ওয়ার্ল্ড সিজোফ্রেনিক ডে

আদিত্য


Nov. 19, 2024 | | views :988 | like:0 | share: 0 | comments :0

প্রতিবছর মে মাসের ২৪ তারিখে World Schizophrenia Day পালিত হয়। WHO এর মতে এখনও গোটা পৃথিবীতে প্রায় ২১ মিলিয়ন লোক এই সিজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত! মোটামুটি বিংশ-শতাব্দীর একটু আগে থেকে সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে কাজ শুরু হয়। ১৯৮৬ সালে প্রথম সিজোফ্রেনিয়া সচেতনতা দিবস পালিত হয়, মে মাসের ২০ থেকে ২৭!এইভাবে  সিজোফ্রেনিয়া দিবস পালনের  প্রধান কারণ হল- সাধারন মানুষকে সচেতন করা।Schizophrenia  এর সিম্পটোমগুলোর সাথে সাধারন মানুষদের পরিচয় করানো। চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা ও প্রাপ্যতা, সহজলভ্যতা নিয়ে প্রচার করা! এই রোগ হলে তার পরিণতি কি হতে পারে ও কতো ভাগ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তা বোঝানো।এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  Schizophrenia  নিয়ে স্টিগমা এবং বৈষম্য বন্ধ করা। 


Schizophrenia  একটি মানসিক সমস্যা  যা মূলত এটা একটা মস্তিষ্কের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ  গন্ডগোল হলে তৈরি হয় (Brain Disorder)!   Dr. Eugen Bleuler  এই Schizophrenia শব্দটি প্রথম  ব্যবহার করেন। 

Schizophrenia কে গোদা ভাবে ট্রান্সলেট করলে হয়- Splitting of the mind.  গ্রিক শব্দ   'schizein' (to split) আর 'phren' (mind) থেকে যার উৎপত্তি! তাই পপুলার কালচারে  Schizophrenia মানে কিন্তু 'Split Personality'  কে বোঝায় যা একেবারে ভুল!

এখানে Split মানে আমাদের মনের অনুভুতি(Emotion), চিন্তনের ধরন(Cognition) এবং ব্যবহার বা আচরণ(Behavioural) এই তিনটের মধ্যে যোগাযোগ

ভেঙ্গে যাওয়া বা আলাদা হয়ে যাওয়া বা Split হয়ে যাওয়াকে বোঝায়!অর্থাৎ মনের এই তিনটে ব্যবহারিক উপাদানের মধ্যে  কোন সু-সামঞ্জস্য না থাকা।   Bleuler এর আগে অবশ্য ১৮৫৩ সালে Benedict Morel এইরক রোগের নাম করেন Demence Precoe।তারপরে Kahlbaum (১৮৭১)আর তার ছাত্র Hecker(১৮৭৪) বর্ণনাতেও উঠে আসে এই রোগের এর কথা। প্রখ্যাত জার্মান সাইকিয়াট্রিস্ট Emil Kraeplin এই রোগের নাম করণ করেন  Dementia Praecox।শেষে ১৯০৮ সালের ২৪শে এপ্রিল  সুইস সাইকিয়াট্রিস্ট Dr. Eugen Bleuler বার্লিনে এক লেকচারে এই Schizophrenia শব্দটি প্রথম ব্যবহার করে তার বর্ণনা করলেন চারটি "A"এর মাধ্যমে যাকে বলা হয়4A- Loosening of Associciations (সঙ্গতিহীন চিন্তা ভাবনা ও কাজ),Blunting of  Affect(কোনো  রকম অনুভুতি না থাকা), Autism( Self-absorbed একমাত্র নিজের মতো করে কাজ করা ) আর Ambivalence (সংশয় এর মধ্যে থাকা)। পরবর্তীতে  আর এক জার্মান ডাক্তার Kurt Schneider ১৯৩৯ সালে সিজোফ্রেনিয়া ডায়াগনোসিস এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিম্পটোম এর কথা বললেন -যা First Rank Symptoms (FRS ) নামে পরিচিত।

