সমস্ত লেখাগুলি

মরণোত্তর দেহদানের প্রথম প্রচারক -
শ্যামল
Nov. 20, 2024 | সামাজিক ইস্যু | views:779 | likes:0 | share: 0 | comments:0

এই মানুষটির কথা জানতে গেলে ইতিহাসের পাতা ওলটাতে হবে। অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতাব্দতে লন্ডন এবং তার আশেপাশে বেসরকারি মেডিকেল স্কুলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এসব স্কুলের জনপ্রিয়তার কারণ ছিল মূলত সত্যিকার মানবদেহ ব্যবচ্ছেদের সুযোগ। কিন্তু সমস্যা হলো সে সময় সবার মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদের অনুমতি ছিল না। কেবল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের দেহই সরকারি মেডিকেল স্কুলগুলোতে দেয়া হতো। কিন্তু  তা খুব সহজ ছিল না। সেইখানেও নানা ধরণের বাধা বিপত্তি ছিল। ১৭৬৫ থেকে ১৮৮৪ পর্যন্ত ডাক্তার ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ওপর প্রায় ২৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা থেকে বাদ যায়নি মেরিল্যান্ড কিংবা ইয়েলের মতো নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। ফলে বাধ্য হয়েই এনাটমির শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা বেছে নেন এক অবৈধ পথ। সেই সঙ্গে রচিত হয় অন্ধকার জগতের নতুন অধ্যায়, শব বাণিজ্য। শুরু হয় কবর থেকে চুরি। ১৭৭০ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক জন ওয়ারেন "Spunkers" নামে একটি গুপ্ত এনাটমি সোসাইটি তৈরি করেন, যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে মৃতদেহ সংগ্রহ করে ব্যবচ্ছেদ করতেন। কিন্তু এই পদ্ধতিতেও অবস্থার সামাল দেওয়া যায় নি। চুরি করা মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করা ছিল বেআইনি। এই অপরাধে ১৮২৪ সালে ডা. চার্লস নলটন (Charles Knowlton) অবৈধ ব্যবচ্ছেদের দায়ে গ্রেফতার হন। দু'মাস পর ছাড়া পেয়ে তিনি জনগণের মধ্যে মরণোত্তর দেহদানের বিষয়ে কুসংস্কার দূর করার জন্য ডাক্তারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এই চার্লস নলটনই (নাউলটন) ছিলেন প্রথম মরণোত্তর দেহদানের প্রচারক। কিন্তু এই প্রচারে কোন সাড়াই মেলে নি। কিন্তু তিনি থেমে থাকেন নি। জেলে থাকাকালীন তার কিছু উপলব্ধি হয় এবং তিনি মরণোত্তর দেহদানে যে কুসংস্কার তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি বই লেখেন

“Elements of Modern Materialism”। যা ১৮২৯ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৮৩২ সালে মরণোত্তর দেহদানের আইন ইংল্যাণ্ডে প্রবর্তন হয়। এই সালেই ইংল্যাণ্ডের প্রখ্যাত চিন্তাবিদ জেরেমি বেন্থামের মৃতদেহ দান দিয়েই মরণোত্তর দেহদানের যাত্রা শুরু।

পরিশেষে জানাই, চার্লস নলটন (নাউলটন) ছিলেন আমেরিকান। ১৮০০ সালের ১০ ইউনাইটেড স্টেটের ম্যাসাচুসেটসের টেম্পেল্টনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৫০ সালে ম্যাসাচুসেটসের উইনচেনডনে মারা যান।

হেরোফিলোস ও ইরাসসিস্ট্রাস -
শ্যামল
Nov. 20, 2024 | সমাজ | views:25 | likes:0 | share: 0 | comments:0

মরণোত্তর দেহদানের কথা জানতে গেলে হেরোফিলাস ও ইরাসসিস্ট্রাস এই দুই জনের কথা জানতেই হবে। ইরাসিস্ট্রেটাস এবং হেরোফিলাস এই দুই জনই একমাত্র চিকিত্সক যারা রেনেসাঁর আগে নিয়মিতভাবে মানবদেহে ব্যবচ্ছেদ করতেন। এই সবই শুরু হয়েছিল ৩য় শতাব্দীর প্রাচীন গ্রীসে কালসিডনের হেরোফিলাস এবং সিওসের ইরাসিস্ট্রেটাস নামের দুই চিকিৎসকের হাত ধরে। 

