সকালবেলা গাবলু আমার বাড়ি এসে হাজির। গাবলু আমার ফ্রেন্ড, ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড।
অনেকদিন পর সে আসায় ভারি খুশি হয়ে বললাম, "তুই তো এখন বড়মানুষ। তোর কীর্তিকলাপ নিয়ে বই বেরিয়েছে দেখলাম।"
গাবলু হেসে বলল, "আরে সে তেমন কিছু নয়। লোকে অনেকদিন ধরে চাইছিল তাই একটা পাগলাটে লোক বই বের করেছে।"
"তা এতদিন পর যখন এসেছিস তখন আজ দুপুরে আমরা একসাথেই খাব। ঠিক সেই কলেজের মত আজকেও বিরিয়ানি হয়ে যাক?"
গাবলু হেসে বলল, "তুই তো জানিস বিরিয়ানি খেতে আমি কত ভালবাসি। আর পরের পয়সায় হলে তো কথাই নেই।"
"সে আর জানিনা, হাড়েহাড়ে চিনি তোকে। কলেজে বেশিরভাগ সময়ে আমার পকেটটাই তো হালকা হত।"
গাবলু বলল, "তবে ভাবছি এবার ভাগ্যনগর বিরিয়ানিটাই ট্রাই করব।"
গাবলু মাঝেমাঝে এমন সব দুর্বোধ্য কথা বলে যে কিছুই বুঝে উঠতে পারিনা।
ঘন্টাখানেক 'মন কি বাত' শুনলে বা একবারে গোটা একটা 'কথাঞ্জলি' পড়ে ফেললে মাথার ভিতর যেমন ব্ল্যাকআউট হয়ে যায় ঠিক সেরকম মনে হয়।
"হ্যাঁ রে গাবলু, চিকেন-মাটন বিরিয়ানি ঢের শুনেছি, খেয়েছিও বিস্তর। এমন কি তোর পাল্লায় পড়ে বাড়িতে লুকিয়ে দুএকবার বিফ বিরিয়ানিও খেয়ে এসেছি।
কিন্তু, এই ভাগ্যনগর বিরিয়ানি আবার কি দিয়ে তৈরি হয়?
জলহস্তীটস্তির মাংস দিয়ে বানায় বুঝি?"
গাবলু একচাঁটি মেরে বলল, "এইজন্য তোর কোন উন্নতি হলনা। আরে বাবা মগজের ভিতর গ্রে ম্যাটার কিছু অবশিষ্ট আছে, নাকি সবই গোমূত্র খেয়ে লোপ পেয়েছে?
এই বিরিয়ানি শুধু আমি নয়, তুইও বহুবার খেয়েছিস।
আরে তুই তো বলতিস এই বিরিয়ানির কোন তুলনাই হয়না।"
গাবলুর কথায় যেন আকাশ থেকে পড়লাম।
বহু চেষ্টা করেও কিছুতেই মনে করতে পারছিনা এমন অদ্ভুতুড়ে বিরিয়ানি ঠিক কবে খেয়েছি।
গাবলু হযবরল'র বেড়ালের মত ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে হেসে বলল, "কি হল পারলিনা তো? জানতাম পারবিনা। আচ্ছা তুই তো হায়দরাবাদি বিরিয়ানি খেতে ভালবাসিস?"
"হ্যাঁ বাসি। একশবার, হাজারবার বাসি। কিন্তু তারসাথে কোথাকার কি ভাগ্যনগরের কি সম্পর্ক?"
গাবলু আরেক চাঁটি কষিয়ে বলল, "প্রেমে পড়ার পর থেকে তোর ইন্টালিজেন্স ক্রমশ কমেই যাচ্ছে।
দেশের কোন খবরই আজকাল রাখিসনা।
যোগী আদিত্যনাথ বলেছে বিজেপিকে ভোট দিলে পরেরবার হায়দরাবাদ এর নাম পালটে ভাগ্যনগর রাখা হবে।
কারণ এতে নাকি ভারতীয় সংস্কৃতি রক্ষা পাবে।
তাহলে এবার থেকে হায়দরাবাদি বিরিয়ানির নাম তো ভাগ্যনগর বিরিয়ানিই হয়ে যাবে।"
বোঝ কান্ড, এই হল গাবলু।
কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যায়।
তবে আমিও গাবলুর ফ্রেন্ড।
আমি কি কম যাই নাকি?
গম্ভীর গলায় বললাম, "তাহলে ভাই তুই রাতেও থেকে যা। কষা মাংসের সাথে জমিয়ে দিনদয়াল উপাধ্যায় পরোটা খাওয়া যাবে।"