১৯৮৬ থেকেই National Schizophrenia Foundation ফ্রান্সের   Dr. Philippe Pinel (1745-1826) (যিনি মানসিক রোগ নিয়ে অনেক কাজ করেছেন, Dementia (ডিমেনসিয়া) শব্দটি উনিই প্রথম ব্যবহার করেন) তাকে সম্মান জানাতে ২৪ শে মে প্রতিবছর এই দিনটি  সিজোফ্রেনিয়া দিবস পালনের জন্যে বেছে নেয়! এই বছর ২৩শে মে থেকে ২৭ শে মে  Schizophrenia Awareness Week (SWA) সিজোফ্রেনিয়া সচেতনতা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে-এইবারের থিম হল- “Discover Better Mental Health”. যেভাবে মানসিক রোগের স্টিগমা এবং বাছবিচারের জন্যে অনেকেই চিকিৎসা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখেন!বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও স্টিগমা এবং বৈষম্য এর জন্যে অনেকই শুরুতে চিকিৎসা করাতে চান না! এবং রোগ অনেকবেশি chronic আকার ধারন করে! আর যেহেতু Schizophrenia একটি ব্রেইন ডিসঅর্ডার তাই ওষুধ খেতেই হবে!এবং মনে রাখতে হবে এটা এমন এক অসুখ  যাকে সারানো যায়!  সমস্ত পপুলেশানের মধ্যে এর prevalence ১% এর একটু বেশি। 

NMHS (National Mental Health Survey 2015-16) অনুযায়ী এর prevalence ০.৪% অর্থাৎ ভারতের প্রায় ৫-৬ মিলিয়ন(৫০-৬০ লাখ)  লোক এই রোগ নিয়ে ভুগছেন!


Schizophrenia এর ডায়াগনোসিস হয় রোগীকে ক্লিনিকাল ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে! কোন মাথার স্ক্যান বা রক্তের পরীক্ষা নয়! DSM-5 অনুযায়ী Schizophrenia এর রোগীদের যে সিম্পটোম গুলি থাকে-

Delusion (একটা মিথ্যে অপরিবর্তনীয় স্থির বিশ্বাস যা রোগীর নিজস্ব সংস্কৃতি শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থানের সাথে মিল খায় না)

Halluniaction (কোন রকম বাহ্যিক উদ্দীপনা ছাড়াই একটা বাস্তবিক অনুভুতি যা একদম সত্যিকারের মতো)

Disorganised Thought and Speech (চিন্তাভাবনার স্বাভাবিক বিন্যাস থেকে লাইনচ্যুত হওয়া বা অসংলগ্ন কথা বলা)

Grossly Disorganised  Behaviour (আচরনের মধ্যে কার্য-কারণ সম্পর্ক খুঁজে না পাওয়া এক অদ্ভুতরে ব্যাখাতীত আচরণ)

Negative Symptoms (অনুভুতির প্রকাশ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে যাওয়া!)

সাধারণত ছয় মাসের বেশি এই সিম্পটোমে গুলির মধ্যে দুটি বা তার বেশি থাকলে এবং যদি রোগীর কাজের জায়গা, নিজের কেয়ার নেওয়া ও পারস্পরিক সম্পর্কগুলো অত্যাধিক মাত্রায় প্রভাবিত হয় তাহলে আমরা Schizophrenia এর কথা ভাবতে পারি!  আসলে সাইকিয়াট্রিস্ট দের কাছেও সিজোফ্রেনিয়া খুব চ্যালেঞ্জিং ও জটিল এক রোগ। সিম্পটোম এর দিক দিয়ে খুব Heterogenous(অসমসত্ত্ব) একটা অসুখ। তাই এক এক একজন সিজোফ্রেনিয়ার রোগী এক একরমের হয়। কেউ হয়তো খুবই উত্তেজত, কেউ খুব আক্রমণাত্মক, কেউ বা হয়তো ঝিমিয়ে আছে, কেউ নিজের মতো হাসছে নিজের মনে বিড়বিড় করে যাচ্ছে, কেউ হয়তো নিজের যত্ন একেবারেই করতে পারছে না, খাওয়া দাওয়া করছে না, রাস্তায় রাস্তায় হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউ বা সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেন। তাই কোনো একরকম সিম্পটোমগুচ্ছো দিয়ে সিজোফ্রেনিয়াকে ব্যাখ্যা করা মুশকিল। 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে ধরণের সিম্পটম দেখা যায় তা হল- 

কারও উপস্থিতি ছাড়াই তার আওয়াজ কানে পরিস্কার শুনতে পাওয়া (Auditory Hallucination) 

আমি ওকে দেখতে পাচ্ছি ও আমাকে মারতে আসছে এই রকম বলে উত্তেজিত হয়ে ওঠা(Visual Hallucination) 

