ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই হামলা কারীর মধ্যে একজন ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র 'জিকরুল্লাহ'। অন্যজন ছিলেন মিরপুরের দারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র 'আরিফুল'।
পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে খুনী জিকরুল্লাহ বলেছিলেন--
"ব্লগ কী বুঝি না। আর তার (বাবু) লেখাও আমরা দেখিনি। হুজুরেরা বলেছেন, সে (বাবু) ইসলামবিরোধী। তাকে হত্যা করা ইমানি দায়িত্ব। ইমানি দায়িত্ব পালন করলে বেহেশতে যাওয়া যাবে। সেই ইমানি দায়িত্ব পালন করতেই ওয়াশিকুরকে হত্যা করেছি।"
এর থেকে স্পষ্ট যে, নেপথ্যের সেই হুজুররা ধর্মের দোহাই দিয়ে বাবুকে হত্যা করতে মাদ্রাসা ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়েছিলো। কেন? কী লিখেছিলেন ওয়াশিকুর বাবু? ওয়াশিকুর রহমান বাবু ছিলেন স্পষ্টবাদী, প্রতিবাদী।
তিনি ধর্মের অসাড়তা, ভন্ডামী, গোঁড়ামীর বিরুদ্ধে লিখেছিলেন। লিখেছিলেন কিছু 'ফাল দিয়ে ওঠা কথা।'
তাঁর কিছু লেখা তুলে ধরা হলো ----
১। এক সময় সবাই মানুষ ছিল। তারপর ঈশ্বরের আবির্ভাব হল; মানুষ হয়ে গেল হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ।
২। যে ধর্ম মানুষকে ঘৃণা করতে শেখায়, সে ধর্মকে আমি ঘৃণা করি।
৩। এমন কোন ভালো কাজ নাই, যার জন্যে ধর্ম আবশ্যক। কিন্তু এমন অনেক অপরাধ আছে, যা ধর্ম ছাড়া সম্ভব হতো না।
৪। কোন ধর্মই নারীকে কথিত সম্মানটুকুও দেয়নি। তারা সম্মান দিয়েছে মাকে, বোনকে, স্ত্রীকে, কন্যাকে। যারা নিজেদেরকে এইসব পরিচয়ে সীমাবদ্ধ রেখেছে- তারা সতী আর যারা মানুষ হতে চেয়েছে, তাদেরকে বেশ্যা উপাধি দিয়েছে ধর্মীয় সমাজ।
৫। ধর্মানুভূতি দিয়ে চাষাবাদ হয় না, উৎপাদন হয় না, শিক্ষা হয় না, গবেষণা হয় না, শিল্প-সাহিত্য হয় না। ধর্মানুভূতি দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা হয়, দাঙ্গা হয়, লুটপাট হয়, ধর্ষণ হয়, নোংরা রাজনীতি হয়।
৬। মানব রচিত সবচেয়ে আগ্রাসী কল্পনা হচ্ছে ধর্ম; যা মানুষের কল্পনা শক্তিকে গ্রাস করে। নিজের মত করে একটি স্বর্গ কল্পনা করতেও ধার্মিকেরা অক্ষম।
১৯৮৮ সালে জন্ম নেয়া অল্পবয়সী এই সাহসী মানুষটা মাত্র সাতাশ বছর বয়সে ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ ধর্মীয় সন্ত্রাসীসের হাতে নিহত হন। বাসার গলির মুখে ওঁত পেতে থাকা তিনজন ধার্মিক সন্ত্রাসী তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মুহূর্তেই বাবুর ঘাড়, ও মাথা ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়।