হোমিওপ্যাথি - এক অপবিজ্ঞানের চর্চা
পরীক্ষিৎ চক্রবর্তী (আজিজুল শাহজি)
Nov. 19, 2024 | | views :987 | like:0 | share: 0 | comments :0
আমরা মানে এই ভারত বাংলাদেশের (পাকিস্তানের বিষয়টা ঠিক জানি না তবে ওটা ঐদিকে ও থাকবে আশা করি) এমন কোনও নাগরিক বোধহয় নেই যে এই হোমিওপ্যাথির স্বাদ পাননি। ছোটবেলায় বাবার হোমিওপ্যাথির বাক্স থেকে আর্নিকা বা নাক্স অথবা অন্য ওষুধ প্রচুর খেয়েছি। তাপ-উত্তাপ কিছুই ছিল না কারণ ওটা আমাদের শৈশবের কোনও মাথা ব্যাথার বিষয় ছিল না। পরবর্তীতে মাথায় পোকা ঢোকায় এক প্রাতঃস্মরণীয় লেখক রাজশেখর বসু (পরশুরাম)। ভালো করে বুঝে ওঠার আগেই কৈশোর থেকে যৌবন এবং সবচেয়ে বড় ধাক্কা এলো যখন আমার মা এর ক্যান্সার ধরা পড়লো। প্রথাগত চিকিৎসা করাতে দৌড়েছিলাম বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) তে টাটা মেমোরিয়ালে। ডাক্তারবাবু রায় দিয়েছিলেন সার্জারি এবং কেমো। না, প্রথাগত চিকিৎসার বদলে তার চিকিৎসা করেন বেশ খ্যাতিমান এক হোমিও চিকিৎসক যিনি আমার মাকে অনেক বছর বাঁচিয়ে রাখার আশ্বাস দেন। না, মা বাঁচেননি, বুঝিনি বাঁচার কথা ও ছিল না। যাই হোক, এই ব্যক্তিগত অবান্তর কথার থেকে আবার লাইনে আসি।
হোমিওপ্যাথির ইতিহাস :
স্যামুয়েল হ্যানিম্যান বলে এক জার্মান ডাক্তার ১৭০০ সালের শেষের দিকে হোমিওপ্যাথির উপর কাজ শুরু করেন। সে সময়কার প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিকে হিউমারিজম বলা হয়। হিউমারিজম “দাবি” করে যে শরীরের সমস্ত রোগ শরীরের চার প্রকার তরল: কালো, হলুদ, রক্ত এবং কফ -এর তারতম্যের কারনে ঘটে। বলাবাহুল্য, এই নীতিটির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং বর্জনীয়। মজার কথা হল এর বিরোধী ছিলেন হ্যানিম্যান। যে পদার্থের জন্য কোনও রোগের সূত্রপাত হয়েছে, সেই পদার্থের খুব অল্প পরিমান সেই রোগটিকে সারিয়ে তুলবে। অর্থাৎ হিউমারিজম যদি আপনার সর্দি কাশি লাগলে ওটা কমানোর কথা বলে, হানেম্যান তার উল্টো বলেন, আরও সোজা কথায় যা খেয়ে ওটা হয়েছে ওটার কম পরিমানে খেতে বলে। এই চিকিৎসাকে নাম দিলেন হোমিওপ্যাথি। এসেছে গ্রিক শব্দ হোমিওস (একই রকম) আর প্যাথোস (ব্যাধি) এই দুটোর সংমিশ্রণে।
হ্যানম্যান এবং তার সহযোগীরা এই পরীক্ষা নিরীক্ষার উপর বিবরণ তৈরী করেন। নানান খনিজ আর লতা পাতা ইত্যাদির নানান প্রয়োগ করেন সুস্থ এবং অসুস্থ মানুষের উপর এমনকি নিজেদের উপর আর তার উপর একটি বই প্রকাশ করেন মেটেরিয়া মেডিকা। প্রথম দিকে তার এই ওষুধ /টোটকা কম পরিমানে ব্যবহার আর পরে একটা থিওরি খাড়া করেন, ঔষধের মাত্রা যত কম হবে তার প্রভাব তত বেশী হবে। এই নিয়মটিকে আমরা ডাইলুটিং বা লঘু করার একটি পদক্ষেপ বলতে পারি। হাস্যকর হল বর্তমান বিজ্ঞান বিশেষতঃ মূল ধারার স্বীকৃত চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে প্রকৃতপক্ষে ঠিক এর উল্টোটা ঘটে। যেমন, আপনার নির্দিষ্ট মাত্রার ক্রোসিন /প্যারাসিটামল এ জ্বর না কমলে মাত্রা বাড়াতে হয়।
