ধর্ম প্রকৃতই অন্তঃসারশূন্য। তবুও চারিদিকেই তার ব্যাপ্তি। এই বিস্তৃতির কারণ কী? মেজোরিটি ম্যাটারস। বিজ্ঞাপন আমাদের জীবনকে অনেকটাই চালিত করে থাকে। নাস্তিকতা মানুষকে অর্জন করতে হয়। ধর্মকে অর্জন করতে হয় না। জন্মের সাথে সাথেই তা ঘাড়ে চড়ে বসে।
মানুষ ধর্মকে অর্জন করে না গ্রহণও করে না। আবার বলতে গেলে বর্জনও করে না। বর্জন করতে চাই শিক্ষা। ধর্ম হল তার পারিবারিক সূত্রে পাওয়া এক অন্ধবিশ্বাসের গুপ্তধন। যা নিয়ে সে বেশী নাড়াঘাঁটা করেও দেখে না। বরং ভক্তি ছেদ্দা করে কুলুঙ্গিতে তুলে রাখে। তাই তার স্বরূপ বিশেষ বোঝে না, বোঝার চেষ্টাও করে না।
ছোট থেকেই তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুপ্রবিষ্ট হতে থাকে ধর্মের নানান রিফ্লেক্স। অনুপ্রবিষ্ট হতে থাকে ধর্মাহংকার। তাই ধার্মিক মাত্রেই গর্বিত হিন্দু না হয় গর্বিত মুসলমান নাহয় গর্বিত অন্য কিছু। ধর্ম গর্বে গর্বিত। জীবনে আর সকল সমালোচনা স্বাগত হলেও, ধার্মিকের কাছে তার ধর্মের সমালোচনা মানেই এক নিষিদ্ধ বস্তু। ধর্মের সমালোচনায় ধার্মিক একেবারেই অসহিষ্ণু। ধর্মে প্রশ্ন নিষিদ্ধ। প্রশ্ন কোরো না।
শিশু এভাবেই বড় হতে থাকে। সে যত বড় হয়, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ে তার কুসংস্কার। তার অন্ধবিশ্বাস। জীবনশৈলীতে আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে জড়িয়ে মানবিক যুক্তিশীলতার রস শুষে জীবনকে একটা দাসত্বের আধারে পরিণত করে। ধর্মের দাস হয়ে সে তখন গর্বিত ধার্মিক। কুসংস্কারাচ্ছন্নতার নির্বোধ প্রতিমুর্তি।
রাস্তার ধারে দেখবেন, হলুদ রঙের এক ধরণের লতা। কোনো গাছকে আশ্রয় করে বাড়ে। গাছটিকে ঢেকে ফেলে। গাছে রস খেয়ে তাকে ছিবড়ে করে দেয়। গাছটির নিজস্বতা আর থাকে না। বাইরে থেকে দেখতে সে যতই হোক না সোনার মতো লতা শোভিত। সোনার লতায় ঢেকে গিয়ে সে যায় লুকিয়ে। তার কত না শোভা।
ধর্ম মানুষের যুক্তিশীল মনকে একেবারেই শেষ করে দেয়। ধর্মশৈলী প্রতিনিয়ত মানুষের যুক্তিশীলতার রস শুষে তাকে আর মানবিক ভাবনা ভাবানোর যোগ্যই রাখে না।
একটা উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে। কোনো একটি রাজনৈতিক দল ঘোষণা করলো, তাদের দলে যারা আসবে, তারা ক্ষমতা দখল করলে, খুন-ধর্ষণ-মদ-নারী বিলাসিতার ব্যবস্থা তারা করে দেবে। কী বলবেন? তাদের প্রতি আপনার মনোভাব কেমন হবে? এখন দেখবেন, ধর্মের ব্যাপারটাও তেমনই। দেখবেন, প্রায় প্রতিটি ধর্মে, স্বর্গ, স্বর্গে আমোদ প্রমোদ বিলাস ব্যসনের প্রলোভন দেখায়। মানুষকে প্রতিনিয়ত কুসংস্কারের অনুশীলনের মাধ্যমে তাতে বিশ্বস্তও করে তোলে।
মানুষ নির্বোধ হলে নির্লজ্জও হয়ে থাকে।
দেখবেন, যারা হোমিওপ্যাথীর পক্ষে তারা জানেনই না যে উচ্চমাত্রার হোমিওতে এক বিন্দুও ওষুধ থাকে না। অথচ তারা ঔষধবিহীন চিকিৎসাতেও আগ্রহী নন। আসলে তাঁরা এই অজ্ঞানতা হেতু হোমিওতে আস্থা রাখেন। যাঁরা আঙুলে আংটি নিয়ে ঘোরেন, তাঁদের অজ্ঞানতার কারণেই এইসব স্টোন ধারণ করেন। ধারণ করেন, তবু লজ্জাও পান না।
এই নির্লজ্জতা গোটা সমাজে।
বহু কিছু পড়া শুনা করেছেন। ডিগ্রীও অর্জন করেছেন। এঁরা আত্মা মানেন, ভূত মানেন না!
