পদ, এবং ভেজালমুক্ত পুষ্টিকর খাদ্যই যে সুস্বাস্থ্যের অন্যতম শর্ত, সেটা আমাদের সবারই মনে রাখা দরকার।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929