মেটেরিয়া মেডিকার সর্বশেষ সংস্করণে প্রায় হাজারখানেক পদার্থকে হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহারের জন্য বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ কোন রোগ বা কোন অসুখের জন্য কোন পদার্থ ব্যবহার করতে হবে বইটিতে সে ব্যাপারে কোনও নির্দেশনা নেই। এক্ষেত্রে প্রস্তুতকারক বা তথাকথিত হোমিও চিকিৎসকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ১৮ শতকে এটা কম রিস্কি হওয়ায় আর সহজ হওয়ায় অনেকেই এর প্র্যাকটিস শুরু করেন। ১৯ শতকে এই প্র্যাকটিশিয়ান ছিলেন প্রায় ১৪ হাজার আর ২২ টি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষার কেন্দ্র। মেডিক্যাল সাইন্স এর অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এর অতি দ্রুত পতন হয়। আজ ঐগুলো হয় বন্ধ অথবা আধুনিক মূল ধারার চিকিৎসার জন্য নিয়োজিত হয়েছে। শেষ প্রতিষ্ঠানটি ১৯২০ সালে বন্ধ হয়ে যায়।
আসুন এই পদ্ধতি কী ভাবে ওষুধ তৈরী করে ওটা এবার দেখি :
আমরা আগেই দেখেছি খনিজ, ভেষজ ইত্যাদির থেকে এই ওষুধের মূল পদার্থ নেওয়া হয়। এখন এই পদার্থকে এক ভাগের সাথে ৯৯ ভাগ অ্যালকোহল বা জলের সাথে মিশ্রিত করা হয়। দ্রবীভূত না হলে মিহি করে গুঁড়ো করে গুঁড়ো দুধ বা মিল্ক সুগারের সাথে মেশানো হয়। এই পদ্ধতির একটা ছবিও দেওয়া হল।
এইবার আসল খেলা, কেন এই চিকিৎসা নিছক একটি অবৈজ্ঞানিক!
এই ডাইলুশন এর একটা কাটাছেঁড়া করি। এক ভাগ জল/পানির এই ডাইলুশন রোমান X এ প্রকাশ করার রীতি। এখন ১X হল ১/১০ ঘনত্ব। ৩X হল ১/১০^৩ মানে ১/১০০০ ঘনত্ব। আর ১০০ ভাগ ডাইলুশন প্রকাশ করার রীতি হলো C। তাহলে ১C হচ্ছে ১/১০০ ঘনত্ব, ৩C হচ্ছে ১/১০০^৩ বা ১/১০০০,০০০ ঘনত্ব ইত্যাদি। বর্তমানে বাজারে পাওয়া হোমিও-টোটকাগুলো ৬X থেকে ৩০X মাত্রায় পাওয়া যায়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৩০C মাত্রার হোমিও-টোটকাও বাজারে বিক্রী হয়।
৩০X লঘুকরণের মানে হচ্ছে একভাগ মূল পদার্থকে ১০^৩০ অর্থাৎ ১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ ভাগ লঘুকরণ করা হয়েছে। এক কিউবিক সেন্টিমিটার, বা একটি ছক্কার কাছাকাছি আকারের মধ্যে ১৫ ফোঁটা জল/ পানি ধরে এই হিসেবে এক ড্রপ হোমিওপ্যাথিক পদার্থকে মেশাতে পৃথিবীর ৫০ গুণ আকারের জল/পানিতে সেটাকে মেশাতে হবে। পৃথিবীর পঞ্চাশগুণ আকারের একটি জল/পানিভরা পাত্র কল্পনা করুন। তারপর তাতে একফোঁটা লাল রং ছেড়ে এমনভাবে গোলান যাতে সেটা জল/ পানিতে সমভাবে মিশে যায়। হোমিওপ্যাথির “লঘুকরণের সুত্র” অনুযায়ী এরকম একটি বিশাল পাত্র থেকে এক ফোঁটা রং মিশ্রনের পর যদি একফোঁটা জল/ পানি নেওয়া হয় তাহলে তাতে লাল রংটির "নির্যাস" পাওয়া যাবে। অথচ ব্যাপারটি অসম্ভব।