যিনি আত্মা মানেন, ভগবান মানেন, ভূতও মানেন, তাকর মানামানির ব্যাপারটা বোঝা যায় যে নির্বুদ্ধিতার চূড়ায় থাকলে লজ্জার বালাই থাকেনা। নির্লজ্জভাবে আঙুলের আঙটি প্রদর্শনে এতটুকু কুণ্ঠিত নন। কিন্তু যিনি ভগবান মানেন, কিন্তু ভূত মানেন না, তাঁর লজিক বিশ্বাসসর্বস্ব লজিক।
ধার্মিকদের ভক্তি এক আজব বস্তু। ভক্তি যার স্কন্ধে ভর করে তাঁকে বলা হয় ভক্ত। প্রায়শ শিক্ষিত ধার্মিকে বলে থাকেন, তিনি সর্ব ধর্মের ভক্ত। নানা ধর্মে নানান বৈপরীত্য। কোনটি একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী, কোনটি বা বহু-ঈশ্বরে। সব ধর্মের ভক্ত অবশ্য 'এক = বহু' ভাবতে সাগ্রহে অভ্যস্ত। একে নিছক মূর্খামি ছাড়া আর কিছু বলা যায় কি?
এবার এক নামকরা চিকিৎসকের কথা বলি। ইনি চিকিৎসাক্ষেত্রে এক অতি খ্যাতনামা ব্যক্তি। আমার সাথে কথায় কথায় জানালেন, উনি মকর স্নানে যাচ্ছেন। শুনে প্রথমে বেশ অবাক হয়েছিলাম। পরে ভেবে দেখলাম, আমরা সাধারনত ডাক্তার, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার এমনকি শিক্ষকদেরও শিক্ষিত বলেই ভেবে থাকি।
এই চিকিৎসক ভদ্রলোকের কথাই বলি। ইনি বারো ক্লাসের পর থেকেই মেডিকেলে। ফিসিওলজি, অ্যানাটমি, মেটিরিয়া মেডিকা, ডিসেকসন, ফার্মাকোলজি নিয়েই তাঁর জগৎ।
তিনি তাহলে শিক্ষিত হলেন আর কখন? অথচ দেখুন, তাঁকেই আমরা অনেকে বুদ্ধিজীবির দলে ফেলি।
যে ভদ্রলোক জীবন বোধের সিনেমা দেখেন, লাইব্রেরী থেকে বই এনে নিজের ছোট দোকানটিতে বসে বইটি পড়ে চলেন, দোকানে আসা লোকের সাথে সমাজ অর্থনীতি ধর্ম রাজনীতি নিয়ে নিজের মতামত উপস্থাপন করেন, তাঁর ডিগ্রী দেখে তাঁকে আমরা অনেকেই
শিক্ষিত বলতে আদৌ রাজী নই। এখানে নিহিত আছে ধর্ম ব্যাপ্তির সূত্র। অজ্ঞানতাই হ'ল ধর্ম ও ধার্মিকতার ভিত্তি।
গড্ডালিকাপ্রবাহে চিন্তাস্রোত অপরের ধারায় প্রবাহিত। এতে কখনই মনুষ্যত্বের বিকাশ হতে পারে না। অন্ধবিশ্বাস থাকে তাঁর মনে সারা জীবন। অশিক্ষা থেকেই যায়। মূর্খামির জানান দেখা যায় ধর্মাচরণের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত। তিনি নিজের মূর্খামির খবর জানতে পারেন না সারা জীবনেও।
যে সকল ধার্মিক নিজেদের যুক্তিবাদী মনে করেন, তাঁরা চিন্তা করুন, আপনার ধর্ম কেন বাস্তব জমির উপর দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠীত করতে পারেনা। কেন তাকে অলীক অলৌকিক মিথ্যার শরণাপন্ন হতে হয়।
জন্ম যার মিথ্যাচার দিয়ে, সে জিনিস কিভাবে আপনাদের কাছে এত গ্রহণযোগ্যতা পায় কেন?
একটু ভাবুন। ভাববাদী কথা দিয়ে গোঁজামিল দিয়ে কখনই সত্যকে আশ্রয় করা যায় না।