লোকজনকে সবসময় সন্দেহ করা(Paranoid Ideation ) 

সারাক্ষণ একটা ভয় ও ভীতি এর মধ্যে থাকা।(Fearful Episode) 

নিজেকে একদম আলাদা করে নেওয়া (Social Withdrawal ) 

নিজের অনুভূতির প্রকাশ একদম কমে যাওয়া(Emotional Blunting ) 

বেশিক্ষণ ধরে মনোযোগ না রাখতে পারে (Poor attention ) এবং ভুলে যাওয়া(Memory Disturbance ) 


সাধারত ছেলেদের ক্ষেত্রে এটি ১৫-২৫ বছরের মধ্যেই শুরু হয়!মেয়েদের মধ্যে এই রোগের সূত্রপাত একটু দেরিতে হয় এবং  এর বাইমোডাল ডিস্ট্রিবিউশান(Bimodal onset Peak) দেখা যায় -

একদল ২৫-৩৫ বছর আর একদলের ৪৫ বছরের এর পরে গিয়ে রোগের শুরু হয়! অন্যদিকে বাচ্চাদের সিজোফ্রেনিয়া (Childhood Schizophrenia) শুরু হয় ১২-১৩ বছর এর একটু আগে থেকে!  

সিজোফ্রেনিয়াতে সেই রোগের পাশাপাশি অন্যান্য রোগও থাকতে পারে! বিশেষ করে Tobaco এবং Cigarettes এরা নিয়মিত ব্যবহার করেন !

অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্যও ব্যবহার করে থাকতে পারেন।সাধারণ পপুলেশানের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায়  OCD(Obssesive Compulsive Diosrder ) সিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের  থাকে!এছাড়া ডিপ্রেসিভ এপিসোডও থাকতে পারে!এদের মধ্যে ১৫-৩০ % সুইসাইড এর চেষ্টা করেন। ১০% মারা যান সুইসাইডে! আবার ১০-১৫ % Schizophrenia এর রোগীরা স্বাভাবিক সময়ের আগে মারা যান!


Schizophrenia কোনো একটা কারণে হয় না অনেক কারণ রয়েছে। Geentics, Immunological, Biochemical, Neurodevlopmental, Psychological থিওরি আছে! তাই বলা হয় Multifactorial Polygenic Brain Disorder।


চিকিৎসা পদ্ধতির প্রধান জায়গা হল- মেডিকেশানের উপর থাকা এই রোগের চিকিৎসার মূল জায়গা! বিশেষত Anti-Psychotic Drug এবং তাকে সাপোর্ট করার জন্যে বিভিন্ন ওষুধ ও তাদের কম্বিনেশান!

Psychoeducation,Family Therapy, Social Skill Training (SST) Token Economy এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ!


কতদিন ধরে ট্রিটমেন্ট চালবো??


এটা একটা খুবই প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যতটা একজন বাড়ির লোকের কাছে ততটাই একজন চিকিৎসকের কাছে! কতদিন চিকিৎসা চলবে তা নির্ভর করে বিভিন্ন বিশয়ের উপর-

(১)রোগটা কতদিন ধরে আছে এবং তার তীব্রতা কতোটা

(২)কতগুলো এপিসোড হয়েছে মানে বাড়াবাড়ি রকমের

(৩)কতবার Relapse(রোগ ফিরে ফিরে আসা) হয়েছে

(৪)বাড়িতে কারও এই ধরনের রোগ আছে কিনা!

(৫)ওষুধ খেয়ে রেসপন্স কেমন??

তবে ওষুধ বন্ধ করার আগে অবশ্যই ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলবেন! দেখা গেছে বার বার এটা যে রোগী ঠিক হয়ে যাবার পরে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং রোগ আবার নতুন চেহারানিয়ে ফিরে এসছে! IPS(Indian Psychiatric Society এর গাইডলাইন অনুযায়ী)সাধারণত প্রথম এপিসোডের ক্ষত্রে ১-২ বছর এবং অনেক কটা এপিসোড হলে মিনিমাম ৫  বছর ওষুধ চালানো উচিত! তবে কতদিন ধরে রোগ আছে, সুইসাইড করার প্রবণতা থাকলে অন্যকে ক্ষতি করার আচরণ থাকলে খুব অ্যাগ্রেসিভ হলে কিম্বা অন্য অসুখ থাকলেঅনেকদিন কখনো কখনো সারাজীবন  ওষুধ চলতে পারে!