রবার্ট এল. পার্ক, পিএইচডি একজন গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিদ এবং আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞান সোসাইটির নিবার্হী পরিচালক। তিনি লক্ষ্য করেছেন যে, একটি দ্রবণে দ্রাব্য পদার্থের ন্যুনতম একটি অনু বিদ্যমান থাকলেই কেবল পদার্থটি সেই দ্রবণে উপস্থিত সে দাবী করা যায়। এক অনু পদার্থ থাকতে তাই দরকার ১০^১৯ অনু জল/ পানির। হিসেব করে দেখা গেছে যে, মূল পদার্থের এক অনু পেতে চাইলে ৩০X মাত্রার হোমিও টোটকার দুই বিলিয়ন ল্যাকটোজ সুগারের দানা খেতে হবে। এই এক অনু মূল পদার্থের সাথে আপনার শরীরে যাচ্ছে প্রায় এক হাজার টন ল্যাকটোজ এবং তার মধ্যে থাকা ভেজাল ময়লাগুলো।
তাহলে ধরুন ৩০X ডাইলুশন হল মূল বস্তুর ১০^৩০ মানে ১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ ভাগ ডাইলুশন। সহজ হিসাবে এই পদ্ধতিতে ওই মিশ্রনে আপনি কোনও মূল ওষুধের কিছুই পাবেন না।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতে হোমিওপ্যাথির উপকারিতা নিয়ে আগে বা এখনও আমরা লেখা পড়ি। রিডার্স ডাইজেস্ট একবার লিখলো পশুদের উপর হোমিওপ্যাথির ফলাফল পাওয়া যায়। না, একদম ভুল তা প্রমাণিত হয়েছে ২০০৫ সালে। এখন আমরা কেন এই নিয়ে সরব হই না? নিজেরাও তো দেখেছি মা, বাবাকে, দিদিমা-ঠাকুরমাকে, ছোট্ট ছোট্ট গুলি বা পুরিয়া খেয়ে দিব্যি সেরে উঠতে। কারুর জ্বর, সর্দি ভালো হয়েছে তো কারুর বাচ্চার তোতলামি সেরেছে। আঁচিলের মতো গুটি একেবারে মিলিয়ে গেছে। আমরা জানি না, ওষুধ না খেলে ওগুলো নিজে নিজে সারত কিনা। বা কেউ মিষ্টি গুলি ছাড়াও বাচ্চাকে কাশির সিরাপ, জ্বরের ওষুধ খাওয়াচ্ছিলেন কিনা। কিন্তু মজা হলো, প্রচন্ড জ্বরে, অ্যাকসিডেন্ট এ অথবা অন্য কোনওভাবে হাড় ভেঙে গেলে বা অন্য কোনও ইমার্জেন্সিতে কেউ হোমিওপ্যাথি করার কথা মুখেও আনেন না।
রবার্ট এল. পিএইচডি একজন গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিদ লক্ষ্য করেন যে একটি মিশ্রণে কোনও একটি পদার্থের নূন্যতম একটি অনু থাকলেই কেবল পদার্থটি সেই দ্রবণে উপস্থিত সে দাবী করা যায়। এক অনু পদার্থ থাকতে তাই দরকার ১০^১৯ অনু জল/পানি। এই অনুপাতে ধরুন আপনি যদি ওষুধ মানে ওই দ্রব্যের এক অনু পেতে চান তা হলে ৩০X এর মাত্রার হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্রে দুই বিলিয়ন ল্যাকটোজ সুগারের দানা খেতে হবে। ভাবুন!