হিরোফিলোস প্রথম বিজ্ঞানী যিনি নিয়মিতভাবে শবদেহের বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন।  তিনি মানব দেহকে বিচ্ছিন্ন করে এবং মস্তিষ্কে স্নায়ুর কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং রক্তের বাহন, অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, চোখ ইত্যাদি বর্ণনা করেন, পদ্ধতিগত শারীরিক গঠন শুরু হয়। এছাড়াও তিনি চোখ, লিভার, লালা গ্রন্থি, অগ্ন্যাশয় এবং উভয় লিঙ্গের যৌনাঙ্গে অঙ্গগুলির যত্ন সহকারে বিবরণ দিয়েছেন। তাঁর বইয়ে মিডওয়াইফারি, তিনি পর্যায়ক্রমে এবং গর্ভাবস্থার সময়কালের পাশাপাশি অসুবিধাজনিত প্রসবের কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই কাজের উদ্দেশ্য হ'ল ধাত্রী এবং সেই সময়ের অন্যান্য ডাক্তারদের জন্মানো এবং গর্ভাবস্থার প্রক্রিয়া আরও পুরোপুরি বুঝতে। এটি আবিষ্কারের জন্যও কৃতিত্বপ্রাপ্ত ডিম্বাশয় এবং পরে যাকে বলা হবে তার বৈজ্ঞানিক বিবরণ দিয়েছিলেন স্কিনের গ্রন্থি। ২০০১ সালে এর নামকরণ করা হয় মহিলা প্রোস্টেট। হিরোফিলাস তাঁর গবেষণা নিয়ে কমপক্ষে নয়টি রচনা লিখেছেন। ৩৩৫ খ্রীষ্ট্র পূর্বাব্দে হেরোফিলোস জন্মগ্রহণ করেছিলেন এশিয়া মাইনরের চালসিডন শহরে (এখন কাদিক্য, তুরস্ক)। তিনি তার স্কুল জীবন শুরু করার জন্য মোটামুটি অল্প বয়সে আলেকজান্দ্রিয়ায় চলে এসেছিলেন বলে তার প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি।

এবার জানা যাক ইরাসিস্ট্রেটাসের কথায়। ইরসিস্ট্রাটাস তাঁর সমসাময়িক ছিলেন যিনি হেরোফিলাসের সাথে যৌথভাবে এই শবদেহ ব্যবচ্ছেদের কাজ করেছেন। একসাথে তারা আলেকজান্দ্রিয়াতে একটি মেডিকেল স্কুলে কাজ করেছিলেন। তাঁরা এখানে  মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ অনুশীলন করতেন এবং যা ছিল শারীরবিদ্যা শেখার প্রধান মাধ্যম। ইরাসিস্ট্রেটাস হৃৎপিণ্ডের ভালভের বর্ণনার জন্য তাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়, এবং তিনি আরও উপসংহারে পৌঁছেছিলেন যে হৃদয় সংবেদনের কেন্দ্র ছিল না, বরং এটি একটি পাম্প হিসাবে কাজ করে। ইরাসিস্ট্রেটাস  শিরা এবং ধমনীর মধ্যে পার্থক্যকারী প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন। ইরাসিস্ট্রাটাসকে হেরোফিলাসের পাশাপাশি রেকর্ডকৃত ব্যবচ্ছেদ এবং সম্ভাব্য ভাইভিসেকশন পরিচালনা করা প্রথম চিকিৎসক/ বিজ্ঞানীদের একজন হিসাবে দেখা হয়। ভাইভিসেকশন হল কোন জীবন্ত প্রাণীর উপর পরীক্ষামূলক উদ্দেশ্যে পরিচালিত অস্ত্রোপচার, সাধারণত একটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রাণী, জীবিত অভ্যন্তরীণ গঠন দেখতে।  এই দুই জনের মৃত্যুর পর শারীরবিদ্যা সম্পর্কিত ব্যবচ্ছেদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায় এবং সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার শুরু না হওয়ার আগ পর্যন্ত এই অবস্থা বজায় থাকে। ১২ শতকের পূর্বে এটি আর পুনরুজ্জীবিত হয়নি।  

এইখানে একটা ব্যাপার উল্লেখ করতেই হচ্ছে।  ১২শ শতকের দিকে মানুষের মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ আবারও শুরু হয়েছিল। এবারও ব্যবচ্ছেদকে অসম্মানের চোখে দেখা হয়েছিল, তবে এটাকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয় নি। তার পরিবর্তে, নির্দিষ্ট কিছু কার্যক্রমের  ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং এগুলোর অনুমতির ব্যাপার গির্জা নির্দিষ্ট কয়েকটি ফরমান সামনে নিয়ে আসে। এই ফরমানগুলোর একটি যা বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির জন্য স্মারকরূপে গণ্য হয়েছিল তা হচ্ছে পবিত্র রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডরিক  কর্তৃক ১২৩১ সালে জারিকৃত একটি ফরমান। এই ডিক্রিতে বলা হয়েছিল যে, শারীরবৃত্তীয় অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে প্রতি পাঁচ বছরে একটি মানবদেহ একবার ব্যবচ্ছেদ করা হবে এবং যারা চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন অথবা ঐ সময়ে এই বিষয় দুটি নিয়ে অনুশীলন করছেন তাদের সকলের উপস্থিতি প্রয়োজন। ১৭ শতকে এটি উত্তরোত্তর জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং তখন থেকে আজও এর ব্যবহার করা হয়ে চলেছে।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929