Schizophrenia কিভাবে এগোবে এবং শেষ পরিনতি কি হবে তা একবাক্যে বলা যায় না! বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর এই Prognosis (আরোগ্য সম্ভাবনা) নির্ভর করে।সাধারণত যাদের রোগ জীবনের পরের ধাপে (৪০ বছর পরে) শুরু হয়,ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের,রোগ শুরুর আগে কোন বাহ্যিক কারণ থাকে, রোগ শুরুর আগে(Premorbid Personality) যারা খুব সুস্থ ছিলেন,  মস্তিষ্কের কোন গঠনগত জায়গা নষ্ট( Structural Damage of Brain) হয় নি নেই, যাদের সুইসাইড করার চিন্তা বা প্রবণতা কম,  যারা বিবাহিত, যাদের ফ্যামিলি সাপোর্ট ভালো, তাদের ক্ষেত্রে  Prognosis ভালো!

Manfred Bleuler (যিনি Eugen Bleuler এর ছেলে) বলেছিলেন এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ করে ভালো হয়ে যায় যায়, এক তৃতীয়াংশ মোটামুটি কম-ভাল মিশিয়ে থাকে, আর এক তৃতীয়াংশ দীর্ঘদিনের (Chronic) রোগে পরিণত হয়! পরবর্তী কালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে-

এক দল,মোটামুটি ৩০-৪০% লোকজন একটা এপিসোড হয় এবং ১ বছর ওষুধ খেয়ে একদম ঠিক হয়ে যায়!সমস্ত কাজকর্ম করতে পারে কোন রকম ওষুধের দরকার পরে না!

আর একধরনের ৩০-৪০ % লোকের অনেক এপিসোড থাকা সত্ত্বেও ওষুধ খেয়ে সুস্থ থাকেন!

 তিন নাম্বার গ্রুপের লোকজন ১০-২০% ওষুধ খেয়ে সম্পূর্ণরুপে সুস্থ হয় না! ওষুধ খেয়ে পজিটিভ সিম্পটোম নিয়ন্ত্রনে চলে আসে কিন্তু ওষুধ বন্ধ করলেই বাড়াবাড়ি শুরু হয়ে যায়!

 বাকি ১০% প্রথম থেকেই ওষুধ খেয়ে কিছু হয় না! যাকে বলে Treatment Resistant Schizophrenia (TRS) তবে বিভিন্ন কারণে এর পারসেন্টেজ বেড়ে দাঁড়ায়! ২০-৩০% এর এসে কাছাকাছি! তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের ওষুধ বিভিন্ন উপায়ে ড্রাগ কম্বিনেশানের মাধ্যমে সিম্পটোম নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করা হয়!


আমাদের সামনে কি কি চ্যালেঞ্জ ??


সবচেয়ে বড় সমস্যা হল স্টিগমা ও বৈষম্য! Schizophrenia এর ক্ষেত্রে তো বটেই যেকোনো মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রেই এটা হয়! একজন হাই প্রেশার বা ডায়াবেটিস এর রোগী যতটা সহজে চিকিৎসা পান একজন Schizophrenia রোগী সেই সহজে চিকিৎসা পান না!

প্রত্যন্ত গ্রামের দিকে চিকিৎসার সহজলভ্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে! কতো সহজে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে কিনা!বাড়ির লোকেরাও প্রথম দিকে রোগীর সমস্যামূলক আচরণ শুরু হলেও নজর দেন না!

এই ট্রিটমেন্ট গ্যাপ ৭৫%। তারমানে ২৫% Schizophrenia রোগীরা শুধু চিকিৎসা পান! ভারতবর্ষে প্রায় ১৪০ কোটি জনসংখ্যা! তার মধ্যে-

 Psychiatrist এর সংখ্যা  ৯০০০ এর কাছাকাছি

 Clinical Psychologist ৩০০০ এর কাছাকাছি

Psychiatric Nursing (যারা M.Sc in Psychiatry Nursing  করেছেন) ২০০০ এর মতো

Psychiatric Social Worker ২০০০ এর মতো  

হিসেব করে দেখলে সাইকিয়াট্রিক বেড এর সংখ্যাও খুব অল্প! একটা হিসেব হচ্ছে ভারতে

মানসিক হাসপাতাল আছে ৪৩ টি মেডিকেল কলেজ ৫৪২ টি ডিসট্রিক্ট হাসপাতালের সংখ্যা ৭১৮ টি। সব মিলিয়ে আনুমানিক হিসেবে বেড এর সংখ্যা হবে ৩৭ হাজারের মতো সরকারি জায়গায়!

এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই জায়গায় গুলোতে   Homeless People যাদের নিজস্ব ঘরবাড়ি নেই , যারা দীর্ঘকালীন ভাবে কোন রোগে ভুগছেন বাড়ির লোক নেই বলে কমিউনিটিতে ফিরে যাবার সম্ভাবনা কম তারাই থাকেন। 


আর একটা গুরুত্বপূর্ণ হল- Disability Certificate। প্র্যাক্টিকাল সমস্যা হল অন্য কোন শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মতো Schizophrenia এর Disability (অক্ষমতা) তো বাইরে থেকে বোঝা যায় না!আর Schizophrenia এর রোগীদের Insight(নিজের রোগ আছে কি নেই তাকে বুঝতে পারার ক্ষমতা) খারাপ থাকে!মানসিক রোগ যে Disability তৈরি করতে পারে তা একটা সমাজের একটা বড়ো অংশের মানুষই মনে করনে না! বরঞ্চ তারা মনে করেন এইসব রোগীরা  ইচ্ছে করে করছে!

তাই  Disability Certificate পেতে খুব সমস্যা হয়!

অন্যদিকে পারিবারিক দিক থেকে  ডিভোর্সের সম্ভাবনা বাড়ে!ফ্যামিলি সাপোর্ট যেখানে সবচেয়ে জরুরি তা ভেঙ্গে পড়ে!বেকারত্ব এবং কাজে করতে পারায় তারা যেকোনো পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে ওঠেন!যেকোনো রকম চাকরি খুঁজতে গেলে তাঁরা সামাজিক ভাবে গ্রহনযোগ্যতা পান না। যদিও বা কেউ উচ্চশিক্ষিত হন  সহজে চাকরিতে জয়েন করতে পারেন না!পরিবারের লোকেরাও ধীরে ধীরে হতাশ হয়ে যান! Schizophrenia এর রোগীরা তাই আরও বেশি একা হতে শুরু করনে।


এই সমস্যা থেকে সমাধানের দিকে কি কি ভাবে আমরা এগোতে পারি??


এক, সবার আগে Mental Helath Care Act, 2017 এবং Right to the Persons with Disability Act (RPwD Act 2016)  যেখানে মানসিক রোগীদের ন্যায্য দাবির কথা বলা আছে !এই দুটো আইনই একটা landmark আইন!একে দেশের সব জায়াগায় সঠিক ভাবে লাগু করা !যেখানে রুগীদের মানবধিকার নিয়ে কথা বলা আছে!Mental Helath Care এখন একটা অধিকারের প্রশ্ন তাই!

দুই, সব জায়গায় ইনডোর সার্ভিস এবং আউটডোর সার্ভিস জোরদার করা। গুরুত্বপূর্ণ Psychotropics Drugs  এর জোগান দেওয়া! Rehabitilation সেন্টার গুলোকে আরও সক্রিয় করে তোলা!

যদি এই সার্ভিস গুলো সঠিক ভাবে  না থাকে  তাহলে যে কোন রোগী বা তার পরিবার Mental Helath Care Act, 2017 অনুযায়ী  সরকারকে এটা প্রশ্ন করতে পারে!

যে নিজের অধিকার তিনি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জানাতে পারে এবং স্টেট বা সরকার তা শুনতে বাধ্য!কোনও কিছুর অজুহাত না দেখিয়ে  স্টেট বা সরকারের দায়িত্ব হল- Mental Helath Care সেই রোগের পৌঁছে দেওয়া যা থেকে উনি বঞ্চিত হচ্ছেন!    

তিন, পরিবারের লোকজন এর সহযোগিতা এই রোগের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ! একজন Chronic Schizophrenia এর রোগীর সঠিক পরিচর্জার জন্যে একজন লোক কে সবসময় তেই থাকতে হয়!

 তাহলে সেই  Care Giver এর   একটা বড় সময় এখানে কেটে যায়!  তাই Care Giver Pension এখন চর্চিত একটা ইস্যু!যে বাবা বা মা নিজের ছেলে বা মেয়ের দেখ-ভাল করার জন্যে নিজের পুরো জীবন

দিয়ে দিলো স্টেট কে তার দায়িত্ব নিতে হবে! একে অবিলম্বে  লাগু করা উচিত!