রসায়নের সূত্র অনুযায়ী (পিনাকী এই বিষয়ে বলতে পারবে আরও ভালো) ডাইলুশনের একটি সীমা আছে, যার বেশী ডাইলুটেড করা হলে দ্রবণে আসল পদার্থটি আর পাওয়া যাবে না। এই সীমাটি অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যার সাথে সম্পর্কিত এবং ১২C বা ২৪X (১০^২৪ ভাগের এক ভাগ) হোমিওপ্যাথি মাত্রার সমতুল্য। হ্যানিম্যান নিজেই বুঝতে পেরেছিলেন যে এ ধরণের কাজ করলে ওই তরলে মূল পদার্থের ছিঁটেফোঁটা থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু তিনি “বিশ্বাস” করতেন যে প্রতি বার এই ডাইলুশনের সময় ওই মিশ্রনে মূল বস্তুর “আত্মার-মত” এক ধরণের নির্যাস থেকে যায়, যেটা যদিও ওটা পদার্থ হিসাবে পাওয়া যায় না তবু শরীরের 'প্রাণ শক্তি' আবার জাগিয়ে তোলে। কি সাংঘাতিক !!
সাইলেসিয়া ২০০ খেলে নাকি গলায় ফুটে থাকা মাছের কাঁটা গলে যায়। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রবীর ঘোষ সাইলেসিয়া ২০০ ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষণের উদ্দেশ্যে কাঁচের প্লেটে সাইলেসিয়া ২০০ নিয়ে তাতে দিনের পর দিন মাছের একটা ছোট্ট কাঁটা ডুবিয়ে রেখে দেখেছিলেন- কাঁটা লাগা তো লাগা! কিছুই হয়নি।
বস্তুত হ্যানিম্যান এর পরে আর এই নিয়ে কোনও কাজ হয়নি আর করেও লাভ নেই তাই হ্যানিম্যান আজও পুনরায় জীবিত হয়ে নিজের বইয়ের উপর পরীক্ষা দিলে পাস্ করবেন কিন্তু ডারউইন হয়তো ফেল করে যাবেন কারণ পরবর্তীতে যা গবেষণা হয়েছে তার অধিকাংশ জিনিস ডারউইনের জানা নেই। বস্তুতঃ এই চিকিৎসা এক ধরণের প্ল্যাসিবো চিকিৎসা বা ফেইথ হিল মানে স্ব-ইচ্ছায় রোগের উপশম।
তারপরেও এই হোমিওপ্যাথির কেন এখনও জনপ্রিয়তা? কেন লোকে যায়? কারন হল আমাদের এই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মানুষ পিছু ডাক্তারের সংখ্যা অতীব কম, এর সাথে আছে ওই মূল ধারার ডাক্তারদের ওষুদের মাত্রা নিয়ে ভুল চিকিৎসা। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধ না খেলে রোগী নিজেই সেরে যায়। আপনি হাম বা ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ বলে কিছু এন্টিবায়োটিক্স দিলে রোগীর উপর আফটার এফেক্ট আসতেই পারে।
একটা কাউন্টার লজিক আসে যে এই হোমিওপ্যাথি এক ধরনের টিকা হিসাবে কাজ করে। না ওটাও ধোপে টিকবে না। কারণ টিকা রোগ ঠেকাতে ব্যবহার হয়, রোগ হওয়ার পরে না। আর টিকায় উপাদানের পরিমান অনেকগুন বেশী এবং হিসেব করে দেওয়া হয়।
১৯৯৭ এ এই কারণে লন্ডন স্বাস্থ্য দফতর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ব্যয়ভার নিতে অস্বীকৃতি জানান। তারা নির্দিষ্ট মানের উপর কোনও সঠিক উত্তর পাননি ওই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের থেকে। হোমিওপ্যাথির ভক্তকুল অল্প কিছু পরীক্ষায় হোমিওপ্যাথির পক্ষে ফলাফল এলেই সেটা দেখিয়ে প্রমান করতে চায় হোমিওপ্যাথি কাজ করে। ক্রমাগত পরীক্ষায় একই ফলাফলের জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আবার বলছি, প্ল্যাসিবো