সমস্ত লেখাগুলি

অপবিজ্ঞানের চাষাবাদ (চড়ক পূজা) -
নির্মল
Nov. 25, 2024 | ধর্ম | views:7881 | likes:0 | share: 0 | comments:0

সাধারণত হার্ডকোর শহরাঞ্চলে চড়ক বা নীল পূজার (স্থান ভেদে গম্ভীরা শিবের গাজন বিভিন্ন নামে পরিচিত) তেমন প্রচলন না থাকলেও আজও বাংলার শহর অঞ্চলের আশেপাশে বা প্রায় প্রত্যেক গ্রামে রমরমিয়ে এই উৎসব পালিত হয়। জনশ্রুতি আছে ১৪৮৫ সালে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা দেবতা শিবকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে এই পূজার প্রথম শুরু করে। 


আমরা যারা গ্রামাঞ্চলে থাকি তারা ছোটবেলা থেকে এই উৎসব দেখে আসছি। উৎসবের অংশ হিসাবে প্রায় এক মাস ধরে লাল কাপড় পরিধান করে সন্ন্যাস নিয়ে বিভিন্ন নিয়মকানুন মানতে হয়। চৈত্রের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হয় নীল পূজা। পূজার অংশ হিসেবে চৈত্রের শেষ দিন সন্ন্যাসীদের জ্বলন্ত কয়লার উপর হাটা, মানুষের খুলি নিয়ে নাচ, খেজুর কাটার উপর লাফানো, ধারালো অস্ত্রের উপর দাঁড়ানো এমন বিভিন্ন বিপদজনক  কসরত দেখাতে হয়। তবে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কসরত লোহার বরশি পিঠে  ঢুকিয়ে চড়ক গাছে বেঁধে পাই পাই করে ঘোরানো, হাতে পায়ে, জিহ্বায়, গালে লোহার শলাকা ঢুকিয়ে প্রদর্শন করা।  


যেখানে ১৮৬৩ সালে ব্রিটিশ সরকার এই নিকৃষ্ট ধর্মীয় আচরণ আইন করে বন্ধ করার চেষ্টা চালায় সেখানে আজও ২০২২ সালে এর রমরমা চোখে পড়ার মতো। 


আজ থেকে কিছু বছর আগেও আমরা দেখেছি কিছু নির্দিষ্ট মানুষ (১৫ থেকে ২০ জন) প্রত্যেক বছর এই অনুষ্ঠান করত। কিন্তু অবাক করার মত ব্যাপার কয়েকবছর ধরে দেখছি এর এক একটি দলের লোক সংখ্যা প্রায় একশ থেকে দেড়শ জন হয়ে গেছে। এদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে এমনকি ১০ বছরের নিচের বহু শিশুদেরও সন্ন্যাস নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। যেখানে মাসখানেক ধরে শিশু-কিশোরদের মনে ভুত-প্রেত ও পুনর্জন্মবাদের চাষ করা হয়। পড়াশোনা, স্কুল সব বাদ দিয়ে একদল (আগে শুধু কিশোর এখন কিশোরীদেরও দেখা যায়), শিশু সারা মাস ধরে ঘরবাড়ি ছেড়ে মোবাইল হাতে অপবিজ্ঞানের পাট নিচ্ছে, সঙ্গে মুক্তভাবে নেশা ভাং এর সুযোগ। 


ব্রিটিশ সরকার যে ধর্মীয় আচরণকে  নিকৃষ্ট ধর্মীয় আচরণ হিসাবে বন্ধ করতে চেয়েছিল আমাদের রাজনৈতিক কারবারীদের দৌলতে তা আবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। এ কোন সংস্কৃতির দিকে  সমাজ এগিয়ে চলেছে!  এইসব অপসংস্কৃতির রমরমা বুঝিয়ে দেয় যে সমাজের গতি নিম্নগামী। একদিকে আধুনিক প্রযুক্তির সহজলভ্যতা অন্যদিকে ভোট ব্যাংকের স্বার্থে ধর্মীয় নিয়মকানুনের জিগির টিকিয়ে রাখার দায় আর পাড়ায় পাড়ায় ভুই ফোড়ের মত নেতাদের উদ্ভব এই তিনের কম্বিনেশনে মূলত গ্রামের এক বৃহৎ অংশের তরুণ, কিশোর খুব খারাপভাবে বিপদগ্রস্ত ও বিপথগামী। যার ফল সমস্ত সমাজ জুড়েই প্রতিফলিত হচ্ছে। ভারতীয় সংবিধানে যেখানে বারবার বিজ্ঞান চেতনার উন্মেষের কথা বলা হয়েছে, সেখানে শিশু-কিশোর মনে এই অপবিজ্ঞানের চাষাবাদ কি সংবিধান বিরোধী নয়!  এই অপবিজ্ঞানের চাষাবাদ বন্ধ করে সুস্থ সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে অবিলম্বে এগিয়ে আসতে হবে।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86930