চার,  একদম শেষতম প্রান্তিক লোকটির কাছেও আমাদের পৌঁছে যেতে হবে! একটা Welfare Society  তে সেটাই তো কাম্য! কখনো Proactive approach নিয়ে কমিউনিটিতে আমাদের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। 

পাঁচ, আগেই বলেছি Schizophrenia এর রোগীদের  মেডিসিন চালিয়ে যাওয়া উচিত! এই মহামারির সময়ে কিভাবে ওষুধ এর জোগান দেওয়া হবে তা ঠিক করতে হবে! Tele-Psychiatry এবং Tele-Psychotherapy Servicies চালু করা করা আরও বেশি সহজলভ্য করে তোলা! শুর করা! এই কথা গুলো হয়তো খুব আইডিয়াল শুনতে খুব ভালো! কিম্বা  তাত্ত্বিক বা থিওরিটিকাল। বাস্তবে কতোটা রূপায়িত করা সম্ভব তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন আসে মনে!

যদি  সঠিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে, যদি প্রশাসনিক দক্ষতা আর সঠিক ব্যবহারিক জিনিসপত্রের জোগান থাকে তবে সমস্ত কিছু করা সম্ভব।যেখান থেকে আমরা   ৬০-৭০% সমস্যার সমাধান করতে পারি। 

ভ্যাক্সিনেশানের ক্ষেত্রেও এটা দেখা গেছে যে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে মানসিক রোগীরা অনেক বেশি বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন! এখন সময় এটাকে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়ার বয়স্কদের পাশাপাশি মানসিক রোগীদের বিশেষ করে ডিমেনসিয়া বা সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের ভ্যাক্সিন দেওয়া উচিত! কার আধার কার্ড বা অন্য ID Card   আছে কি নেই তা দেখতে গেলে মুশকিল! অনেক দিন ধরে ভোগা বেশির ভাগ মানসিক রুগীদের কাছেই কোনো পরিচয় পত্র থাকে না!  অনেক জায়গাতেই এটা শুরু হয়েছে-বিশেষ করে কর্ণাটকে  আধার কার্ড বা অন্য ID Card ছাড়া মানসিক রোগীদের ভ্যক্সিন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে!


পৃথিবী বিখ্যাত লেখক Jonathan Harnisch একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন “I have schizophrenia. I am not schizophrenia. I am not my mental illness. My illness is a part of me.” অতএব কাউকে সিজোফ্রেনিক বলে সহজে চিহ্নিত বা স্টিগমাটাইস করে দেবো না।বর্নণা দেওয়া উচিত একজন মানুষ যার  সিজোফ্রেনিয়া আছে-এই ভাবে।  A person with mental illness. এইটা বলার মধ্যে দিয়ে শুরু করতে হবে!


সবশেষে  এটাই বলার যদি শুরু থেকে রোগীর লক্ষ্মণ বুঝে চিকিৎসা করা যায়! তাহলে Schizophrenia ভয়াবহ আকার নেওয়ার সম্ভাবনা কম! যেহেতু মানসিক রোগ কে নিয়ে ছুঁতমার্গ এবং স্টিগমা এর জন্যে প্রথমে কেউ গুরুত্ব দেয় না! আর ওষুধ অনেক সময়েই রোগীরা খেতে চান না! বা অনিহা থাকে( যাকে বলে Poor Adherence)!তখন  বাড়ির লোককে দায়িত্ব নিয়ে তখন ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হয়! (supervised medication )বার বার বলছি ওষুধ বন্ধ করা যাবে না- যদি কেউ মনে করে আমার রোগী ঠিক হয়ে গেছে ওষুধ বন্ধ করে দিয়ে দেখি তাহলেই কিন্তু আবার ফিরে আসবে! মনে রাখবেন একটা বড়ো অংশের(৬০-৭০%) লোক কিন্তু Schizophrenia তে ওষুধ খেয়ে প্রায় সুস্থ থাকেন!

তাই সঠিক চিকিৎসার মধ্যে থাকা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পেশাদার ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া, নিয়মিত ওষুধ খাওয়া ও পরিবারের পাশে থাকা, সুস্থ Rehabilitation প্রক্রিয়া সব মিলিয়ে সিজোফ্রেনিয়াকে আমরা জয় করতে পারি!

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929