মানে নকল ওষুধ খেলে কিন্তু বেশী শক্তিশালী হতে পারে। তবে নকল ঔষধ খেয়ে রোগ সারবার সম্ভবনাটার তুলনায় রোগটা না সারবার এবং বিশাল ক্ষতি হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী। সেই সাথে রয়েছে আর্থিক ক্ষতি এবং সময় অপচয়। শুরুতে যা বলেছিলাম, ক্যান্সারের মতো রোগ কিন্তু হঠাৎ করে জটিল হয়ে যেতে পারে, সময়মত ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ না নিলে। যারা হোমিওপ্যাথি খেয়ে উপকারের কথা বলেন, তারা সেটা না খেয়েও সুস্থ হয়ে যেতেন এমনটা হবার সম্ভাবনাই বেশী।
ভারতে বা বাংলাদেশে এই চিকিৎসার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি আছে সরকারের কাছে। কি আর বলবো ! যা মনে হয়েছে তা হল আধুনিক চিকিৎসক তৈরির খরচ আর ওই চিকিৎসালয় তৈরির বাজেট আমাদের দেশগুলোর নেই ফলে একটা জোড়াতালি ব্যবস্থা, চলছে চলুক! এছাড়াও আর একটা কারণ হল আমাদের সেই 'বিশ্বাস', আমরা বিশ্বাস করি গুরু /পীর অথবা রাজনৈতিক নেতাদের। আমরা ফুল বেলপাতা থেকে প্রাসাদে খুঁজি রোগের ওষুধ। আমরা ওই হোমিওপ্যাথি ওষুধ জার্মানি বা আমেরিকার থেকে তৈরী বলে তা অব্যর্থ ভাবি। তার উপর সরকারীভাবে দেশের মানুষের আয়করের টাকায় কলেজ স্থাপন হয় যখন, জাতীয় হোমিওপ্যাথিক বোর্ড গঠন করে যখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় তখন আর সাধারণ মানুষকে দোষ দেওয়ার কিছু থাকে না।
আবার সেই ক্যান্সার রোগটির কথাই বিবেচনা করি। ক্যান্সার রোগটি ভয়াবহতার দিক দিয়ে এখন বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতি একটি রোগ। ক্যান্সার যত তাড়াতাড়ি ধরা যায় এবং চিকিৎসা শুরু করা যায়, ক্যান্সার থেকে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা তত বাড়ে। ওহাইয়ো স্টেইট ইউনিভার্সিটির এক গবেষনায় দেখা গেছে জটিল ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ার দু’মাসের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা শতকরা ৮৫ ভাগ। অ্যাপেল কোম্পানীর সিইও স্টিভ জবস জড়িবুটি এবং ব্যতিক্রমধর্মী ঔষধের সেবন করে তার রোগ সারাতে চেয়েছিলেন। নয় মাস এসব টোটকা সেবনের পর তার ক্যান্সার ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়ে শরীরে। জবসের শেষ পরিণতি তো আমাদের জানাই।
হোমিওপ্যাথির তেমন কোনও সর্বজনগৃহীত স্ট্যান্ডার্ড নেই, এটা কোনও মান নিয়ন্ত্রন পদ্ধতির মধ্যে দিয়েও যেতে হয় না। তাই ভেষজ আর প্রাকৃতিক উপাদানের নামে আসলে কী দেওয়া হচ্ছে আপনাকে সেটা জেনে রাখাই ভালো। ১৭ শতকের হ্যানিম্যানের উদ্দেশ্য মহৎ হলেও এই আধুনিক যুগে তার আর কার্যকরিতা নেই। সময় এসেছে একটু কঠিন কথাগুলো প্রকাশ্যে বলা।
তথ্যসূত্র :
১. http://www.quackwatch.org/01QuackeryRelatedTopics/homeo.html
২. https://blog.mukto-mona.com/2009/12/06/3561/
৩. http://www.hpus.com/
৪. http://news.bbc.co.uk/2/hi/health/8211925.stm
এবং সিধু জ্যাঠার ভার্চুয়াল রূপ : ইন্টারনেট